Ajker Patrika

করোনা-পরবর্তী জটিলতা ভিড় বাড়াচ্ছে হাসপাতালে

আজাদুল আদনান, ঢাকা
আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৯: ১২
করোনা-পরবর্তী জটিলতা   ভিড় বাড়াচ্ছে হাসপাতালে

গত মাসের শুরুতে করোনায় আক্রান্ত হন রাজধানীর উত্তরার সহকারী পুলিশ সুপার ইসরাত জাহান তন্বী। কয়েকদিন পর সুস্থ হয়ে ওঠেন। কিন্তু করোনা-পরবর্তী জটিলতায় গত ১৬ জানুয়ারি তাঁকে রাজধানীর আসগর আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু অবস্থা এতটাই গুরুতর হয়ে পড়ে, ১০ দিন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রেখেও বাঁচানো যায়নি পুলিশের এই কর্মকর্তাকে।

আবার করোনায় আক্রান্ত হওয়ার প্রায় সাড়ে তিন মাস পরও বুকের ব্যথা ও ঘন ঘন শ্বাস নিতে হচ্ছে ইঞ্জিনিয়ার কাজল হোসেনকে। ৩৩ বছরের এই যুবক মাদারীপুর থেকে এসে বর্তমানে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের পোস্ট করোনা ইউনিটে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাঁর মতো প্রতিদিনই এই চিকিৎসাকেন্দ্রে করোনা-পরবর্তী নানা জটিলতা নিয়ে আসছেন অনেকে। যাদের বেশির ভাগেরই সমস্যা বুকের ব্যথা, ফুসফুস ও শ্বাসকষ্টজনিত।

চিকিৎসকেরা বলছেন, করোনায় আক্রান্ত হলে শরীরের কোষগুলো অনেক সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। করোনায় আক্রান্ত হয়ে কারও কারও ফুসফুস ৭০ থেকে ৮০ ভাগ সংক্রমিত হচ্ছে। যার যত বেশি হবে ততটাই জটিলতা থাকবে। যেটি তাৎক্ষণিক, মধ্যমেয়াদি ও স্থায়ীভাবে হতে পারে। এ ছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তির নাকের গন্ধ ও মুখের স্বাদ কমে যাওয়ার পাশাপাশি কমে যেতে পারে স্মৃতিশক্তিও।

তবে দেশে করোনা-পরবর্তী জটিলতায় কী পরিমাণ মানুষের মৃত্যু

হচ্ছে সেই তালিকা সরকারের হাতে নেই। আর কোন কোন জটিলতায় প্রাণহানি ঘটছে তা নিয়েও কোনো গবেষণা হয়নি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, আক্রান্ত হলে দীর্ঘ মেয়াদে ফুসফুসের একটা অংশ একেবারে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। অনেকের মস্তিষ্কের একটা অংশ কাজ করছে না। কেউ কেউ মানসিক চাপ, চাকরি, সংসার থেকে শুরু করে দীর্ঘ মেয়াদে নানা দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। যার প্রভাবে নানা জটিলতা দেখা দিচ্ছে।

অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ বলেন, প্রত্যেকটা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। মৃদু, মাঝারি ও মারাত্মক প্রতিক্রিয়া। এ জন্য ওষুধ ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে। অতিমাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক ও স্টেরয়েড ব্যবহারের ফলে প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে।

গত মঙ্গলবার বিএসএমএমইউ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে ১০-১২ জন এসেছেন করোনা-পরবর্তী নানা জটিলতা নিয়ে। পোস্ট করোনা ইউনিটের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. আকিব হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ডেলটার চেয়ে ওমিক্রন ততটা প্রাণঘাতী না হলেও এটি দীর্ঘ সময় ধরে নানা জটিলতা তৈরি করছে। বিশেষ করে যাদের একাধিক রোগ রয়েছে। দুই সপ্তাহ আগেও তেমন রোগী ছিল না, কিন্তু হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে।

পোস্ট কোভিড রোগীদের চিকিৎসা চলছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালেও। পাঁচ মাস আগে চালু হওয়া এই হাসপাতালের ইউনিটে এখন পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

গত বছরের অক্টোবরে প্রকাশিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বক্ষব্যাধি বিভাগের গবেষণা বলছে, করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার পরও তিন মাস পর্যন্ত ৪০ শতাংশ রোগীর কাশি, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথাসহ নানা সমস্যা রয়েছে। বিশেষ করে বয়স্কদের মাঝে এটির প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। অন্যদিকে সম্প্রতি প্রকাশিত সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)-এর গবেষণা বলছে, করোনামুক্ত হওয়ার তিন মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত আক্রান্তের শরীরে করোনা-পরবর্তী নানা জটিলতা দেখা দিচ্ছে। আশঙ্কার বিষয় হলো, সেরে ওঠার এক বছর পরও ৪৫ শতাংশের শরীরে এ ধরনের উপসর্গ দেখা গেছে। এতে আরও বলা হয়, যারা উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসসহ নানা অসংক্রামক রোগে ভুগছেন, তাঁদের করোনা-পরবর্তী উপসর্গের আশঙ্কা ২-৩ গুণ পর্যন্ত বেশি।

আইইডিসিআর-এর উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, আক্রান্ত হলেই বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেবে। এজন্য কোনোভাবেই যাতে সংক্রমিত না হয় সেদিকে গুরুত্ব দিতে হবে, বিশেষ করে বয়স্কদের। একই সঙ্গে টিকা নিতে হবে। টিকা গ্রহণের ফলে আক্রান্ত হলেও দ্রুত ও অনেকটা দীর্ঘ মেয়াদে সুস্থ হওয়া সম্ভব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত