Ajker Patrika

ট্রাকেই ঘুম, রান্না-খাওয়া

গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২১, ১৮: ১৭
ট্রাকেই ঘুম, রান্না-খাওয়া

রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া নৌপথ ভোগান্তির আরেক নাম। দীর্ঘদিন ধরে যানজট সৃষ্টি হয়ে আসছে এ নৌপথে। দুই দিন আগে এসে পদ্মা পাড়ি দিতে হচ্ছে দুদিন পর। বাধ্য হয়ে ট্রাকেই চালক ও তাঁর সহকারীকে ঘুমাতে হচ্ছে। এমনকি রান্নাও করতে হচ্ছে ট্রাকে বসে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঘাট স্বল্পতা ও অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে এই সমস্যা।

গতকাল শনিবার সকালে ঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের বাংলাদেশ হ্যাচারি পর্যন্ত পাড়ির অপেক্ষায় রয়েছে বিভিন্ন বাস ও পণ‍্যবাহী ট্রাক। মাঝেমধ্যে যানবাহনের সারি দীর্ঘ হচ্ছে। এর মধ্যে পণ্যবাহী ট্রাকের সংখ্যাই বেশি। বাসগুলোকে ফেরি পেতে ৩-৪ ঘণ্টা লাগলেও ট্রাকগুলোকে ১ থেকে ৩ দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

জানা গেছে, দীর্ঘ যানজট থাকায় গাড়িতেই ঘুমিয়ে যাচ্ছেন চালক ও তাঁদের সহকারী। এরপর আবার মহাসড়কের পাশে খাওয়া-দাওয়া ও টয়লেটের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ভোগান্তিতে পড়ছেন তাঁরা। গাড়ি ছেড়ে বাইরে অন্য কোথাও যেতেও পারছেন না। বিভিন্ন সময় মোবাইলসহ ব্যাগ ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটে।

যশোর থেকে চাল ভর্তি কাভার্ড ভ্যান নিয়ে ঢাকা যাচ্ছেন চালক আব্দুল্লাহ সরদার। তিনি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর দৌলতদিয়া ফেরিঘাট থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে গোয়ালন্দ মোড়ে এসে সিরিয়ালে আটকা পড়েন। সেখান থেকে শনিবার ভোরে ঘাটের দিকে এসে দুপুর ১২টার দিকে তিনি ঘাট থেকে ১ কিলোমিটার দূরে ছিলেন। প্রায় ২ দিন সিরিয়ালে থেকেও ফেরির দেখা পাননি আব্দুল্লাহ। এখনো ফেরি পেতে তাঁকে ৬-৭ ঘণ্টা লাগবে।

বেনাপোল থেকে নারায়ণগঞ্জগামী ট্রাকের চালক আলাউদ্দিন শিকদার জানান, শনিবার ভোর ৬টার দিকে ঘাট এলাকায় আসেন। প্রায় ৮ ঘণ্টায় তিনি ঘাট এলাকার ফিলিং স্টেশন পর্যন্ত পৌঁছেছেন। তিনি বলেন, ‘এটা কোনো ব্যবস্থা হলো। এখন আর কুলাতে পারছি না। ফেরিতে উঠতে আর কয় ঘণ্টা সময় লাগবে সেটাই ভাবছি।’

ফেরিঘাট সড়কের পুলিশ বক্সের সামনে যানজটে আটকা চুয়াডাঙ্গা থেকে আসা পূর্বাশা পরিবহনের চালক ইকবাল হোসেন বলেন, কিছুদিন আগেও ঘাটে এসে কোনো যানজট না পেয়েই ফেরিতে উঠতে পারতাম। ট্রাকের সিরিয়াল এবং গণপরিবহনের সিরিয়াল আলাদা থাকত। কিন্তু কিছুদিন ধরে লক্ষ করছি ট্রাকের সিরিয়াল আলাদা থাকলেও দুই লাইন করে বাসের সঙ্গেও ট্রাকের সিরিয়াল করা হচ্ছে। এতে করে যাত্রীরা সময় মতো অফিসে পৌঁছাতে পারেন না।

বরিশাল থেকে সাকুরা পরিবহনে আসা নিজাম উদ্দিন নামের এক যাত্রী বলেন, ‘মাঝে মধ্যেই ঢাকা যেতে এই পথ ব্যবহার করি। আগে বাসের লাইনে কোনো ট্রাক দেখতাম না। কিন্তু আজ বাসের লাইনে ট্রাক দেখে অবাক।’

রাজধানী পরিবহনের দৌলতদিয়া ঘাট তত্ত্বাবধায়ক এনামুল হক বলেন, আগে বাস এবং ট্রাকের আলাদা সিরিয়াল থাকত। কিন্তু এখন থাকে না। রাতে আরও বাজে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরিবহনগুলো আটকে রেখে ট্রাক আগে ছেড়ে দেওয়া হয়। এতে করে যাত্রীদের ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক মো. শিহাব উদ্দিন বলেন, দৌলতদিয়ার ৭টি ঘাটের মধ্যে চালু রয়েছে ৪ টি। বাকি ১ ও ২ নম্বর ঘাট দুই বছর আগে নদীভাঙনের কবলে পড়ায় এখনো চালু হয়নি। এবং নতুন করে ৬ নম্বর ঘাট এক মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। একটি ঘাট রো রো ফেরির জন্য নতুন করে প্রস্তুত করা হবে। সেই সঙ্গে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথে ফেরি বন্ধ। এ কারণে ওই নৌপথের গাড়ি এই নৌপথ দিয়ে পারাপার হচ্ছে। এসব কারণে বাড়তি চাপ থাকছে। আরও একটি বড় পন্টুন বসলে সমস্যা কিছুটা কমবে। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ছোট বড় ১৫টি ফেরি চলাচল করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত