Ajker Patrika

ছাগলের খামার করে সফল মেহেরপুরের সাহাকুল

রাশেদুজ্জামান, মেহেরপুর
আপডেট : ১২ এপ্রিল ২০২২, ১৩: ২৪
Thumbnail image

জীবনযুদ্ধে হার না মানা যুবক সাহাকুল ইসলাম (৩৪)। প্রতিবন্ধীদের মধ্যে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে। দুটি হাত না থাকলেও অন্যের মুখাপেক্ষী হননি তিনি। সব প্রতিকূলতাকে জয় করে মেহেরপুরের প্রতিবন্ধী সাহাকুল ইসলাম গড়ে তুলেছেন একটি ছাগলের খামার। এখন দুই মেয়েকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করাটা তাঁর মূল লক্ষ্য। না পাওয়ার কোনো বেদনা নেই তাঁর পরিবারে।

জানা গেছে, মেহেরপুর সদর উপজেলার গোপালপুর গ্রামের জামাত আলী ও বুলু খাতুনের ছয় সন্তানের মধ্যে সাহাকুল দ্বিতীয়। ১০ বছর বয়সে বন্ধুদের সঙ্গে মাঠে খেলতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হন সাহাকুল। পরে তাঁর দুটি হাত কেটে ফেলা হয়। ছেলেকে নিয়ে কি করবেন তা ভেবে কুল কিনারা পাচ্ছিলেন না মা-বাবা। অনেকেই তাঁকে ভিক্ষাবৃত্তি পেশা বেছে নেওয়ার উৎসাহ দেন। কিন্তু তাতে রাজি হননি সাহাকুল। নিজেই কিছু করে দেখাতে চেয়েছিলেন। বাবার সঙ্গে কিনে নেন ৫টি ছাগল। শুরু করেন ছাগল পালন। প্রতিদিন ছাগল নিয়ে চলে যান মাঠে। এভাবেই কয়েক বছর চলার পর তাঁর খামারে ছাগলের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এখন তার খামারে ছাগলের সংখ্যা ৪০ টি। পরে প্রতিবেশী তারিফা খাতুনের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এখন তাঁর দুই মেয়ে। বড় মেয়ে সাদিয়া খাতুন দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। দুই মেয়েকে ঘিরেই বুনছেন স্বপ্ন।

সাহাকুল বলেন, ‘দুই হাত হারিয়ে চিন্তায় পড়েছিলাম। কিন্তু কখনোই ভাবিনি অন্যের মুখাপেক্ষী হব। নিজেই কিছু করার দৃঢ় সংকল্প করেছিলাম। প্রথম দিকে অনেকেই আমাকে দেখে হাসি ঠাট্টা করত। কিন্তু ইচ্ছে ছিল নিজে কিছু করেই তার জবাব দেব। প্রতিদিন সকাল হলেই ছাগল নিয়ে বেরিয়ে পড়তাম। ছাগলগুলো বাচ্চা দিত। আমি চেষ্টা করতাম সংখ্যা বাড়ানোর। তারপর শুরু করি বিক্রি। এভাবেই কয়েক বছরের মধ্যে দাঁড়িয়ে গেলাম। বিয়ের সময় অনেকের কাছ থেকে কটু কথা শুনেছি। তারপর গ্রামের তারিফাকে বিয়ে করি। বিয়ের পর থেকেই নানাভাবে সে (স্ত্রী) আমাকে সাহায্য করছেন। তেমন একটা চাওয়া পাওয়া নেই জীবনে। সব সময় সৎ পথে উপার্জন করতে চাই।

স্ত্রী তারিফা খাতুন বলেন, ‘প্রথম দিকে স্বামীর সঙ্গে মানিয়ে নিতে কষ্ট হয়েছে। কিন্তু আমার চাওয়া পাওয়ার কোনো কিছুই কমতি করেননি তিনি। যা চেয়েছি, তাই পেয়েছি। এ জন্য স্বামীর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বেড়ে গেছে। এখন স্বামীকে নিয়ে গর্ব করি। কারণ দুই হাত না থাকার পরও নিজেই পরিশ্রম করে সংসার চালান।’

গোপালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম বলেন, ‘প্রতিদিন যখন এক পাল ছাগল নিয়ে সাহাকুল পাঠে যায়, তখন অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি। ভাবি এই রকম দুই হাত হারানো মানুষও নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। আসলে অদম্য ইচ্ছা শক্তি থাকলে সব অসম্ভবকে জয় করা যায়। তারই উদাহরণ সাহাকুল।’

সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) কাজী কাদের মোহাম্মদ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘সাহাকুলকে আমরা চিনি। তিনি সমাজের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। সমাজসেবা অফিস থেকে সুদমুক্ত ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবস্থা রয়েছে। দ্রুত তাঁকে সুদমুক্ত ক্ষুদ্র ঋণের আওতায় এনে খামারটি বাড়ানোর সহযোগিতা করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত