Ajker Patrika

মাতৃদুগ্ধ সেবনকেন্দ্র ধূমপায়ীদের দখলে

সৌগত বসু, ঢাকা
আপডেট : ২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১২: ২৪
মাতৃদুগ্ধ সেবনকেন্দ্র ধূমপায়ীদের দখলে

বাইরে বড় করে লেখা মাতৃদুগ্ধ সেবনকেন্দ্র। তবে দূর থেকেই দেখা যায় কয়েকজন পুরুষ সেখানে বসে ধূমপান করছেন। আশপাশে সবাই শ্রমিক অথবা পুরুষ যাত্রী। ভেতরে চারটি মোটরসাইকেল রাখা। মেঝেতে ময়লা আর বিড়ি-সিগারেটের অবশিষ্টাংশ। এই মাতৃদুগ্ধ সেবনকেন্দ্রের অবস্থান মহাখালী বাস টার্মিনালের বাইরের অংশে রাস্তার পাশেই।

গত সোম ও বুধবার সরেজমিনে এসব চিত্র ধরা পড়ে আজকের পত্রিকার প্রতিবেদকের নজরে। মাতৃদুগ্ধ সেবনকেন্দ্রের ভেতরে এক পাশে আছে দুটি বড় বেঞ্চ। বাইরে কাচের দরজা। কিন্তু তা আটকানোর কোনো ব্যবস্থা নেই। পাশে একটি ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণকক্ষ। তার পাশে মহাখালী বাস মালিক সমিতির কার্যালয়। তবে কারও কোনো নজর নেই এ বিষয়ে। শ্রমিক ও মালিক সমিতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকেই মাতৃদুগ্ধ সেবনকেন্দ্রে গিয়ে গল্প করেন, করেন ধূমপান। ভেতরে রাখা মোটরসাইকেলগুলোর সঙ্গে ট্রাফিক পুলিশের মোটরসাইকেলও রয়েছে।

সোমবার ভেতরে বসে ধূমপানরত এক ব্যক্তির কাছে কেন এখানে বসে আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা তো যাত্রীদের বসার স্থান। তাই বসে আছি।’ তবে ধূমপানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিরক্ত হয়ে বলেন, ভেতরে তো সবাই ধূমপান করে। তিনি করলে সমস্যা কী?

মাতৃদুগ্ধ সেবনকেন্দ্রের সামনে থেকেই আন্তজেলা বাসগুলো ছেড়ে যায়। তাই সব সময় এ জায়গায় যাত্রীদের ভিড় লেগেই থাকে। বিশেষ করে একটু নিম্ন আয়ের মানুষের ভিড় থাকে বাইরের এ জায়গায়। বাসের সহযোগী ও পুরুষ যাত্রীরা কেন্দ্রের মধ্যে বসে থাকেন, ধূমপান করেন।

বুধবার মাতৃদুগ্ধ সেবনকেন্দ্রের সামনে এক নারীকে তাঁর শিশুসন্তান ও ব্যাগ নিয়ে অস্বস্তিতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নারী বলেন, এ জায়গা থেকে বাসে উঠলে বাস না ছাড়া পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকা লাগে। বসার কোনো জায়গা নেই।

তাঁর ঠিক পেছনেই মাতৃদুগ্ধ সেবনকেন্দ্র আছে বললে তিনি বলেন, ওখানে তো সব ব্যাটা (পুরুষ) মানুষ বসে আছে। সবাই বিড়ি খায়। বসব কীভাবে।

সরকারি-বেসরকারি প্রতিটি কর্মস্থলে ডে কেয়ার সেন্টার ও ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার তৈরিতে ২০০৯ সালে নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ নিয়ে ২০১৯ সালে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। তাতে বলা হয়, সব কর্মস্থল, এয়ারপোর্ট, বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন, শপিং মলের মতো জনসমাগমস্থলে এবং সরকারনিয়ন্ত্রিত, পরিচালিত ও ব্যবস্থাপনায় বিধিবদ্ধ, স্বায়ত্তশাসিত ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে মাতৃদুগ্ধ সেবনকেন্দ্র থাকতে হবে। সারা দেশে বর্তমানে ২ হাজার ১৮২টি ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার আছে।

মহাখালী বাস টার্মিনাল সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক মানিক মিয়া বলেন, ২০২০ সালে মালিক-শ্রমিক মিলে এটি নির্মাণ করা হয়। এর সঙ্গে সিটি করপোরেশনের কোনো সম্পর্ক নেই; বরং তারা বাধা দিয়েছিল। যাত্রীদের কথা ভেবে নির্মাণ করা হলেও পরে আর তা রক্ষণাবেক্ষণ হয়নি।

মহাখালী বাস টার্মিনাল সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক বলেন, এটি তাঁরাই তৈরি করেছিলেন। পরে সিটি করপোরেশন সেটি ভেঙে দিতে চেয়েছিল। অর্ধেক ভেঙেও দিয়েছে। সিটি করপোরেশন বলেছিল, তারাই করে দেবে; কিন্তু করে আর দেয়নি।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উপপ্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল রুবাইয়াত ইসমত অভীকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, নতুন যোগদান করেছেন তাই বিষয়টি জেনে জানাবেন। ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী মীর খায়রুল আলমও নতুন যোগদান করায় তাঁর মন্তব্য জানা যায়নি। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত