সেলিম জাহান

সম্প্রতি শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়ে গেল। দ্বিতীয় দফায় ৫৭ শতাংশ ভোট পেয়ে দেশটির রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত হলেন বামপন্থী দল জনতা ভিমুক্তি পেরামুনা (জেভিপি) মোর্চার প্রার্থী অনুড়া কুমারা দিশানায়েকে। শ্রীলঙ্কার এই নির্বাচনটি তিনটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ।
এক, ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার চরম অর্থনৈতিক সংকটের পরে এটাই প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। দুই, সেই সংকট উত্তরণের জন্য কৃচ্ছ্রসাধন কর্মসূচির ওপরে এই নির্বাচন আদতে ছিল একটি গণভোট। তিন, সাম্প্রতিক নির্বাচনে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিই ভোটদাতাদের কাছে মুখ্য বিষয়। বলা প্রয়োজন যে বিগত বছরগুলোর বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে জেভিপি তাদের আগেকার চরম অবস্থান থেকে অনেকটা সরে এসে বর্তমান সময়ে নমনীয় একটি দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছে।
একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার থেকে একটি নির্বাচিত সরকারে শ্রীলঙ্কার এই উত্তরণ নিশ্চিতভাবে সাধুবাদের যোগ্য এবং সেই সঙ্গে এই অর্জন উদ্যাপনের দাবি রাখে। কারণ, গত দুই-তিন বছরে দেশটির ওপর দিয়ে বহু ঝড়ঝাপটা গেছে। প্রচুর অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা, অর্বাচীন নীতিমালা, বৈদেশিক খাতের ধস, কোভিড-১৯ এবং আরও নানাবিধ কারণে ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল। বৈদেশিক মুদ্রার মজুত ক্রমবর্ধমান হারে হ্রাস পাচ্ছিল, দেশজ বা বৈদেশিক কোনো ঋণই পরিশোধের মতো সক্ষমতা শ্রীলঙ্কা হারিয়ে ফেলেছিল। সরকারি ঋণ ৮৩ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে দাঁড়ায়। ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে ৫১ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি ঋণ পরিশোধে শ্রীলঙ্কা অপারগ হয়। মূল্যস্ফীতি ৭০ শতাংশে গিয়ে পৌঁছায়, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর অভাব জটিল আকার ধারণ করে, বিদ্যুৎ ঘাটতি চরম পর্যায়ে গিয়ে ঠেকে। জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে এবং বিক্ষুব্ধ জনতার রোষে প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপক্ষে পদত্যাগ করতে এবং দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।
২০২৩ সালে অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপ্রধান রনিল বিক্রমাসিংহে শ্রীলঙ্কার হাল ধরেন। অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইমএফ) শ্রীলঙ্কাকে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলারের অর্থসহায়তা দেয়। এ সহায়তার সঙ্গে সঙ্গে আসে নানান শর্ত, যার মূল কথা ছিল একটি কৃচ্ছ্রসাধন কর্মসূচি। ক্রমান্বয়ে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির মোড় ঘুরতে থাকে। মূল্যস্ফীতি ২০২২ সালের সর্বোচ্চ ৭৯ শতাংশ থেকে ০.৫ শতাংশে নেমে এসেছে, রুপির মান স্থিতিশীল হয়েছে। ২০২২ সালের ৪ শতাংশ রাজস্ব ঘাটতি (জাতীয় আয়ের অনুপাতে) বর্তমানে ০.৬ শতাংশ উদ্বৃত্তে রূপান্তরিত হয়েছে। দেশের ঋণ জাতীয় আয়ের অনুপাত ২০২২ সালের ১২৭ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। এ বছর শ্রীলঙ্কার প্রবৃদ্ধির হার ২.২ শতাংশ হবে বলে বিশ্বব্যাংক প্রাক্কলন করছে।
উপর্যুক্ত চিত্রটি নিশ্চিতভাবে ইতিবাচক। কিন্তু সেই সঙ্গে এটাও মনে রাখা দরকার যে শ্রীলঙ্কার আগামী নেতৃত্বের জন্য দেশটির ভবিষ্যৎ পথযাত্রা মসৃণ হবে না। কোনো সন্দেহ নেই যে গত দুই বছরে বিভিন্ন বিষয়ে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে বেশ কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু সে অর্জন এখনো ভঙ্গুর এবং নতুন রাষ্ট্রপ্রধানের সামনে অন্তরায় অনেক। এই পরিপ্রেক্ষিতে পাঁচটি সমস্যাকে চিহ্নিত করা যায়।
প্রথমত, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলকে বিভিন্ন বিষয়ে নতুন একটা বোঝাপড়ায় আসতে হবে বলে অনুড়া দিশানায়েকে মতপ্রকাশ করেছেন। যেমন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল চায় যে শ্রীলঙ্কার দেশজ এবং বহিঃঋণ একইভাবে মূল্যায়িত হোক। নতুন রাষ্ট্রপ্রধান এর বিরোধিতা করেছেন। তেমনিভাবে তিনি বলেছেন, দেশের ঋণভারের সিংহভাগই যেন তাঁর জনগণের ওপরে না পড়ে সেটা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলকে নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির ভঙ্গুর অবস্থা এবং দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের শ্লথগতির কারণে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের আদি শর্ত পরিবর্তন করা দুরূহ হবে।
যেমন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল চায় যে ২০২৭ সাল পর্যন্ত তাদের দেওয়া নীতিমালা এবং শর্তগুলো পালন করা হবে, যাতে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি একটি স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি পথরেখা অনুসরণ করে, বাজারব্যবস্থাকে আশ্বস্ত করে, ঋণ পরিশোধ করে এবং বিনিয়োগকারীদের আকর্ষিত করে। শ্রীলঙ্কাকে নিশ্চিত করতে হবে যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ যেকোনো নীতি বা শর্ত পরিবর্তন করতে হলে তা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি সমঝোতার সঙ্গে করা হবে।
দ্বিতীয়ত, নির্বাচনী প্রচারাভিযানের সময়ে অনুড়া দিশানায়েকে বলেছিলেন কৃচ্ছ্রসাধন কর্মসূচির কারণে যাঁরা অর্থনৈতিকভাবে নিপিষ্ট হচ্ছেন, তাঁদের জীবনমান পরিবর্তনের প্রার্থী তিনি। সাম্প্রতিক সময়ে শ্রীলঙ্কার দারিদ্র্যের হার আপাতন ঊর্ধ্বমুখী। বিশ্বব্যাংকের প্রাক্কলন মতে, ২০১৯ সাল থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে দেশটিতে দারিদ্র্যের হার দ্বিগুণ হয়েছে এবং শ্রীলঙ্কার ২৫ শতাংশ লোক এখন দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। জীবনযাত্রার ব্যয় এখনো বড় বেশি এবং দেশটিতে প্রকৃত মজুরির মান এখনো সংকটপূর্ব মজুরিস্তরে পৌঁছাতে পারেনি।
নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপ্রধান প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে শ্রীলঙ্কার আয়করমুক্ত আয়স্তর বর্ধিত করা হবে এবং কিছু স্বাস্থ্য ও খাদ্যসম্পর্কিত পণ্যসামগ্রীকে ১৮ শতাংশ মূল্য সংযোজন করের আওতায় আনা হবে না, যাতে এগুলো সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে। এসব প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা রীতিমতো দুরূহ হবে। করের ক্ষেত্রে কর হ্রাসের কথা বলে নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপ্রধান ইতিমধ্যেই ব্যবসায়ী মহলকে উদ্বেগের মধ্যে ফেলে দিয়েছেন। কারণ, তাঁরা মনে করছেন, কর কমিয়ে ফেললে শ্রীলঙ্কা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে এবং ২০ বিলিয়ন ডলারের ঋণের ব্যাপারে ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হবে। এর ফলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের নতুন শর্তাবলি আরোপিত হতে পারে। বিদ্যুতের ওপরে ভর্তুকি তুলে নেওয়া এবং মূল্য সংযোজন কর দ্বিগুণ করার কার্যক্রম যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তিই বাড়বে।
তৃতীয়ত, শ্রীলঙ্কার বিস্তৃত কৃচ্ছ্রসাধন কার্যক্রমের মধ্যে সার্বভৌম ঋণকাঠামোর পুনঃসংস্কারও অন্তর্ভুক্ত। তত্ত্বীয় দিক থেকে ঋণ পুনঃসংস্কারের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে ঋণব্যয় কমানো এবং যাতে শিক্ষা বা স্বাস্থ্যসেবা খাতের জন্য সম্পদ লভ্য হয়। শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে সেটা ঘটছে না। শ্রীলঙ্কার সাম্প্রতিক আর্থিক কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ২০২৩ সালের ঋণ বজায়ক্ষমতা বিশ্লেষণের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। সমস্যা হচ্ছে যে এ বিশ্লেষণ সঠিক নয়, যার জন্য শ্রীলঙ্কার ঋণ-উপশম কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে ঘটেনি। সত্যিকার অর্থে, প্রচুর পরিমাণে বাজেট উদ্বৃত্ত তৈরি করে দেশটিকে ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে। ফলে, সামাজিক খাতে ব্যয় করার মতো পর্যাপ্ত সম্পদ লভ্য হয়নি। অন্যদিকে নিচু করযোগ্য স্তরের কারণে শ্রীলঙ্কার রাজস্ববলয়েও নানান অন্তরায়ের সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের মতে, নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে করজাতীয় আয়ের অনুপাত হচ্ছে ১৫-২০ শতাংশ। শ্রীলঙ্কায় সে অনুপাতের মান হচ্ছে মাত্র ৮ শতাংশ, যা বিশ্বের মধ্যে নিম্নতম অনুপাতগুলোর একটি। বহু বছরের মুক্তবাজার অর্থনৈতিক নীতিমালা অনুসরণ এবং ২০১৯ সালের চরম ক্ষতিকর বাজেট উপস্থাপন শ্রীলঙ্কার রাজস্ব স্থিতিশীলতাকে বিনষ্ট করেছে। ঋণ পরিশোধ সরকারি আয়ের অনুপাত বিশ্বের মধ্যে শ্রীলঙ্কাতেই সবচেয়ে খারাপ এবং শ্রীলঙ্কার দ্বিপক্ষীয় ঋণ পরিশোধের বর্ধিত সময়সীমা ২০২৮ সালেই শেষ হয়ে যাবে। বর্তমান প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে দেশটি বারংবার ঋণ খেলাপে জর্জরিত হবে।
চতুর্থত, শ্রীলঙ্কার ভূরাজনৈতিক পরিবেষ্টনও জটিল। এ অঞ্চলের আর পাঁচটি দেশের মতো শ্রীলঙ্কাও ভারতবান্ধব এবং চীনবান্ধব এই দুটি অবস্থানের মধ্যে দোদুল্যমান থাকে, কারণ এ দুটি দেশের কোনোটির সঙ্গেই সে একটি উদাসীন মনোভাব পোষণ করতে পারে না। যেমন, গত বছর শ্রীলঙ্কাকে দেয় একটি ঋণ-উপশমকাঠামো অনুমোদন করতে চীন বিলম্ব করছিল। কারণ, শ্রীলঙ্কার জন্য গঠিত সরকারি দাতা পর্ষদের সভাপতি জাপান এবং ফ্রান্সের সঙ্গে ভারতও। এই পর্ষদের মাধ্যমের পরিবর্তে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় আগ্রহী চীন।
অতএব এসব ডামাডোলের কারণে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ঋণসাহায্যের দ্বিতীয় কিস্তি পেতে দেরি হয় শ্রীলঙ্কার। শ্রীলঙ্কায় শুধু চীন বা ভারতের স্বার্থ রয়েছে, এমন নয়। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন অর্থায়ন প্রতিষ্ঠান কলম্বো বন্দরে গভীর জলাস্থিত একটি কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার সাহায্যদানের অঙ্গীকার করেছে। এমন সব প্রকল্পের দুটো উদ্দেশ্য—এক, শ্রীলঙ্কার ব্যাপারে চীনের প্রভাব হ্রাস করা এবং দুই, ভারত মহাসাগরের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যপথের পরিপ্রেক্ষিতে শ্রীলঙ্কার ভূরাজনৈতিক গুরুত্বকে পুনর্ব্যক্ত করা।
সত্যিকার অর্থে, চীন এবং ভারতের মতো দুটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক প্রতিবেশীর টানাপোড়েন সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে তার ভূরাজনৈতিক নিরপেক্ষতা দেশটির সংস্কার কার্যক্রমের সফলতার জন্য অপরিহার্য। সেই সঙ্গে এটাও মনে রাখা প্রয়োজন যে ২০০৯ সালে শেষ হলেও তিন দশকের গৃহযুদ্ধের ক্ষত শ্রীলঙ্কা এখনো বহন করছে। দেশটির গৃহযুদ্ধের নির্মমতা এবং সেই সঙ্গে প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপক্ষে সরকারের সিংহলি জাতীয়তাবাদের পৃষ্ঠপোষকতা দেশের সংখ্যালঘু তামিল জনগোষ্ঠীর সঙ্গে অর্থবহ একটি সমঝোতার পরিপন্থী বলে প্রতীয়মান হয়েছিল।
শেষতক শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের জন্য দেশটির নীতিমালার মধ্যে সমন্বয় অতীব প্রয়োজনীয়। গত দুই বছরে দুর্নীতি দমন এবং সরকারি ঋণ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ৭০টির বেশি আইন প্রণীত ও অনুমোদিত হয়েছে। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট দেশের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবেন বলে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শ্রীলঙ্কায় একাধিক অনুগামী সরকারের অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং অবিবেচক নীতিমালা দেশটির অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনাকে আরও দুর্বল করেছে। কিন্তু এখনো সৃজনশীল চিন্তাভাবনার সুযোগ আছে। যেমন, দেশটির সামুদ্রিক সম্পদ এবং সৈকত-বায়ুকে কাজে লাগিয়ে দেশের অর্থনীতিতে নতুন গতির সঞ্চার করা যায়।
শ্রীলঙ্কার নারকেল এবং দুগ্ধজাতশিল্পে বিনিয়োগ করলে একদিকে যেমন গ্রামীণ অর্থনীতির ভিত আরও মজবুত হবে, অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রারও সাশ্রয় হবে। কাঠামোগত সংস্কারের ক্রমাগত বাস্তবায়ন এবং সেই সঙ্গে দেশের বাইরে নিয়োজিত শ্রীলঙ্কার শ্রমশক্তির প্রেরিত অর্থপ্রবাহ এবং পর্যটনশিল্পের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বহির্বিশ্ব থেকে বাড়তি পুঁজিপ্রবাহ বাড়িয়ে দেবে।
লেখক: অর্থনীতিবিদ

সম্প্রতি শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়ে গেল। দ্বিতীয় দফায় ৫৭ শতাংশ ভোট পেয়ে দেশটির রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত হলেন বামপন্থী দল জনতা ভিমুক্তি পেরামুনা (জেভিপি) মোর্চার প্রার্থী অনুড়া কুমারা দিশানায়েকে। শ্রীলঙ্কার এই নির্বাচনটি তিনটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ।
এক, ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার চরম অর্থনৈতিক সংকটের পরে এটাই প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। দুই, সেই সংকট উত্তরণের জন্য কৃচ্ছ্রসাধন কর্মসূচির ওপরে এই নির্বাচন আদতে ছিল একটি গণভোট। তিন, সাম্প্রতিক নির্বাচনে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিই ভোটদাতাদের কাছে মুখ্য বিষয়। বলা প্রয়োজন যে বিগত বছরগুলোর বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে জেভিপি তাদের আগেকার চরম অবস্থান থেকে অনেকটা সরে এসে বর্তমান সময়ে নমনীয় একটি দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছে।
একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার থেকে একটি নির্বাচিত সরকারে শ্রীলঙ্কার এই উত্তরণ নিশ্চিতভাবে সাধুবাদের যোগ্য এবং সেই সঙ্গে এই অর্জন উদ্যাপনের দাবি রাখে। কারণ, গত দুই-তিন বছরে দেশটির ওপর দিয়ে বহু ঝড়ঝাপটা গেছে। প্রচুর অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা, অর্বাচীন নীতিমালা, বৈদেশিক খাতের ধস, কোভিড-১৯ এবং আরও নানাবিধ কারণে ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল। বৈদেশিক মুদ্রার মজুত ক্রমবর্ধমান হারে হ্রাস পাচ্ছিল, দেশজ বা বৈদেশিক কোনো ঋণই পরিশোধের মতো সক্ষমতা শ্রীলঙ্কা হারিয়ে ফেলেছিল। সরকারি ঋণ ৮৩ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে দাঁড়ায়। ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে ৫১ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি ঋণ পরিশোধে শ্রীলঙ্কা অপারগ হয়। মূল্যস্ফীতি ৭০ শতাংশে গিয়ে পৌঁছায়, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর অভাব জটিল আকার ধারণ করে, বিদ্যুৎ ঘাটতি চরম পর্যায়ে গিয়ে ঠেকে। জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে এবং বিক্ষুব্ধ জনতার রোষে প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপক্ষে পদত্যাগ করতে এবং দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।
২০২৩ সালে অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপ্রধান রনিল বিক্রমাসিংহে শ্রীলঙ্কার হাল ধরেন। অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইমএফ) শ্রীলঙ্কাকে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলারের অর্থসহায়তা দেয়। এ সহায়তার সঙ্গে সঙ্গে আসে নানান শর্ত, যার মূল কথা ছিল একটি কৃচ্ছ্রসাধন কর্মসূচি। ক্রমান্বয়ে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির মোড় ঘুরতে থাকে। মূল্যস্ফীতি ২০২২ সালের সর্বোচ্চ ৭৯ শতাংশ থেকে ০.৫ শতাংশে নেমে এসেছে, রুপির মান স্থিতিশীল হয়েছে। ২০২২ সালের ৪ শতাংশ রাজস্ব ঘাটতি (জাতীয় আয়ের অনুপাতে) বর্তমানে ০.৬ শতাংশ উদ্বৃত্তে রূপান্তরিত হয়েছে। দেশের ঋণ জাতীয় আয়ের অনুপাত ২০২২ সালের ১২৭ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। এ বছর শ্রীলঙ্কার প্রবৃদ্ধির হার ২.২ শতাংশ হবে বলে বিশ্বব্যাংক প্রাক্কলন করছে।
উপর্যুক্ত চিত্রটি নিশ্চিতভাবে ইতিবাচক। কিন্তু সেই সঙ্গে এটাও মনে রাখা দরকার যে শ্রীলঙ্কার আগামী নেতৃত্বের জন্য দেশটির ভবিষ্যৎ পথযাত্রা মসৃণ হবে না। কোনো সন্দেহ নেই যে গত দুই বছরে বিভিন্ন বিষয়ে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে বেশ কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু সে অর্জন এখনো ভঙ্গুর এবং নতুন রাষ্ট্রপ্রধানের সামনে অন্তরায় অনেক। এই পরিপ্রেক্ষিতে পাঁচটি সমস্যাকে চিহ্নিত করা যায়।
প্রথমত, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলকে বিভিন্ন বিষয়ে নতুন একটা বোঝাপড়ায় আসতে হবে বলে অনুড়া দিশানায়েকে মতপ্রকাশ করেছেন। যেমন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল চায় যে শ্রীলঙ্কার দেশজ এবং বহিঃঋণ একইভাবে মূল্যায়িত হোক। নতুন রাষ্ট্রপ্রধান এর বিরোধিতা করেছেন। তেমনিভাবে তিনি বলেছেন, দেশের ঋণভারের সিংহভাগই যেন তাঁর জনগণের ওপরে না পড়ে সেটা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলকে নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির ভঙ্গুর অবস্থা এবং দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের শ্লথগতির কারণে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের আদি শর্ত পরিবর্তন করা দুরূহ হবে।
যেমন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল চায় যে ২০২৭ সাল পর্যন্ত তাদের দেওয়া নীতিমালা এবং শর্তগুলো পালন করা হবে, যাতে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি একটি স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি পথরেখা অনুসরণ করে, বাজারব্যবস্থাকে আশ্বস্ত করে, ঋণ পরিশোধ করে এবং বিনিয়োগকারীদের আকর্ষিত করে। শ্রীলঙ্কাকে নিশ্চিত করতে হবে যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ যেকোনো নীতি বা শর্ত পরিবর্তন করতে হলে তা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি সমঝোতার সঙ্গে করা হবে।
দ্বিতীয়ত, নির্বাচনী প্রচারাভিযানের সময়ে অনুড়া দিশানায়েকে বলেছিলেন কৃচ্ছ্রসাধন কর্মসূচির কারণে যাঁরা অর্থনৈতিকভাবে নিপিষ্ট হচ্ছেন, তাঁদের জীবনমান পরিবর্তনের প্রার্থী তিনি। সাম্প্রতিক সময়ে শ্রীলঙ্কার দারিদ্র্যের হার আপাতন ঊর্ধ্বমুখী। বিশ্বব্যাংকের প্রাক্কলন মতে, ২০১৯ সাল থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে দেশটিতে দারিদ্র্যের হার দ্বিগুণ হয়েছে এবং শ্রীলঙ্কার ২৫ শতাংশ লোক এখন দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। জীবনযাত্রার ব্যয় এখনো বড় বেশি এবং দেশটিতে প্রকৃত মজুরির মান এখনো সংকটপূর্ব মজুরিস্তরে পৌঁছাতে পারেনি।
নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপ্রধান প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে শ্রীলঙ্কার আয়করমুক্ত আয়স্তর বর্ধিত করা হবে এবং কিছু স্বাস্থ্য ও খাদ্যসম্পর্কিত পণ্যসামগ্রীকে ১৮ শতাংশ মূল্য সংযোজন করের আওতায় আনা হবে না, যাতে এগুলো সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে। এসব প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা রীতিমতো দুরূহ হবে। করের ক্ষেত্রে কর হ্রাসের কথা বলে নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপ্রধান ইতিমধ্যেই ব্যবসায়ী মহলকে উদ্বেগের মধ্যে ফেলে দিয়েছেন। কারণ, তাঁরা মনে করছেন, কর কমিয়ে ফেললে শ্রীলঙ্কা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে এবং ২০ বিলিয়ন ডলারের ঋণের ব্যাপারে ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হবে। এর ফলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের নতুন শর্তাবলি আরোপিত হতে পারে। বিদ্যুতের ওপরে ভর্তুকি তুলে নেওয়া এবং মূল্য সংযোজন কর দ্বিগুণ করার কার্যক্রম যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তিই বাড়বে।
তৃতীয়ত, শ্রীলঙ্কার বিস্তৃত কৃচ্ছ্রসাধন কার্যক্রমের মধ্যে সার্বভৌম ঋণকাঠামোর পুনঃসংস্কারও অন্তর্ভুক্ত। তত্ত্বীয় দিক থেকে ঋণ পুনঃসংস্কারের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে ঋণব্যয় কমানো এবং যাতে শিক্ষা বা স্বাস্থ্যসেবা খাতের জন্য সম্পদ লভ্য হয়। শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে সেটা ঘটছে না। শ্রীলঙ্কার সাম্প্রতিক আর্থিক কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ২০২৩ সালের ঋণ বজায়ক্ষমতা বিশ্লেষণের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। সমস্যা হচ্ছে যে এ বিশ্লেষণ সঠিক নয়, যার জন্য শ্রীলঙ্কার ঋণ-উপশম কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে ঘটেনি। সত্যিকার অর্থে, প্রচুর পরিমাণে বাজেট উদ্বৃত্ত তৈরি করে দেশটিকে ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে। ফলে, সামাজিক খাতে ব্যয় করার মতো পর্যাপ্ত সম্পদ লভ্য হয়নি। অন্যদিকে নিচু করযোগ্য স্তরের কারণে শ্রীলঙ্কার রাজস্ববলয়েও নানান অন্তরায়ের সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের মতে, নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে করজাতীয় আয়ের অনুপাত হচ্ছে ১৫-২০ শতাংশ। শ্রীলঙ্কায় সে অনুপাতের মান হচ্ছে মাত্র ৮ শতাংশ, যা বিশ্বের মধ্যে নিম্নতম অনুপাতগুলোর একটি। বহু বছরের মুক্তবাজার অর্থনৈতিক নীতিমালা অনুসরণ এবং ২০১৯ সালের চরম ক্ষতিকর বাজেট উপস্থাপন শ্রীলঙ্কার রাজস্ব স্থিতিশীলতাকে বিনষ্ট করেছে। ঋণ পরিশোধ সরকারি আয়ের অনুপাত বিশ্বের মধ্যে শ্রীলঙ্কাতেই সবচেয়ে খারাপ এবং শ্রীলঙ্কার দ্বিপক্ষীয় ঋণ পরিশোধের বর্ধিত সময়সীমা ২০২৮ সালেই শেষ হয়ে যাবে। বর্তমান প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে দেশটি বারংবার ঋণ খেলাপে জর্জরিত হবে।
চতুর্থত, শ্রীলঙ্কার ভূরাজনৈতিক পরিবেষ্টনও জটিল। এ অঞ্চলের আর পাঁচটি দেশের মতো শ্রীলঙ্কাও ভারতবান্ধব এবং চীনবান্ধব এই দুটি অবস্থানের মধ্যে দোদুল্যমান থাকে, কারণ এ দুটি দেশের কোনোটির সঙ্গেই সে একটি উদাসীন মনোভাব পোষণ করতে পারে না। যেমন, গত বছর শ্রীলঙ্কাকে দেয় একটি ঋণ-উপশমকাঠামো অনুমোদন করতে চীন বিলম্ব করছিল। কারণ, শ্রীলঙ্কার জন্য গঠিত সরকারি দাতা পর্ষদের সভাপতি জাপান এবং ফ্রান্সের সঙ্গে ভারতও। এই পর্ষদের মাধ্যমের পরিবর্তে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় আগ্রহী চীন।
অতএব এসব ডামাডোলের কারণে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ঋণসাহায্যের দ্বিতীয় কিস্তি পেতে দেরি হয় শ্রীলঙ্কার। শ্রীলঙ্কায় শুধু চীন বা ভারতের স্বার্থ রয়েছে, এমন নয়। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন অর্থায়ন প্রতিষ্ঠান কলম্বো বন্দরে গভীর জলাস্থিত একটি কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার সাহায্যদানের অঙ্গীকার করেছে। এমন সব প্রকল্পের দুটো উদ্দেশ্য—এক, শ্রীলঙ্কার ব্যাপারে চীনের প্রভাব হ্রাস করা এবং দুই, ভারত মহাসাগরের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যপথের পরিপ্রেক্ষিতে শ্রীলঙ্কার ভূরাজনৈতিক গুরুত্বকে পুনর্ব্যক্ত করা।
সত্যিকার অর্থে, চীন এবং ভারতের মতো দুটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক প্রতিবেশীর টানাপোড়েন সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে তার ভূরাজনৈতিক নিরপেক্ষতা দেশটির সংস্কার কার্যক্রমের সফলতার জন্য অপরিহার্য। সেই সঙ্গে এটাও মনে রাখা প্রয়োজন যে ২০০৯ সালে শেষ হলেও তিন দশকের গৃহযুদ্ধের ক্ষত শ্রীলঙ্কা এখনো বহন করছে। দেশটির গৃহযুদ্ধের নির্মমতা এবং সেই সঙ্গে প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপক্ষে সরকারের সিংহলি জাতীয়তাবাদের পৃষ্ঠপোষকতা দেশের সংখ্যালঘু তামিল জনগোষ্ঠীর সঙ্গে অর্থবহ একটি সমঝোতার পরিপন্থী বলে প্রতীয়মান হয়েছিল।
শেষতক শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের জন্য দেশটির নীতিমালার মধ্যে সমন্বয় অতীব প্রয়োজনীয়। গত দুই বছরে দুর্নীতি দমন এবং সরকারি ঋণ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ৭০টির বেশি আইন প্রণীত ও অনুমোদিত হয়েছে। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট দেশের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবেন বলে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শ্রীলঙ্কায় একাধিক অনুগামী সরকারের অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং অবিবেচক নীতিমালা দেশটির অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনাকে আরও দুর্বল করেছে। কিন্তু এখনো সৃজনশীল চিন্তাভাবনার সুযোগ আছে। যেমন, দেশটির সামুদ্রিক সম্পদ এবং সৈকত-বায়ুকে কাজে লাগিয়ে দেশের অর্থনীতিতে নতুন গতির সঞ্চার করা যায়।
শ্রীলঙ্কার নারকেল এবং দুগ্ধজাতশিল্পে বিনিয়োগ করলে একদিকে যেমন গ্রামীণ অর্থনীতির ভিত আরও মজবুত হবে, অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রারও সাশ্রয় হবে। কাঠামোগত সংস্কারের ক্রমাগত বাস্তবায়ন এবং সেই সঙ্গে দেশের বাইরে নিয়োজিত শ্রীলঙ্কার শ্রমশক্তির প্রেরিত অর্থপ্রবাহ এবং পর্যটনশিল্পের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বহির্বিশ্ব থেকে বাড়তি পুঁজিপ্রবাহ বাড়িয়ে দেবে।
লেখক: অর্থনীতিবিদ
সেলিম জাহান

সম্প্রতি শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়ে গেল। দ্বিতীয় দফায় ৫৭ শতাংশ ভোট পেয়ে দেশটির রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত হলেন বামপন্থী দল জনতা ভিমুক্তি পেরামুনা (জেভিপি) মোর্চার প্রার্থী অনুড়া কুমারা দিশানায়েকে। শ্রীলঙ্কার এই নির্বাচনটি তিনটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ।
এক, ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার চরম অর্থনৈতিক সংকটের পরে এটাই প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। দুই, সেই সংকট উত্তরণের জন্য কৃচ্ছ্রসাধন কর্মসূচির ওপরে এই নির্বাচন আদতে ছিল একটি গণভোট। তিন, সাম্প্রতিক নির্বাচনে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিই ভোটদাতাদের কাছে মুখ্য বিষয়। বলা প্রয়োজন যে বিগত বছরগুলোর বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে জেভিপি তাদের আগেকার চরম অবস্থান থেকে অনেকটা সরে এসে বর্তমান সময়ে নমনীয় একটি দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছে।
একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার থেকে একটি নির্বাচিত সরকারে শ্রীলঙ্কার এই উত্তরণ নিশ্চিতভাবে সাধুবাদের যোগ্য এবং সেই সঙ্গে এই অর্জন উদ্যাপনের দাবি রাখে। কারণ, গত দুই-তিন বছরে দেশটির ওপর দিয়ে বহু ঝড়ঝাপটা গেছে। প্রচুর অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা, অর্বাচীন নীতিমালা, বৈদেশিক খাতের ধস, কোভিড-১৯ এবং আরও নানাবিধ কারণে ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল। বৈদেশিক মুদ্রার মজুত ক্রমবর্ধমান হারে হ্রাস পাচ্ছিল, দেশজ বা বৈদেশিক কোনো ঋণই পরিশোধের মতো সক্ষমতা শ্রীলঙ্কা হারিয়ে ফেলেছিল। সরকারি ঋণ ৮৩ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে দাঁড়ায়। ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে ৫১ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি ঋণ পরিশোধে শ্রীলঙ্কা অপারগ হয়। মূল্যস্ফীতি ৭০ শতাংশে গিয়ে পৌঁছায়, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর অভাব জটিল আকার ধারণ করে, বিদ্যুৎ ঘাটতি চরম পর্যায়ে গিয়ে ঠেকে। জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে এবং বিক্ষুব্ধ জনতার রোষে প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপক্ষে পদত্যাগ করতে এবং দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।
২০২৩ সালে অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপ্রধান রনিল বিক্রমাসিংহে শ্রীলঙ্কার হাল ধরেন। অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইমএফ) শ্রীলঙ্কাকে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলারের অর্থসহায়তা দেয়। এ সহায়তার সঙ্গে সঙ্গে আসে নানান শর্ত, যার মূল কথা ছিল একটি কৃচ্ছ্রসাধন কর্মসূচি। ক্রমান্বয়ে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির মোড় ঘুরতে থাকে। মূল্যস্ফীতি ২০২২ সালের সর্বোচ্চ ৭৯ শতাংশ থেকে ০.৫ শতাংশে নেমে এসেছে, রুপির মান স্থিতিশীল হয়েছে। ২০২২ সালের ৪ শতাংশ রাজস্ব ঘাটতি (জাতীয় আয়ের অনুপাতে) বর্তমানে ০.৬ শতাংশ উদ্বৃত্তে রূপান্তরিত হয়েছে। দেশের ঋণ জাতীয় আয়ের অনুপাত ২০২২ সালের ১২৭ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। এ বছর শ্রীলঙ্কার প্রবৃদ্ধির হার ২.২ শতাংশ হবে বলে বিশ্বব্যাংক প্রাক্কলন করছে।
উপর্যুক্ত চিত্রটি নিশ্চিতভাবে ইতিবাচক। কিন্তু সেই সঙ্গে এটাও মনে রাখা দরকার যে শ্রীলঙ্কার আগামী নেতৃত্বের জন্য দেশটির ভবিষ্যৎ পথযাত্রা মসৃণ হবে না। কোনো সন্দেহ নেই যে গত দুই বছরে বিভিন্ন বিষয়ে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে বেশ কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু সে অর্জন এখনো ভঙ্গুর এবং নতুন রাষ্ট্রপ্রধানের সামনে অন্তরায় অনেক। এই পরিপ্রেক্ষিতে পাঁচটি সমস্যাকে চিহ্নিত করা যায়।
প্রথমত, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলকে বিভিন্ন বিষয়ে নতুন একটা বোঝাপড়ায় আসতে হবে বলে অনুড়া দিশানায়েকে মতপ্রকাশ করেছেন। যেমন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল চায় যে শ্রীলঙ্কার দেশজ এবং বহিঃঋণ একইভাবে মূল্যায়িত হোক। নতুন রাষ্ট্রপ্রধান এর বিরোধিতা করেছেন। তেমনিভাবে তিনি বলেছেন, দেশের ঋণভারের সিংহভাগই যেন তাঁর জনগণের ওপরে না পড়ে সেটা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলকে নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির ভঙ্গুর অবস্থা এবং দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের শ্লথগতির কারণে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের আদি শর্ত পরিবর্তন করা দুরূহ হবে।
যেমন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল চায় যে ২০২৭ সাল পর্যন্ত তাদের দেওয়া নীতিমালা এবং শর্তগুলো পালন করা হবে, যাতে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি একটি স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি পথরেখা অনুসরণ করে, বাজারব্যবস্থাকে আশ্বস্ত করে, ঋণ পরিশোধ করে এবং বিনিয়োগকারীদের আকর্ষিত করে। শ্রীলঙ্কাকে নিশ্চিত করতে হবে যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ যেকোনো নীতি বা শর্ত পরিবর্তন করতে হলে তা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি সমঝোতার সঙ্গে করা হবে।
দ্বিতীয়ত, নির্বাচনী প্রচারাভিযানের সময়ে অনুড়া দিশানায়েকে বলেছিলেন কৃচ্ছ্রসাধন কর্মসূচির কারণে যাঁরা অর্থনৈতিকভাবে নিপিষ্ট হচ্ছেন, তাঁদের জীবনমান পরিবর্তনের প্রার্থী তিনি। সাম্প্রতিক সময়ে শ্রীলঙ্কার দারিদ্র্যের হার আপাতন ঊর্ধ্বমুখী। বিশ্বব্যাংকের প্রাক্কলন মতে, ২০১৯ সাল থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে দেশটিতে দারিদ্র্যের হার দ্বিগুণ হয়েছে এবং শ্রীলঙ্কার ২৫ শতাংশ লোক এখন দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। জীবনযাত্রার ব্যয় এখনো বড় বেশি এবং দেশটিতে প্রকৃত মজুরির মান এখনো সংকটপূর্ব মজুরিস্তরে পৌঁছাতে পারেনি।
নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপ্রধান প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে শ্রীলঙ্কার আয়করমুক্ত আয়স্তর বর্ধিত করা হবে এবং কিছু স্বাস্থ্য ও খাদ্যসম্পর্কিত পণ্যসামগ্রীকে ১৮ শতাংশ মূল্য সংযোজন করের আওতায় আনা হবে না, যাতে এগুলো সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে। এসব প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা রীতিমতো দুরূহ হবে। করের ক্ষেত্রে কর হ্রাসের কথা বলে নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপ্রধান ইতিমধ্যেই ব্যবসায়ী মহলকে উদ্বেগের মধ্যে ফেলে দিয়েছেন। কারণ, তাঁরা মনে করছেন, কর কমিয়ে ফেললে শ্রীলঙ্কা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে এবং ২০ বিলিয়ন ডলারের ঋণের ব্যাপারে ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হবে। এর ফলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের নতুন শর্তাবলি আরোপিত হতে পারে। বিদ্যুতের ওপরে ভর্তুকি তুলে নেওয়া এবং মূল্য সংযোজন কর দ্বিগুণ করার কার্যক্রম যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তিই বাড়বে।
তৃতীয়ত, শ্রীলঙ্কার বিস্তৃত কৃচ্ছ্রসাধন কার্যক্রমের মধ্যে সার্বভৌম ঋণকাঠামোর পুনঃসংস্কারও অন্তর্ভুক্ত। তত্ত্বীয় দিক থেকে ঋণ পুনঃসংস্কারের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে ঋণব্যয় কমানো এবং যাতে শিক্ষা বা স্বাস্থ্যসেবা খাতের জন্য সম্পদ লভ্য হয়। শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে সেটা ঘটছে না। শ্রীলঙ্কার সাম্প্রতিক আর্থিক কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ২০২৩ সালের ঋণ বজায়ক্ষমতা বিশ্লেষণের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। সমস্যা হচ্ছে যে এ বিশ্লেষণ সঠিক নয়, যার জন্য শ্রীলঙ্কার ঋণ-উপশম কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে ঘটেনি। সত্যিকার অর্থে, প্রচুর পরিমাণে বাজেট উদ্বৃত্ত তৈরি করে দেশটিকে ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে। ফলে, সামাজিক খাতে ব্যয় করার মতো পর্যাপ্ত সম্পদ লভ্য হয়নি। অন্যদিকে নিচু করযোগ্য স্তরের কারণে শ্রীলঙ্কার রাজস্ববলয়েও নানান অন্তরায়ের সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের মতে, নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে করজাতীয় আয়ের অনুপাত হচ্ছে ১৫-২০ শতাংশ। শ্রীলঙ্কায় সে অনুপাতের মান হচ্ছে মাত্র ৮ শতাংশ, যা বিশ্বের মধ্যে নিম্নতম অনুপাতগুলোর একটি। বহু বছরের মুক্তবাজার অর্থনৈতিক নীতিমালা অনুসরণ এবং ২০১৯ সালের চরম ক্ষতিকর বাজেট উপস্থাপন শ্রীলঙ্কার রাজস্ব স্থিতিশীলতাকে বিনষ্ট করেছে। ঋণ পরিশোধ সরকারি আয়ের অনুপাত বিশ্বের মধ্যে শ্রীলঙ্কাতেই সবচেয়ে খারাপ এবং শ্রীলঙ্কার দ্বিপক্ষীয় ঋণ পরিশোধের বর্ধিত সময়সীমা ২০২৮ সালেই শেষ হয়ে যাবে। বর্তমান প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে দেশটি বারংবার ঋণ খেলাপে জর্জরিত হবে।
চতুর্থত, শ্রীলঙ্কার ভূরাজনৈতিক পরিবেষ্টনও জটিল। এ অঞ্চলের আর পাঁচটি দেশের মতো শ্রীলঙ্কাও ভারতবান্ধব এবং চীনবান্ধব এই দুটি অবস্থানের মধ্যে দোদুল্যমান থাকে, কারণ এ দুটি দেশের কোনোটির সঙ্গেই সে একটি উদাসীন মনোভাব পোষণ করতে পারে না। যেমন, গত বছর শ্রীলঙ্কাকে দেয় একটি ঋণ-উপশমকাঠামো অনুমোদন করতে চীন বিলম্ব করছিল। কারণ, শ্রীলঙ্কার জন্য গঠিত সরকারি দাতা পর্ষদের সভাপতি জাপান এবং ফ্রান্সের সঙ্গে ভারতও। এই পর্ষদের মাধ্যমের পরিবর্তে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় আগ্রহী চীন।
অতএব এসব ডামাডোলের কারণে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ঋণসাহায্যের দ্বিতীয় কিস্তি পেতে দেরি হয় শ্রীলঙ্কার। শ্রীলঙ্কায় শুধু চীন বা ভারতের স্বার্থ রয়েছে, এমন নয়। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন অর্থায়ন প্রতিষ্ঠান কলম্বো বন্দরে গভীর জলাস্থিত একটি কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার সাহায্যদানের অঙ্গীকার করেছে। এমন সব প্রকল্পের দুটো উদ্দেশ্য—এক, শ্রীলঙ্কার ব্যাপারে চীনের প্রভাব হ্রাস করা এবং দুই, ভারত মহাসাগরের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যপথের পরিপ্রেক্ষিতে শ্রীলঙ্কার ভূরাজনৈতিক গুরুত্বকে পুনর্ব্যক্ত করা।
সত্যিকার অর্থে, চীন এবং ভারতের মতো দুটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক প্রতিবেশীর টানাপোড়েন সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে তার ভূরাজনৈতিক নিরপেক্ষতা দেশটির সংস্কার কার্যক্রমের সফলতার জন্য অপরিহার্য। সেই সঙ্গে এটাও মনে রাখা প্রয়োজন যে ২০০৯ সালে শেষ হলেও তিন দশকের গৃহযুদ্ধের ক্ষত শ্রীলঙ্কা এখনো বহন করছে। দেশটির গৃহযুদ্ধের নির্মমতা এবং সেই সঙ্গে প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপক্ষে সরকারের সিংহলি জাতীয়তাবাদের পৃষ্ঠপোষকতা দেশের সংখ্যালঘু তামিল জনগোষ্ঠীর সঙ্গে অর্থবহ একটি সমঝোতার পরিপন্থী বলে প্রতীয়মান হয়েছিল।
শেষতক শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের জন্য দেশটির নীতিমালার মধ্যে সমন্বয় অতীব প্রয়োজনীয়। গত দুই বছরে দুর্নীতি দমন এবং সরকারি ঋণ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ৭০টির বেশি আইন প্রণীত ও অনুমোদিত হয়েছে। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট দেশের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবেন বলে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শ্রীলঙ্কায় একাধিক অনুগামী সরকারের অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং অবিবেচক নীতিমালা দেশটির অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনাকে আরও দুর্বল করেছে। কিন্তু এখনো সৃজনশীল চিন্তাভাবনার সুযোগ আছে। যেমন, দেশটির সামুদ্রিক সম্পদ এবং সৈকত-বায়ুকে কাজে লাগিয়ে দেশের অর্থনীতিতে নতুন গতির সঞ্চার করা যায়।
শ্রীলঙ্কার নারকেল এবং দুগ্ধজাতশিল্পে বিনিয়োগ করলে একদিকে যেমন গ্রামীণ অর্থনীতির ভিত আরও মজবুত হবে, অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রারও সাশ্রয় হবে। কাঠামোগত সংস্কারের ক্রমাগত বাস্তবায়ন এবং সেই সঙ্গে দেশের বাইরে নিয়োজিত শ্রীলঙ্কার শ্রমশক্তির প্রেরিত অর্থপ্রবাহ এবং পর্যটনশিল্পের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বহির্বিশ্ব থেকে বাড়তি পুঁজিপ্রবাহ বাড়িয়ে দেবে।
লেখক: অর্থনীতিবিদ

সম্প্রতি শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়ে গেল। দ্বিতীয় দফায় ৫৭ শতাংশ ভোট পেয়ে দেশটির রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত হলেন বামপন্থী দল জনতা ভিমুক্তি পেরামুনা (জেভিপি) মোর্চার প্রার্থী অনুড়া কুমারা দিশানায়েকে। শ্রীলঙ্কার এই নির্বাচনটি তিনটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ।
এক, ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার চরম অর্থনৈতিক সংকটের পরে এটাই প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। দুই, সেই সংকট উত্তরণের জন্য কৃচ্ছ্রসাধন কর্মসূচির ওপরে এই নির্বাচন আদতে ছিল একটি গণভোট। তিন, সাম্প্রতিক নির্বাচনে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিই ভোটদাতাদের কাছে মুখ্য বিষয়। বলা প্রয়োজন যে বিগত বছরগুলোর বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে জেভিপি তাদের আগেকার চরম অবস্থান থেকে অনেকটা সরে এসে বর্তমান সময়ে নমনীয় একটি দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছে।
একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার থেকে একটি নির্বাচিত সরকারে শ্রীলঙ্কার এই উত্তরণ নিশ্চিতভাবে সাধুবাদের যোগ্য এবং সেই সঙ্গে এই অর্জন উদ্যাপনের দাবি রাখে। কারণ, গত দুই-তিন বছরে দেশটির ওপর দিয়ে বহু ঝড়ঝাপটা গেছে। প্রচুর অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা, অর্বাচীন নীতিমালা, বৈদেশিক খাতের ধস, কোভিড-১৯ এবং আরও নানাবিধ কারণে ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল। বৈদেশিক মুদ্রার মজুত ক্রমবর্ধমান হারে হ্রাস পাচ্ছিল, দেশজ বা বৈদেশিক কোনো ঋণই পরিশোধের মতো সক্ষমতা শ্রীলঙ্কা হারিয়ে ফেলেছিল। সরকারি ঋণ ৮৩ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে দাঁড়ায়। ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে ৫১ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি ঋণ পরিশোধে শ্রীলঙ্কা অপারগ হয়। মূল্যস্ফীতি ৭০ শতাংশে গিয়ে পৌঁছায়, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর অভাব জটিল আকার ধারণ করে, বিদ্যুৎ ঘাটতি চরম পর্যায়ে গিয়ে ঠেকে। জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে এবং বিক্ষুব্ধ জনতার রোষে প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপক্ষে পদত্যাগ করতে এবং দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।
২০২৩ সালে অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপ্রধান রনিল বিক্রমাসিংহে শ্রীলঙ্কার হাল ধরেন। অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইমএফ) শ্রীলঙ্কাকে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলারের অর্থসহায়তা দেয়। এ সহায়তার সঙ্গে সঙ্গে আসে নানান শর্ত, যার মূল কথা ছিল একটি কৃচ্ছ্রসাধন কর্মসূচি। ক্রমান্বয়ে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির মোড় ঘুরতে থাকে। মূল্যস্ফীতি ২০২২ সালের সর্বোচ্চ ৭৯ শতাংশ থেকে ০.৫ শতাংশে নেমে এসেছে, রুপির মান স্থিতিশীল হয়েছে। ২০২২ সালের ৪ শতাংশ রাজস্ব ঘাটতি (জাতীয় আয়ের অনুপাতে) বর্তমানে ০.৬ শতাংশ উদ্বৃত্তে রূপান্তরিত হয়েছে। দেশের ঋণ জাতীয় আয়ের অনুপাত ২০২২ সালের ১২৭ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। এ বছর শ্রীলঙ্কার প্রবৃদ্ধির হার ২.২ শতাংশ হবে বলে বিশ্বব্যাংক প্রাক্কলন করছে।
উপর্যুক্ত চিত্রটি নিশ্চিতভাবে ইতিবাচক। কিন্তু সেই সঙ্গে এটাও মনে রাখা দরকার যে শ্রীলঙ্কার আগামী নেতৃত্বের জন্য দেশটির ভবিষ্যৎ পথযাত্রা মসৃণ হবে না। কোনো সন্দেহ নেই যে গত দুই বছরে বিভিন্ন বিষয়ে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে বেশ কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু সে অর্জন এখনো ভঙ্গুর এবং নতুন রাষ্ট্রপ্রধানের সামনে অন্তরায় অনেক। এই পরিপ্রেক্ষিতে পাঁচটি সমস্যাকে চিহ্নিত করা যায়।
প্রথমত, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলকে বিভিন্ন বিষয়ে নতুন একটা বোঝাপড়ায় আসতে হবে বলে অনুড়া দিশানায়েকে মতপ্রকাশ করেছেন। যেমন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল চায় যে শ্রীলঙ্কার দেশজ এবং বহিঃঋণ একইভাবে মূল্যায়িত হোক। নতুন রাষ্ট্রপ্রধান এর বিরোধিতা করেছেন। তেমনিভাবে তিনি বলেছেন, দেশের ঋণভারের সিংহভাগই যেন তাঁর জনগণের ওপরে না পড়ে সেটা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলকে নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির ভঙ্গুর অবস্থা এবং দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের শ্লথগতির কারণে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের আদি শর্ত পরিবর্তন করা দুরূহ হবে।
যেমন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল চায় যে ২০২৭ সাল পর্যন্ত তাদের দেওয়া নীতিমালা এবং শর্তগুলো পালন করা হবে, যাতে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি একটি স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি পথরেখা অনুসরণ করে, বাজারব্যবস্থাকে আশ্বস্ত করে, ঋণ পরিশোধ করে এবং বিনিয়োগকারীদের আকর্ষিত করে। শ্রীলঙ্কাকে নিশ্চিত করতে হবে যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ যেকোনো নীতি বা শর্ত পরিবর্তন করতে হলে তা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি সমঝোতার সঙ্গে করা হবে।
দ্বিতীয়ত, নির্বাচনী প্রচারাভিযানের সময়ে অনুড়া দিশানায়েকে বলেছিলেন কৃচ্ছ্রসাধন কর্মসূচির কারণে যাঁরা অর্থনৈতিকভাবে নিপিষ্ট হচ্ছেন, তাঁদের জীবনমান পরিবর্তনের প্রার্থী তিনি। সাম্প্রতিক সময়ে শ্রীলঙ্কার দারিদ্র্যের হার আপাতন ঊর্ধ্বমুখী। বিশ্বব্যাংকের প্রাক্কলন মতে, ২০১৯ সাল থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে দেশটিতে দারিদ্র্যের হার দ্বিগুণ হয়েছে এবং শ্রীলঙ্কার ২৫ শতাংশ লোক এখন দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। জীবনযাত্রার ব্যয় এখনো বড় বেশি এবং দেশটিতে প্রকৃত মজুরির মান এখনো সংকটপূর্ব মজুরিস্তরে পৌঁছাতে পারেনি।
নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপ্রধান প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে শ্রীলঙ্কার আয়করমুক্ত আয়স্তর বর্ধিত করা হবে এবং কিছু স্বাস্থ্য ও খাদ্যসম্পর্কিত পণ্যসামগ্রীকে ১৮ শতাংশ মূল্য সংযোজন করের আওতায় আনা হবে না, যাতে এগুলো সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে। এসব প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা রীতিমতো দুরূহ হবে। করের ক্ষেত্রে কর হ্রাসের কথা বলে নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপ্রধান ইতিমধ্যেই ব্যবসায়ী মহলকে উদ্বেগের মধ্যে ফেলে দিয়েছেন। কারণ, তাঁরা মনে করছেন, কর কমিয়ে ফেললে শ্রীলঙ্কা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে এবং ২০ বিলিয়ন ডলারের ঋণের ব্যাপারে ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হবে। এর ফলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের নতুন শর্তাবলি আরোপিত হতে পারে। বিদ্যুতের ওপরে ভর্তুকি তুলে নেওয়া এবং মূল্য সংযোজন কর দ্বিগুণ করার কার্যক্রম যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তিই বাড়বে।
তৃতীয়ত, শ্রীলঙ্কার বিস্তৃত কৃচ্ছ্রসাধন কার্যক্রমের মধ্যে সার্বভৌম ঋণকাঠামোর পুনঃসংস্কারও অন্তর্ভুক্ত। তত্ত্বীয় দিক থেকে ঋণ পুনঃসংস্কারের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে ঋণব্যয় কমানো এবং যাতে শিক্ষা বা স্বাস্থ্যসেবা খাতের জন্য সম্পদ লভ্য হয়। শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে সেটা ঘটছে না। শ্রীলঙ্কার সাম্প্রতিক আর্থিক কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ২০২৩ সালের ঋণ বজায়ক্ষমতা বিশ্লেষণের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। সমস্যা হচ্ছে যে এ বিশ্লেষণ সঠিক নয়, যার জন্য শ্রীলঙ্কার ঋণ-উপশম কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে ঘটেনি। সত্যিকার অর্থে, প্রচুর পরিমাণে বাজেট উদ্বৃত্ত তৈরি করে দেশটিকে ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে। ফলে, সামাজিক খাতে ব্যয় করার মতো পর্যাপ্ত সম্পদ লভ্য হয়নি। অন্যদিকে নিচু করযোগ্য স্তরের কারণে শ্রীলঙ্কার রাজস্ববলয়েও নানান অন্তরায়ের সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের মতে, নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে করজাতীয় আয়ের অনুপাত হচ্ছে ১৫-২০ শতাংশ। শ্রীলঙ্কায় সে অনুপাতের মান হচ্ছে মাত্র ৮ শতাংশ, যা বিশ্বের মধ্যে নিম্নতম অনুপাতগুলোর একটি। বহু বছরের মুক্তবাজার অর্থনৈতিক নীতিমালা অনুসরণ এবং ২০১৯ সালের চরম ক্ষতিকর বাজেট উপস্থাপন শ্রীলঙ্কার রাজস্ব স্থিতিশীলতাকে বিনষ্ট করেছে। ঋণ পরিশোধ সরকারি আয়ের অনুপাত বিশ্বের মধ্যে শ্রীলঙ্কাতেই সবচেয়ে খারাপ এবং শ্রীলঙ্কার দ্বিপক্ষীয় ঋণ পরিশোধের বর্ধিত সময়সীমা ২০২৮ সালেই শেষ হয়ে যাবে। বর্তমান প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে দেশটি বারংবার ঋণ খেলাপে জর্জরিত হবে।
চতুর্থত, শ্রীলঙ্কার ভূরাজনৈতিক পরিবেষ্টনও জটিল। এ অঞ্চলের আর পাঁচটি দেশের মতো শ্রীলঙ্কাও ভারতবান্ধব এবং চীনবান্ধব এই দুটি অবস্থানের মধ্যে দোদুল্যমান থাকে, কারণ এ দুটি দেশের কোনোটির সঙ্গেই সে একটি উদাসীন মনোভাব পোষণ করতে পারে না। যেমন, গত বছর শ্রীলঙ্কাকে দেয় একটি ঋণ-উপশমকাঠামো অনুমোদন করতে চীন বিলম্ব করছিল। কারণ, শ্রীলঙ্কার জন্য গঠিত সরকারি দাতা পর্ষদের সভাপতি জাপান এবং ফ্রান্সের সঙ্গে ভারতও। এই পর্ষদের মাধ্যমের পরিবর্তে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় আগ্রহী চীন।
অতএব এসব ডামাডোলের কারণে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ঋণসাহায্যের দ্বিতীয় কিস্তি পেতে দেরি হয় শ্রীলঙ্কার। শ্রীলঙ্কায় শুধু চীন বা ভারতের স্বার্থ রয়েছে, এমন নয়। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন অর্থায়ন প্রতিষ্ঠান কলম্বো বন্দরে গভীর জলাস্থিত একটি কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার সাহায্যদানের অঙ্গীকার করেছে। এমন সব প্রকল্পের দুটো উদ্দেশ্য—এক, শ্রীলঙ্কার ব্যাপারে চীনের প্রভাব হ্রাস করা এবং দুই, ভারত মহাসাগরের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যপথের পরিপ্রেক্ষিতে শ্রীলঙ্কার ভূরাজনৈতিক গুরুত্বকে পুনর্ব্যক্ত করা।
সত্যিকার অর্থে, চীন এবং ভারতের মতো দুটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক প্রতিবেশীর টানাপোড়েন সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে তার ভূরাজনৈতিক নিরপেক্ষতা দেশটির সংস্কার কার্যক্রমের সফলতার জন্য অপরিহার্য। সেই সঙ্গে এটাও মনে রাখা প্রয়োজন যে ২০০৯ সালে শেষ হলেও তিন দশকের গৃহযুদ্ধের ক্ষত শ্রীলঙ্কা এখনো বহন করছে। দেশটির গৃহযুদ্ধের নির্মমতা এবং সেই সঙ্গে প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপক্ষে সরকারের সিংহলি জাতীয়তাবাদের পৃষ্ঠপোষকতা দেশের সংখ্যালঘু তামিল জনগোষ্ঠীর সঙ্গে অর্থবহ একটি সমঝোতার পরিপন্থী বলে প্রতীয়মান হয়েছিল।
শেষতক শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের জন্য দেশটির নীতিমালার মধ্যে সমন্বয় অতীব প্রয়োজনীয়। গত দুই বছরে দুর্নীতি দমন এবং সরকারি ঋণ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ৭০টির বেশি আইন প্রণীত ও অনুমোদিত হয়েছে। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট দেশের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবেন বলে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শ্রীলঙ্কায় একাধিক অনুগামী সরকারের অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং অবিবেচক নীতিমালা দেশটির অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনাকে আরও দুর্বল করেছে। কিন্তু এখনো সৃজনশীল চিন্তাভাবনার সুযোগ আছে। যেমন, দেশটির সামুদ্রিক সম্পদ এবং সৈকত-বায়ুকে কাজে লাগিয়ে দেশের অর্থনীতিতে নতুন গতির সঞ্চার করা যায়।
শ্রীলঙ্কার নারকেল এবং দুগ্ধজাতশিল্পে বিনিয়োগ করলে একদিকে যেমন গ্রামীণ অর্থনীতির ভিত আরও মজবুত হবে, অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রারও সাশ্রয় হবে। কাঠামোগত সংস্কারের ক্রমাগত বাস্তবায়ন এবং সেই সঙ্গে দেশের বাইরে নিয়োজিত শ্রীলঙ্কার শ্রমশক্তির প্রেরিত অর্থপ্রবাহ এবং পর্যটনশিল্পের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বহির্বিশ্ব থেকে বাড়তি পুঁজিপ্রবাহ বাড়িয়ে দেবে।
লেখক: অর্থনীতিবিদ

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

সম্প্রতি শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়ে গেল। দ্বিতীয় দফায় ৫৭ শতাংশ ভোট পেয়ে দেশটির রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত হলেন বামপন্থী দল জনতা ভিমুক্তি পেরামুনা (জেভিপি) মোর্চার প্রার্থী অনুড়া কুমারা দিশানায়েকে। শ্রীলঙ্কার এই নির্বাচনটি তিনটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ।
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

সম্প্রতি শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়ে গেল। দ্বিতীয় দফায় ৫৭ শতাংশ ভোট পেয়ে দেশটির রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত হলেন বামপন্থী দল জনতা ভিমুক্তি পেরামুনা (জেভিপি) মোর্চার প্রার্থী অনুড়া কুমারা দিশানায়েকে। শ্রীলঙ্কার এই নির্বাচনটি তিনটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ।
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

সম্প্রতি শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়ে গেল। দ্বিতীয় দফায় ৫৭ শতাংশ ভোট পেয়ে দেশটির রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত হলেন বামপন্থী দল জনতা ভিমুক্তি পেরামুনা (জেভিপি) মোর্চার প্রার্থী অনুড়া কুমারা দিশানায়েকে। শ্রীলঙ্কার এই নির্বাচনটি তিনটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ।
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

সম্প্রতি শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়ে গেল। দ্বিতীয় দফায় ৫৭ শতাংশ ভোট পেয়ে দেশটির রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত হলেন বামপন্থী দল জনতা ভিমুক্তি পেরামুনা (জেভিপি) মোর্চার প্রার্থী অনুড়া কুমারা দিশানায়েকে। শ্রীলঙ্কার এই নির্বাচনটি তিনটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ।
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫