Ajker Patrika

ঘটি গরমে চলে সংসার

শাহীন রহমান, পাবনা
আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০২১, ১৩: ০৯
ঘটি গরমে চলে সংসার

‘করোনার কারণেই শেষ হয়ে গেছি। নিজের অল্প যে পুঁজি ছিল সেটাও ভেঙে খেয়েছি। স্কুল-কলেজে ছাত্রছাত্রী কম তাই ঠিকমতো বিক্রি হয় না। মানুষের মাঝে চলি তাই মানুষ মনে করে ভালো আছি। আসলে ভেতরের খবর কেউ রাখে না। আমার দিনগুলো খুব কষ্টে কাটছে। কেউ কোনো সহযোগিতাও করে না।’

কথাগুলো বলছিলেন মাগুরার মহম্মদপুরের শেখ হাসিনা সেতুর ওপর ঘটি গরম বিক্রেতা মো. সানি আহম্মেদ। জীবন-জীবিকার তাগিদে ঝালমুড়ি বিক্রি করেন তিনি।

অভাব অনটনে এই ঝালমুড়ি বিক্রিই একমাত্র ভরসা। রাস্তায় হেঁটে হেঁটে ঘটি গরম বিক্রি করেন তিনি।

গায়ে গেঞ্জি। কিন্তু পরনে কয়েক রঙের কাপড় দিয়ে তৈরি পায়জামা। বাম কাঁধে ঝুলছে ঝুড়ি। ডান হাতে বাঁশি আর পেছনে একটি ব্যাগ। ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই এমন বেশভূষা। প্রতিদিন বিকেলে শেখ হাসিনা সেতুর ওপর দেখা মেলে সানির। ক্রেতাদের নজর কাড়তে বাঁশি বাজিয়ে আনন্দ দিয়ে থাকেন। বাঁশির সুরে-সুরে চানাচুর বিক্রি করেই চলে তাঁর সংসার। নদীভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে ১৫ বছর ধরে এ পেশায় তিনি।

সানি আহম্মেদ এখন ঘটি গরম বা বাঁশিওয়ালা নামেই পরিচিত। বাড়ি মহম্মদপুর উপজেলার মহেশপুর গ্রামে। এক সময় ঢাকায় বেকারিতে কাজ করতেন।

বাঁশির সুর তুলতেই ক্রেতারা হাজির হন সানির ভ্রাম্যমাণ দোকানে। বাঁশির সুরের টানে কাছে এসে ১০-২০ টাকার চানাচুর ক্রয় করেন কেউ কেউ।

শেখ হাসিনা সেতুতে বিকেলে ঘুরতে আসা রজব আলী, হাবিবুল, নাসিম খান, সৈয়দ আলী, শাওন হাসনাতসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, সময় পেলে প্রায়ই তাঁরা সেতুতে ঘুরতে আসেন। সানি ভাইয়ের বাঁশির সুর আর চানাচুর ভাজা এখানে বেশ জমজমাট। সবাই তাঁর বাঁশির সুরে মুগ্ধ।

স্থানীয়রা জানান, বাঁশিতে বিভিন্ন গানের সুর শুনতে ভালো লাগে। প্রতিদিন দুপুরের পর থেকে রাত পর্যন্ত শত শত মানুষের মিলনমেলা ঘটে শেখ হাসিনা সেতু এলাকায়। আর এই সেতুর ওপর দোকান ঘাড়ে করে ছুটে চলে সানি। সেতুর এপাশ থেকে ওপাশে।

সানির স্ত্রী প্রিয়া খাতুন বলেন, বাড়িতে ভাজা তৈরির কাজে সহযোগিতা করি। চানাচুর ভাজা বিক্রি করে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা লাভ হয়। এ টাকা দিয়েই পাঁচ সদস্যের সংসারের ভরণপোষণ চলে। বড় মেয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ে, মেজো ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে এবং দুই বছর বয়সের এক ছেলে আছে।

সানি বলেন, ‘১৫ বছর থেকে বিভিন্ন এলাকায় চানাচুর বিক্রি করে সংসার চালাই। মানুষ জীবনের গল্প শোনে, বাঁশির সুর শোনে কিন্তু দুঃখের কথা শুনে কেউ পাশে দাঁড়ান না। মেয়ে বড় হয়েছে, তার এখন বিয়ে দেওয়া দরকার। কিন্তু আমার হাতে কোনো পুঁজি নেই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত