Ajker Patrika

সার না পেয়ে মাথায় হাত কৃষকদের

শিবালয় ও দৌলতপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ০৯ নভেম্বর ২০২১, ১৩: ২৩
সার না পেয়ে মাথায় হাত কৃষকদের

রবিশস্য আবাদের শুরুতেই সারসংকটে পড়েছেন মানিকগঞ্জের শিবালয় ও দৌলতপুর উপজেলার কৃষকেরা। এ অঞ্চলে ডিএপি (ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট) ও ইউরিয়া সারের সরবরাহ ঠিক রয়েছে। তবে সংকট দেখা দিয়েছে টিএসপি (ট্রিপল সুপার ফসফেট) ও এমওপি (মিউরেট অব পটাশ) সারের। এসব সার পেতে অনেক ক্ষেত্রেই দিতে হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ। অনেকে তা-ও পাচ্ছেন না।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রবি মৌসুমে সরিষা ও পেঁয়াজ চাষে প্রচুর টিএসপি ও এমওপি সার দরকার হয়। তবে এ দুই উপজেলার ডিলাররা জানিয়েছেন, তাঁরা চাহিদামতো সার পাচ্ছেন না। ফলে দেখা দিয়েছে সারের সংকট। তবে কৃষকেরা বলছেন, ডিলাররা সার মজুত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছেন। আমদানিকারকেরা সার দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ ডিলারদের।

শিবালয়ের জমদুয়ারা গ্রামের কৃষক রূপচান মিয়া বলেন, সপ্তাহখানেক ঘুরলেও স্থানীয় ডিলাররা তাঁকে সার দিতে পারেননি। বাধ্য হয়ে অন্য এলাকা থেকে বেশি দামে সার কিনেছেন তিনি। ৫০ কেজির প্রতি ব্যাগ টিএসপি সারের দাম যেখানে ১ হাজার ১০০ টাকা, তিনি কিনেছেন ১ হাজার ৪৫০ টাকা দিয়ে। প্রতি বস্তা এমওপি সার কিনেছেন সরকার নির্ধারিত ৭৫০ টাকায়। আর ৮০০ টাকা বস্তার ইউরিয়া সার কিনেছেন ৯০০ টাকায়।

একই উপজেলার বোয়ালীপাড়া গ্রামের শফি উদ্দিন বলেন, ‘বেশি টাকায় সার কিনে চার বিঘা জমির মধ্যে আড়াই বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছি। টিএসপি ও এমওপি সার না পাওয়ায় বাকি জমি পতিত আছে। সারের অভাবে আমার মতো অনেকের জমিই পতিত পড়ে আছে।’

এদিকে দৌলতপুরে ডিলারের কাছে কৃষি কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকলে কৃষক সরকার নির্ধারিত মূল্যে সার পাচ্ছেন। কৃষি কর্মকর্তা চলে গেলে তাঁদের অতিরিক্ত অর্থ দিতে হচ্ছে। প্রতি বস্তা এমওপি সার বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০ টাকা, যেখানে সরকার নির্ধারিত এ সারের মূল্য ৭৫০ টাকা বস্তা। ইউরিয়া সার কিনতে হচ্ছে প্রতি বস্তা ১ হাজার ৩০০ টাকা ও টিএসপি ১ হাজার ৬০০ টাকায়।

দৌলতপুরের কলিয়া গ্রামের কৃষক সিদ্দিক মিয়া বলেন, ‘আমি গত দুই দিন আগে আমাদের ডিলারের কাছে সার না পেয়ে টাঙ্গাইল নাগরপুর থানা থেকে তিন বস্তা সার এনেছি। আজও আমাদের ডিলারের কাছে সার না পেয়ে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছি।’

দৌলতপুরের উলাইল বাজারের সারের খুচরা ব্যবসায়ী গৌরাঙ্গ সাহা বলেন, ‘সরকারি বরাদ্দের সার কম পাওয়ায় অন্য উপজেলা থেকে বেশি দামে কিনে সার বিক্রি করতে হচ্ছে। এ কারণে অনেক সময় দাম বেশি পড়ছে।’

আর শিবালয়ের কয়েকজন ডিলার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তাঁরা নভেম্বরের বরাদ্দকৃত টিএসপি ও এমওপি সারে জন্য আমদানিকারকদের কাছে ডিও পাঠিয়েছেন। আমদানিকারকেরা অজ্ঞাত কারণে সার পাঠাতে কালক্ষেপণ করছেন। এদিকে কৃষকদের চাপ সামলাতে তাঁরা হিমশিম খাচ্ছেন বলে জানান।

শিবালয় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রিয়াজুর রহমান বলেন, ‘সারের কোনো সংকট নেই। বাজারে পর্যাপ্ত সার রয়েছে। এ অঞ্চলের অধিকাংশ জমি থেকে দ্রুত বর্ষার পানি নেমে যাওয়ায় আগাম আবাদ শুরু হওয়ায় সারের চাহিদা বেড়েছে। পরিবহনসহ নানাবিধ কারণে নভেম্বরের বরাদ্দ পেতে একটু সময় লাগছে। আশা করি, দু-এক দিনের মধ্যেই সার পৌঁছে যাবে।’

দৌলতপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রেজাউল হক বলেন, ‘উপজেলায় এবার আগাম পানি চলে যাওয়ায় সারের সংকট দেখা দিয়েছে। প্রতিবছর এই উপজেলায় নভেম্বরের ১৫ তারিখের পর মৌসুম শুরু হয়। এ বছর আগেই মৌসুম শুরু হওয়ায় সরকারি বরাদ্দকৃত সার এসে পৌঁছায়নি। উপজেলায় রবি মৌসুমে সারের চাহিদা ৭০৫ টন। এখনো বরাদ্দের তিন ভাগের এক ভাগ সার এসে পৌঁছায়নি। এই কারণে সংকট দেখা দিয়েছে।’

দৌলতপুর উপজেলা সার বীজ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইমরুল হাসান বলেন, ‘আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। দু-এক দিনের মধ্যেই সারের সংকট কেটে যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত