Ajker Patrika

‘মোর মাইয়া শুনছি ভালো পাস করেছে’

মো. শামীমুল ইসলাম, আগৈলঝাড়া
আপডেট : ১১ জানুয়ারি ২০২২, ১০: ৫১
Thumbnail image

বাবা ভিক্ষা করে চালান সংসার। পরনে ভালো জামা নেই, পেট ভরে দুই বেলা খেতে পারে না। খাবার না খেয়েও কখনো কখনো স্কুলে যেতে হতো সুমাকে। দারিদ্র্যকে জয় করে আগৈলঝাড়া উপজেলার বারপাইকা গ্রামের অশোক রায়ের মেয়ে সুমা রায় বারপাইকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষার বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে।

সুমা রায়ের মা-বাবা বোঝেন না জিপিএ-৫ কী জিনিস। তাঁরা কেবল বোঝেন মেয়ে ভালো পাস করেছে। অশোক রায়ের স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে পাঁচজনের সংসারে সুমা রায় ভাই-বোনদের মধ্যে বড়।

সুমা রায়ের সঙ্গে কথা হলে বলল, ‘আমার বাবা অশোক রায় একজন প্রতিবন্ধী। তাঁর ভিক্ষার টাকায় চলে আমাদের সংসার। মানুষের জমিতে কাজ করে লেখাপড়া চালিয়ে এসেছি এত দিন। আমাদের ঘর নেই, পড়ার একটি টেবিল পর্যন্ত ছিল না। ভালো একটি জামাও নেই। না খেয়ে অনেক দিনই স্কুলে যেতাম। অনেক কষ্ট হতো, তবু লেখাপড়া ছাড়িনি। আমার স্বপ্ন লেখাপড়া করে চিকিৎসক হব। দেশের অসহায় মানুষের সেবা করব। কিন্তু কলেজে ভর্তি এবং লেখাপড়া করার সামর্থ্য নেই। এসএসসি পরীক্ষার যেদিন ফল প্রকাশ হয়েছে, সেদিনও আমাদের ঘরে খাবার ছিল না। আমি সকালে অন্যের জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে গেছি। জমি থেকে সন্ধ্যায় বাড়ি এসে তারপরে শিক্ষকদের কাছে ফল জানতে গেছি।’

সুমা রায়ের মা শিখা রায় বলেন, ‘মোর মাইয়া শুনছি ভালো পাস করেছে, জিপিএ-৫ কী তা মুই কিছু বুঝি না। মোর মাইয়ারে আর লেহাপড়া করাইতে পারমু না, এই যেডু লেহাপড়া করছে, কত দিন না খাইয়া স্কুলে গেছে।’

সুমা রায়ের বাবা অশোক রায় বলেন, ‘মুই এই লেহাপড়া কী তা বুঝি না। শুনি মাইয়াডা ভালো পাস করছে। ভালো পাস কইরা কী হইবে। ভিক্ষা কইরা খাইতে পারি না, ল্যাহা পড়ার টাহা দিমু কোথার তা।’

বারপাইকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পরিমল চন্দ্র রায় বলেন, সুমা রায় দরিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়ায় তার কাছ থেকে স্কুল নামমাত্র বেতন নিত। দেশের দানশীল ব্যক্তিরা সহযোগিতা করলে সুমা রায়ের স্বপ্ন পূরণ হওয়া সম্ভব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত