Ajker Patrika

অপরিণত নবজাতকের অন্ধত্ব প্রতিরোধে

ডা. মো. আরমান হোসেন রনি
অপরিণত নবজাতকের অন্ধত্ব প্রতিরোধে

সাধারণভাবে একটি শিশু ৩৮ থেকে ৪২ সপ্তাহের মধ্যে জন্মগ্রহণ করে। জন্ম ৩৮ সপ্তাহের আগে এবং ওজন ১ হাজার ৫০০ গ্রামের কম হলে তাকে প্রিম্যাচিউর বা অপরিপক্ব নবজাতক বলা হয়। রেটিনোপ্যাথি অব প্রিম্যাচিউরিটি অপরিণত শিশুর  মারাত্মক একটি রোগ।অপরিণত শিশুর চোখও অপরিণত থাকে। ফলে এই রোগটি কিছু কিছু নবজাতকের রেটিনা ও রক্তনালিকে আক্রান্ত করে। অনেক সময় রেটিনা ছিঁড়ে গিয়ে শিশু অন্ধ হয়ে যেতে পারে। বাংলাদেশে প্রায় প্রতিবছর ৩০ লাখ শিশু জন্মগ্রহণ করে। এদের প্রায় ২০ শতাংশ বা ছয় লাখ শিশু অপরিণত অবস্থায় জন্মগ্রহণ করে। এসব শিশুর মধ্যে ২০ থেকে ২২ শতাংশ রেটিনোপ্যাথি অব প্রিম্যাচিউরিটি বা আরওপির ঝুঁকির মধ্যে থাকে। 

আশঙ্কায় যেসব নবজাতক

  • ৩৫ সপ্তাহের আগে জন্ম নেওয়া শিশু।
  • জন্মের সময় যাদের ওজন ২ হাজার গ্রামের কম থাকে।
  • জন্মের পর এনআইসিউতে অক্সিজেন সাপোর্টে রাখতে হয় যাদের।

ওপরের শর্ত তিনটি পূর্ণ হওয়া সাপেক্ষে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ অপরিণত নবজাতকের আরওপি হবে না। যে ২০ থেকে ৩০ শতাংশের আরওপি হবে, তাদের মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ এমনিতেই সুস্থ হয়ে যাবে। বাকি যে কয়েক শতাংশ নবজাতক থাকবে, তারা এ রোগে আক্রান্ত হবে।

স্ক্রিনিং 
আরওপি রোগটি শিশুর জন্মের সময় থাকে না। শুধু জন্ম আগে হওয়ার কারণে ৩ থেকে ৪ সপ্তাহের মধ্যে রোগটি হয়ে থাকে। এ কারণে আরওপির স্ক্রিনিং ৩ থেকে ৪ সপ্তাহের মধ্যে করতে পারলে সব থেকে ভালো। কারণ এটি এত দ্রুত বৃদ্ধি পায় যে একটু দেরি করলে শিশুর সমূহ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।মনে রাখতে হবে, যেসব নবজাতকের জন্ম ৩৫ সপ্তাহের আগে এবং যাদের ওজন ২ হাজার গ্রামের কম, তাদের রেটিনা অবশ্যই ৩০ দিনের মধ্যে এবং যেসব নবজাতকের জন্ম ২৮ সপ্তাহ আগে এবং যাদের ওজন ১ হাজার ২০০ গ্রামের কম, তাদের রেটিনা অবশ্যই ২০ দিনের মধ্যে পরীক্ষা করতে হবে।

চিকিৎসা 
এ রোগের দুই ধরনের চিকিৎসাপদ্ধতি রয়েছে-

লেজার বার্ন: রেটিনার যেসব অংশে রক্তনালি তৈরি হয়, এ পদ্ধতিতে সেসব অংশ লেজার দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ফলে সে অংশে নতুন রক্তনালি তৈরির আশঙ্কা কমে যায় এবং রক্তক্ষরণও হয় না।

ইনজেকশন: চোখের ইনজেকশনের মাধ্যমেও ক্ষেত্রবিশেষে আরওপির চিকিৎসা করা হয়।

চিকিৎসাব্যয় 
ঢাকার জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে শিশুদের ইনজেকশন ও লেজার চিকিৎসা বিনা মূল্যে করা হয়। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অল্প খরচে এই চিকিৎসা করা হয়।

প্রতিরোধ

  • সম্ভব হলে ৩৫ সপ্তাহের পর সন্তান জন্ম দিতে হবে।
  • এনআইসিউতে শিশুকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত অক্সিজেন দেওয়া যাবে না।
  • অক্সিজেনের মাত্রা ৮৯ থেকে ৯৩ শতাংশের মধ্যে রাখতে হবে।

জন্মের ৩ থেকে ৪ সপ্তাহের মধ্যে অপরিণত নবজাতকের চক্ষু পরীক্ষা এবং সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়ার মাধ্যমে শিশুকে সম্ভাব্য অন্ধত্ব থেকে বাঁচানো যায়।

ডা. মো. আরমান হোসেন রনি, চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও সার্জন, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল শেরেবাংলা নগর, ঢাকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত