ওয়ারেছা খানম প্রীতি

আমি একটি কথা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি—একটি দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল এবং চর্চার পরিবেশ সেই দেশের অধিবাসীদের উন্নত মনন তৈরি করে। মহান স্বাধীনতার আগপর্যন্ত একটা মিশ্র সমাজব্যবস্থা আমাদের সাংস্কৃতিক স্থিতিকে নড়বড়ে করেছে। আমাদের সামনে সুনির্দিষ্ট কোনো রূপরেখা নেই, সেটা হোক সামাজিক, পারিবারিক কিংবা আচরণগত সৌন্দর্যের। উপরন্তু অন্যকে অধীনস্থ রাখার মানসিকতা রক্তে বহন করে চলেছে বৃহত্তর বাঙালি সমাজ।
কয়েক দিন আগে স্বনামধন্য একটি ব্যাংকের করপোরেট অফিসে গিয়েছিলাম। বন্ধু সেখানকার ডিএমডি। কথা বলার একপর্যায়ে তিনি তাঁর এক সহকর্মীকে দেখিয়ে বললেন, ‘উনি এখানকার সিনিয়র একটি পদে আছেন, বেতনও ভালো। কিন্তু সম্প্রতি চাকরি ছাড়বেন বলে রেজিগনেশন লেটার দিয়েছেন।’ বললাম, ‘অন্য কোথাও ভালো সুযোগ পেয়েছেন নিশ্চয়ই?’ এরপর বন্ধুটি যা জানালেন তাতে পরিষ্কার বুঝতে পারছিলাম, এখনো নারী তার নিজের ক্যারিয়ার ও যাপনের নানা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে পারিবারিক ও পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতিকে সবার আগে মূল্যায়ন করে। ব্যাংকার সেই নারীর স্বামী চান না তাঁর স্ত্রী চাকরি করুক। কারণ, এ মুহূর্তে তাঁর নিজের কোনো চাকরি নেই। বিষয়টি তাঁর পুরুষতান্ত্রিক আত্মগরিমায় ভীষণভাবে আঘাত করছে। সুতরাং স্ত্রীকে বিয়ে টেকাতে হলে চাকরি ছাড়তে হবে।
ঠিক এই জায়গায় আসুন, আমরা আরেক দলকে কল্পনা করি, যারা চাকরি করছে না। যাদের সম্বন্ধে আমাদের ধারণা হলো, তারা খুব স্বাধীনভাবে কাজ করছে। সেই নারী উদ্যোক্তাদের অবস্থান আদতে কতটা স্বাধীন ও স্বাচ্ছন্দ্যের? যেহেতু ‘হার ই-ট্রেড’ নামে নারী উদ্যোক্তাদের একটা নেটওয়ার্কিং সাইট পরিচালনা করি, সেই সুবাদে প্রতিনিয়ত আমাকে কিছু অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। প্রায়ই কিছু নারীকে বলতে শুনি, স্বামী কিংবা শ্বশুরকুল তাঁকে পর্যাপ্ত স্বাধীনতা দিয়েছে বলেই তিনি ঘরে বসে কাজ করতে পারছেন। এ জন্য এই দল নিজেকে ভীষণ সৌভাগ্যবান মনে করেন। এ ধরনের মানসিকতা লালন করেন বলেই হয়তো ব্যবসায়ী হিসেবে কয়েক বছরের ক্যারিয়ার থাকলেও, এমনকি ব্যবসা ‘গ্রোথ লেভেলে’ যাওয়ার পরও বিপুলসংখ্যক নারী উদ্যোক্তা স্বামীর কর্ম ও কর্মক্ষেত্রের অবস্থানকে প্রাধান্য দিয়ে নিজের ব্যবসানীতি নির্ধারণ করেন। একই কার্যকারণে স্বামীকে দেশের বাইরে থাকার প্রয়োজন পড়লে উদ্যোক্তা নারীটি নিজের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা গুটিয়ে নির্দ্বিধায় স্বামীর সঙ্গে দেশের বাইরে চলে যান।
নিজের অর্জনকে হালকা করে দেখা এবং অনায়াসে সেটাকে বিসর্জন দেওয়াটা হয়তো এই উপমহাদেশীয় নারীদের সামাজিক শিক্ষা। অবধারিত ভেবে কেউ এটাকে আমলে না নিলেও বিষয়টা নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা। আমি বলব, ব্যবসায় দক্ষতা উন্নয়নের কোর্স যাঁরা ডিজাইন করেন, তাঁরা কোর্সের অন্তত একটা অংশ নারী অধিকার বিষয়ের ওপরে রাখতে পারেন। নইলে ব্যবসায় দক্ষতা অর্জন করা এই নারীরা নিজের স্বাধীনতা ও অধিকার অন্যের হাওলায় ছেড়ে দিয়ে তৃপ্তি অনুভব করে উচ্চারণ করতেই থাকবেন—তাঁকে পরিবার অনেক স্বাধীনতা দেয়!
অস্তিত্বের সংকট নিয়ে আর যা-ই হোক ব্যবসা হয় না। এবার আসি নারী উদ্যোক্তাদের প্রাথমিক কিছু চ্যালেঞ্জের বিষয়ে। একেবারে প্রথম বাধাটা আসে ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় আইনগত কাগজপত্র তৈরির ক্ষেত্রে। এফ-কমার্স ও ই-কমার্স বিজনেসে অফিস থাকবে না, এটা স্বাভাবিক ভাবা উচিত। অধিকাংশ নারী ঘরে বসেই কার্যক্রম পরিচালনা করেন। অথচ ট্রেড লাইসেন্সে বাণিজ্যিক এলাকায় অবস্থিত নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ঠিকানা বাধ্যতামূলকভাবে দেখাতে হয়। ট্রেড লাইসেন্সবিষয়ক কোনো সমাধান সরকার না দেওয়ায় নারী উদ্যোক্তারা ঝামেলা এড়িয়ে ফেসবুক পেজভিত্তিক ব্যবসা করতেই স্বচ্ছন্দবোধ করেন। একটা মিথ্যা যেমন আরও দশটি মিথ্যার জন্ম দিতে থাকে, ঠিক তেমনি ট্রেড লাইসেন্স না করায় বিভিন্ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত এবং নানা ক্ষেত্রে অসহযোগিতার সম্মুখীন হতে থাকেন নারী উদ্যোক্তারা। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ব্যাংক ও ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউটের কোনো রকম ঋণসুবিধা না পাওয়া এবং দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণগুলোতে সুযোগ না পাওয়া।
বাকি চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে আছে ট্রেড লাইসেন্স রিভিউর উচ্চতর ফি, বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজে আবেদনে তথ্যের ঘাটতি, বন্ধকি ছাড়া ঋণসুবিধা না পাওয়া, টিন ও ভ্যাটবিষয়ক জ্ঞানের অভাব, সারা দেশে উইমেন চেম্বার অব কমার্সের অকার্যকারিতা, কার্যকরী মার্কেটিং ও ব্র্যান্ডিংবিষয়ক জ্ঞানের অভাব, আঞ্চলিক কার্গো সুবিধা না থাকা ইত্যাদি।
এসব বাধাবিপত্তি, পারিবারিক অসহযোগিতা, সঠিক পৃষ্ঠপোষকতার অভাব সত্ত্বেও নারীরা কিন্তু ব্যবসাবিমুখ হননি। সংখ্যায় কম হলেও বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে এমন একটা অকিঞ্চিৎকর ও পুরুষের আগ্রাসনের জায়গায় নারীর পা ফেলাটাই অনেক বড় ব্যাপার। আশার কথা হলো, এই সংখ্যা উত্তরোত্তর বাড়ছে।
আসুন, এবার নারীদের ব্যবসায়িক পথপরিক্রমার কিছু পরিসংখ্যান দেখে নিই। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক জরিপে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ৮ মিলিয়ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে নারী মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা মাত্র ৭ দশমিক ২ শতাংশ। এগুলোর মধ্যে বড় শিল্পের সঙ্গে যুক্ত আছেন ৫৪ দশমিক ৯২ শতাংশ নারী। ২৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ মাঝারি শিল্পের সঙ্গে, ১৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ ছোট শিল্পের সঙ্গে এবং ১৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ নারী ক্ষুদ্র শিল্পের সঙ্গে জড়িত।
‘হোলসেল অ্যান্ড রিটেইল ট্রেড সার্ভে-২০২০’ শীর্ষক আরেকটি জরিপ পরিচালনা করেছে বিবিএস। সরকারের কোনো না কোনো মাধ্যমে নিবন্ধন রয়েছে শুধু—এমন উদ্যোক্তাদের তথ্যই সেখানে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে নিবন্ধিত খুচরা ও পাইকারি প্রতিষ্ঠান ছিল ২৫ লাখ ৪০ হাজার ৮৯৭টি। এসব প্রতিষ্ঠানে পুরুষ উদ্যোক্তা ছিলেন ১ কোটি ৩৯ লাখ ১ হাজার ৫৬৪ জন, আর নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা ২ লাখ ৩ হাজার ১৮৯ জন। ২০০৯-১০ অর্থবছরে নারী উদ্যোক্তা ছিলেন ৮৯ হাজার ৮৪৮ জন। এই সংখ্যা ২০০২-০৩ অর্থবছরে ছিল মাত্র ২১ হাজার ৮৬৭ জন। অর্থাৎ, দুই দশকে নারী উদ্যোক্তা বেড়েছে ৯২৯ শতাংশ!
বিশ্বব্যাংক গ্রুপের ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) তথ্যমতে, দেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোক্তার সংখ্যা প্রায় ২৪ লাখ। এ ছাড়া ভেনচার ক্যাপিটাল রিসার্চ ডেটাবেইস পিচবুক থেকে প্রকাশিত সর্বশেষ পরিসংখ্যান-২০১৯-এর তথ্যমতে, পৃথিবীর মাত্র ২ শতাংশ নারীর কাছে তাঁদের ব্যবসা পরিচালনার মূলধন থাকে।
যেখানে পুরো পৃথিবী দিচ্ছে প্রতি ১০০ জনে দুজন উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার পরিসংখ্যান, সেখানে বাংলাদেশের চিত্রটি আশার আলো দেখায়। নারী উদ্যোক্তা তৈরিতে বিশ্বের অন্য অনেক দেশের তুলনায় এগিয়ে আছে বাংলাদেশ।
২০১৭ সাল। মাস্টারকার্ড ইনডেক্স অব উইমেন অন্ট্রাপ্রেনরস-এর জরিপে একটি তথ্য উঠে আসে। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশে যত উদ্যোক্তা আছেন, তাঁদের প্রায় ৩২ জন নারী। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিকদের মধ্যে নারীর সংখ্যা বিবেচনায় ৫৪টি স্বল্প আয়ের দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অবস্থান করছে ৬ নম্বরে। উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠতে একজন নারীর যে সুবিধাগুলো পাওয়া জরুরি, সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জরুরি হলো আর্থিক সহায়তাপ্রাপ্তি ও সহজে ব্যবসা করার পরিবেশ। এ দুই সুবিধাপ্রাপ্তিতে এমআইডব্লিউই সূচকে ১০০-তে বাংলাদেশের স্কোর ৩২। এত কম সুযোগ-সুবিধা পেয়েও বাংলাদেশের নারীরা কেন এত বেশি হারে উদ্যোক্তা হচ্ছেন—এমন প্রশ্নের উত্তরে জরিপে বলা হয়েছে, পরিবার ও নিজেদের আর্থিক চাহিদা পূরণের জন্যই এ দেশের নারীরা উদ্যোক্তা হচ্ছেন।
এবার কিছু সুখের কথা বলি। করোনার দুই বছরে পৃথিবীর প্রেক্ষাপট একেবারে পাল্টে গেছে। একইভাবে পাল্টেছে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতও। এ সময় পারিবারিক ও আর্থিক সংকট পাড়ি দিতে লাখ লাখ নারী যুক্ত হয়েছেন অনলাইন ব্যবসায়। মূলত এসব নারী ফেসবুক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে নিয়মিত আয়ের মাধ্যমে পরিবারে স্বাচ্ছন্দ্য এনেছেন। সম্প্রতি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে অসংখ্য প্রতারণা হওয়ায় এফ-কমার্স ও ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের জন্য সরকার ইউনিক বিজনেস আইডি চালু করেছে। এতে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়কেই সহজে ট্র্যাক করা যাবে এবং যেকোনো পক্ষ থেকে প্রতারণা হলে উভয়কেই জবাবদিহির আওতায় আনা সম্ভব হবে। সরকারি-বেসরকারি অনেক খাত দাতা সংস্থাগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়ে নারী উদ্যোক্তাদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি আইনগত তথ্য দিচ্ছে, স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিজনেস-টু-বিজনেস ম্যাচমেকিং করছে, দেশি-বিদেশি করপোরেট বায়ারদের সঙ্গে উদ্যোক্তাদের যোগাযোগ স্থাপন, দেশে ও দেশের বাইরের বিভিন্ন এক্সপোতে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিচ্ছে, ছোট-বড় গ্র্যান্টের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ করা থেকে পিচিং প্রশিক্ষণ দেওয়া পর্যন্ত নানা ধরনের সেবা দিচ্ছে। এ পর্যন্ত অসংখ্য নারী উদ্যোক্তা স্টার্টআপ পিচিংয়ের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি গ্র্যান্ট পেয়েছেন।
নারী উদ্যোক্তাদের অনেক আশাহত হওয়ার মতো ঘটনা যেমন আছে, ঠিক তেমনি আছে ভরসার জায়গাও। নারীদের ভরসার জায়গাগুলো আরও প্রসারিত হোক। দেশের জিডিপির উত্তরণ ঘটুক কর্মঠ ও মেধাবী নারী উদ্যোক্তাদের হাত ধরে।
লেখক: প্রেসিডেন্ট, হার ই-ট্রেড

আমি একটি কথা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি—একটি দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল এবং চর্চার পরিবেশ সেই দেশের অধিবাসীদের উন্নত মনন তৈরি করে। মহান স্বাধীনতার আগপর্যন্ত একটা মিশ্র সমাজব্যবস্থা আমাদের সাংস্কৃতিক স্থিতিকে নড়বড়ে করেছে। আমাদের সামনে সুনির্দিষ্ট কোনো রূপরেখা নেই, সেটা হোক সামাজিক, পারিবারিক কিংবা আচরণগত সৌন্দর্যের। উপরন্তু অন্যকে অধীনস্থ রাখার মানসিকতা রক্তে বহন করে চলেছে বৃহত্তর বাঙালি সমাজ।
কয়েক দিন আগে স্বনামধন্য একটি ব্যাংকের করপোরেট অফিসে গিয়েছিলাম। বন্ধু সেখানকার ডিএমডি। কথা বলার একপর্যায়ে তিনি তাঁর এক সহকর্মীকে দেখিয়ে বললেন, ‘উনি এখানকার সিনিয়র একটি পদে আছেন, বেতনও ভালো। কিন্তু সম্প্রতি চাকরি ছাড়বেন বলে রেজিগনেশন লেটার দিয়েছেন।’ বললাম, ‘অন্য কোথাও ভালো সুযোগ পেয়েছেন নিশ্চয়ই?’ এরপর বন্ধুটি যা জানালেন তাতে পরিষ্কার বুঝতে পারছিলাম, এখনো নারী তার নিজের ক্যারিয়ার ও যাপনের নানা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে পারিবারিক ও পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতিকে সবার আগে মূল্যায়ন করে। ব্যাংকার সেই নারীর স্বামী চান না তাঁর স্ত্রী চাকরি করুক। কারণ, এ মুহূর্তে তাঁর নিজের কোনো চাকরি নেই। বিষয়টি তাঁর পুরুষতান্ত্রিক আত্মগরিমায় ভীষণভাবে আঘাত করছে। সুতরাং স্ত্রীকে বিয়ে টেকাতে হলে চাকরি ছাড়তে হবে।
ঠিক এই জায়গায় আসুন, আমরা আরেক দলকে কল্পনা করি, যারা চাকরি করছে না। যাদের সম্বন্ধে আমাদের ধারণা হলো, তারা খুব স্বাধীনভাবে কাজ করছে। সেই নারী উদ্যোক্তাদের অবস্থান আদতে কতটা স্বাধীন ও স্বাচ্ছন্দ্যের? যেহেতু ‘হার ই-ট্রেড’ নামে নারী উদ্যোক্তাদের একটা নেটওয়ার্কিং সাইট পরিচালনা করি, সেই সুবাদে প্রতিনিয়ত আমাকে কিছু অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। প্রায়ই কিছু নারীকে বলতে শুনি, স্বামী কিংবা শ্বশুরকুল তাঁকে পর্যাপ্ত স্বাধীনতা দিয়েছে বলেই তিনি ঘরে বসে কাজ করতে পারছেন। এ জন্য এই দল নিজেকে ভীষণ সৌভাগ্যবান মনে করেন। এ ধরনের মানসিকতা লালন করেন বলেই হয়তো ব্যবসায়ী হিসেবে কয়েক বছরের ক্যারিয়ার থাকলেও, এমনকি ব্যবসা ‘গ্রোথ লেভেলে’ যাওয়ার পরও বিপুলসংখ্যক নারী উদ্যোক্তা স্বামীর কর্ম ও কর্মক্ষেত্রের অবস্থানকে প্রাধান্য দিয়ে নিজের ব্যবসানীতি নির্ধারণ করেন। একই কার্যকারণে স্বামীকে দেশের বাইরে থাকার প্রয়োজন পড়লে উদ্যোক্তা নারীটি নিজের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা গুটিয়ে নির্দ্বিধায় স্বামীর সঙ্গে দেশের বাইরে চলে যান।
নিজের অর্জনকে হালকা করে দেখা এবং অনায়াসে সেটাকে বিসর্জন দেওয়াটা হয়তো এই উপমহাদেশীয় নারীদের সামাজিক শিক্ষা। অবধারিত ভেবে কেউ এটাকে আমলে না নিলেও বিষয়টা নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা। আমি বলব, ব্যবসায় দক্ষতা উন্নয়নের কোর্স যাঁরা ডিজাইন করেন, তাঁরা কোর্সের অন্তত একটা অংশ নারী অধিকার বিষয়ের ওপরে রাখতে পারেন। নইলে ব্যবসায় দক্ষতা অর্জন করা এই নারীরা নিজের স্বাধীনতা ও অধিকার অন্যের হাওলায় ছেড়ে দিয়ে তৃপ্তি অনুভব করে উচ্চারণ করতেই থাকবেন—তাঁকে পরিবার অনেক স্বাধীনতা দেয়!
অস্তিত্বের সংকট নিয়ে আর যা-ই হোক ব্যবসা হয় না। এবার আসি নারী উদ্যোক্তাদের প্রাথমিক কিছু চ্যালেঞ্জের বিষয়ে। একেবারে প্রথম বাধাটা আসে ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় আইনগত কাগজপত্র তৈরির ক্ষেত্রে। এফ-কমার্স ও ই-কমার্স বিজনেসে অফিস থাকবে না, এটা স্বাভাবিক ভাবা উচিত। অধিকাংশ নারী ঘরে বসেই কার্যক্রম পরিচালনা করেন। অথচ ট্রেড লাইসেন্সে বাণিজ্যিক এলাকায় অবস্থিত নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ঠিকানা বাধ্যতামূলকভাবে দেখাতে হয়। ট্রেড লাইসেন্সবিষয়ক কোনো সমাধান সরকার না দেওয়ায় নারী উদ্যোক্তারা ঝামেলা এড়িয়ে ফেসবুক পেজভিত্তিক ব্যবসা করতেই স্বচ্ছন্দবোধ করেন। একটা মিথ্যা যেমন আরও দশটি মিথ্যার জন্ম দিতে থাকে, ঠিক তেমনি ট্রেড লাইসেন্স না করায় বিভিন্ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত এবং নানা ক্ষেত্রে অসহযোগিতার সম্মুখীন হতে থাকেন নারী উদ্যোক্তারা। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ব্যাংক ও ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউটের কোনো রকম ঋণসুবিধা না পাওয়া এবং দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণগুলোতে সুযোগ না পাওয়া।
বাকি চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে আছে ট্রেড লাইসেন্স রিভিউর উচ্চতর ফি, বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজে আবেদনে তথ্যের ঘাটতি, বন্ধকি ছাড়া ঋণসুবিধা না পাওয়া, টিন ও ভ্যাটবিষয়ক জ্ঞানের অভাব, সারা দেশে উইমেন চেম্বার অব কমার্সের অকার্যকারিতা, কার্যকরী মার্কেটিং ও ব্র্যান্ডিংবিষয়ক জ্ঞানের অভাব, আঞ্চলিক কার্গো সুবিধা না থাকা ইত্যাদি।
এসব বাধাবিপত্তি, পারিবারিক অসহযোগিতা, সঠিক পৃষ্ঠপোষকতার অভাব সত্ত্বেও নারীরা কিন্তু ব্যবসাবিমুখ হননি। সংখ্যায় কম হলেও বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে এমন একটা অকিঞ্চিৎকর ও পুরুষের আগ্রাসনের জায়গায় নারীর পা ফেলাটাই অনেক বড় ব্যাপার। আশার কথা হলো, এই সংখ্যা উত্তরোত্তর বাড়ছে।
আসুন, এবার নারীদের ব্যবসায়িক পথপরিক্রমার কিছু পরিসংখ্যান দেখে নিই। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক জরিপে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ৮ মিলিয়ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে নারী মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা মাত্র ৭ দশমিক ২ শতাংশ। এগুলোর মধ্যে বড় শিল্পের সঙ্গে যুক্ত আছেন ৫৪ দশমিক ৯২ শতাংশ নারী। ২৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ মাঝারি শিল্পের সঙ্গে, ১৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ ছোট শিল্পের সঙ্গে এবং ১৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ নারী ক্ষুদ্র শিল্পের সঙ্গে জড়িত।
‘হোলসেল অ্যান্ড রিটেইল ট্রেড সার্ভে-২০২০’ শীর্ষক আরেকটি জরিপ পরিচালনা করেছে বিবিএস। সরকারের কোনো না কোনো মাধ্যমে নিবন্ধন রয়েছে শুধু—এমন উদ্যোক্তাদের তথ্যই সেখানে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে নিবন্ধিত খুচরা ও পাইকারি প্রতিষ্ঠান ছিল ২৫ লাখ ৪০ হাজার ৮৯৭টি। এসব প্রতিষ্ঠানে পুরুষ উদ্যোক্তা ছিলেন ১ কোটি ৩৯ লাখ ১ হাজার ৫৬৪ জন, আর নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা ২ লাখ ৩ হাজার ১৮৯ জন। ২০০৯-১০ অর্থবছরে নারী উদ্যোক্তা ছিলেন ৮৯ হাজার ৮৪৮ জন। এই সংখ্যা ২০০২-০৩ অর্থবছরে ছিল মাত্র ২১ হাজার ৮৬৭ জন। অর্থাৎ, দুই দশকে নারী উদ্যোক্তা বেড়েছে ৯২৯ শতাংশ!
বিশ্বব্যাংক গ্রুপের ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) তথ্যমতে, দেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোক্তার সংখ্যা প্রায় ২৪ লাখ। এ ছাড়া ভেনচার ক্যাপিটাল রিসার্চ ডেটাবেইস পিচবুক থেকে প্রকাশিত সর্বশেষ পরিসংখ্যান-২০১৯-এর তথ্যমতে, পৃথিবীর মাত্র ২ শতাংশ নারীর কাছে তাঁদের ব্যবসা পরিচালনার মূলধন থাকে।
যেখানে পুরো পৃথিবী দিচ্ছে প্রতি ১০০ জনে দুজন উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার পরিসংখ্যান, সেখানে বাংলাদেশের চিত্রটি আশার আলো দেখায়। নারী উদ্যোক্তা তৈরিতে বিশ্বের অন্য অনেক দেশের তুলনায় এগিয়ে আছে বাংলাদেশ।
২০১৭ সাল। মাস্টারকার্ড ইনডেক্স অব উইমেন অন্ট্রাপ্রেনরস-এর জরিপে একটি তথ্য উঠে আসে। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশে যত উদ্যোক্তা আছেন, তাঁদের প্রায় ৩২ জন নারী। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিকদের মধ্যে নারীর সংখ্যা বিবেচনায় ৫৪টি স্বল্প আয়ের দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অবস্থান করছে ৬ নম্বরে। উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠতে একজন নারীর যে সুবিধাগুলো পাওয়া জরুরি, সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জরুরি হলো আর্থিক সহায়তাপ্রাপ্তি ও সহজে ব্যবসা করার পরিবেশ। এ দুই সুবিধাপ্রাপ্তিতে এমআইডব্লিউই সূচকে ১০০-তে বাংলাদেশের স্কোর ৩২। এত কম সুযোগ-সুবিধা পেয়েও বাংলাদেশের নারীরা কেন এত বেশি হারে উদ্যোক্তা হচ্ছেন—এমন প্রশ্নের উত্তরে জরিপে বলা হয়েছে, পরিবার ও নিজেদের আর্থিক চাহিদা পূরণের জন্যই এ দেশের নারীরা উদ্যোক্তা হচ্ছেন।
এবার কিছু সুখের কথা বলি। করোনার দুই বছরে পৃথিবীর প্রেক্ষাপট একেবারে পাল্টে গেছে। একইভাবে পাল্টেছে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতও। এ সময় পারিবারিক ও আর্থিক সংকট পাড়ি দিতে লাখ লাখ নারী যুক্ত হয়েছেন অনলাইন ব্যবসায়। মূলত এসব নারী ফেসবুক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে নিয়মিত আয়ের মাধ্যমে পরিবারে স্বাচ্ছন্দ্য এনেছেন। সম্প্রতি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে অসংখ্য প্রতারণা হওয়ায় এফ-কমার্স ও ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের জন্য সরকার ইউনিক বিজনেস আইডি চালু করেছে। এতে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়কেই সহজে ট্র্যাক করা যাবে এবং যেকোনো পক্ষ থেকে প্রতারণা হলে উভয়কেই জবাবদিহির আওতায় আনা সম্ভব হবে। সরকারি-বেসরকারি অনেক খাত দাতা সংস্থাগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়ে নারী উদ্যোক্তাদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি আইনগত তথ্য দিচ্ছে, স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিজনেস-টু-বিজনেস ম্যাচমেকিং করছে, দেশি-বিদেশি করপোরেট বায়ারদের সঙ্গে উদ্যোক্তাদের যোগাযোগ স্থাপন, দেশে ও দেশের বাইরের বিভিন্ন এক্সপোতে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিচ্ছে, ছোট-বড় গ্র্যান্টের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ করা থেকে পিচিং প্রশিক্ষণ দেওয়া পর্যন্ত নানা ধরনের সেবা দিচ্ছে। এ পর্যন্ত অসংখ্য নারী উদ্যোক্তা স্টার্টআপ পিচিংয়ের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি গ্র্যান্ট পেয়েছেন।
নারী উদ্যোক্তাদের অনেক আশাহত হওয়ার মতো ঘটনা যেমন আছে, ঠিক তেমনি আছে ভরসার জায়গাও। নারীদের ভরসার জায়গাগুলো আরও প্রসারিত হোক। দেশের জিডিপির উত্তরণ ঘটুক কর্মঠ ও মেধাবী নারী উদ্যোক্তাদের হাত ধরে।
লেখক: প্রেসিডেন্ট, হার ই-ট্রেড
ওয়ারেছা খানম প্রীতি

আমি একটি কথা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি—একটি দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল এবং চর্চার পরিবেশ সেই দেশের অধিবাসীদের উন্নত মনন তৈরি করে। মহান স্বাধীনতার আগপর্যন্ত একটা মিশ্র সমাজব্যবস্থা আমাদের সাংস্কৃতিক স্থিতিকে নড়বড়ে করেছে। আমাদের সামনে সুনির্দিষ্ট কোনো রূপরেখা নেই, সেটা হোক সামাজিক, পারিবারিক কিংবা আচরণগত সৌন্দর্যের। উপরন্তু অন্যকে অধীনস্থ রাখার মানসিকতা রক্তে বহন করে চলেছে বৃহত্তর বাঙালি সমাজ।
কয়েক দিন আগে স্বনামধন্য একটি ব্যাংকের করপোরেট অফিসে গিয়েছিলাম। বন্ধু সেখানকার ডিএমডি। কথা বলার একপর্যায়ে তিনি তাঁর এক সহকর্মীকে দেখিয়ে বললেন, ‘উনি এখানকার সিনিয়র একটি পদে আছেন, বেতনও ভালো। কিন্তু সম্প্রতি চাকরি ছাড়বেন বলে রেজিগনেশন লেটার দিয়েছেন।’ বললাম, ‘অন্য কোথাও ভালো সুযোগ পেয়েছেন নিশ্চয়ই?’ এরপর বন্ধুটি যা জানালেন তাতে পরিষ্কার বুঝতে পারছিলাম, এখনো নারী তার নিজের ক্যারিয়ার ও যাপনের নানা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে পারিবারিক ও পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতিকে সবার আগে মূল্যায়ন করে। ব্যাংকার সেই নারীর স্বামী চান না তাঁর স্ত্রী চাকরি করুক। কারণ, এ মুহূর্তে তাঁর নিজের কোনো চাকরি নেই। বিষয়টি তাঁর পুরুষতান্ত্রিক আত্মগরিমায় ভীষণভাবে আঘাত করছে। সুতরাং স্ত্রীকে বিয়ে টেকাতে হলে চাকরি ছাড়তে হবে।
ঠিক এই জায়গায় আসুন, আমরা আরেক দলকে কল্পনা করি, যারা চাকরি করছে না। যাদের সম্বন্ধে আমাদের ধারণা হলো, তারা খুব স্বাধীনভাবে কাজ করছে। সেই নারী উদ্যোক্তাদের অবস্থান আদতে কতটা স্বাধীন ও স্বাচ্ছন্দ্যের? যেহেতু ‘হার ই-ট্রেড’ নামে নারী উদ্যোক্তাদের একটা নেটওয়ার্কিং সাইট পরিচালনা করি, সেই সুবাদে প্রতিনিয়ত আমাকে কিছু অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। প্রায়ই কিছু নারীকে বলতে শুনি, স্বামী কিংবা শ্বশুরকুল তাঁকে পর্যাপ্ত স্বাধীনতা দিয়েছে বলেই তিনি ঘরে বসে কাজ করতে পারছেন। এ জন্য এই দল নিজেকে ভীষণ সৌভাগ্যবান মনে করেন। এ ধরনের মানসিকতা লালন করেন বলেই হয়তো ব্যবসায়ী হিসেবে কয়েক বছরের ক্যারিয়ার থাকলেও, এমনকি ব্যবসা ‘গ্রোথ লেভেলে’ যাওয়ার পরও বিপুলসংখ্যক নারী উদ্যোক্তা স্বামীর কর্ম ও কর্মক্ষেত্রের অবস্থানকে প্রাধান্য দিয়ে নিজের ব্যবসানীতি নির্ধারণ করেন। একই কার্যকারণে স্বামীকে দেশের বাইরে থাকার প্রয়োজন পড়লে উদ্যোক্তা নারীটি নিজের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা গুটিয়ে নির্দ্বিধায় স্বামীর সঙ্গে দেশের বাইরে চলে যান।
নিজের অর্জনকে হালকা করে দেখা এবং অনায়াসে সেটাকে বিসর্জন দেওয়াটা হয়তো এই উপমহাদেশীয় নারীদের সামাজিক শিক্ষা। অবধারিত ভেবে কেউ এটাকে আমলে না নিলেও বিষয়টা নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা। আমি বলব, ব্যবসায় দক্ষতা উন্নয়নের কোর্স যাঁরা ডিজাইন করেন, তাঁরা কোর্সের অন্তত একটা অংশ নারী অধিকার বিষয়ের ওপরে রাখতে পারেন। নইলে ব্যবসায় দক্ষতা অর্জন করা এই নারীরা নিজের স্বাধীনতা ও অধিকার অন্যের হাওলায় ছেড়ে দিয়ে তৃপ্তি অনুভব করে উচ্চারণ করতেই থাকবেন—তাঁকে পরিবার অনেক স্বাধীনতা দেয়!
অস্তিত্বের সংকট নিয়ে আর যা-ই হোক ব্যবসা হয় না। এবার আসি নারী উদ্যোক্তাদের প্রাথমিক কিছু চ্যালেঞ্জের বিষয়ে। একেবারে প্রথম বাধাটা আসে ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় আইনগত কাগজপত্র তৈরির ক্ষেত্রে। এফ-কমার্স ও ই-কমার্স বিজনেসে অফিস থাকবে না, এটা স্বাভাবিক ভাবা উচিত। অধিকাংশ নারী ঘরে বসেই কার্যক্রম পরিচালনা করেন। অথচ ট্রেড লাইসেন্সে বাণিজ্যিক এলাকায় অবস্থিত নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ঠিকানা বাধ্যতামূলকভাবে দেখাতে হয়। ট্রেড লাইসেন্সবিষয়ক কোনো সমাধান সরকার না দেওয়ায় নারী উদ্যোক্তারা ঝামেলা এড়িয়ে ফেসবুক পেজভিত্তিক ব্যবসা করতেই স্বচ্ছন্দবোধ করেন। একটা মিথ্যা যেমন আরও দশটি মিথ্যার জন্ম দিতে থাকে, ঠিক তেমনি ট্রেড লাইসেন্স না করায় বিভিন্ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত এবং নানা ক্ষেত্রে অসহযোগিতার সম্মুখীন হতে থাকেন নারী উদ্যোক্তারা। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ব্যাংক ও ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউটের কোনো রকম ঋণসুবিধা না পাওয়া এবং দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণগুলোতে সুযোগ না পাওয়া।
বাকি চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে আছে ট্রেড লাইসেন্স রিভিউর উচ্চতর ফি, বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজে আবেদনে তথ্যের ঘাটতি, বন্ধকি ছাড়া ঋণসুবিধা না পাওয়া, টিন ও ভ্যাটবিষয়ক জ্ঞানের অভাব, সারা দেশে উইমেন চেম্বার অব কমার্সের অকার্যকারিতা, কার্যকরী মার্কেটিং ও ব্র্যান্ডিংবিষয়ক জ্ঞানের অভাব, আঞ্চলিক কার্গো সুবিধা না থাকা ইত্যাদি।
এসব বাধাবিপত্তি, পারিবারিক অসহযোগিতা, সঠিক পৃষ্ঠপোষকতার অভাব সত্ত্বেও নারীরা কিন্তু ব্যবসাবিমুখ হননি। সংখ্যায় কম হলেও বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে এমন একটা অকিঞ্চিৎকর ও পুরুষের আগ্রাসনের জায়গায় নারীর পা ফেলাটাই অনেক বড় ব্যাপার। আশার কথা হলো, এই সংখ্যা উত্তরোত্তর বাড়ছে।
আসুন, এবার নারীদের ব্যবসায়িক পথপরিক্রমার কিছু পরিসংখ্যান দেখে নিই। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক জরিপে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ৮ মিলিয়ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে নারী মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা মাত্র ৭ দশমিক ২ শতাংশ। এগুলোর মধ্যে বড় শিল্পের সঙ্গে যুক্ত আছেন ৫৪ দশমিক ৯২ শতাংশ নারী। ২৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ মাঝারি শিল্পের সঙ্গে, ১৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ ছোট শিল্পের সঙ্গে এবং ১৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ নারী ক্ষুদ্র শিল্পের সঙ্গে জড়িত।
‘হোলসেল অ্যান্ড রিটেইল ট্রেড সার্ভে-২০২০’ শীর্ষক আরেকটি জরিপ পরিচালনা করেছে বিবিএস। সরকারের কোনো না কোনো মাধ্যমে নিবন্ধন রয়েছে শুধু—এমন উদ্যোক্তাদের তথ্যই সেখানে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে নিবন্ধিত খুচরা ও পাইকারি প্রতিষ্ঠান ছিল ২৫ লাখ ৪০ হাজার ৮৯৭টি। এসব প্রতিষ্ঠানে পুরুষ উদ্যোক্তা ছিলেন ১ কোটি ৩৯ লাখ ১ হাজার ৫৬৪ জন, আর নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা ২ লাখ ৩ হাজার ১৮৯ জন। ২০০৯-১০ অর্থবছরে নারী উদ্যোক্তা ছিলেন ৮৯ হাজার ৮৪৮ জন। এই সংখ্যা ২০০২-০৩ অর্থবছরে ছিল মাত্র ২১ হাজার ৮৬৭ জন। অর্থাৎ, দুই দশকে নারী উদ্যোক্তা বেড়েছে ৯২৯ শতাংশ!
বিশ্বব্যাংক গ্রুপের ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) তথ্যমতে, দেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোক্তার সংখ্যা প্রায় ২৪ লাখ। এ ছাড়া ভেনচার ক্যাপিটাল রিসার্চ ডেটাবেইস পিচবুক থেকে প্রকাশিত সর্বশেষ পরিসংখ্যান-২০১৯-এর তথ্যমতে, পৃথিবীর মাত্র ২ শতাংশ নারীর কাছে তাঁদের ব্যবসা পরিচালনার মূলধন থাকে।
যেখানে পুরো পৃথিবী দিচ্ছে প্রতি ১০০ জনে দুজন উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার পরিসংখ্যান, সেখানে বাংলাদেশের চিত্রটি আশার আলো দেখায়। নারী উদ্যোক্তা তৈরিতে বিশ্বের অন্য অনেক দেশের তুলনায় এগিয়ে আছে বাংলাদেশ।
২০১৭ সাল। মাস্টারকার্ড ইনডেক্স অব উইমেন অন্ট্রাপ্রেনরস-এর জরিপে একটি তথ্য উঠে আসে। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশে যত উদ্যোক্তা আছেন, তাঁদের প্রায় ৩২ জন নারী। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিকদের মধ্যে নারীর সংখ্যা বিবেচনায় ৫৪টি স্বল্প আয়ের দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অবস্থান করছে ৬ নম্বরে। উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠতে একজন নারীর যে সুবিধাগুলো পাওয়া জরুরি, সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জরুরি হলো আর্থিক সহায়তাপ্রাপ্তি ও সহজে ব্যবসা করার পরিবেশ। এ দুই সুবিধাপ্রাপ্তিতে এমআইডব্লিউই সূচকে ১০০-তে বাংলাদেশের স্কোর ৩২। এত কম সুযোগ-সুবিধা পেয়েও বাংলাদেশের নারীরা কেন এত বেশি হারে উদ্যোক্তা হচ্ছেন—এমন প্রশ্নের উত্তরে জরিপে বলা হয়েছে, পরিবার ও নিজেদের আর্থিক চাহিদা পূরণের জন্যই এ দেশের নারীরা উদ্যোক্তা হচ্ছেন।
এবার কিছু সুখের কথা বলি। করোনার দুই বছরে পৃথিবীর প্রেক্ষাপট একেবারে পাল্টে গেছে। একইভাবে পাল্টেছে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতও। এ সময় পারিবারিক ও আর্থিক সংকট পাড়ি দিতে লাখ লাখ নারী যুক্ত হয়েছেন অনলাইন ব্যবসায়। মূলত এসব নারী ফেসবুক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে নিয়মিত আয়ের মাধ্যমে পরিবারে স্বাচ্ছন্দ্য এনেছেন। সম্প্রতি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে অসংখ্য প্রতারণা হওয়ায় এফ-কমার্স ও ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের জন্য সরকার ইউনিক বিজনেস আইডি চালু করেছে। এতে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়কেই সহজে ট্র্যাক করা যাবে এবং যেকোনো পক্ষ থেকে প্রতারণা হলে উভয়কেই জবাবদিহির আওতায় আনা সম্ভব হবে। সরকারি-বেসরকারি অনেক খাত দাতা সংস্থাগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়ে নারী উদ্যোক্তাদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি আইনগত তথ্য দিচ্ছে, স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিজনেস-টু-বিজনেস ম্যাচমেকিং করছে, দেশি-বিদেশি করপোরেট বায়ারদের সঙ্গে উদ্যোক্তাদের যোগাযোগ স্থাপন, দেশে ও দেশের বাইরের বিভিন্ন এক্সপোতে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিচ্ছে, ছোট-বড় গ্র্যান্টের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ করা থেকে পিচিং প্রশিক্ষণ দেওয়া পর্যন্ত নানা ধরনের সেবা দিচ্ছে। এ পর্যন্ত অসংখ্য নারী উদ্যোক্তা স্টার্টআপ পিচিংয়ের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি গ্র্যান্ট পেয়েছেন।
নারী উদ্যোক্তাদের অনেক আশাহত হওয়ার মতো ঘটনা যেমন আছে, ঠিক তেমনি আছে ভরসার জায়গাও। নারীদের ভরসার জায়গাগুলো আরও প্রসারিত হোক। দেশের জিডিপির উত্তরণ ঘটুক কর্মঠ ও মেধাবী নারী উদ্যোক্তাদের হাত ধরে।
লেখক: প্রেসিডেন্ট, হার ই-ট্রেড

আমি একটি কথা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি—একটি দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল এবং চর্চার পরিবেশ সেই দেশের অধিবাসীদের উন্নত মনন তৈরি করে। মহান স্বাধীনতার আগপর্যন্ত একটা মিশ্র সমাজব্যবস্থা আমাদের সাংস্কৃতিক স্থিতিকে নড়বড়ে করেছে। আমাদের সামনে সুনির্দিষ্ট কোনো রূপরেখা নেই, সেটা হোক সামাজিক, পারিবারিক কিংবা আচরণগত সৌন্দর্যের। উপরন্তু অন্যকে অধীনস্থ রাখার মানসিকতা রক্তে বহন করে চলেছে বৃহত্তর বাঙালি সমাজ।
কয়েক দিন আগে স্বনামধন্য একটি ব্যাংকের করপোরেট অফিসে গিয়েছিলাম। বন্ধু সেখানকার ডিএমডি। কথা বলার একপর্যায়ে তিনি তাঁর এক সহকর্মীকে দেখিয়ে বললেন, ‘উনি এখানকার সিনিয়র একটি পদে আছেন, বেতনও ভালো। কিন্তু সম্প্রতি চাকরি ছাড়বেন বলে রেজিগনেশন লেটার দিয়েছেন।’ বললাম, ‘অন্য কোথাও ভালো সুযোগ পেয়েছেন নিশ্চয়ই?’ এরপর বন্ধুটি যা জানালেন তাতে পরিষ্কার বুঝতে পারছিলাম, এখনো নারী তার নিজের ক্যারিয়ার ও যাপনের নানা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে পারিবারিক ও পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতিকে সবার আগে মূল্যায়ন করে। ব্যাংকার সেই নারীর স্বামী চান না তাঁর স্ত্রী চাকরি করুক। কারণ, এ মুহূর্তে তাঁর নিজের কোনো চাকরি নেই। বিষয়টি তাঁর পুরুষতান্ত্রিক আত্মগরিমায় ভীষণভাবে আঘাত করছে। সুতরাং স্ত্রীকে বিয়ে টেকাতে হলে চাকরি ছাড়তে হবে।
ঠিক এই জায়গায় আসুন, আমরা আরেক দলকে কল্পনা করি, যারা চাকরি করছে না। যাদের সম্বন্ধে আমাদের ধারণা হলো, তারা খুব স্বাধীনভাবে কাজ করছে। সেই নারী উদ্যোক্তাদের অবস্থান আদতে কতটা স্বাধীন ও স্বাচ্ছন্দ্যের? যেহেতু ‘হার ই-ট্রেড’ নামে নারী উদ্যোক্তাদের একটা নেটওয়ার্কিং সাইট পরিচালনা করি, সেই সুবাদে প্রতিনিয়ত আমাকে কিছু অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। প্রায়ই কিছু নারীকে বলতে শুনি, স্বামী কিংবা শ্বশুরকুল তাঁকে পর্যাপ্ত স্বাধীনতা দিয়েছে বলেই তিনি ঘরে বসে কাজ করতে পারছেন। এ জন্য এই দল নিজেকে ভীষণ সৌভাগ্যবান মনে করেন। এ ধরনের মানসিকতা লালন করেন বলেই হয়তো ব্যবসায়ী হিসেবে কয়েক বছরের ক্যারিয়ার থাকলেও, এমনকি ব্যবসা ‘গ্রোথ লেভেলে’ যাওয়ার পরও বিপুলসংখ্যক নারী উদ্যোক্তা স্বামীর কর্ম ও কর্মক্ষেত্রের অবস্থানকে প্রাধান্য দিয়ে নিজের ব্যবসানীতি নির্ধারণ করেন। একই কার্যকারণে স্বামীকে দেশের বাইরে থাকার প্রয়োজন পড়লে উদ্যোক্তা নারীটি নিজের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা গুটিয়ে নির্দ্বিধায় স্বামীর সঙ্গে দেশের বাইরে চলে যান।
নিজের অর্জনকে হালকা করে দেখা এবং অনায়াসে সেটাকে বিসর্জন দেওয়াটা হয়তো এই উপমহাদেশীয় নারীদের সামাজিক শিক্ষা। অবধারিত ভেবে কেউ এটাকে আমলে না নিলেও বিষয়টা নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা। আমি বলব, ব্যবসায় দক্ষতা উন্নয়নের কোর্স যাঁরা ডিজাইন করেন, তাঁরা কোর্সের অন্তত একটা অংশ নারী অধিকার বিষয়ের ওপরে রাখতে পারেন। নইলে ব্যবসায় দক্ষতা অর্জন করা এই নারীরা নিজের স্বাধীনতা ও অধিকার অন্যের হাওলায় ছেড়ে দিয়ে তৃপ্তি অনুভব করে উচ্চারণ করতেই থাকবেন—তাঁকে পরিবার অনেক স্বাধীনতা দেয়!
অস্তিত্বের সংকট নিয়ে আর যা-ই হোক ব্যবসা হয় না। এবার আসি নারী উদ্যোক্তাদের প্রাথমিক কিছু চ্যালেঞ্জের বিষয়ে। একেবারে প্রথম বাধাটা আসে ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় আইনগত কাগজপত্র তৈরির ক্ষেত্রে। এফ-কমার্স ও ই-কমার্স বিজনেসে অফিস থাকবে না, এটা স্বাভাবিক ভাবা উচিত। অধিকাংশ নারী ঘরে বসেই কার্যক্রম পরিচালনা করেন। অথচ ট্রেড লাইসেন্সে বাণিজ্যিক এলাকায় অবস্থিত নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ঠিকানা বাধ্যতামূলকভাবে দেখাতে হয়। ট্রেড লাইসেন্সবিষয়ক কোনো সমাধান সরকার না দেওয়ায় নারী উদ্যোক্তারা ঝামেলা এড়িয়ে ফেসবুক পেজভিত্তিক ব্যবসা করতেই স্বচ্ছন্দবোধ করেন। একটা মিথ্যা যেমন আরও দশটি মিথ্যার জন্ম দিতে থাকে, ঠিক তেমনি ট্রেড লাইসেন্স না করায় বিভিন্ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত এবং নানা ক্ষেত্রে অসহযোগিতার সম্মুখীন হতে থাকেন নারী উদ্যোক্তারা। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ব্যাংক ও ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউটের কোনো রকম ঋণসুবিধা না পাওয়া এবং দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণগুলোতে সুযোগ না পাওয়া।
বাকি চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে আছে ট্রেড লাইসেন্স রিভিউর উচ্চতর ফি, বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজে আবেদনে তথ্যের ঘাটতি, বন্ধকি ছাড়া ঋণসুবিধা না পাওয়া, টিন ও ভ্যাটবিষয়ক জ্ঞানের অভাব, সারা দেশে উইমেন চেম্বার অব কমার্সের অকার্যকারিতা, কার্যকরী মার্কেটিং ও ব্র্যান্ডিংবিষয়ক জ্ঞানের অভাব, আঞ্চলিক কার্গো সুবিধা না থাকা ইত্যাদি।
এসব বাধাবিপত্তি, পারিবারিক অসহযোগিতা, সঠিক পৃষ্ঠপোষকতার অভাব সত্ত্বেও নারীরা কিন্তু ব্যবসাবিমুখ হননি। সংখ্যায় কম হলেও বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে এমন একটা অকিঞ্চিৎকর ও পুরুষের আগ্রাসনের জায়গায় নারীর পা ফেলাটাই অনেক বড় ব্যাপার। আশার কথা হলো, এই সংখ্যা উত্তরোত্তর বাড়ছে।
আসুন, এবার নারীদের ব্যবসায়িক পথপরিক্রমার কিছু পরিসংখ্যান দেখে নিই। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক জরিপে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ৮ মিলিয়ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে নারী মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা মাত্র ৭ দশমিক ২ শতাংশ। এগুলোর মধ্যে বড় শিল্পের সঙ্গে যুক্ত আছেন ৫৪ দশমিক ৯২ শতাংশ নারী। ২৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ মাঝারি শিল্পের সঙ্গে, ১৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ ছোট শিল্পের সঙ্গে এবং ১৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ নারী ক্ষুদ্র শিল্পের সঙ্গে জড়িত।
‘হোলসেল অ্যান্ড রিটেইল ট্রেড সার্ভে-২০২০’ শীর্ষক আরেকটি জরিপ পরিচালনা করেছে বিবিএস। সরকারের কোনো না কোনো মাধ্যমে নিবন্ধন রয়েছে শুধু—এমন উদ্যোক্তাদের তথ্যই সেখানে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে নিবন্ধিত খুচরা ও পাইকারি প্রতিষ্ঠান ছিল ২৫ লাখ ৪০ হাজার ৮৯৭টি। এসব প্রতিষ্ঠানে পুরুষ উদ্যোক্তা ছিলেন ১ কোটি ৩৯ লাখ ১ হাজার ৫৬৪ জন, আর নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা ২ লাখ ৩ হাজার ১৮৯ জন। ২০০৯-১০ অর্থবছরে নারী উদ্যোক্তা ছিলেন ৮৯ হাজার ৮৪৮ জন। এই সংখ্যা ২০০২-০৩ অর্থবছরে ছিল মাত্র ২১ হাজার ৮৬৭ জন। অর্থাৎ, দুই দশকে নারী উদ্যোক্তা বেড়েছে ৯২৯ শতাংশ!
বিশ্বব্যাংক গ্রুপের ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) তথ্যমতে, দেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোক্তার সংখ্যা প্রায় ২৪ লাখ। এ ছাড়া ভেনচার ক্যাপিটাল রিসার্চ ডেটাবেইস পিচবুক থেকে প্রকাশিত সর্বশেষ পরিসংখ্যান-২০১৯-এর তথ্যমতে, পৃথিবীর মাত্র ২ শতাংশ নারীর কাছে তাঁদের ব্যবসা পরিচালনার মূলধন থাকে।
যেখানে পুরো পৃথিবী দিচ্ছে প্রতি ১০০ জনে দুজন উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার পরিসংখ্যান, সেখানে বাংলাদেশের চিত্রটি আশার আলো দেখায়। নারী উদ্যোক্তা তৈরিতে বিশ্বের অন্য অনেক দেশের তুলনায় এগিয়ে আছে বাংলাদেশ।
২০১৭ সাল। মাস্টারকার্ড ইনডেক্স অব উইমেন অন্ট্রাপ্রেনরস-এর জরিপে একটি তথ্য উঠে আসে। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশে যত উদ্যোক্তা আছেন, তাঁদের প্রায় ৩২ জন নারী। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিকদের মধ্যে নারীর সংখ্যা বিবেচনায় ৫৪টি স্বল্প আয়ের দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অবস্থান করছে ৬ নম্বরে। উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠতে একজন নারীর যে সুবিধাগুলো পাওয়া জরুরি, সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জরুরি হলো আর্থিক সহায়তাপ্রাপ্তি ও সহজে ব্যবসা করার পরিবেশ। এ দুই সুবিধাপ্রাপ্তিতে এমআইডব্লিউই সূচকে ১০০-তে বাংলাদেশের স্কোর ৩২। এত কম সুযোগ-সুবিধা পেয়েও বাংলাদেশের নারীরা কেন এত বেশি হারে উদ্যোক্তা হচ্ছেন—এমন প্রশ্নের উত্তরে জরিপে বলা হয়েছে, পরিবার ও নিজেদের আর্থিক চাহিদা পূরণের জন্যই এ দেশের নারীরা উদ্যোক্তা হচ্ছেন।
এবার কিছু সুখের কথা বলি। করোনার দুই বছরে পৃথিবীর প্রেক্ষাপট একেবারে পাল্টে গেছে। একইভাবে পাল্টেছে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতও। এ সময় পারিবারিক ও আর্থিক সংকট পাড়ি দিতে লাখ লাখ নারী যুক্ত হয়েছেন অনলাইন ব্যবসায়। মূলত এসব নারী ফেসবুক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে নিয়মিত আয়ের মাধ্যমে পরিবারে স্বাচ্ছন্দ্য এনেছেন। সম্প্রতি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে অসংখ্য প্রতারণা হওয়ায় এফ-কমার্স ও ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের জন্য সরকার ইউনিক বিজনেস আইডি চালু করেছে। এতে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়কেই সহজে ট্র্যাক করা যাবে এবং যেকোনো পক্ষ থেকে প্রতারণা হলে উভয়কেই জবাবদিহির আওতায় আনা সম্ভব হবে। সরকারি-বেসরকারি অনেক খাত দাতা সংস্থাগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়ে নারী উদ্যোক্তাদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি আইনগত তথ্য দিচ্ছে, স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিজনেস-টু-বিজনেস ম্যাচমেকিং করছে, দেশি-বিদেশি করপোরেট বায়ারদের সঙ্গে উদ্যোক্তাদের যোগাযোগ স্থাপন, দেশে ও দেশের বাইরের বিভিন্ন এক্সপোতে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিচ্ছে, ছোট-বড় গ্র্যান্টের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ করা থেকে পিচিং প্রশিক্ষণ দেওয়া পর্যন্ত নানা ধরনের সেবা দিচ্ছে। এ পর্যন্ত অসংখ্য নারী উদ্যোক্তা স্টার্টআপ পিচিংয়ের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি গ্র্যান্ট পেয়েছেন।
নারী উদ্যোক্তাদের অনেক আশাহত হওয়ার মতো ঘটনা যেমন আছে, ঠিক তেমনি আছে ভরসার জায়গাও। নারীদের ভরসার জায়গাগুলো আরও প্রসারিত হোক। দেশের জিডিপির উত্তরণ ঘটুক কর্মঠ ও মেধাবী নারী উদ্যোক্তাদের হাত ধরে।
লেখক: প্রেসিডেন্ট, হার ই-ট্রেড

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

আমি একটি কথা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি—একটি দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল এবং চর্চার পরিবেশ সেই দেশের অধিবাসীদের উন্নত মনন তৈরি করে। মহান স্বাধীনতার আগপর্যন্ত একটা মিশ্র সমাজব্যবস্থা আমাদের সাংস্কৃতিক স্থিতিকে নড়বড়ে করেছে। আমাদের সামনে সুনির্দিষ্ট কোনো রূপরেখা নেই, সেটা হোক সামাজিক, পারিবারিক কিংবা আচরণগত স
২৮ জুন ২০২২
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

আমি একটি কথা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি—একটি দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল এবং চর্চার পরিবেশ সেই দেশের অধিবাসীদের উন্নত মনন তৈরি করে। মহান স্বাধীনতার আগপর্যন্ত একটা মিশ্র সমাজব্যবস্থা আমাদের সাংস্কৃতিক স্থিতিকে নড়বড়ে করেছে। আমাদের সামনে সুনির্দিষ্ট কোনো রূপরেখা নেই, সেটা হোক সামাজিক, পারিবারিক কিংবা আচরণগত স
২৮ জুন ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

আমি একটি কথা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি—একটি দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল এবং চর্চার পরিবেশ সেই দেশের অধিবাসীদের উন্নত মনন তৈরি করে। মহান স্বাধীনতার আগপর্যন্ত একটা মিশ্র সমাজব্যবস্থা আমাদের সাংস্কৃতিক স্থিতিকে নড়বড়ে করেছে। আমাদের সামনে সুনির্দিষ্ট কোনো রূপরেখা নেই, সেটা হোক সামাজিক, পারিবারিক কিংবা আচরণগত স
২৮ জুন ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আমি একটি কথা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি—একটি দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল এবং চর্চার পরিবেশ সেই দেশের অধিবাসীদের উন্নত মনন তৈরি করে। মহান স্বাধীনতার আগপর্যন্ত একটা মিশ্র সমাজব্যবস্থা আমাদের সাংস্কৃতিক স্থিতিকে নড়বড়ে করেছে। আমাদের সামনে সুনির্দিষ্ট কোনো রূপরেখা নেই, সেটা হোক সামাজিক, পারিবারিক কিংবা আচরণগত স
২৮ জুন ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫