Ajker Patrika

ঘরের অধিকার হারানোর ভয়

উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি  
ঘরের অধিকার হারানোর ভয়

পুড়ে যাওয়া ঘরের ছাই হাতড়িয়ে কী যেন খুঁজছিল ১১ বছরের রোহিঙ্গা শিশু আয়েশা। সঙ্গে থাকা তার বাবা নুর আলম আহাজারি করছিলেন। তাঁর মতো হাজারো রোহিঙ্গা ঘরের জমির অধিকার ধরে রাখতে ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই অবস্থান করছিলেন। গতকাল সোমবার কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের শফিউল্লাহকাটা এলাকার ১৬ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়ে এ অবস্থা দেখা যায়।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে নুর আলম যা বলেছেন তার সারাংশ হলো, বাজারে তিনি তরকারি কিনতে গিয়েছিলেন। পাশের ব্লকে আগুন লাগার খবরে ছুটে আসেন। কোনো রকমে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বের হন। মিনিটের মধ্যেই তাঁর ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। সারা রাত স্কুলে ছিলেন। শীতে কষ্ট পাচ্ছেন। কবে আবার ঘর পাবেন, আদৌও এই জমি তাঁর অধিকারে থাকবে কি না তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন।

গত রোববার কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের শফিউল্লাহকাটা এলাকার ১৬ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন লেগে পুড়ে যায় কয়েক শ ঘর। এতে বাস্তুহারা হয়েছেন অন্তত তিন হাজার রোহিঙ্গা। ওই দিন বিকেল ৫টার দিকে বি ব্লকের মোহাম্মদ আলীর বসতঘর থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে শোনা যাচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিটসহ স্থানীয় প্রশাসন ও জনসাধারণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রায় দুই ঘণ্টা পর সন্ধ্যা ৭টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। 
কিন্তু ততক্ষণে আগুনের লেলিহান শিখায় ভস্মীভূত হয় ১৬ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বি ও সি ব্লকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৪৮০টি বসতঘর, পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ১০টি বসতঘর,৫টি লার্নিং সেন্টার,৩টি মসজিদ ও ১টি মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন স্থাপনা।

প্রশাসনের সহযোগিতায় রাতে ঘর হারানো রোহিঙ্গাদের অধিকাংশই আশ্রয় নেন ক্যাম্প এলাকার বিভিন্ন অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র, লার্নিং সেন্টারে। অনেকের ঠাঁই হয় খোলা মাঠে। কেউ চলে যান আত্মীয়দের ক্যাম্পে। কিন্তু গতকাল সকালেই নিজের বসতঘরের জায়গার অধিকার ধরে রাখতে ফিরে আসেন অগ্নিদুর্গত এলাকায়। ক্যাম্প ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত প্রশাসনের সহযোগিতায় অস্থায়ী তাঁবু দেওয়া হচ্ছে তাঁদের। তবে শীতের প্রকোপ থাকায় শীতবস্ত্রের পাশাপাশি খাবার সংকটে ভুগতে হচ্ছে।

অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. শামছু দ্দৌজা বলেন, ‘অগ্নিদুর্গতদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পাশাপাশি শীতবস্ত্র ও খাবার সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে অগ্নিকাণ্ডের কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’ আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) একটি সূত্র জানিয়েছে, এ ঘটনায় অন্তত ৪৭৪টি রোহিঙ্গা পরিবারের ২ হাজার ৩৮৫ জন রোহিঙ্গা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ ছাড়া ১৪ জন আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। একজন শিশু নিখোঁজ হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। ১৬ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বি ব্লকের হেডমাঝি মোহাম্মদ নুর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার ব্লকের ৪৬০টি ঘর পুড়ে গেছে। আমাদের অবস্থা খুবই খারাপ।’

একই ব্লকের বাসিন্দা মোহাম্মদ কাশিম (৩৪) নামের এক রোহিঙ্গা বলেন, তাঁর ঘরের সবকিছু পুড়ে গেছে। কোনো রকমে স্ত্রী কন্যাসহ আগুন লাগার পর বেরিয়ে এসেছেন। এখন কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। চোখে কোনো দিশা দেখছে না। উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয় জনগোষ্ঠীদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাবার ও শীতবস্ত্র সরবরাহ করা হচ্ছে। যাঁরা ঘর হারিয়েছেন, তাঁদের আশ্রয় শিবিরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাখার ব্যবস্থা হয়েছে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘বাবার অসুস্থতায় পরামর্শ নিতে’ চিকিৎসকের বাসায় নারী, দুজনকে পুলিশে দিল স্থানীয়রা

১৪৬ যাত্রী নিয়ে ব্যাংককের পথে এক ঘণ্টা উড়ে মিয়ানমার থেকে ফিরে এল বিমানের সেই ফ্লাইট

রাশিয়ার তেল চীনও কেনে, তবে ট্রাম্পের শুল্ক শুধু ভারতের ওপর কেন

খানসামায় দলীয় নেতার মৃত্যুতে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ তুঙ্গে

ভারতের ওপর শুল্ক আরও ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করলেন ট্রাম্প

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত