অরুণ কর্মকার
ধরা যাক, যুদ্ধক্ষেত্রে কামান-বন্দুক সবই আপনার আছে। কিন্তু গোলা-গুলি নেই। ফল কী হবে তা সবাই বোঝে। জ্বালানি হচ্ছে ওই গোলা-গুলির মতো। আপনার যথেষ্ট সংখ্যক বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে। শিল্প, কলকারখানা আছে। মেট্রোরেল আছে। এসবই আরও করছেন। কিন্তু আপনার জ্বালানি নেই। তাহলে এর কোনোটিই চলবে না।
আবার চিত্রটি যদি বিপরীত হয়? অর্থাৎ আপনার প্রচুর জ্বালানি আছে। আর কোনো কিছু প্রয়োজনমতো নেই। তাহলে কী হবে? তাহলে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তা এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীরা হুমড়ি খেয়ে পড়বে বিনিয়োগ করার জন্য। এই ত্রিপক্ষীয় বিনিয়োগে সবকিছুই দ্রুত হয়ে যাবে।
এই উপলব্ধি সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একজন কর্মকর্তার। জ্বালানি খাতের টেকসই উন্নয়নের বিষয়ে তাঁর এই উপলব্ধি। এর আগে এই পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তার এমন উপলব্ধির কথা কখনো শুনিনি। হয়তো কারও কারও মধ্যে ছিল। কিন্তু প্রকাশ করেননি। তিনি প্রকাশ করছেন এবং জ্বালানি খাতের ভিত শক্তিশালী করার জন্য সক্রিয় আছেন।
ইদানীং সরকারের আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি জ্বালানি খাতের উন্নয়ন নিয়ে, বিশেষ করে দেশীয় জ্বালানি সম্পদের উন্নয়ন নিয়ে কথা বলছেন। কাজ করছেন। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ তাঁদের অন্যতম। একটানা প্রায় ১৫ বছর ধরে তাঁরাই এ খাতের উন্নয়নে নেতৃত্ব দিয়ে এসেছেন। কিন্তু সেখানে দেশীয় জ্বালানি সম্পদের উন্নয়নের বিষয়টি ছিল একপ্রকার উপেক্ষিত।
এখন বিশ্ব রাজনীতির টানাপোড়েন, যুদ্ধবিগ্রহ এবং সেই কারণে জ্বালানির আন্তর্জাতিক বাজারের অস্থিতিশীলতার চাপে পিষ্ট হয়ে দেশীয় জ্বালানি সম্পদের আহরণ বাড়ানোর প্রতি নজর পড়েছে। সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ মীমাংসার প্রায় এক দশক পরে এবার দেশের সমুদ্র অঞ্চলে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য নতুন উৎপাদন অংশীদারত্ব চুক্তি (পিএসসি) করে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।
দেশের স্থলভাগে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান বাড়ানোর জন্যও নতুন করে পিএসসি প্রণয়ন করা হচ্ছে। এর বাইরে দেশের বিদ্যমান ক্ষেত্রগুলো এবং চিহ্নিত এলাকায় নতুন কূপ খনন করে গ্যাস উত্তোলন বাড়ানো, দ্বিমাত্রিক ও ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ, পরিত্যক্ত কূপগুলো থেকে পুনরায় গ্যাস উত্তোলন প্রভৃতি কাজ শুরু করা হয়েছে। এরই প্রেক্ষাপটে দেশের জ্বালানি খাতের ভবিষ্যৎ বিষয়ে আমরা দৃষ্টিপাত করতে পারি।
নতুন কূপ খনন: এ বিষয়ে ২০২২-২৩ সালে গৃহীত যে পরিকল্পনার বাস্তবায়ন কাজ চলমান রয়েছে তা হলো, নতুন এবং ওয়ার্কওভার (পুরোনো কূপের সংস্কার) মিলে ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, এর মাধ্যমে দৈনিক মোট ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার কথা। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ১১টি কূপ খনন সম্পন্ন হয়েছে। তাতে দৈনিক মোট ১২৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রাপ্তি নিশ্চিত হয়েছে; যার মধ্যে ৩৩ মিলিয়ন জাতীয় গ্রিডে সঞ্চালন শুরু হয়েছে। আরও ৩টি কূপ খননের কাজ চলছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় না যে ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
আরও বড় পরিকল্পনা: ইতিমধ্যে কূপ খননের আরও বড় একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। তাতে ২০২৫ থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে মোট ৬৯টি নতুন কূপ খনন এবং ৩১টি কূপে ওয়ার্কওভার (সর্বমোট ১০০টি কূপ) করার কথা রয়েছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে গ্যাস উত্তোলন বৃদ্ধির কথা দৈনিক ১ হাজার ৪৮৫ মিলিয়ন ঘনফুট। ১০০ কূপের এই পরিকল্পনাটি আগের ৪৮টির তুলনায় অনেক বেশি সুসংহত। কেননা, সরকারি খাতের ৩টি উত্তোলন কোম্পানি-বাপেক্স, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল) এবং সিলেট গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (এসজিএফএল) শনাক্ত করা সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনাময় স্থান যাচাই-বাছাই করে পরিকল্পনাটি নেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজও ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী, এই ১০০ কূপের মধ্যে নতুন যে ৬৯টি করা হবে, এর ৫২টি করবে বাপেক্স। বিজিএফসিএল করবে ৯টি এবং এসজিএফএল করবে বাকি ৮টি। ওয়ার্কওভার করার জন্য নির্ধারিত ৩১টি কূপ ওই ৩টি কোম্পানি নির্ধারণ করেছে এবং যার যার অংশ সেই সব কোম্পানি বাস্তবায়ন করবে।
১০০টি কূপের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য মোট ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ১ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার অনুদান হিসেবে দেবে ১৩ হাজার ৩২৮ কোটি টাকা (৬৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ) এবং ৩টি কোম্পানির গ্যাস উন্নয়ন তহবিল ও নিজস্ব অনুদান হবে ৫ হাজার ৭২২ কোটি টাকা (৩০ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ)। এই পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করবে দেশীয় গ্যাস উত্তোলনের সক্ষমতা বাড়ানোর সাফল্য। তবে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, এই পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়নের জন্য সরকারের নীতিনির্ধারক, পেট্রোবাংলা এবং সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে।
পরিত্যক্ত কূপে পুনরুৎপাদন: পেট্রোবাংলার গঠিত একটি কমিটির প্রতিবেদনে দেখা যায়, বর্তমানে দেশে মোট ৯৮টি পরিত্যক্ত (বিভিন্ন কারণে সাময়িক বন্ধ) কূপ রয়েছে। এর মধ্যে ৬৭টি কূপ ওয়ার্কওভার করে পুনরায় গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব। এর মাধ্যমে গ্যাস উত্তোলন বাড়তে পারে দৈনিক ২২০ থেকে ২৩০ মিলিয়ন ঘনফুট। এ প্রসঙ্গে স্মরণযোগ্য, এক দশকের বেশিকাল আগে একটি বিদেশি কোম্পানির সহায়তায় পেট্রোবাংলা পরিত্যক্ত কূপগুলোতে পুনরুৎপাদন শুরুর বিষয়ে একটি সমীক্ষা চালিয়েছিল। ওই সমীক্ষা প্রতিবেদনে ‘সীমিত ব্যয়ে এবং স্বল্পতম সময়ে’ প্রায় একই পরিমাণ গ্যাস উত্তোলন সম্ভব বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু দেশে গ্যাসের সংকট থাকা সত্ত্বেও অজ্ঞাত কারণে তখন সেই কাজে হাত দেওয়া হয়নি।
ভূকম্পন জরিপ: সবারই জানা আছে যে আজ পর্যন্ত দেশের জ্বালানি সম্পদের কোনো পূর্ণাঙ্গ ঠিকুজি (রিসোর্স অ্যাসেসমেন্ট) করা হয়নি। এটি করার জন্য দরকার দেশব্যাপী ভূকম্পন জরিপ (সাইসমিক সার্ভে) চালানো। প্রথমে দ্বিমাত্রিক (টু-ডি) এবং তারপর সম্ভাবনাময় এলাকগুলোয় ত্রিমাত্রিক (থ্রি-ডি)। এবার সেই কাজও প্রায় সম্পন্ন করার একটি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী, দেশের যেসব অঞ্চলে আগে কোনো ভূকম্পন জরিপ চালানো হয়নি তার প্রায় পুরোটাই প্রথমে দ্বিমাত্রিক এবং পরে ক্ষেত্রবিশেষে ত্রিমাত্রিক জরিপ চালানো হবে।
এর বাইরে রয়েছে সমুদ্র অঞ্চল—যে বিষয় আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে আরও যে কথাটি বলে রাখা দরকার তা হলো, সমুদ্র অঞ্চলে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে তেল-গ্যাস পাওয়া গেলেও বর্তমান পর্যায় থেকে উত্তোলন পর্যায়ে যেতে কম-বেশি এক দশক সময় লাগতে পারে। সুতরাং দেশের জ্বালানি ঘাটতি মোকাবিলায় প্রথম নির্ভরতা স্থলভাগের ওপর। আর পেট্রোবাংলা যে হিসাব-নিকাশ করেছে সেই অনুযায়ী, ২০২৯-৩০ সালে দেশে গ্যাসের চাহিদা হবে দৈনিক ৫ হাজার ৯২ মিলিয়ন ঘনফুট। আর আমদানি করা এলএনজিসহ মোট সরবরাহ দাঁড়াবে ৪ হাজার ৩৫২ মিলিয়ন ঘনফুট। পেট্রোবাংলা অবশ্য ২০৪০-৪১ সাল পর্যন্ত হিসাব-নিকাশ করেছে। তখনো যে চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ঘাটতি পূরণ হবে—এমন কোনো ইঙ্গিত নেই।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
ধরা যাক, যুদ্ধক্ষেত্রে কামান-বন্দুক সবই আপনার আছে। কিন্তু গোলা-গুলি নেই। ফল কী হবে তা সবাই বোঝে। জ্বালানি হচ্ছে ওই গোলা-গুলির মতো। আপনার যথেষ্ট সংখ্যক বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে। শিল্প, কলকারখানা আছে। মেট্রোরেল আছে। এসবই আরও করছেন। কিন্তু আপনার জ্বালানি নেই। তাহলে এর কোনোটিই চলবে না।
আবার চিত্রটি যদি বিপরীত হয়? অর্থাৎ আপনার প্রচুর জ্বালানি আছে। আর কোনো কিছু প্রয়োজনমতো নেই। তাহলে কী হবে? তাহলে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তা এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীরা হুমড়ি খেয়ে পড়বে বিনিয়োগ করার জন্য। এই ত্রিপক্ষীয় বিনিয়োগে সবকিছুই দ্রুত হয়ে যাবে।
এই উপলব্ধি সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একজন কর্মকর্তার। জ্বালানি খাতের টেকসই উন্নয়নের বিষয়ে তাঁর এই উপলব্ধি। এর আগে এই পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তার এমন উপলব্ধির কথা কখনো শুনিনি। হয়তো কারও কারও মধ্যে ছিল। কিন্তু প্রকাশ করেননি। তিনি প্রকাশ করছেন এবং জ্বালানি খাতের ভিত শক্তিশালী করার জন্য সক্রিয় আছেন।
ইদানীং সরকারের আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি জ্বালানি খাতের উন্নয়ন নিয়ে, বিশেষ করে দেশীয় জ্বালানি সম্পদের উন্নয়ন নিয়ে কথা বলছেন। কাজ করছেন। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ তাঁদের অন্যতম। একটানা প্রায় ১৫ বছর ধরে তাঁরাই এ খাতের উন্নয়নে নেতৃত্ব দিয়ে এসেছেন। কিন্তু সেখানে দেশীয় জ্বালানি সম্পদের উন্নয়নের বিষয়টি ছিল একপ্রকার উপেক্ষিত।
এখন বিশ্ব রাজনীতির টানাপোড়েন, যুদ্ধবিগ্রহ এবং সেই কারণে জ্বালানির আন্তর্জাতিক বাজারের অস্থিতিশীলতার চাপে পিষ্ট হয়ে দেশীয় জ্বালানি সম্পদের আহরণ বাড়ানোর প্রতি নজর পড়েছে। সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ মীমাংসার প্রায় এক দশক পরে এবার দেশের সমুদ্র অঞ্চলে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য নতুন উৎপাদন অংশীদারত্ব চুক্তি (পিএসসি) করে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।
দেশের স্থলভাগে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান বাড়ানোর জন্যও নতুন করে পিএসসি প্রণয়ন করা হচ্ছে। এর বাইরে দেশের বিদ্যমান ক্ষেত্রগুলো এবং চিহ্নিত এলাকায় নতুন কূপ খনন করে গ্যাস উত্তোলন বাড়ানো, দ্বিমাত্রিক ও ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ, পরিত্যক্ত কূপগুলো থেকে পুনরায় গ্যাস উত্তোলন প্রভৃতি কাজ শুরু করা হয়েছে। এরই প্রেক্ষাপটে দেশের জ্বালানি খাতের ভবিষ্যৎ বিষয়ে আমরা দৃষ্টিপাত করতে পারি।
নতুন কূপ খনন: এ বিষয়ে ২০২২-২৩ সালে গৃহীত যে পরিকল্পনার বাস্তবায়ন কাজ চলমান রয়েছে তা হলো, নতুন এবং ওয়ার্কওভার (পুরোনো কূপের সংস্কার) মিলে ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, এর মাধ্যমে দৈনিক মোট ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার কথা। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ১১টি কূপ খনন সম্পন্ন হয়েছে। তাতে দৈনিক মোট ১২৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রাপ্তি নিশ্চিত হয়েছে; যার মধ্যে ৩৩ মিলিয়ন জাতীয় গ্রিডে সঞ্চালন শুরু হয়েছে। আরও ৩টি কূপ খননের কাজ চলছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় না যে ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
আরও বড় পরিকল্পনা: ইতিমধ্যে কূপ খননের আরও বড় একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। তাতে ২০২৫ থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে মোট ৬৯টি নতুন কূপ খনন এবং ৩১টি কূপে ওয়ার্কওভার (সর্বমোট ১০০টি কূপ) করার কথা রয়েছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে গ্যাস উত্তোলন বৃদ্ধির কথা দৈনিক ১ হাজার ৪৮৫ মিলিয়ন ঘনফুট। ১০০ কূপের এই পরিকল্পনাটি আগের ৪৮টির তুলনায় অনেক বেশি সুসংহত। কেননা, সরকারি খাতের ৩টি উত্তোলন কোম্পানি-বাপেক্স, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল) এবং সিলেট গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (এসজিএফএল) শনাক্ত করা সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনাময় স্থান যাচাই-বাছাই করে পরিকল্পনাটি নেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজও ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী, এই ১০০ কূপের মধ্যে নতুন যে ৬৯টি করা হবে, এর ৫২টি করবে বাপেক্স। বিজিএফসিএল করবে ৯টি এবং এসজিএফএল করবে বাকি ৮টি। ওয়ার্কওভার করার জন্য নির্ধারিত ৩১টি কূপ ওই ৩টি কোম্পানি নির্ধারণ করেছে এবং যার যার অংশ সেই সব কোম্পানি বাস্তবায়ন করবে।
১০০টি কূপের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য মোট ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ১ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার অনুদান হিসেবে দেবে ১৩ হাজার ৩২৮ কোটি টাকা (৬৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ) এবং ৩টি কোম্পানির গ্যাস উন্নয়ন তহবিল ও নিজস্ব অনুদান হবে ৫ হাজার ৭২২ কোটি টাকা (৩০ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ)। এই পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করবে দেশীয় গ্যাস উত্তোলনের সক্ষমতা বাড়ানোর সাফল্য। তবে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, এই পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়নের জন্য সরকারের নীতিনির্ধারক, পেট্রোবাংলা এবং সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে।
পরিত্যক্ত কূপে পুনরুৎপাদন: পেট্রোবাংলার গঠিত একটি কমিটির প্রতিবেদনে দেখা যায়, বর্তমানে দেশে মোট ৯৮টি পরিত্যক্ত (বিভিন্ন কারণে সাময়িক বন্ধ) কূপ রয়েছে। এর মধ্যে ৬৭টি কূপ ওয়ার্কওভার করে পুনরায় গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব। এর মাধ্যমে গ্যাস উত্তোলন বাড়তে পারে দৈনিক ২২০ থেকে ২৩০ মিলিয়ন ঘনফুট। এ প্রসঙ্গে স্মরণযোগ্য, এক দশকের বেশিকাল আগে একটি বিদেশি কোম্পানির সহায়তায় পেট্রোবাংলা পরিত্যক্ত কূপগুলোতে পুনরুৎপাদন শুরুর বিষয়ে একটি সমীক্ষা চালিয়েছিল। ওই সমীক্ষা প্রতিবেদনে ‘সীমিত ব্যয়ে এবং স্বল্পতম সময়ে’ প্রায় একই পরিমাণ গ্যাস উত্তোলন সম্ভব বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু দেশে গ্যাসের সংকট থাকা সত্ত্বেও অজ্ঞাত কারণে তখন সেই কাজে হাত দেওয়া হয়নি।
ভূকম্পন জরিপ: সবারই জানা আছে যে আজ পর্যন্ত দেশের জ্বালানি সম্পদের কোনো পূর্ণাঙ্গ ঠিকুজি (রিসোর্স অ্যাসেসমেন্ট) করা হয়নি। এটি করার জন্য দরকার দেশব্যাপী ভূকম্পন জরিপ (সাইসমিক সার্ভে) চালানো। প্রথমে দ্বিমাত্রিক (টু-ডি) এবং তারপর সম্ভাবনাময় এলাকগুলোয় ত্রিমাত্রিক (থ্রি-ডি)। এবার সেই কাজও প্রায় সম্পন্ন করার একটি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী, দেশের যেসব অঞ্চলে আগে কোনো ভূকম্পন জরিপ চালানো হয়নি তার প্রায় পুরোটাই প্রথমে দ্বিমাত্রিক এবং পরে ক্ষেত্রবিশেষে ত্রিমাত্রিক জরিপ চালানো হবে।
এর বাইরে রয়েছে সমুদ্র অঞ্চল—যে বিষয় আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে আরও যে কথাটি বলে রাখা দরকার তা হলো, সমুদ্র অঞ্চলে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে তেল-গ্যাস পাওয়া গেলেও বর্তমান পর্যায় থেকে উত্তোলন পর্যায়ে যেতে কম-বেশি এক দশক সময় লাগতে পারে। সুতরাং দেশের জ্বালানি ঘাটতি মোকাবিলায় প্রথম নির্ভরতা স্থলভাগের ওপর। আর পেট্রোবাংলা যে হিসাব-নিকাশ করেছে সেই অনুযায়ী, ২০২৯-৩০ সালে দেশে গ্যাসের চাহিদা হবে দৈনিক ৫ হাজার ৯২ মিলিয়ন ঘনফুট। আর আমদানি করা এলএনজিসহ মোট সরবরাহ দাঁড়াবে ৪ হাজার ৩৫২ মিলিয়ন ঘনফুট। পেট্রোবাংলা অবশ্য ২০৪০-৪১ সাল পর্যন্ত হিসাব-নিকাশ করেছে। তখনো যে চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ঘাটতি পূরণ হবে—এমন কোনো ইঙ্গিত নেই।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
অরুণ কর্মকার
ধরা যাক, যুদ্ধক্ষেত্রে কামান-বন্দুক সবই আপনার আছে। কিন্তু গোলা-গুলি নেই। ফল কী হবে তা সবাই বোঝে। জ্বালানি হচ্ছে ওই গোলা-গুলির মতো। আপনার যথেষ্ট সংখ্যক বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে। শিল্প, কলকারখানা আছে। মেট্রোরেল আছে। এসবই আরও করছেন। কিন্তু আপনার জ্বালানি নেই। তাহলে এর কোনোটিই চলবে না।
আবার চিত্রটি যদি বিপরীত হয়? অর্থাৎ আপনার প্রচুর জ্বালানি আছে। আর কোনো কিছু প্রয়োজনমতো নেই। তাহলে কী হবে? তাহলে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তা এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীরা হুমড়ি খেয়ে পড়বে বিনিয়োগ করার জন্য। এই ত্রিপক্ষীয় বিনিয়োগে সবকিছুই দ্রুত হয়ে যাবে।
এই উপলব্ধি সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একজন কর্মকর্তার। জ্বালানি খাতের টেকসই উন্নয়নের বিষয়ে তাঁর এই উপলব্ধি। এর আগে এই পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তার এমন উপলব্ধির কথা কখনো শুনিনি। হয়তো কারও কারও মধ্যে ছিল। কিন্তু প্রকাশ করেননি। তিনি প্রকাশ করছেন এবং জ্বালানি খাতের ভিত শক্তিশালী করার জন্য সক্রিয় আছেন।
ইদানীং সরকারের আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি জ্বালানি খাতের উন্নয়ন নিয়ে, বিশেষ করে দেশীয় জ্বালানি সম্পদের উন্নয়ন নিয়ে কথা বলছেন। কাজ করছেন। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ তাঁদের অন্যতম। একটানা প্রায় ১৫ বছর ধরে তাঁরাই এ খাতের উন্নয়নে নেতৃত্ব দিয়ে এসেছেন। কিন্তু সেখানে দেশীয় জ্বালানি সম্পদের উন্নয়নের বিষয়টি ছিল একপ্রকার উপেক্ষিত।
এখন বিশ্ব রাজনীতির টানাপোড়েন, যুদ্ধবিগ্রহ এবং সেই কারণে জ্বালানির আন্তর্জাতিক বাজারের অস্থিতিশীলতার চাপে পিষ্ট হয়ে দেশীয় জ্বালানি সম্পদের আহরণ বাড়ানোর প্রতি নজর পড়েছে। সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ মীমাংসার প্রায় এক দশক পরে এবার দেশের সমুদ্র অঞ্চলে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য নতুন উৎপাদন অংশীদারত্ব চুক্তি (পিএসসি) করে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।
দেশের স্থলভাগে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান বাড়ানোর জন্যও নতুন করে পিএসসি প্রণয়ন করা হচ্ছে। এর বাইরে দেশের বিদ্যমান ক্ষেত্রগুলো এবং চিহ্নিত এলাকায় নতুন কূপ খনন করে গ্যাস উত্তোলন বাড়ানো, দ্বিমাত্রিক ও ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ, পরিত্যক্ত কূপগুলো থেকে পুনরায় গ্যাস উত্তোলন প্রভৃতি কাজ শুরু করা হয়েছে। এরই প্রেক্ষাপটে দেশের জ্বালানি খাতের ভবিষ্যৎ বিষয়ে আমরা দৃষ্টিপাত করতে পারি।
নতুন কূপ খনন: এ বিষয়ে ২০২২-২৩ সালে গৃহীত যে পরিকল্পনার বাস্তবায়ন কাজ চলমান রয়েছে তা হলো, নতুন এবং ওয়ার্কওভার (পুরোনো কূপের সংস্কার) মিলে ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, এর মাধ্যমে দৈনিক মোট ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার কথা। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ১১টি কূপ খনন সম্পন্ন হয়েছে। তাতে দৈনিক মোট ১২৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রাপ্তি নিশ্চিত হয়েছে; যার মধ্যে ৩৩ মিলিয়ন জাতীয় গ্রিডে সঞ্চালন শুরু হয়েছে। আরও ৩টি কূপ খননের কাজ চলছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় না যে ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
আরও বড় পরিকল্পনা: ইতিমধ্যে কূপ খননের আরও বড় একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। তাতে ২০২৫ থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে মোট ৬৯টি নতুন কূপ খনন এবং ৩১টি কূপে ওয়ার্কওভার (সর্বমোট ১০০টি কূপ) করার কথা রয়েছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে গ্যাস উত্তোলন বৃদ্ধির কথা দৈনিক ১ হাজার ৪৮৫ মিলিয়ন ঘনফুট। ১০০ কূপের এই পরিকল্পনাটি আগের ৪৮টির তুলনায় অনেক বেশি সুসংহত। কেননা, সরকারি খাতের ৩টি উত্তোলন কোম্পানি-বাপেক্স, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল) এবং সিলেট গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (এসজিএফএল) শনাক্ত করা সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনাময় স্থান যাচাই-বাছাই করে পরিকল্পনাটি নেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজও ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী, এই ১০০ কূপের মধ্যে নতুন যে ৬৯টি করা হবে, এর ৫২টি করবে বাপেক্স। বিজিএফসিএল করবে ৯টি এবং এসজিএফএল করবে বাকি ৮টি। ওয়ার্কওভার করার জন্য নির্ধারিত ৩১টি কূপ ওই ৩টি কোম্পানি নির্ধারণ করেছে এবং যার যার অংশ সেই সব কোম্পানি বাস্তবায়ন করবে।
১০০টি কূপের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য মোট ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ১ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার অনুদান হিসেবে দেবে ১৩ হাজার ৩২৮ কোটি টাকা (৬৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ) এবং ৩টি কোম্পানির গ্যাস উন্নয়ন তহবিল ও নিজস্ব অনুদান হবে ৫ হাজার ৭২২ কোটি টাকা (৩০ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ)। এই পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করবে দেশীয় গ্যাস উত্তোলনের সক্ষমতা বাড়ানোর সাফল্য। তবে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, এই পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়নের জন্য সরকারের নীতিনির্ধারক, পেট্রোবাংলা এবং সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে।
পরিত্যক্ত কূপে পুনরুৎপাদন: পেট্রোবাংলার গঠিত একটি কমিটির প্রতিবেদনে দেখা যায়, বর্তমানে দেশে মোট ৯৮টি পরিত্যক্ত (বিভিন্ন কারণে সাময়িক বন্ধ) কূপ রয়েছে। এর মধ্যে ৬৭টি কূপ ওয়ার্কওভার করে পুনরায় গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব। এর মাধ্যমে গ্যাস উত্তোলন বাড়তে পারে দৈনিক ২২০ থেকে ২৩০ মিলিয়ন ঘনফুট। এ প্রসঙ্গে স্মরণযোগ্য, এক দশকের বেশিকাল আগে একটি বিদেশি কোম্পানির সহায়তায় পেট্রোবাংলা পরিত্যক্ত কূপগুলোতে পুনরুৎপাদন শুরুর বিষয়ে একটি সমীক্ষা চালিয়েছিল। ওই সমীক্ষা প্রতিবেদনে ‘সীমিত ব্যয়ে এবং স্বল্পতম সময়ে’ প্রায় একই পরিমাণ গ্যাস উত্তোলন সম্ভব বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু দেশে গ্যাসের সংকট থাকা সত্ত্বেও অজ্ঞাত কারণে তখন সেই কাজে হাত দেওয়া হয়নি।
ভূকম্পন জরিপ: সবারই জানা আছে যে আজ পর্যন্ত দেশের জ্বালানি সম্পদের কোনো পূর্ণাঙ্গ ঠিকুজি (রিসোর্স অ্যাসেসমেন্ট) করা হয়নি। এটি করার জন্য দরকার দেশব্যাপী ভূকম্পন জরিপ (সাইসমিক সার্ভে) চালানো। প্রথমে দ্বিমাত্রিক (টু-ডি) এবং তারপর সম্ভাবনাময় এলাকগুলোয় ত্রিমাত্রিক (থ্রি-ডি)। এবার সেই কাজও প্রায় সম্পন্ন করার একটি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী, দেশের যেসব অঞ্চলে আগে কোনো ভূকম্পন জরিপ চালানো হয়নি তার প্রায় পুরোটাই প্রথমে দ্বিমাত্রিক এবং পরে ক্ষেত্রবিশেষে ত্রিমাত্রিক জরিপ চালানো হবে।
এর বাইরে রয়েছে সমুদ্র অঞ্চল—যে বিষয় আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে আরও যে কথাটি বলে রাখা দরকার তা হলো, সমুদ্র অঞ্চলে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে তেল-গ্যাস পাওয়া গেলেও বর্তমান পর্যায় থেকে উত্তোলন পর্যায়ে যেতে কম-বেশি এক দশক সময় লাগতে পারে। সুতরাং দেশের জ্বালানি ঘাটতি মোকাবিলায় প্রথম নির্ভরতা স্থলভাগের ওপর। আর পেট্রোবাংলা যে হিসাব-নিকাশ করেছে সেই অনুযায়ী, ২০২৯-৩০ সালে দেশে গ্যাসের চাহিদা হবে দৈনিক ৫ হাজার ৯২ মিলিয়ন ঘনফুট। আর আমদানি করা এলএনজিসহ মোট সরবরাহ দাঁড়াবে ৪ হাজার ৩৫২ মিলিয়ন ঘনফুট। পেট্রোবাংলা অবশ্য ২০৪০-৪১ সাল পর্যন্ত হিসাব-নিকাশ করেছে। তখনো যে চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ঘাটতি পূরণ হবে—এমন কোনো ইঙ্গিত নেই।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
ধরা যাক, যুদ্ধক্ষেত্রে কামান-বন্দুক সবই আপনার আছে। কিন্তু গোলা-গুলি নেই। ফল কী হবে তা সবাই বোঝে। জ্বালানি হচ্ছে ওই গোলা-গুলির মতো। আপনার যথেষ্ট সংখ্যক বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে। শিল্প, কলকারখানা আছে। মেট্রোরেল আছে। এসবই আরও করছেন। কিন্তু আপনার জ্বালানি নেই। তাহলে এর কোনোটিই চলবে না।
আবার চিত্রটি যদি বিপরীত হয়? অর্থাৎ আপনার প্রচুর জ্বালানি আছে। আর কোনো কিছু প্রয়োজনমতো নেই। তাহলে কী হবে? তাহলে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তা এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীরা হুমড়ি খেয়ে পড়বে বিনিয়োগ করার জন্য। এই ত্রিপক্ষীয় বিনিয়োগে সবকিছুই দ্রুত হয়ে যাবে।
এই উপলব্ধি সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একজন কর্মকর্তার। জ্বালানি খাতের টেকসই উন্নয়নের বিষয়ে তাঁর এই উপলব্ধি। এর আগে এই পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তার এমন উপলব্ধির কথা কখনো শুনিনি। হয়তো কারও কারও মধ্যে ছিল। কিন্তু প্রকাশ করেননি। তিনি প্রকাশ করছেন এবং জ্বালানি খাতের ভিত শক্তিশালী করার জন্য সক্রিয় আছেন।
ইদানীং সরকারের আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি জ্বালানি খাতের উন্নয়ন নিয়ে, বিশেষ করে দেশীয় জ্বালানি সম্পদের উন্নয়ন নিয়ে কথা বলছেন। কাজ করছেন। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ তাঁদের অন্যতম। একটানা প্রায় ১৫ বছর ধরে তাঁরাই এ খাতের উন্নয়নে নেতৃত্ব দিয়ে এসেছেন। কিন্তু সেখানে দেশীয় জ্বালানি সম্পদের উন্নয়নের বিষয়টি ছিল একপ্রকার উপেক্ষিত।
এখন বিশ্ব রাজনীতির টানাপোড়েন, যুদ্ধবিগ্রহ এবং সেই কারণে জ্বালানির আন্তর্জাতিক বাজারের অস্থিতিশীলতার চাপে পিষ্ট হয়ে দেশীয় জ্বালানি সম্পদের আহরণ বাড়ানোর প্রতি নজর পড়েছে। সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ মীমাংসার প্রায় এক দশক পরে এবার দেশের সমুদ্র অঞ্চলে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য নতুন উৎপাদন অংশীদারত্ব চুক্তি (পিএসসি) করে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।
দেশের স্থলভাগে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান বাড়ানোর জন্যও নতুন করে পিএসসি প্রণয়ন করা হচ্ছে। এর বাইরে দেশের বিদ্যমান ক্ষেত্রগুলো এবং চিহ্নিত এলাকায় নতুন কূপ খনন করে গ্যাস উত্তোলন বাড়ানো, দ্বিমাত্রিক ও ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ, পরিত্যক্ত কূপগুলো থেকে পুনরায় গ্যাস উত্তোলন প্রভৃতি কাজ শুরু করা হয়েছে। এরই প্রেক্ষাপটে দেশের জ্বালানি খাতের ভবিষ্যৎ বিষয়ে আমরা দৃষ্টিপাত করতে পারি।
নতুন কূপ খনন: এ বিষয়ে ২০২২-২৩ সালে গৃহীত যে পরিকল্পনার বাস্তবায়ন কাজ চলমান রয়েছে তা হলো, নতুন এবং ওয়ার্কওভার (পুরোনো কূপের সংস্কার) মিলে ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, এর মাধ্যমে দৈনিক মোট ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার কথা। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ১১টি কূপ খনন সম্পন্ন হয়েছে। তাতে দৈনিক মোট ১২৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রাপ্তি নিশ্চিত হয়েছে; যার মধ্যে ৩৩ মিলিয়ন জাতীয় গ্রিডে সঞ্চালন শুরু হয়েছে। আরও ৩টি কূপ খননের কাজ চলছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় না যে ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
আরও বড় পরিকল্পনা: ইতিমধ্যে কূপ খননের আরও বড় একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। তাতে ২০২৫ থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে মোট ৬৯টি নতুন কূপ খনন এবং ৩১টি কূপে ওয়ার্কওভার (সর্বমোট ১০০টি কূপ) করার কথা রয়েছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে গ্যাস উত্তোলন বৃদ্ধির কথা দৈনিক ১ হাজার ৪৮৫ মিলিয়ন ঘনফুট। ১০০ কূপের এই পরিকল্পনাটি আগের ৪৮টির তুলনায় অনেক বেশি সুসংহত। কেননা, সরকারি খাতের ৩টি উত্তোলন কোম্পানি-বাপেক্স, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল) এবং সিলেট গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (এসজিএফএল) শনাক্ত করা সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনাময় স্থান যাচাই-বাছাই করে পরিকল্পনাটি নেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজও ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী, এই ১০০ কূপের মধ্যে নতুন যে ৬৯টি করা হবে, এর ৫২টি করবে বাপেক্স। বিজিএফসিএল করবে ৯টি এবং এসজিএফএল করবে বাকি ৮টি। ওয়ার্কওভার করার জন্য নির্ধারিত ৩১টি কূপ ওই ৩টি কোম্পানি নির্ধারণ করেছে এবং যার যার অংশ সেই সব কোম্পানি বাস্তবায়ন করবে।
১০০টি কূপের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য মোট ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ১ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার অনুদান হিসেবে দেবে ১৩ হাজার ৩২৮ কোটি টাকা (৬৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ) এবং ৩টি কোম্পানির গ্যাস উন্নয়ন তহবিল ও নিজস্ব অনুদান হবে ৫ হাজার ৭২২ কোটি টাকা (৩০ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ)। এই পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করবে দেশীয় গ্যাস উত্তোলনের সক্ষমতা বাড়ানোর সাফল্য। তবে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, এই পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়নের জন্য সরকারের নীতিনির্ধারক, পেট্রোবাংলা এবং সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে।
পরিত্যক্ত কূপে পুনরুৎপাদন: পেট্রোবাংলার গঠিত একটি কমিটির প্রতিবেদনে দেখা যায়, বর্তমানে দেশে মোট ৯৮টি পরিত্যক্ত (বিভিন্ন কারণে সাময়িক বন্ধ) কূপ রয়েছে। এর মধ্যে ৬৭টি কূপ ওয়ার্কওভার করে পুনরায় গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব। এর মাধ্যমে গ্যাস উত্তোলন বাড়তে পারে দৈনিক ২২০ থেকে ২৩০ মিলিয়ন ঘনফুট। এ প্রসঙ্গে স্মরণযোগ্য, এক দশকের বেশিকাল আগে একটি বিদেশি কোম্পানির সহায়তায় পেট্রোবাংলা পরিত্যক্ত কূপগুলোতে পুনরুৎপাদন শুরুর বিষয়ে একটি সমীক্ষা চালিয়েছিল। ওই সমীক্ষা প্রতিবেদনে ‘সীমিত ব্যয়ে এবং স্বল্পতম সময়ে’ প্রায় একই পরিমাণ গ্যাস উত্তোলন সম্ভব বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু দেশে গ্যাসের সংকট থাকা সত্ত্বেও অজ্ঞাত কারণে তখন সেই কাজে হাত দেওয়া হয়নি।
ভূকম্পন জরিপ: সবারই জানা আছে যে আজ পর্যন্ত দেশের জ্বালানি সম্পদের কোনো পূর্ণাঙ্গ ঠিকুজি (রিসোর্স অ্যাসেসমেন্ট) করা হয়নি। এটি করার জন্য দরকার দেশব্যাপী ভূকম্পন জরিপ (সাইসমিক সার্ভে) চালানো। প্রথমে দ্বিমাত্রিক (টু-ডি) এবং তারপর সম্ভাবনাময় এলাকগুলোয় ত্রিমাত্রিক (থ্রি-ডি)। এবার সেই কাজও প্রায় সম্পন্ন করার একটি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী, দেশের যেসব অঞ্চলে আগে কোনো ভূকম্পন জরিপ চালানো হয়নি তার প্রায় পুরোটাই প্রথমে দ্বিমাত্রিক এবং পরে ক্ষেত্রবিশেষে ত্রিমাত্রিক জরিপ চালানো হবে।
এর বাইরে রয়েছে সমুদ্র অঞ্চল—যে বিষয় আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে আরও যে কথাটি বলে রাখা দরকার তা হলো, সমুদ্র অঞ্চলে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে তেল-গ্যাস পাওয়া গেলেও বর্তমান পর্যায় থেকে উত্তোলন পর্যায়ে যেতে কম-বেশি এক দশক সময় লাগতে পারে। সুতরাং দেশের জ্বালানি ঘাটতি মোকাবিলায় প্রথম নির্ভরতা স্থলভাগের ওপর। আর পেট্রোবাংলা যে হিসাব-নিকাশ করেছে সেই অনুযায়ী, ২০২৯-৩০ সালে দেশে গ্যাসের চাহিদা হবে দৈনিক ৫ হাজার ৯২ মিলিয়ন ঘনফুট। আর আমদানি করা এলএনজিসহ মোট সরবরাহ দাঁড়াবে ৪ হাজার ৩৫২ মিলিয়ন ঘনফুট। পেট্রোবাংলা অবশ্য ২০৪০-৪১ সাল পর্যন্ত হিসাব-নিকাশ করেছে। তখনো যে চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ঘাটতি পূরণ হবে—এমন কোনো ইঙ্গিত নেই।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৭ দিন আগে‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।
ধরা যাক, যুদ্ধক্ষেত্রে কামান-বন্দুক সবই আপনার আছে। কিন্তু গোলা-গুলি নেই। ফল কী হবে তা সবাই বোঝে। জ্বালানি হচ্ছে ওই গোলা-গুলির মতো। আপনার যথেষ্ট সংখ্যক বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে। শিল্প, কলকারখানা আছে। মেট্রোরেল আছে। এসবই আরও করছেন। কিন্তু আপনার জ্বালানি নেই। তাহলে এর কোনোটিই চলবে না।
১১ মে ২০২৪‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]
ধরা যাক, যুদ্ধক্ষেত্রে কামান-বন্দুক সবই আপনার আছে। কিন্তু গোলা-গুলি নেই। ফল কী হবে তা সবাই বোঝে। জ্বালানি হচ্ছে ওই গোলা-গুলির মতো। আপনার যথেষ্ট সংখ্যক বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে। শিল্প, কলকারখানা আছে। মেট্রোরেল আছে। এসবই আরও করছেন। কিন্তু আপনার জ্বালানি নেই। তাহলে এর কোনোটিই চলবে না।
১১ মে ২০২৪গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৭ দিন আগেভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।
ধরা যাক, যুদ্ধক্ষেত্রে কামান-বন্দুক সবই আপনার আছে। কিন্তু গোলা-গুলি নেই। ফল কী হবে তা সবাই বোঝে। জ্বালানি হচ্ছে ওই গোলা-গুলির মতো। আপনার যথেষ্ট সংখ্যক বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে। শিল্প, কলকারখানা আছে। মেট্রোরেল আছে। এসবই আরও করছেন। কিন্তু আপনার জ্বালানি নেই। তাহলে এর কোনোটিই চলবে না।
১১ মে ২০২৪গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৭ দিন আগে‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।
ধরা যাক, যুদ্ধক্ষেত্রে কামান-বন্দুক সবই আপনার আছে। কিন্তু গোলা-গুলি নেই। ফল কী হবে তা সবাই বোঝে। জ্বালানি হচ্ছে ওই গোলা-গুলির মতো। আপনার যথেষ্ট সংখ্যক বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে। শিল্প, কলকারখানা আছে। মেট্রোরেল আছে। এসবই আরও করছেন। কিন্তু আপনার জ্বালানি নেই। তাহলে এর কোনোটিই চলবে না।
১১ মে ২০২৪গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৭ দিন আগে‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫