Ajker Patrika

কষ্টে আছেন সেই গঙ্গাদেবী

সেলিম সুলতান সাগর, চিতলমারী (বাগেরহাট)
আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২১, ২১: ৪১
কষ্টে আছেন সেই গঙ্গাদেবী

কষ্টে আছেন ‘সুলতানা রাজিয়া’। নব্বইয়ের দশকের মঞ্চকাঁপানো প্রথম সারির এ যাত্রার নায়িকার আসল নাম গঙ্গাদেবী। ঐতিহাসিক যাত্রাপালা ‘সুলতানা রাজিয়া’র নাম ভূমিকায় অভিনয় করে তিনি ব্যাপক সুনাম অর্জন করেন। সে সময়ে সুলতানা রাজিয়া নামে সমাদৃত হন।

বর্তমানে বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার শ্যামপড়া গ্রামে স্বামী মাখন লাল মন্ডলের বাড়িতে বসবাস করছেন। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো অবস্থা তাঁর। মধ্য বয়সে এসে ধুঁকে ধুঁকে সময় পার করছেন। আলো ঝলমল জীবনে এমন দিন আসবে স্বপ্নেও ভাবেননি তিনি। যাকে এক নজর দেখার জন্য টিকিট কেটে প্রচণ্ড শীতের মধ্যেও সারা রাত অপেক্ষা করেছেন হাজার হাজার দর্শক। আজ তাঁর খোঁজ-খবর নেন না কেউই। তবুও সুদিনের অপেক্ষায় বসে বসে মুখস্থ করছেন যাত্রার সংলাপ।

জানা যায়, ১৯৬৬ সালের পয়লা জানুয়ারি যশোর জেলার বাঘারপাড়া উপজেলার বড়খুদাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বাবা নন্দ কুমার বিশ্বাস, মা ষষ্ঠী রানী বিশ্বাস। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সবার বড়। মামা দুলাল বসাক ও মামী মায়া বসাক পেশায় যাত্রাশিল্পী ছিলেন। সেই সুবাদে যাত্রার প্রতি ছিল তাঁর বিশেষ ঝোঁক। তাই দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে মামা-মামীর হাত ধরে শখের বসে ঝিনাইদহের কালিগঞ্জের ব্রজেন বিশ্বাসের ‘নবযুগ অপেরায়’ যোগ দেন। এখানে পার্শ্ব চরিত্রে চার বছর কাজ করেন। এরপরে সাতক্ষীরার আলফাজ উদ্দিনের সবিতা অপেরায় নায়িকা হিসেবে যোগ দেন। নায়িকা হিসেবে জীবনের প্রথম যাত্রাপালা ছিল ‘আমি মা হতে চাই’। নায়ক ছিলেন অশোক ঘোষ। এ দলে ৫ বছর সুনামের সঙ্গে কাজ করেন। এরপর জোনাকি অপেরা, নাট্য মঞ্জুরি, পদ্মা অপেরাসহ বিভিন্ন অপেরায় সুনামের সঙ্গে কাজ করেছেন। নব্বই দশক থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত যাত্রা জগতে নায়িকা ও গায়িকা হিসেবে দেশ ব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেন। বিশেষ করে সুলতানা রাজিয়ার চরিত্রে অভিনয় করে তিনি দর্শক হৃদয়ে ব্যাপক সাড়া ফেলেন ও সমাদৃত হন।

গঙ্গাদেবী জানান, ২০০১ সালে তৎকালীন বিএনপি-জোট সরকার সারা দেশে যাত্রাপালা নিষিদ্ধ করে দেয়। সেই থেকে অন্য যাত্রাশিল্পীদের মতো তাঁরও উপার্জন বন্ধ হয়ে যায়। এত দিনে জমানো টাকা ও জায়গা-জমি বিক্রি করে সব খাওয়া শেষ। শরীরেও নানা রোগ বাসা বেঁধেছে। কোথাও গানের অনুমতি নেই। তাইতো এ মানবেতর জীবনযাপন।

গঙ্গাদেবী বলেন, “আমাকে এক নজর দেখার জন্য টিকিট কেটে প্রচণ্ড শীতের মধ্যেও হাজার হাজার দর্শক সারা রাত অপেক্ষা করেছেন। কিন্তু আজ আর কেউ খোঁজ নেন না।”

গঙ্গাদেবীর স্বামী যাত্রা পরিচালক মাখন লাল মন্ডল বলেন, “বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি নিবন্ধিত আমাদের ‘রাজবানী অপেরা’ নামে একটি যাত্রাদল রয়েছে। এ ছাড়াও দেশে শিল্পকলা একাডেমি নিবন্ধিত আরও ৭০টি দল রয়েছে। কিন্তু কোথাও কোনো যাত্রাপালার অনুমতি নেই। এই যাত্রাজগতের সঙ্গে জড়িত লক্ষাধিক মানুষ বর্তমানে আমাদের মতো মানবেতর জীবনযাপন করছেন।”

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত