Ajker Patrika

উৎসব ঘুরে দেশের হলে আদিম

খায়রুল বাসার নির্ঝর, ঢাকা
উৎসব ঘুরে দেশের হলে আদিম

‘আদিম’-এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে নির্মাতা যুবরাজ শামীমের পাঁচ বছরের পরিশ্রম, একাগ্রতা, স্বপ্নভঙ্গ আর ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প। ২০১৭ সালে যখন তিনি সিনেমাটির পরিকল্পনা করেন, তখনো জানতেন না কীভাবে তৈরি হবে, কারা অভিনয় করবেন, অর্থ জোগাড়ই-বা হবে কীভাবে! মাথায় ছিল শুধু একটি গল্প। যে গল্পের চরিত্রগুলো আটপৌরে, বাস্তবতা থেকে উঠে আসা। শত দুঃখ-কষ্টের মাঝেও যাঁরা জীবনকে উপভোগ করেন নিজেদের মতো করে। সেই চরিত্রদের দেখা শামীম পেয়েছিলেন টঙ্গী রেলস্টেশন আর পাশের ব্যাংকের মাঠ বস্তিতে। কীভাবে নিয়ে এলেন তাঁদের ক্যামেরার সামনে, সে এক গল্প বটে!

চরিত্রের খোঁজে
‘আদিম’ যেহেতু প্রান্তিক মানুষের গল্প, নির্মাতা তাই চেয়েছিলেন তাঁদের দিয়েই অভিনয় করাতে। চরিত্র খোঁজার জন্য, তাঁদের জীবন আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য টঙ্গীর বস্তিতে থাকার সিদ্ধান্ত নেন নির্মাতা যুবরাজ শামীম। সেখানে থাকার সময় নানা ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছে। কেউ তাঁকে মাদক ব্যবসায়ী বলেছেন, কেউ বলেছেন মতলববাজ। পুলিশি হয়রানির শিকারও হয়েছেন। এর মাঝেই চলেছে চরিত্রের খোঁজ। প্রধান চরিত্র বাদশাকে পাওয়া যায় রেলস্টেশনে। দিনমজুর বাদশা তখন পা ভেঙে পড়ে আছেন। নিজে সিনেমার পোকা হলেও অভিনয়ের জন্য প্রথম দিকে রাজি হননি বাদশা। এমনকি পরবর্তী সময়ে রিহার্সাল, এমনকি শুটিংয়ের মধ্যেও বারবার তিনি পিছু হটেছেন। আরেক চরিত্র দুলালকে পাওয়া যায় বস্তির চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে দিতে। প্রধান চরিত্রের অভিনেত্রী সোহাগী যুক্ত হন দুলালের মাধ্যমে। প্রত্যেকেই জানালেন, এ সিনেমায় কাজ শুরুর পর সবাই তাঁদের নানাভাবে অপমান করেছেন। তবে এখনকার পরিস্থিতি একেবারেই আলাদা। ‘আদিম’ দেশ-বিদেশে পুরস্কৃত হওয়ার পর প্রতিবেশীরা সম্মানের চোখেই দেখছেন তাঁদের।

বাজেট সংকট
এ সিনেমা নির্মাণের পেছনে সবচেয়ে বড় বাধা ছিল অর্থসংস্থান। যেহেতু যুবরাজ শামীম নির্দিষ্ট কোনো প্রযোজক কিংবা লগ্নিকারী পাননি, তাই তিনি ভরসা রাখেন গণ-অর্থায়নে। প্রথম উৎসাহ শামীম পেয়েছিলেন নেদারল্যান্ডসের পরিচালক ক্লিমেনটিনে এডারভিনের কাছ থেকে। শামীম বলেন, ‘ঢাকা চলচ্চিত্র উৎসবে এসেছিলেন তিনি। তাঁর সঙ্গে অনেক আগে থেকেই পরিচয় ছিল। তাঁকে গল্প ও পরিকল্পনা শোনাই। তিনি চলে যাওয়ার সময় ২০০ ইউরো দিয়ে যান। এই টাকা দিয়েই শুটিংয়ের প্রস্তুতি নিই।’ এরপর পরিকল্পনা করেন সিনেমার শেয়ার বিক্রির। তাতে অনেকেই সাড়া দেন। সবার উৎসাহ আর সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে চলে আদিমের শুটিং।

নির্মাতা যুবরাজ শামীম উৎসব পেরিয়ে হলে
নানা প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে অবশেষে আদিমের কাজ শেষ হয়। বিশ্বের বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে সিনেমাটি জমা দেন যুবরাজ শামীম। ৪৪তম মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে স্পেশাল জুরি অ্যাওয়ার্ড জেতার পর আদিম নিয়ে ভালো রকমের হইচই শুরু হয় দেশে। এরপর যুক্তরাষ্ট্র, নেপাল, ইতালিসহ অনেক দেশে সিনেমাটি পেয়েছে পুরস্কার, প্রশংসা। এবার দেশের হলে মুক্তির পালা। ২৬ মে ঢাকার স্টার সিনেপ্লেক্স, ব্লকবাস্টার সিনেমাস ও নারায়ণগঞ্জের সিনেস্কোপে দেখা যাবে আদিম। যুবরাজ শামীম তাঁর টিম নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছেন, মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন আদিমের খবর। তিনি বলেন, ‘এই সিনেমায় কোনো পরিচিত মুখ নেই, তারপরও হল পেয়েছে, এটা আমার কাছে বিশাল ঘটনা মনে হয়। চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট মানুষেরা আদিম নিয়ে আলোচনা করছেন, আগ্রহ দেখাচ্ছেন; এতেই আমি খুশি। সিনেমার ট্রেলার, পোস্টার ভালো লাগলে যদি কিছু দর্শক হলে আসেন, তাহলে আরও ভালো লাগবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আমিনুল ইসলাম নন, শিক্ষা উপদেষ্টা হচ্ছেন অধ্যাপক আবরার

গণপিটুনিতে নিহত জামায়াত কর্মী নেজাম ও তাঁর বাহিনী গুলি ছোড়ে, মিলেছে বিদেশি পিস্তল: পুলিশ

বসুন্ধরায় ছিনতাইকারী সন্দেহে ২ বিদেশি নাগরিককে মারধর

বিএনপির দুই পেশাজীবী সংগঠনের কমিটি বিলুপ্ত

ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ: ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা, নিষিদ্ধের দাবি শিক্ষার্থীদের

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত