Ajker Patrika

রূপকথার গল্প লিখে বিদায় হবে তো সেরেনার

ক্রীড়া ডেস্ক
Thumbnail image

১৯৭৯ সালের কোনো একদিন রিচার্ড উইলিয়ামস নামে এক মার্কিন ভদ্রলোক টেলিভিশনের সামনে বসে টেনিস ম্যাচ দেখছিলেন। সেদিন রোমানিয়ার নারী টেনিস খেলোয়াড় ভার্জিনিয়া রুজিসিকে ৪০ হাজার মার্কিন ডলার জিততে দেখে রীতিমতো চমকে উঠেছিলেন তিনি। টাকার এই অঙ্ক তাঁর সারা বছরের আয়ের চেয়ে বেশি। এই ঘটনার পর রিচার্ড তাঁর স্ত্রীকে বলেছিলেন, তাঁদের আরও দুটি কন্যাসন্তান লাগবে, যাদের তিনি টেনিস খেলোয়াড় বানাবেন।

এই ঘটনার আরও দুই বছর পর রিচার্ড দম্পতির ঘর আলো করে জন্ম নেন এক কন্যা, নাম সেরেনা। এক বছর আগে অবশ্য আরও এক কন্যার বাবা-মা হয়েছিলেন তাঁরা; যে কন্যার নাম ছিল ভেনাস। কে জানত, বাবা যে স্বপ্ন তাঁদের জন্মের আগে দেখেছিলেন, তা পূরণে দুই বোন নিজেদের উজাড় করে দেবেন; যেখানে বড় বোনকে ছাড়িয়ে নিজেকে টেনিস ইতিহাসের সমান উচ্চতায় নিয়ে যাবেন ছোট বোন। আর এখন সর্বকালের সেরার তালিকায় বেশ ওপরের দিকেই জ্বলজ্বল করছে সেরেনার নাম।

অবশ্য সব ভালো কিছুরই নাকি কখনো না কখনো শেষ হতে হয়। জন্মের দুই বছর আগেই যে গল্পের শুরু হয়েছিল, সেটি এবার শেষ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। মার্কিন এই মহাতারকা গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে টেনিসে রাজত্ব করেছেন, তা এবার শেষ হতে যাচ্ছে। শেষের ডাকটা অবশ্য সেরেনা আরও আগে শুনতে পেয়েছিলেন। ২০১৭ সালের পর আর কোনো গ্র্যান্ড স্লাম জিততে পারেননি। ২৩ গ্র্যান্ড স্লাম নিয়ে উন্মুক্ত যুগে সবার শীর্ষে থাকলেও সব মিলিয়ে মার্গারেট কোর্ট থেকে পিছিয়ে ২ নম্বরে থেকে গেছেন তিনি। আজ থেকে শুরু হতে যাওয়া ইউএস ওপেন সেরেনাকে শেষবারের মতো সুযোগ দিচ্ছে কোর্টকে স্পর্শ করার।

প্রশ্ন হচ্ছে, এই সুযোগ কি সেরেনা কাজে লাগাতে পারবেন? সেরেনা কি পারবেন, যে রূপকথার গল্প ক্যারিয়ারজুড়ে লিখেছেন, তা দিয়েই ক্যারিয়ার শেষ করতে? ছন্দ, বয়স ও বর্তমান পারফরম্যান্স সে কথা বলছে না। কিংবদন্তি মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা তো বলেই দিয়েছেন, সেরেনার ক্যারিয়ারে রূপকথার সমাপ্তি দেখছেন না তিনি। অবশ্য ফুটনোট হিসেবে একটা কথাও যোগ করেছেন, কেউ যদি গল্পটা লিখতে পারেন, তিনি হচ্ছেন সেরেনাই। এই বিদায় নিয়ে কথা বলেছেন আরেক মহাতারকা রাফায়েল নাদালও। পুরুষ এককে সর্বোচ্চ ২২ গ্র্যান্ড স্লামজয়ী নাদাল বলেছেন, ‘খেলার জায়গা থেকে দেখলে এটা কষ্টের। তবে অন্য দিক থেকে বলতে হয়, সে যা অর্জন করেছে তাতে এই সময় উপভোগ করাটা তার প্রাপ্য। সেরেনা লম্বা সময় ধরে কঠিন পরিশ্রম করে আসছেন। আমি আশা করব, সে টেনিসের আশপাশেই থাকবে, সেটা টেনিসের জন্যই সুসংবাদ হবে। সেরেনা একজন কিংবদন্তি।’

সেরেনা নিজে অবশ্য এখনই টেনিসকে ছাড়তে চাচ্ছেন না। কদিন আগেই বলেছিলেন, ‘আমি এটা ঘৃণা করি। আমি চাই না এটা শেষ হোক।’ তবে বাস্তবতা হচ্ছে, বিদায়টা অনিবার্য। ক্যারিয়ারের কোনো একপর্যায়ে এই বাস্তবতার মুখোমুখি হতেই হতো সেরেনাকে। তাঁর ভক্তদের এখন একটাই চাওয়া, বিদায়টা সেরেনাময় হোক। এই টেনিস-নক্ষত্র নিজেও হয়তো তেমন কিছুর খোঁজে নিজের সেরাটা নিয়েই কোর্টে নামবেন।

সেরেনার বিদায়ের বাইরে ইউএস ওপেন নোভাক জোকোভিচের অভাবও বোধ করবে। টিকা না নেওয়ায় অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের পর ইউএস ওপেনও খেলা হচ্ছে না তাঁর। তাই নাদালের সামনে সুযোগ আছে নিজেকে আরেকটু ছাড়িয়ে যাওয়ার। নারী এককে গতবার ইতিহাস গড়া এমা রাদুকানুর চ্যালেঞ্জ নিজের সাফল্য ধরে রাখার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত