মামুনুর রশীদ
সম্প্রতি আমি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে জানলাম, সান্ধ্য কর্মসূচিটি খুবই সক্রিয়। সান্ধ্যকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস হয় এবং দুই বছর পর মাস্টার্সের ডিগ্রি দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা বর্তমানে চার বছরে অনার্স এবং এক বছরে মাস্টার্স পাস করে থাকে। এই অনার্সে ভর্তি একটি কঠিন পরীক্ষা। কিন্তু ওই দুই বছরের কোর্সে পরীক্ষাটি শিথিল। পরীক্ষাটিও তেমন কঠিন কিছু নয়, তবে সুবিধা শিক্ষকদের। যে বিপুল পরিমাণ অর্থ এসে থাকে, তার শতকরা কুড়ি ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা হয়, বাকিটা শিক্ষকেরা ভাগাভাগি করে নেন। যেসব বিভাগে এই কোর্সটি চালু আছে, সেসব বিভাগের বিপুল আয় এবং শিক্ষকেরা ধনী থেকে আরও ধনী হয়ে যাচ্ছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের ভেতরে নানা ধরনের কোচিং চালু আছে। বিসিএস কোচিং, তার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কোচিং। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে বহু বছর ধরে একটা বৈকালিক আড্ডা হতো, এই আড্ডা সাধারণত শিক্ষাবিষয়ক এবং সৃজনশীল আড্ডা। সেই আড্ডা দখল করে ফেলেছে কোচিং ক্লাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাও বিসিএস দিয়ে থাকেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা গর্বের বিষয় হয়ে থাকে কোথায়, কতজন বিসিএস পাস করল। কৃতকার্য শিক্ষকেরা অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে বিসিএসে যোগ দেন এবং কৃতকার্য হওয়ার পর শিক্ষকতা ছেড়ে বিসিএসের চাকরিতে যোগ দেন। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে একটা গর্বের বিষয়ও দাঁড়িয়ে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও গর্বের বিষয়। কিন্তু শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে বিসিএসের চাকরিতে যোগ দেন কোন কারণে, তা ভাবনার বিষয়।বিশ্ববিদ্যালয় একটি জ্ঞানতত্ত্বের জায়গা। এখানে শুধু জ্ঞান নয়, জ্ঞানের যে তত্ত্ব, সেটিও আবিষ্কারের জায়গা। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা যোগ দিচ্ছেন? তাঁদের কাছে কি জ্ঞান গুরুত্বপূর্ণ? নাকি প্রশাসনিক কাজ? আমি দু-চারজন শিক্ষককে চিনি, যাঁরা শিক্ষক হয়ে পরবর্তীকালে পুলিশ, কাস্টমস অফিসার, আমলা হয়েছেন। যদি তাঁরা আমলাই হবেন, তবে কেন শিক্ষকতায় যোগ দিয়েছিলেন? আমলা হওয়াই কি তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল? তা-ও কাস্টমসের আমলা! দেশের কাস্টমস বা পুলিশিব্যবস্থাকে উন্নত করা কি তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল, নাকি একটি চাকরিই মুখ্য ছিল, যে চাকরিতে প্রচুর উপার্জন সম্ভব? সেই পথ ধরেই লাখ লাখ ছাত্র এখন ছুটছে এসব প্রশাসনিক চাকরির জন্য, যার মধ্যে আছেন শিক্ষকেরাও।
প্রতিবছর কতজনই-বা নিয়োগ হয় এসব চাকরিতে? কিন্তু লাখ লাখ ছাত্রের অকৃতকার্য হওয়া এবং দীর্ঘশ্বাস নিয়ে জীবনের বাকি সময় কাটাতে হয়। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যাঁরা প্রশাসনে আসেন, তাঁরা সবাই মুখস্থবিদ্যাকেন্দ্রিক। কোনো সৃজনশীল জ্ঞান তাঁদের মধ্যে থাকা সম্ভব নয়। কারণ, পরীক্ষাটি হয় অত্যন্ত যান্ত্রিক উপায়ে। এমসিকিউ পরীক্ষায় সম্পূর্ণভাবে মুখস্থবিদ্যাকেন্দ্রিক এবং ছাত্ররা কোচিংয়ের ওপর নির্ভর করে এ পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়। দেখা যায়, পরবর্তী পরীক্ষাগুলোও ওই কোচিংভিত্তিক। তাই জ্ঞান এখানে কোনো মুখ্য বিষয় নয়। অনেক দিন ধরে আমি কোচিংয়ের বিরুদ্ধে লিখে আসছি। একবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে কোচিং নিষিদ্ধ হয়েছিল; কিন্তু বেশি দিন তা টেকেনি। কারণ, যারা কোচিং করে, তাদের হাত এত দিনে খুব লম্বা হয়ে গেছে, তারা কোনো আইনকানুনের ধার ধারে না।
সরকারি স্কুলগুলোর শিক্ষকেরা ক্লাসে কিছু না পড়িয়ে ছাত্রদের কোচিংয়ে আহ্বান করেন। ছাত্ররা এখন সাতজন কোচিং মাস্টারের অধীন পড়ালেখা করে। অভিভাবকদের দাবি—তাঁর সন্তানকে জিপিএ-৫ পেতেই হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার সময় আমি দেখেছি, জিপিএ-৫ পাওয়া ছাত্র একটি রচনা লিখতে পারে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ একটি ছাত্রকেও ভর্তির উপযুক্ত মনে করেনি।
আমাদের মতো দরিদ্র দেশেও শিক্ষায় জনগণের লগ্নি কম নয়। কিন্তু এই লগ্নি ক্রমাগতই ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে। বিদ্যালয়গুলো মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। আজ নম্বর মুখ্য হয়ে দাঁড়াচ্ছে, শিক্ষা হয়ে গেছে পণ্য এবং বাণিজ্য। এই বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে স্বাস্থ্য-বাণিজ্য ও মূল্যবোধহীন অমানবিক শিক্ষার ফলাফলে দেশটি হয়ে যাচ্ছে প্রবলভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত। এই প্রবণতা রোধ করা দিন দিন অসম্ভব হয়ে পড়ছে।
প্রতিদিন খবরের কাগজে বিরাট অংশজুড়ে থাকছে দুর্নীতির সংবাদ অথচ পরাধীন দেশে দুর্নীতির একটি সংবাদ প্রকাশ হলে তা নিয়ে একটা বড় ধরনের হইচই পড়ে যেত।
এখন আর তা হয় না, মানুষের গা-সওয়া হয়ে গেছে এসব। এই গা-সওয়া পরিস্থিতি অবশেষে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা বলা মুশকিল। একটা কথা ঠিক, অন্যায় এবং অধর্মের একটা শেষ আছে। ভারতে কংগ্রেস সরকার এবং পশ্চিমবঙ্গে সিপিএম বহুদিন রাজত্ব করেছে। কিন্তু দুর্নীতির ফলে তারা ক্ষমতা হারিয়েছে। এবং ক্ষমতা চলে গেছে একেবারে উল্টো পথে। ধর্মকে ব্যবহার করে সে দেশে একটা সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, যা তার প্রতিবেশীদের জন্যও হুমকিস্বরূপ। এই পরিস্থিতি কখনোই ভারতের জন্য কাম্য ছিল না। আমাদের দেশেও মৌলবাদী দলগুলো তৃণমূল পর্যায়ে ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতি করে যাচ্ছে। গ্রামগঞ্জে, শহরে এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়, সচিবালয়ে হিজাব ও বোরকা পরা নারীদের সমাগম দেখতে পাই। তার মানে ব্যাপক পরিমাণ মাদ্রাসায় কর্মরতরা একটা সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে।
এই মাদ্রাসার শিক্ষকদের মধ্যেও একটা বড় অংশ দুর্নীতিপরায়ণ। তাঁরা ধর্ষণের মতো নানা ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। একেবারেই নামমাত্র মাদ্রাসা রেখে বছরের পর বছর সরকারের টাকা খেয়ে যাচ্ছে। দুর্নীতির ছায়া এসব ধর্মব্যবসায়ীকেও উৎসাহিত করছে।
শিক্ষা সম্পূর্ণরূপে পণ্য, স্বাস্থ্য এবং সরকারের অন্যান্য সেবামূলক প্রতিষ্ঠান এগিয়ে চলেছে একধরনের সামাজিক মূল্যবোধ ধ্বংসের দিকে। এ কথা ঠিক, দেশে অনেক ধরনের অবকাঠামোগত উন্নয়ন চলছে, তাতে হাজার হাজার কোটি টাকা সরকার বিনিয়োগ করছে, বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও আসছে। কিন্তু সেই সঙ্গে যদি মানবিক মূল্যবোধের শিক্ষা যুক্ত না হয়, তাহলে সবটাই মূল্যহীন হয়ে পড়বে।
আমলাতন্ত্রে আজকাল কোনো জবাবদিহি নেই বললেই চলে। তারা শাসকে পরিণত হয়েছে। রাজনৈতিক নেতারা এটাকে নিছক ব্যবসা হিসেবে দেখছেন, যেহেতু অধিকাংশই রাজনৈতিক নেতা-ব্যবসায়ী। মানুষ বিচারহীনতায় দীর্ঘসূত্রতা দেখে দেখে অসহায় হয়ে পড়ছে। এই অসহায়ত্ব একটা পর্যায়ে রাষ্ট্রের সব ধরনের শৃঙ্খলা ভেঙে ফেলবে।
সবচেয়ে লক্ষণীয় দুর্নীতিপরায়ণ লোকটিই সবচেয়ে বেশি দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার! এই যে নতুন ধরনের একটি মনস্তাত্ত্বিক ধারা, একে অবহেলা করে আমরা কিন্তু পরিত্রাণ পাব না।
এর মধ্যে এসেছে করোনা মহামারি। আবারও ধেয়ে আসছে তৃতীয় ঢেউয়ের সঙ্গে ওমিক্রন। এখান থেকেও ব্যবসায়ীরা প্রচুর মুনাফা লুটবেন। দেখা গেছে, গত দুই বছরে ব্যবসার ক্ষেত্রে যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। এই মহামারিতে ব্যবসা কীভাবে উন্নয়নের পথে সাহায্য করে, তা-ও ভাববার বিষয়। এই সবটা মিলিয়ে একটা গভীর বিবেচনা প্রয়োজন। বিবেচনাই-বা কারা করবেন?
শহরের অতি আলোকোজ্জ্বল জীবন দেখে সারা দেশটার সব রকমের উন্নতি হয়েছে, তা ভাবার কোনো কারণ নেই। দেশের অর্থ বিদেশে পাচার করে অদ্ভুত এক জগৎ যাঁরা গড়ে তুলছেন, তাঁরাও এই অর্থকে ভোগ করতে পারবেন কি না, সেটাও বিবেচনায় রাখবেন। ইতিমধ্যে জেনেছি, সুইস ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কঠোর হতে শুরু করেছে। শুধু তা-ই নয়, বিভিন্ন রাষ্ট্রও তার মানি লন্ডারিংয়ের টাকাকে নিরাপত্তা দিতে পারছে না। অতএব দিন দিন সময়টা কঠোর হয়ে উঠছে। সার্বিক বিবেচনায় একটু পরামর্শ কি দিতে পারি? স্থির হও স্থির হও, কোথা যাও কোথা যাও…
সম্প্রতি আমি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে জানলাম, সান্ধ্য কর্মসূচিটি খুবই সক্রিয়। সান্ধ্যকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস হয় এবং দুই বছর পর মাস্টার্সের ডিগ্রি দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা বর্তমানে চার বছরে অনার্স এবং এক বছরে মাস্টার্স পাস করে থাকে। এই অনার্সে ভর্তি একটি কঠিন পরীক্ষা। কিন্তু ওই দুই বছরের কোর্সে পরীক্ষাটি শিথিল। পরীক্ষাটিও তেমন কঠিন কিছু নয়, তবে সুবিধা শিক্ষকদের। যে বিপুল পরিমাণ অর্থ এসে থাকে, তার শতকরা কুড়ি ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা হয়, বাকিটা শিক্ষকেরা ভাগাভাগি করে নেন। যেসব বিভাগে এই কোর্সটি চালু আছে, সেসব বিভাগের বিপুল আয় এবং শিক্ষকেরা ধনী থেকে আরও ধনী হয়ে যাচ্ছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের ভেতরে নানা ধরনের কোচিং চালু আছে। বিসিএস কোচিং, তার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কোচিং। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে বহু বছর ধরে একটা বৈকালিক আড্ডা হতো, এই আড্ডা সাধারণত শিক্ষাবিষয়ক এবং সৃজনশীল আড্ডা। সেই আড্ডা দখল করে ফেলেছে কোচিং ক্লাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাও বিসিএস দিয়ে থাকেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা গর্বের বিষয় হয়ে থাকে কোথায়, কতজন বিসিএস পাস করল। কৃতকার্য শিক্ষকেরা অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে বিসিএসে যোগ দেন এবং কৃতকার্য হওয়ার পর শিক্ষকতা ছেড়ে বিসিএসের চাকরিতে যোগ দেন। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে একটা গর্বের বিষয়ও দাঁড়িয়ে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও গর্বের বিষয়। কিন্তু শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে বিসিএসের চাকরিতে যোগ দেন কোন কারণে, তা ভাবনার বিষয়।বিশ্ববিদ্যালয় একটি জ্ঞানতত্ত্বের জায়গা। এখানে শুধু জ্ঞান নয়, জ্ঞানের যে তত্ত্ব, সেটিও আবিষ্কারের জায়গা। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা যোগ দিচ্ছেন? তাঁদের কাছে কি জ্ঞান গুরুত্বপূর্ণ? নাকি প্রশাসনিক কাজ? আমি দু-চারজন শিক্ষককে চিনি, যাঁরা শিক্ষক হয়ে পরবর্তীকালে পুলিশ, কাস্টমস অফিসার, আমলা হয়েছেন। যদি তাঁরা আমলাই হবেন, তবে কেন শিক্ষকতায় যোগ দিয়েছিলেন? আমলা হওয়াই কি তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল? তা-ও কাস্টমসের আমলা! দেশের কাস্টমস বা পুলিশিব্যবস্থাকে উন্নত করা কি তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল, নাকি একটি চাকরিই মুখ্য ছিল, যে চাকরিতে প্রচুর উপার্জন সম্ভব? সেই পথ ধরেই লাখ লাখ ছাত্র এখন ছুটছে এসব প্রশাসনিক চাকরির জন্য, যার মধ্যে আছেন শিক্ষকেরাও।
প্রতিবছর কতজনই-বা নিয়োগ হয় এসব চাকরিতে? কিন্তু লাখ লাখ ছাত্রের অকৃতকার্য হওয়া এবং দীর্ঘশ্বাস নিয়ে জীবনের বাকি সময় কাটাতে হয়। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যাঁরা প্রশাসনে আসেন, তাঁরা সবাই মুখস্থবিদ্যাকেন্দ্রিক। কোনো সৃজনশীল জ্ঞান তাঁদের মধ্যে থাকা সম্ভব নয়। কারণ, পরীক্ষাটি হয় অত্যন্ত যান্ত্রিক উপায়ে। এমসিকিউ পরীক্ষায় সম্পূর্ণভাবে মুখস্থবিদ্যাকেন্দ্রিক এবং ছাত্ররা কোচিংয়ের ওপর নির্ভর করে এ পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়। দেখা যায়, পরবর্তী পরীক্ষাগুলোও ওই কোচিংভিত্তিক। তাই জ্ঞান এখানে কোনো মুখ্য বিষয় নয়। অনেক দিন ধরে আমি কোচিংয়ের বিরুদ্ধে লিখে আসছি। একবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে কোচিং নিষিদ্ধ হয়েছিল; কিন্তু বেশি দিন তা টেকেনি। কারণ, যারা কোচিং করে, তাদের হাত এত দিনে খুব লম্বা হয়ে গেছে, তারা কোনো আইনকানুনের ধার ধারে না।
সরকারি স্কুলগুলোর শিক্ষকেরা ক্লাসে কিছু না পড়িয়ে ছাত্রদের কোচিংয়ে আহ্বান করেন। ছাত্ররা এখন সাতজন কোচিং মাস্টারের অধীন পড়ালেখা করে। অভিভাবকদের দাবি—তাঁর সন্তানকে জিপিএ-৫ পেতেই হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার সময় আমি দেখেছি, জিপিএ-৫ পাওয়া ছাত্র একটি রচনা লিখতে পারে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ একটি ছাত্রকেও ভর্তির উপযুক্ত মনে করেনি।
আমাদের মতো দরিদ্র দেশেও শিক্ষায় জনগণের লগ্নি কম নয়। কিন্তু এই লগ্নি ক্রমাগতই ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে। বিদ্যালয়গুলো মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। আজ নম্বর মুখ্য হয়ে দাঁড়াচ্ছে, শিক্ষা হয়ে গেছে পণ্য এবং বাণিজ্য। এই বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে স্বাস্থ্য-বাণিজ্য ও মূল্যবোধহীন অমানবিক শিক্ষার ফলাফলে দেশটি হয়ে যাচ্ছে প্রবলভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত। এই প্রবণতা রোধ করা দিন দিন অসম্ভব হয়ে পড়ছে।
প্রতিদিন খবরের কাগজে বিরাট অংশজুড়ে থাকছে দুর্নীতির সংবাদ অথচ পরাধীন দেশে দুর্নীতির একটি সংবাদ প্রকাশ হলে তা নিয়ে একটা বড় ধরনের হইচই পড়ে যেত।
এখন আর তা হয় না, মানুষের গা-সওয়া হয়ে গেছে এসব। এই গা-সওয়া পরিস্থিতি অবশেষে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা বলা মুশকিল। একটা কথা ঠিক, অন্যায় এবং অধর্মের একটা শেষ আছে। ভারতে কংগ্রেস সরকার এবং পশ্চিমবঙ্গে সিপিএম বহুদিন রাজত্ব করেছে। কিন্তু দুর্নীতির ফলে তারা ক্ষমতা হারিয়েছে। এবং ক্ষমতা চলে গেছে একেবারে উল্টো পথে। ধর্মকে ব্যবহার করে সে দেশে একটা সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, যা তার প্রতিবেশীদের জন্যও হুমকিস্বরূপ। এই পরিস্থিতি কখনোই ভারতের জন্য কাম্য ছিল না। আমাদের দেশেও মৌলবাদী দলগুলো তৃণমূল পর্যায়ে ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতি করে যাচ্ছে। গ্রামগঞ্জে, শহরে এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়, সচিবালয়ে হিজাব ও বোরকা পরা নারীদের সমাগম দেখতে পাই। তার মানে ব্যাপক পরিমাণ মাদ্রাসায় কর্মরতরা একটা সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে।
এই মাদ্রাসার শিক্ষকদের মধ্যেও একটা বড় অংশ দুর্নীতিপরায়ণ। তাঁরা ধর্ষণের মতো নানা ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। একেবারেই নামমাত্র মাদ্রাসা রেখে বছরের পর বছর সরকারের টাকা খেয়ে যাচ্ছে। দুর্নীতির ছায়া এসব ধর্মব্যবসায়ীকেও উৎসাহিত করছে।
শিক্ষা সম্পূর্ণরূপে পণ্য, স্বাস্থ্য এবং সরকারের অন্যান্য সেবামূলক প্রতিষ্ঠান এগিয়ে চলেছে একধরনের সামাজিক মূল্যবোধ ধ্বংসের দিকে। এ কথা ঠিক, দেশে অনেক ধরনের অবকাঠামোগত উন্নয়ন চলছে, তাতে হাজার হাজার কোটি টাকা সরকার বিনিয়োগ করছে, বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও আসছে। কিন্তু সেই সঙ্গে যদি মানবিক মূল্যবোধের শিক্ষা যুক্ত না হয়, তাহলে সবটাই মূল্যহীন হয়ে পড়বে।
আমলাতন্ত্রে আজকাল কোনো জবাবদিহি নেই বললেই চলে। তারা শাসকে পরিণত হয়েছে। রাজনৈতিক নেতারা এটাকে নিছক ব্যবসা হিসেবে দেখছেন, যেহেতু অধিকাংশই রাজনৈতিক নেতা-ব্যবসায়ী। মানুষ বিচারহীনতায় দীর্ঘসূত্রতা দেখে দেখে অসহায় হয়ে পড়ছে। এই অসহায়ত্ব একটা পর্যায়ে রাষ্ট্রের সব ধরনের শৃঙ্খলা ভেঙে ফেলবে।
সবচেয়ে লক্ষণীয় দুর্নীতিপরায়ণ লোকটিই সবচেয়ে বেশি দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার! এই যে নতুন ধরনের একটি মনস্তাত্ত্বিক ধারা, একে অবহেলা করে আমরা কিন্তু পরিত্রাণ পাব না।
এর মধ্যে এসেছে করোনা মহামারি। আবারও ধেয়ে আসছে তৃতীয় ঢেউয়ের সঙ্গে ওমিক্রন। এখান থেকেও ব্যবসায়ীরা প্রচুর মুনাফা লুটবেন। দেখা গেছে, গত দুই বছরে ব্যবসার ক্ষেত্রে যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। এই মহামারিতে ব্যবসা কীভাবে উন্নয়নের পথে সাহায্য করে, তা-ও ভাববার বিষয়। এই সবটা মিলিয়ে একটা গভীর বিবেচনা প্রয়োজন। বিবেচনাই-বা কারা করবেন?
শহরের অতি আলোকোজ্জ্বল জীবন দেখে সারা দেশটার সব রকমের উন্নতি হয়েছে, তা ভাবার কোনো কারণ নেই। দেশের অর্থ বিদেশে পাচার করে অদ্ভুত এক জগৎ যাঁরা গড়ে তুলছেন, তাঁরাও এই অর্থকে ভোগ করতে পারবেন কি না, সেটাও বিবেচনায় রাখবেন। ইতিমধ্যে জেনেছি, সুইস ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কঠোর হতে শুরু করেছে। শুধু তা-ই নয়, বিভিন্ন রাষ্ট্রও তার মানি লন্ডারিংয়ের টাকাকে নিরাপত্তা দিতে পারছে না। অতএব দিন দিন সময়টা কঠোর হয়ে উঠছে। সার্বিক বিবেচনায় একটু পরামর্শ কি দিতে পারি? স্থির হও স্থির হও, কোথা যাও কোথা যাও…
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
০২ মার্চ ২০২৫বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৬ জানুয়ারি ২০২৫গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪