Ajker Patrika

আফ্রিকায় কমছে ঋণ, বাড়ছে অস্বস্তি

রয়টার্স, নাইরোবি
আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০২১, ১৩: ০৬
আফ্রিকায় কমছে ঋণ, বাড়ছে অস্বস্তি

পূর্ব আফ্রিকার দেশ কেনিয়ার গ্রেট রিফট উপত্যকার প্রত্যন্ত এলাকায় দেশটির জাতীয় যুব সংস্থার কর্মীদের ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চলছে। আগাছা আর ঝোপঝাড়ে হারিয়ে যাওয়া শতাব্দীপ্রাচীন রেললাইনকে আবারও সূর্যের আলোয় আনতে তাদের এই কর্মব্যস্ততা। এই উদ্যোগের একমাত্র কারণ চীনের ‘এক অঞ্চল এক পথ উদ্যোগ (বিআরআই)’।

চীনের ‘এক অঞ্চল এক পথ’ উদ্যোগ আসলে একটি কৌশলগত বৈশ্বিক অবকাঠামো উন্নয়ন উদ্যোগ। চীনের সরকার বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থায় বিনিয়োগ করতে ২০১৩ সালে এই উদ্যোগ নেয়। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোয় বিনিয়োগের লক্ষ্য বেইজিংয়ের। বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বজুড়ে চীনের প্রভাব বিস্তার এবং নেতৃত্ব পাকাপোক্ত করতে এমন কৌশলগত উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে দেশটির সরকার।

চীনের এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে ভারত মহাসাগরের তীরবর্তী কেনিয়ার বন্দর নগরী মোম্বাসা থেকে উগান্ডা পর্যন্ত ১ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথ নির্মাণের কাজ চলছে। কিন্তু সমস্যা হয়েছে অন্য জায়গায়। এই পথে দ্রুতগতির ট্রেন চলাচলের জন্য উপযুক্ত নতুন রেলপথ নির্মাণের মতো পর্যাপ্ত অর্থ দেশগুলোর নেই। বিশেষ করে বেকায়দায় রয়েছে কেনিয়া। আর তাই দেশটি এখন ১৯ শতকে ব্রিটিশ উপনিবেশের সময় নির্মিত রেললাইনটিই সংস্কারের চেষ্টা করছে।

এদিকে গোড়ার দিকে চীন আফ্রিকার দেশগুলোকে হাজার কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দিলেও সাম্প্রতিক সময়ে তার পরিমাণ কমেছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, চীনের ঋণ কমার পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। এর অন্যতম হলো করোনাভাইরাসের মহামারি। এই মহামারির ধাক্কায় সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বেইজিং আর আগের মতো ব্যাপক হারে ঋণ দিচ্ছে না। এদিকে আফ্রিকার দেশগুলোয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি উন্নয়ন কার্যক্রমকে মন্থর করে দিয়েছে। আফ্রিকার প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর কিছু ঋণদাতার নজর পড়ায়ও বিষয়টি জটিল হয়ে উঠেছে। ওই ঋণদাতারা ঋণের বিনিময়ে ওই দেশগুলোর প্রাকৃতিক সম্পদের ভাগ চায়।

চীনভিত্তিক বিশ্লেষক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্রিন বিআরআইয়ের তথ্যমতে, বিআরআই উদ্যোগের অংশ হিসেবে ১৩৮টি দেশে চীনের বিনিয়োগ ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে ৫৪ শতাংশ কমেছে। ২০২০ সালে চীন বিভিন্ন দেশে ৪ হাজার ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। ২০১৩ সালে ‘এক অঞ্চল এক পথ’ পরিকল্পনা প্রকাশের পর গত বছরই সবচেয়ে কম বিনিয়োগ হয়েছে।

আফ্রিকায় চীনের ওই উদ্যোগের অংশ হিসেবে বিনিয়োগ পেয়েছে ৪০টি দেশ। আন্তর্জাতিক আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বেকার ম্যাকেঞ্জির এক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ওই দেশগুলোয় অবকাঠামো প্রকল্পে ২০১৭ সালে চীনা ব্যাংকের অর্থায়ন ছিল ১ হাজার ১০০ কোটি ডলার। ২০২০ সালে তা কমে ৩৩০ কোটি ডলার হয়েছে।

আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের তথ্যমতে, আফ্রিকার দেশগুলো চীনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে মহাসড়ক ও রেললাইন নির্মাণে উদ্‌গ্রীব হয়ে আছে। কারণ, এসব সড়ক-মহাসড়ক আর রেললাইন নির্মিত হলে ওই দেশগুলো স্থলপথে এশিয়া ও ইউরোপের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে। কিন্তু আফ্রিকা মহাদেশ বার্ষিক অবকাঠামো বিনিয়োগে ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের ঘাটতিতে রয়েছে। এর মধ্যেই চীনের বিনিয়োগের পরিমাণ কমে যাওয়ায় দেশগুলো আরও বেকায়দায় পড়েছে। শুধু কেনিয়ার উন্নয়ন কর্মসূচিই নয়, নাইজেরিয়ার ৩০০ কোটি ডলারের রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প এবং ক্যামেরুনের ৪৫ কোটি মার্কিন ডলারের মহাসড়ক নির্মাণ প্রকল্পও থমকে গেছে।

আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট আকিনুমি আদেসিনা বলেন, ‘মহামারি পরিস্থিতি আরও খারাপ করে দিয়েছে। এই মহামারির কারণে স্বাস্থ্যসেবায় অতিরিক্ত অবকাঠামো বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। ফলে উন্নয়ন কর্মসূচি থমকে গেছে।’

এ ব্যাপারে কথা বলতে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মেঘালয়ে হানিমুনে গিয়ে বর খুন, নিখোঁজ নববধূকে উদ্ধারে নেমেছে ড্রোন

‘তাণ্ডব’ সিনেমার শো চলার সময় ছায়াবাণী হলে দর্শকদের ভাঙচুর, টাকা লুট

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান বিচার ও কিছু প্রশ্ন

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সেনাপ্রধানের সস্ত্রীক ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়

ইরান-ইসরায়েলের সম্ভাব্য মুখোমুখি সংঘর্ষের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত