শাইখ সিরাজ
প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে পুড়ছে দেশ। ষড়্ঋতুর বাংলাদেশে ঋতুবৈচিত্র্য ঠিক আগের মতো নেই। ঘোর বর্ষা থাকার সময়ে থাকছে বৃষ্টিহীন। শীতও ঠিক নেই আগের মতো। গ্রীষ্মেও দেখা মেলে কুয়াশার। কয়েক বছর ধরে আবহাওয়া হয়ে উঠেছে অনিশ্চিত। আগে থেকে কিছুই বলা যাচ্ছে না।
এটিই মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের বারতা। যার প্রকট প্রভাব পড়ছে আমাদের কৃষিতে। এই সময়টা আমাদের কৃষির পটপরিবর্তনের একটা সময়। শিল্পোদ্যোক্তারা আগ্রহী হয়ে উঠছেন কৃষিতে বিনিয়োগে। ফলে ক্রমেই প্রসারিত হচ্ছে প্রযুক্তিবহুল বাণিজ্যিক কৃষি। কিন্তু জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত প্রভাব অনিশ্চিত করে দিতে পারে অনেক কিছু। তাই এই সময়ে কৃষিবিমার প্রয়োজনীয়তা আরও জোরেশোরে অনুভূত হচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরে আমি কৃষকদের শস্যবিমার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বলে এসেছি। আমাদের দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ লেগেই আছে। বন্যা, শিলাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, পোকা-মাকড়ের আক্রমণ, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদি কারণে ফসলের ক্ষতি হয়। ফলে কৃষক ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হন। এ ধরনের আর্থিক ক্ষতি মোকাবিলা করার জন্য যে বিমাপত্র গ্রহণ করা হয় তা-ই হচ্ছে শস্যবিমা। শস্যবিমা করা থাকলে কোনো কারণে ক্ষতি হলে বিমাকারী প্রতিষ্ঠান আর্থিক সহায়তা দেয়। তবে এ ক্ষেত্রে স্বল্প বা দীর্ঘ মেয়াদে বিমার জন্য প্রিমিয়াম দিতে হয়। শস্যবিমার প্রচলন প্রথম জার্মানিতে শুরু হলেও পরে আমেরিকা, জাপান ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এর ব্যাপকতা লাভ করে। বর্তমানে প্রায় সব দেশেই শস্যবিমার প্রচলন আছে।
হৃদয়ে মাটি ও মানুষের বিশেষ আয়োজন ‘কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট’ অনুষ্ঠানের শুরু থেকে কৃষকেরা কৃষিবিমার দাবি জানিয়ে আসছেন; বিশেষ করে যাঁরা উচ্চমূল্যের ফল-ফসলের আবাদ করেন তাঁরা খুব দৃঢ়ভাবেই কৃষিবিমার প্রত্যাশী ছিলেন। আমি বরাবরই জাতীয় বাজেট ঘোষণার প্রাক্কালে ‘কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট’-এর সুপারিশমালা অর্থমন্ত্রীর হাতে তুলে দিই। সেখানে প্রতিবারই কৃষকের পক্ষ থেকে কৃষিবিমার দাবির উল্লেখ থাকে। মনে আছে, টাঙ্গাইলে ‘কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট’ অনুষ্ঠানে কিষাণি মমতাজ বেগম প্রশ্ন করেছিলেন, ‘আপনার গাড়িটার যদি বিমা হতে পারে, তবে আমার গরুটার কেন বিমা হবে না?’
আমি যত দূর জানি, ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো প্রচলিত শস্যবিমা চালু করে সাধারণ বীমা করপোরেশন। তবে খরচ বেশি হওয়ায় ১৯৯৬ সালে এটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ২০১৪ সালে পাইলট প্রকল্প আকারে আবারও শস্যবিমা চালু করে সাধারণ বীমা করপোরেশন। আবহাওয়া সূচকভিত্তিক এই শস্যবিমা ছিল একটি নতুন সংযোজন। কিন্তু এই প্রকল্পের পাইলটিং পর্যায়টা ছিল দীর্ঘ। শস্য কৃষির বাইরে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে বিমার জোরালো দাবি আছে খামারিদের। খুব স্বল্প পরিসরে কয়েকটি বিমা প্রতিষ্ঠান অবশ্য শস্যবিমা নিয়ে কাজ করছে।
মনে পড়ছে, ২০১৯ সালের ৫ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় কৃষকদের জন্য কৃষিবিমা চালু করার উদ্যোগের কথা জানিয়েছিলেন। রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আন্তর্জাতিক ক্ষুদ্রবিমা সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাংলাদেশে পড়তে যাচ্ছে। দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সাম্প্রতিক একটি সমীকরণ অনুযায়ী, প্রাকৃতিক ঝুঁকিপূর্ণ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় যারা বসবাস করে, তাদের ক্ষতি কীভাবে মেটানো যায় এবং তাদের জীবন কীভাবে নিরাপদ করা যায়, সে জন্য তাদের বিশেষ বিমার ব্যবস্থা করে দিলে তারা নিরাপদ থাকবে।’ প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর কৃষিবিমা চালু করার উদ্যোগ নেয় সরকার।
এশিয়ার অনেক দেশ, যেমন ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, ভারত, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড সরকার কৃষিবিমার ওপর বিশেষ গুরুত্ব এবং প্রাধান্য আরোপ করেছে। পাশের দেশ ভারতের সরকার কৃষিবিমার ওপর জোর দিয়ে নতুন নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে। ফসলের চাষকে বিমার আওতায় আনতে চালু করা হয়েছে ‘প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনা’। খবরে জেনেছি, প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনার অধীনে ৩ দশমিক ৫ কোটি কৃষকের বিমা করা হয়েছে এবং বিমার পরিমাণ ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। উর্বরতা রক্ষা করে একই জমিতে অধিক ফসল তোলার জন্য প্রায় সাড়ে ৭ কোটি সয়েল হেলথ কার্ড ইস্যু করা হয়েছে।
বছর দুয়েক আগে আমার ফিলিপাইনে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। কাজের প্রয়োজনে সেখানকার প্রত্যন্ত গ্রামেও গিয়েছি। ফিলিপাইনের ইলিকস নর্থ প্রদেশের পিদিমের আবুকাই গ্রামের লইতা, আরথুর, সান্তোসসহ বেশ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তাঁরা আমাকে বলেছিলেন, ফিলিপাইনের নিবন্ধিত কৃষকের শতভাগ রয়েছেন কৃষিবিমার আওতায়। বীজ, সার থেকে শুরু করে সব কৃষি সহযোগিতা তাঁরা সরকারের কাছ থেকে পেয়ে থাকেন, বিনিময়ে তাঁরা নিয়মিত তাঁদের প্রিমিয়াম পরিশোধ করেন।
আমাদেরও উচিত হবে কৃষকদের দ্রুত শস্যবিমাসহ কৃষিবিমার আওতায় নিয়ে আসা। প্রথমে হয়তো কৃষকদের প্রিমিয়াম দেওয়ায় অভ্যস্ত করে তুলতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হতে পারে। তবে এর ভবিষ্যৎ নিঃসন্দেহে ফলপ্রসূ হবে। শুধু শস্যই নয়, কৃষির অন্যান্য উপ খাত—গবাদি পশু ও মৎস্য খাতকেও কৃষিবিমার আওতায় আনা প্রয়োজন। প্রাণিসম্পদের বিমার কথা বললে আগে বলা হতো, গরু-ছাগলের স্বাস্থ্যের গ্যারান্টি কী? বিমাকৃত প্রাণীটি আদৌ সুস্থ কি না, জানা যেত না। কিংবা পুকুরে পানির নিচে কী পরিমাণ মাছ আছে, সেটাও জানা যেত না।
কিন্তু এখন চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এই সময়ে যন্ত্রই সব তথ্য দিয়ে দিচ্ছে। গরুর পেটে থাকা বোলাস সার্বক্ষণিক তথ্য পাঠাচ্ছে গরুর রোগবালাই থেকে শুরু করে কতটুকু খাবার খাচ্ছে, কী পরিমাণ বিশ্রাম নিচ্ছে সব তথ্য। পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকা হোক না কেন মোবাইল ফোনে মুহূর্তেই সব তথ্য জানা সম্ভব হচ্ছে। এত দিন আমাদের কাছে সব গরুই এক রকম দেখতে মনে হলেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন যন্ত্র ঠিকই গরুর মুখে ক্যামেরা ফেলে আলাদা আলাদাভাবে চিনে নিতে পারছে প্রতিটি গরু। যন্ত্রই বলে দিতে পারছে পুকুরের নিচে কী পরিমাণ মাছ আছে, তাদের আকার-আকৃতিই-বা কী। ফলে তাদের কৃষিবিমার আওতায় নিয়ে আসা খুব কঠিন বিষয় নয়।
নেদারল্যান্ডসে দেখেছি প্রযুক্তির কৃষির নান্দনিক বিকাশ। বিশাল একেকটা গ্রিনহাউস যেন একেকটা কৃষিপণ্যের কারখানা। মানুষের পাশাপাশি কাজ করছে রোবটও। সংখ্যার হিসাবে মানুষের চেয়ে রোবটের সংখ্যাই বেশি। একেকটা গ্রিনহাউসে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ। যেখানে বিমার সুবিধা না থাকলে কেউই হয়তো এত বেশি ঝুঁকি নিতেন না।
উন্নত দেশগুলোর আদলে আমাদের দেশেও প্রযুক্তির কৃষিতে বিনিয়োগ শুরু হয়েছে। একে বিকশিত করতে কয়েকটি বিমা কোম্পানি এগিয়ে এসেছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে একটা সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা জরুরি। এতে কৃষক বা উদ্যোক্তা এবং বিমা কোম্পানি উভয়ই যেন সামঞ্জস্যপূর্ণ স্থানে অবস্থান করতে পারে। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে সরকারের বিমা প্রকল্প দ্রুত সম্প্রসারণ করা জরুরি।
আমার সৌভাগ্য যে স্বাধীন বাংলাদেশের কৃষি, কৃষক ও কৃষিনির্ভর আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তনটা খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি। আমি দেখেছি, এ দেশের কৃষক কতটা ঘাতসহ, কতটা বৈরী অবস্থানে থেকেও খাদ্য উৎপাদনের নেশায় চাষে মগ্ন থেকেছেন।
পাওয়া না-পাওয়ার হিসাব তাঁর কাছে বড় হয়ে ওঠেনি। কৃষক এগিয়েছেন তাঁর নিজস্ব গতিতে। সরকারের বিভিন্ন সহযোগিতা ছিল বটে, তবে কৃষকের অবদান এককভাবে সেখানে আরও অনেক বেশি জায়গাজুড়ে। সেই অন্তর্মুখী কৃষককে এখন দাঁড় করাতে হবে বিশ্ব কৃষকের পাশে।
সময় এখন বিশ্বায়নের। কৃষকের বাজার এখন পৃথিবীব্যাপী। এই সময়ে আমাদের কৃষককে সামনে এগিয়ে নিতে না পারলে পিছিয়ে যাবে আমাদের কৃষি। পিছিয়ে যাব আমরা। আবার চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এই সময়ে আধুনিক প্রযুক্তির কৃষির সঙ্গে তাঁদের যেমন পরিচয় করিয়ে দিতে হবে, আমাদের শিল্পোদ্যোক্তাদের এ খাতে বিনিয়োগের সুযোগও তৈরি করে দিতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন সুপরিকল্পিত কৃষিবিমা নীতিমালা।
লেখক: পরিচালক ও বার্তাপ্রধান, চ্যানেল আই
প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে পুড়ছে দেশ। ষড়্ঋতুর বাংলাদেশে ঋতুবৈচিত্র্য ঠিক আগের মতো নেই। ঘোর বর্ষা থাকার সময়ে থাকছে বৃষ্টিহীন। শীতও ঠিক নেই আগের মতো। গ্রীষ্মেও দেখা মেলে কুয়াশার। কয়েক বছর ধরে আবহাওয়া হয়ে উঠেছে অনিশ্চিত। আগে থেকে কিছুই বলা যাচ্ছে না।
এটিই মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের বারতা। যার প্রকট প্রভাব পড়ছে আমাদের কৃষিতে। এই সময়টা আমাদের কৃষির পটপরিবর্তনের একটা সময়। শিল্পোদ্যোক্তারা আগ্রহী হয়ে উঠছেন কৃষিতে বিনিয়োগে। ফলে ক্রমেই প্রসারিত হচ্ছে প্রযুক্তিবহুল বাণিজ্যিক কৃষি। কিন্তু জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত প্রভাব অনিশ্চিত করে দিতে পারে অনেক কিছু। তাই এই সময়ে কৃষিবিমার প্রয়োজনীয়তা আরও জোরেশোরে অনুভূত হচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরে আমি কৃষকদের শস্যবিমার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বলে এসেছি। আমাদের দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ লেগেই আছে। বন্যা, শিলাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, পোকা-মাকড়ের আক্রমণ, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদি কারণে ফসলের ক্ষতি হয়। ফলে কৃষক ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হন। এ ধরনের আর্থিক ক্ষতি মোকাবিলা করার জন্য যে বিমাপত্র গ্রহণ করা হয় তা-ই হচ্ছে শস্যবিমা। শস্যবিমা করা থাকলে কোনো কারণে ক্ষতি হলে বিমাকারী প্রতিষ্ঠান আর্থিক সহায়তা দেয়। তবে এ ক্ষেত্রে স্বল্প বা দীর্ঘ মেয়াদে বিমার জন্য প্রিমিয়াম দিতে হয়। শস্যবিমার প্রচলন প্রথম জার্মানিতে শুরু হলেও পরে আমেরিকা, জাপান ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এর ব্যাপকতা লাভ করে। বর্তমানে প্রায় সব দেশেই শস্যবিমার প্রচলন আছে।
হৃদয়ে মাটি ও মানুষের বিশেষ আয়োজন ‘কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট’ অনুষ্ঠানের শুরু থেকে কৃষকেরা কৃষিবিমার দাবি জানিয়ে আসছেন; বিশেষ করে যাঁরা উচ্চমূল্যের ফল-ফসলের আবাদ করেন তাঁরা খুব দৃঢ়ভাবেই কৃষিবিমার প্রত্যাশী ছিলেন। আমি বরাবরই জাতীয় বাজেট ঘোষণার প্রাক্কালে ‘কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট’-এর সুপারিশমালা অর্থমন্ত্রীর হাতে তুলে দিই। সেখানে প্রতিবারই কৃষকের পক্ষ থেকে কৃষিবিমার দাবির উল্লেখ থাকে। মনে আছে, টাঙ্গাইলে ‘কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট’ অনুষ্ঠানে কিষাণি মমতাজ বেগম প্রশ্ন করেছিলেন, ‘আপনার গাড়িটার যদি বিমা হতে পারে, তবে আমার গরুটার কেন বিমা হবে না?’
আমি যত দূর জানি, ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো প্রচলিত শস্যবিমা চালু করে সাধারণ বীমা করপোরেশন। তবে খরচ বেশি হওয়ায় ১৯৯৬ সালে এটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ২০১৪ সালে পাইলট প্রকল্প আকারে আবারও শস্যবিমা চালু করে সাধারণ বীমা করপোরেশন। আবহাওয়া সূচকভিত্তিক এই শস্যবিমা ছিল একটি নতুন সংযোজন। কিন্তু এই প্রকল্পের পাইলটিং পর্যায়টা ছিল দীর্ঘ। শস্য কৃষির বাইরে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে বিমার জোরালো দাবি আছে খামারিদের। খুব স্বল্প পরিসরে কয়েকটি বিমা প্রতিষ্ঠান অবশ্য শস্যবিমা নিয়ে কাজ করছে।
মনে পড়ছে, ২০১৯ সালের ৫ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় কৃষকদের জন্য কৃষিবিমা চালু করার উদ্যোগের কথা জানিয়েছিলেন। রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আন্তর্জাতিক ক্ষুদ্রবিমা সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাংলাদেশে পড়তে যাচ্ছে। দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সাম্প্রতিক একটি সমীকরণ অনুযায়ী, প্রাকৃতিক ঝুঁকিপূর্ণ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় যারা বসবাস করে, তাদের ক্ষতি কীভাবে মেটানো যায় এবং তাদের জীবন কীভাবে নিরাপদ করা যায়, সে জন্য তাদের বিশেষ বিমার ব্যবস্থা করে দিলে তারা নিরাপদ থাকবে।’ প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর কৃষিবিমা চালু করার উদ্যোগ নেয় সরকার।
এশিয়ার অনেক দেশ, যেমন ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, ভারত, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড সরকার কৃষিবিমার ওপর বিশেষ গুরুত্ব এবং প্রাধান্য আরোপ করেছে। পাশের দেশ ভারতের সরকার কৃষিবিমার ওপর জোর দিয়ে নতুন নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে। ফসলের চাষকে বিমার আওতায় আনতে চালু করা হয়েছে ‘প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনা’। খবরে জেনেছি, প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনার অধীনে ৩ দশমিক ৫ কোটি কৃষকের বিমা করা হয়েছে এবং বিমার পরিমাণ ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। উর্বরতা রক্ষা করে একই জমিতে অধিক ফসল তোলার জন্য প্রায় সাড়ে ৭ কোটি সয়েল হেলথ কার্ড ইস্যু করা হয়েছে।
বছর দুয়েক আগে আমার ফিলিপাইনে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। কাজের প্রয়োজনে সেখানকার প্রত্যন্ত গ্রামেও গিয়েছি। ফিলিপাইনের ইলিকস নর্থ প্রদেশের পিদিমের আবুকাই গ্রামের লইতা, আরথুর, সান্তোসসহ বেশ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তাঁরা আমাকে বলেছিলেন, ফিলিপাইনের নিবন্ধিত কৃষকের শতভাগ রয়েছেন কৃষিবিমার আওতায়। বীজ, সার থেকে শুরু করে সব কৃষি সহযোগিতা তাঁরা সরকারের কাছ থেকে পেয়ে থাকেন, বিনিময়ে তাঁরা নিয়মিত তাঁদের প্রিমিয়াম পরিশোধ করেন।
আমাদেরও উচিত হবে কৃষকদের দ্রুত শস্যবিমাসহ কৃষিবিমার আওতায় নিয়ে আসা। প্রথমে হয়তো কৃষকদের প্রিমিয়াম দেওয়ায় অভ্যস্ত করে তুলতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হতে পারে। তবে এর ভবিষ্যৎ নিঃসন্দেহে ফলপ্রসূ হবে। শুধু শস্যই নয়, কৃষির অন্যান্য উপ খাত—গবাদি পশু ও মৎস্য খাতকেও কৃষিবিমার আওতায় আনা প্রয়োজন। প্রাণিসম্পদের বিমার কথা বললে আগে বলা হতো, গরু-ছাগলের স্বাস্থ্যের গ্যারান্টি কী? বিমাকৃত প্রাণীটি আদৌ সুস্থ কি না, জানা যেত না। কিংবা পুকুরে পানির নিচে কী পরিমাণ মাছ আছে, সেটাও জানা যেত না।
কিন্তু এখন চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এই সময়ে যন্ত্রই সব তথ্য দিয়ে দিচ্ছে। গরুর পেটে থাকা বোলাস সার্বক্ষণিক তথ্য পাঠাচ্ছে গরুর রোগবালাই থেকে শুরু করে কতটুকু খাবার খাচ্ছে, কী পরিমাণ বিশ্রাম নিচ্ছে সব তথ্য। পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকা হোক না কেন মোবাইল ফোনে মুহূর্তেই সব তথ্য জানা সম্ভব হচ্ছে। এত দিন আমাদের কাছে সব গরুই এক রকম দেখতে মনে হলেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন যন্ত্র ঠিকই গরুর মুখে ক্যামেরা ফেলে আলাদা আলাদাভাবে চিনে নিতে পারছে প্রতিটি গরু। যন্ত্রই বলে দিতে পারছে পুকুরের নিচে কী পরিমাণ মাছ আছে, তাদের আকার-আকৃতিই-বা কী। ফলে তাদের কৃষিবিমার আওতায় নিয়ে আসা খুব কঠিন বিষয় নয়।
নেদারল্যান্ডসে দেখেছি প্রযুক্তির কৃষির নান্দনিক বিকাশ। বিশাল একেকটা গ্রিনহাউস যেন একেকটা কৃষিপণ্যের কারখানা। মানুষের পাশাপাশি কাজ করছে রোবটও। সংখ্যার হিসাবে মানুষের চেয়ে রোবটের সংখ্যাই বেশি। একেকটা গ্রিনহাউসে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ। যেখানে বিমার সুবিধা না থাকলে কেউই হয়তো এত বেশি ঝুঁকি নিতেন না।
উন্নত দেশগুলোর আদলে আমাদের দেশেও প্রযুক্তির কৃষিতে বিনিয়োগ শুরু হয়েছে। একে বিকশিত করতে কয়েকটি বিমা কোম্পানি এগিয়ে এসেছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে একটা সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা জরুরি। এতে কৃষক বা উদ্যোক্তা এবং বিমা কোম্পানি উভয়ই যেন সামঞ্জস্যপূর্ণ স্থানে অবস্থান করতে পারে। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে সরকারের বিমা প্রকল্প দ্রুত সম্প্রসারণ করা জরুরি।
আমার সৌভাগ্য যে স্বাধীন বাংলাদেশের কৃষি, কৃষক ও কৃষিনির্ভর আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তনটা খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি। আমি দেখেছি, এ দেশের কৃষক কতটা ঘাতসহ, কতটা বৈরী অবস্থানে থেকেও খাদ্য উৎপাদনের নেশায় চাষে মগ্ন থেকেছেন।
পাওয়া না-পাওয়ার হিসাব তাঁর কাছে বড় হয়ে ওঠেনি। কৃষক এগিয়েছেন তাঁর নিজস্ব গতিতে। সরকারের বিভিন্ন সহযোগিতা ছিল বটে, তবে কৃষকের অবদান এককভাবে সেখানে আরও অনেক বেশি জায়গাজুড়ে। সেই অন্তর্মুখী কৃষককে এখন দাঁড় করাতে হবে বিশ্ব কৃষকের পাশে।
সময় এখন বিশ্বায়নের। কৃষকের বাজার এখন পৃথিবীব্যাপী। এই সময়ে আমাদের কৃষককে সামনে এগিয়ে নিতে না পারলে পিছিয়ে যাবে আমাদের কৃষি। পিছিয়ে যাব আমরা। আবার চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এই সময়ে আধুনিক প্রযুক্তির কৃষির সঙ্গে তাঁদের যেমন পরিচয় করিয়ে দিতে হবে, আমাদের শিল্পোদ্যোক্তাদের এ খাতে বিনিয়োগের সুযোগও তৈরি করে দিতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন সুপরিকল্পিত কৃষিবিমা নীতিমালা।
লেখক: পরিচালক ও বার্তাপ্রধান, চ্যানেল আই
শাইখ সিরাজ
প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে পুড়ছে দেশ। ষড়্ঋতুর বাংলাদেশে ঋতুবৈচিত্র্য ঠিক আগের মতো নেই। ঘোর বর্ষা থাকার সময়ে থাকছে বৃষ্টিহীন। শীতও ঠিক নেই আগের মতো। গ্রীষ্মেও দেখা মেলে কুয়াশার। কয়েক বছর ধরে আবহাওয়া হয়ে উঠেছে অনিশ্চিত। আগে থেকে কিছুই বলা যাচ্ছে না।
এটিই মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের বারতা। যার প্রকট প্রভাব পড়ছে আমাদের কৃষিতে। এই সময়টা আমাদের কৃষির পটপরিবর্তনের একটা সময়। শিল্পোদ্যোক্তারা আগ্রহী হয়ে উঠছেন কৃষিতে বিনিয়োগে। ফলে ক্রমেই প্রসারিত হচ্ছে প্রযুক্তিবহুল বাণিজ্যিক কৃষি। কিন্তু জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত প্রভাব অনিশ্চিত করে দিতে পারে অনেক কিছু। তাই এই সময়ে কৃষিবিমার প্রয়োজনীয়তা আরও জোরেশোরে অনুভূত হচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরে আমি কৃষকদের শস্যবিমার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বলে এসেছি। আমাদের দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ লেগেই আছে। বন্যা, শিলাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, পোকা-মাকড়ের আক্রমণ, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদি কারণে ফসলের ক্ষতি হয়। ফলে কৃষক ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হন। এ ধরনের আর্থিক ক্ষতি মোকাবিলা করার জন্য যে বিমাপত্র গ্রহণ করা হয় তা-ই হচ্ছে শস্যবিমা। শস্যবিমা করা থাকলে কোনো কারণে ক্ষতি হলে বিমাকারী প্রতিষ্ঠান আর্থিক সহায়তা দেয়। তবে এ ক্ষেত্রে স্বল্প বা দীর্ঘ মেয়াদে বিমার জন্য প্রিমিয়াম দিতে হয়। শস্যবিমার প্রচলন প্রথম জার্মানিতে শুরু হলেও পরে আমেরিকা, জাপান ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এর ব্যাপকতা লাভ করে। বর্তমানে প্রায় সব দেশেই শস্যবিমার প্রচলন আছে।
হৃদয়ে মাটি ও মানুষের বিশেষ আয়োজন ‘কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট’ অনুষ্ঠানের শুরু থেকে কৃষকেরা কৃষিবিমার দাবি জানিয়ে আসছেন; বিশেষ করে যাঁরা উচ্চমূল্যের ফল-ফসলের আবাদ করেন তাঁরা খুব দৃঢ়ভাবেই কৃষিবিমার প্রত্যাশী ছিলেন। আমি বরাবরই জাতীয় বাজেট ঘোষণার প্রাক্কালে ‘কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট’-এর সুপারিশমালা অর্থমন্ত্রীর হাতে তুলে দিই। সেখানে প্রতিবারই কৃষকের পক্ষ থেকে কৃষিবিমার দাবির উল্লেখ থাকে। মনে আছে, টাঙ্গাইলে ‘কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট’ অনুষ্ঠানে কিষাণি মমতাজ বেগম প্রশ্ন করেছিলেন, ‘আপনার গাড়িটার যদি বিমা হতে পারে, তবে আমার গরুটার কেন বিমা হবে না?’
আমি যত দূর জানি, ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো প্রচলিত শস্যবিমা চালু করে সাধারণ বীমা করপোরেশন। তবে খরচ বেশি হওয়ায় ১৯৯৬ সালে এটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ২০১৪ সালে পাইলট প্রকল্প আকারে আবারও শস্যবিমা চালু করে সাধারণ বীমা করপোরেশন। আবহাওয়া সূচকভিত্তিক এই শস্যবিমা ছিল একটি নতুন সংযোজন। কিন্তু এই প্রকল্পের পাইলটিং পর্যায়টা ছিল দীর্ঘ। শস্য কৃষির বাইরে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে বিমার জোরালো দাবি আছে খামারিদের। খুব স্বল্প পরিসরে কয়েকটি বিমা প্রতিষ্ঠান অবশ্য শস্যবিমা নিয়ে কাজ করছে।
মনে পড়ছে, ২০১৯ সালের ৫ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় কৃষকদের জন্য কৃষিবিমা চালু করার উদ্যোগের কথা জানিয়েছিলেন। রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আন্তর্জাতিক ক্ষুদ্রবিমা সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাংলাদেশে পড়তে যাচ্ছে। দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সাম্প্রতিক একটি সমীকরণ অনুযায়ী, প্রাকৃতিক ঝুঁকিপূর্ণ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় যারা বসবাস করে, তাদের ক্ষতি কীভাবে মেটানো যায় এবং তাদের জীবন কীভাবে নিরাপদ করা যায়, সে জন্য তাদের বিশেষ বিমার ব্যবস্থা করে দিলে তারা নিরাপদ থাকবে।’ প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর কৃষিবিমা চালু করার উদ্যোগ নেয় সরকার।
এশিয়ার অনেক দেশ, যেমন ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, ভারত, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড সরকার কৃষিবিমার ওপর বিশেষ গুরুত্ব এবং প্রাধান্য আরোপ করেছে। পাশের দেশ ভারতের সরকার কৃষিবিমার ওপর জোর দিয়ে নতুন নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে। ফসলের চাষকে বিমার আওতায় আনতে চালু করা হয়েছে ‘প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনা’। খবরে জেনেছি, প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনার অধীনে ৩ দশমিক ৫ কোটি কৃষকের বিমা করা হয়েছে এবং বিমার পরিমাণ ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। উর্বরতা রক্ষা করে একই জমিতে অধিক ফসল তোলার জন্য প্রায় সাড়ে ৭ কোটি সয়েল হেলথ কার্ড ইস্যু করা হয়েছে।
বছর দুয়েক আগে আমার ফিলিপাইনে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। কাজের প্রয়োজনে সেখানকার প্রত্যন্ত গ্রামেও গিয়েছি। ফিলিপাইনের ইলিকস নর্থ প্রদেশের পিদিমের আবুকাই গ্রামের লইতা, আরথুর, সান্তোসসহ বেশ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তাঁরা আমাকে বলেছিলেন, ফিলিপাইনের নিবন্ধিত কৃষকের শতভাগ রয়েছেন কৃষিবিমার আওতায়। বীজ, সার থেকে শুরু করে সব কৃষি সহযোগিতা তাঁরা সরকারের কাছ থেকে পেয়ে থাকেন, বিনিময়ে তাঁরা নিয়মিত তাঁদের প্রিমিয়াম পরিশোধ করেন।
আমাদেরও উচিত হবে কৃষকদের দ্রুত শস্যবিমাসহ কৃষিবিমার আওতায় নিয়ে আসা। প্রথমে হয়তো কৃষকদের প্রিমিয়াম দেওয়ায় অভ্যস্ত করে তুলতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হতে পারে। তবে এর ভবিষ্যৎ নিঃসন্দেহে ফলপ্রসূ হবে। শুধু শস্যই নয়, কৃষির অন্যান্য উপ খাত—গবাদি পশু ও মৎস্য খাতকেও কৃষিবিমার আওতায় আনা প্রয়োজন। প্রাণিসম্পদের বিমার কথা বললে আগে বলা হতো, গরু-ছাগলের স্বাস্থ্যের গ্যারান্টি কী? বিমাকৃত প্রাণীটি আদৌ সুস্থ কি না, জানা যেত না। কিংবা পুকুরে পানির নিচে কী পরিমাণ মাছ আছে, সেটাও জানা যেত না।
কিন্তু এখন চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এই সময়ে যন্ত্রই সব তথ্য দিয়ে দিচ্ছে। গরুর পেটে থাকা বোলাস সার্বক্ষণিক তথ্য পাঠাচ্ছে গরুর রোগবালাই থেকে শুরু করে কতটুকু খাবার খাচ্ছে, কী পরিমাণ বিশ্রাম নিচ্ছে সব তথ্য। পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকা হোক না কেন মোবাইল ফোনে মুহূর্তেই সব তথ্য জানা সম্ভব হচ্ছে। এত দিন আমাদের কাছে সব গরুই এক রকম দেখতে মনে হলেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন যন্ত্র ঠিকই গরুর মুখে ক্যামেরা ফেলে আলাদা আলাদাভাবে চিনে নিতে পারছে প্রতিটি গরু। যন্ত্রই বলে দিতে পারছে পুকুরের নিচে কী পরিমাণ মাছ আছে, তাদের আকার-আকৃতিই-বা কী। ফলে তাদের কৃষিবিমার আওতায় নিয়ে আসা খুব কঠিন বিষয় নয়।
নেদারল্যান্ডসে দেখেছি প্রযুক্তির কৃষির নান্দনিক বিকাশ। বিশাল একেকটা গ্রিনহাউস যেন একেকটা কৃষিপণ্যের কারখানা। মানুষের পাশাপাশি কাজ করছে রোবটও। সংখ্যার হিসাবে মানুষের চেয়ে রোবটের সংখ্যাই বেশি। একেকটা গ্রিনহাউসে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ। যেখানে বিমার সুবিধা না থাকলে কেউই হয়তো এত বেশি ঝুঁকি নিতেন না।
উন্নত দেশগুলোর আদলে আমাদের দেশেও প্রযুক্তির কৃষিতে বিনিয়োগ শুরু হয়েছে। একে বিকশিত করতে কয়েকটি বিমা কোম্পানি এগিয়ে এসেছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে একটা সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা জরুরি। এতে কৃষক বা উদ্যোক্তা এবং বিমা কোম্পানি উভয়ই যেন সামঞ্জস্যপূর্ণ স্থানে অবস্থান করতে পারে। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে সরকারের বিমা প্রকল্প দ্রুত সম্প্রসারণ করা জরুরি।
আমার সৌভাগ্য যে স্বাধীন বাংলাদেশের কৃষি, কৃষক ও কৃষিনির্ভর আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তনটা খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি। আমি দেখেছি, এ দেশের কৃষক কতটা ঘাতসহ, কতটা বৈরী অবস্থানে থেকেও খাদ্য উৎপাদনের নেশায় চাষে মগ্ন থেকেছেন।
পাওয়া না-পাওয়ার হিসাব তাঁর কাছে বড় হয়ে ওঠেনি। কৃষক এগিয়েছেন তাঁর নিজস্ব গতিতে। সরকারের বিভিন্ন সহযোগিতা ছিল বটে, তবে কৃষকের অবদান এককভাবে সেখানে আরও অনেক বেশি জায়গাজুড়ে। সেই অন্তর্মুখী কৃষককে এখন দাঁড় করাতে হবে বিশ্ব কৃষকের পাশে।
সময় এখন বিশ্বায়নের। কৃষকের বাজার এখন পৃথিবীব্যাপী। এই সময়ে আমাদের কৃষককে সামনে এগিয়ে নিতে না পারলে পিছিয়ে যাবে আমাদের কৃষি। পিছিয়ে যাব আমরা। আবার চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এই সময়ে আধুনিক প্রযুক্তির কৃষির সঙ্গে তাঁদের যেমন পরিচয় করিয়ে দিতে হবে, আমাদের শিল্পোদ্যোক্তাদের এ খাতে বিনিয়োগের সুযোগও তৈরি করে দিতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন সুপরিকল্পিত কৃষিবিমা নীতিমালা।
লেখক: পরিচালক ও বার্তাপ্রধান, চ্যানেল আই
প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে পুড়ছে দেশ। ষড়্ঋতুর বাংলাদেশে ঋতুবৈচিত্র্য ঠিক আগের মতো নেই। ঘোর বর্ষা থাকার সময়ে থাকছে বৃষ্টিহীন। শীতও ঠিক নেই আগের মতো। গ্রীষ্মেও দেখা মেলে কুয়াশার। কয়েক বছর ধরে আবহাওয়া হয়ে উঠেছে অনিশ্চিত। আগে থেকে কিছুই বলা যাচ্ছে না।
এটিই মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের বারতা। যার প্রকট প্রভাব পড়ছে আমাদের কৃষিতে। এই সময়টা আমাদের কৃষির পটপরিবর্তনের একটা সময়। শিল্পোদ্যোক্তারা আগ্রহী হয়ে উঠছেন কৃষিতে বিনিয়োগে। ফলে ক্রমেই প্রসারিত হচ্ছে প্রযুক্তিবহুল বাণিজ্যিক কৃষি। কিন্তু জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত প্রভাব অনিশ্চিত করে দিতে পারে অনেক কিছু। তাই এই সময়ে কৃষিবিমার প্রয়োজনীয়তা আরও জোরেশোরে অনুভূত হচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরে আমি কৃষকদের শস্যবিমার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বলে এসেছি। আমাদের দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ লেগেই আছে। বন্যা, শিলাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, পোকা-মাকড়ের আক্রমণ, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদি কারণে ফসলের ক্ষতি হয়। ফলে কৃষক ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হন। এ ধরনের আর্থিক ক্ষতি মোকাবিলা করার জন্য যে বিমাপত্র গ্রহণ করা হয় তা-ই হচ্ছে শস্যবিমা। শস্যবিমা করা থাকলে কোনো কারণে ক্ষতি হলে বিমাকারী প্রতিষ্ঠান আর্থিক সহায়তা দেয়। তবে এ ক্ষেত্রে স্বল্প বা দীর্ঘ মেয়াদে বিমার জন্য প্রিমিয়াম দিতে হয়। শস্যবিমার প্রচলন প্রথম জার্মানিতে শুরু হলেও পরে আমেরিকা, জাপান ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এর ব্যাপকতা লাভ করে। বর্তমানে প্রায় সব দেশেই শস্যবিমার প্রচলন আছে।
হৃদয়ে মাটি ও মানুষের বিশেষ আয়োজন ‘কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট’ অনুষ্ঠানের শুরু থেকে কৃষকেরা কৃষিবিমার দাবি জানিয়ে আসছেন; বিশেষ করে যাঁরা উচ্চমূল্যের ফল-ফসলের আবাদ করেন তাঁরা খুব দৃঢ়ভাবেই কৃষিবিমার প্রত্যাশী ছিলেন। আমি বরাবরই জাতীয় বাজেট ঘোষণার প্রাক্কালে ‘কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট’-এর সুপারিশমালা অর্থমন্ত্রীর হাতে তুলে দিই। সেখানে প্রতিবারই কৃষকের পক্ষ থেকে কৃষিবিমার দাবির উল্লেখ থাকে। মনে আছে, টাঙ্গাইলে ‘কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট’ অনুষ্ঠানে কিষাণি মমতাজ বেগম প্রশ্ন করেছিলেন, ‘আপনার গাড়িটার যদি বিমা হতে পারে, তবে আমার গরুটার কেন বিমা হবে না?’
আমি যত দূর জানি, ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো প্রচলিত শস্যবিমা চালু করে সাধারণ বীমা করপোরেশন। তবে খরচ বেশি হওয়ায় ১৯৯৬ সালে এটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ২০১৪ সালে পাইলট প্রকল্প আকারে আবারও শস্যবিমা চালু করে সাধারণ বীমা করপোরেশন। আবহাওয়া সূচকভিত্তিক এই শস্যবিমা ছিল একটি নতুন সংযোজন। কিন্তু এই প্রকল্পের পাইলটিং পর্যায়টা ছিল দীর্ঘ। শস্য কৃষির বাইরে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে বিমার জোরালো দাবি আছে খামারিদের। খুব স্বল্প পরিসরে কয়েকটি বিমা প্রতিষ্ঠান অবশ্য শস্যবিমা নিয়ে কাজ করছে।
মনে পড়ছে, ২০১৯ সালের ৫ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় কৃষকদের জন্য কৃষিবিমা চালু করার উদ্যোগের কথা জানিয়েছিলেন। রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আন্তর্জাতিক ক্ষুদ্রবিমা সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাংলাদেশে পড়তে যাচ্ছে। দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সাম্প্রতিক একটি সমীকরণ অনুযায়ী, প্রাকৃতিক ঝুঁকিপূর্ণ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় যারা বসবাস করে, তাদের ক্ষতি কীভাবে মেটানো যায় এবং তাদের জীবন কীভাবে নিরাপদ করা যায়, সে জন্য তাদের বিশেষ বিমার ব্যবস্থা করে দিলে তারা নিরাপদ থাকবে।’ প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর কৃষিবিমা চালু করার উদ্যোগ নেয় সরকার।
এশিয়ার অনেক দেশ, যেমন ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, ভারত, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড সরকার কৃষিবিমার ওপর বিশেষ গুরুত্ব এবং প্রাধান্য আরোপ করেছে। পাশের দেশ ভারতের সরকার কৃষিবিমার ওপর জোর দিয়ে নতুন নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে। ফসলের চাষকে বিমার আওতায় আনতে চালু করা হয়েছে ‘প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনা’। খবরে জেনেছি, প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনার অধীনে ৩ দশমিক ৫ কোটি কৃষকের বিমা করা হয়েছে এবং বিমার পরিমাণ ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। উর্বরতা রক্ষা করে একই জমিতে অধিক ফসল তোলার জন্য প্রায় সাড়ে ৭ কোটি সয়েল হেলথ কার্ড ইস্যু করা হয়েছে।
বছর দুয়েক আগে আমার ফিলিপাইনে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। কাজের প্রয়োজনে সেখানকার প্রত্যন্ত গ্রামেও গিয়েছি। ফিলিপাইনের ইলিকস নর্থ প্রদেশের পিদিমের আবুকাই গ্রামের লইতা, আরথুর, সান্তোসসহ বেশ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তাঁরা আমাকে বলেছিলেন, ফিলিপাইনের নিবন্ধিত কৃষকের শতভাগ রয়েছেন কৃষিবিমার আওতায়। বীজ, সার থেকে শুরু করে সব কৃষি সহযোগিতা তাঁরা সরকারের কাছ থেকে পেয়ে থাকেন, বিনিময়ে তাঁরা নিয়মিত তাঁদের প্রিমিয়াম পরিশোধ করেন।
আমাদেরও উচিত হবে কৃষকদের দ্রুত শস্যবিমাসহ কৃষিবিমার আওতায় নিয়ে আসা। প্রথমে হয়তো কৃষকদের প্রিমিয়াম দেওয়ায় অভ্যস্ত করে তুলতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হতে পারে। তবে এর ভবিষ্যৎ নিঃসন্দেহে ফলপ্রসূ হবে। শুধু শস্যই নয়, কৃষির অন্যান্য উপ খাত—গবাদি পশু ও মৎস্য খাতকেও কৃষিবিমার আওতায় আনা প্রয়োজন। প্রাণিসম্পদের বিমার কথা বললে আগে বলা হতো, গরু-ছাগলের স্বাস্থ্যের গ্যারান্টি কী? বিমাকৃত প্রাণীটি আদৌ সুস্থ কি না, জানা যেত না। কিংবা পুকুরে পানির নিচে কী পরিমাণ মাছ আছে, সেটাও জানা যেত না।
কিন্তু এখন চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এই সময়ে যন্ত্রই সব তথ্য দিয়ে দিচ্ছে। গরুর পেটে থাকা বোলাস সার্বক্ষণিক তথ্য পাঠাচ্ছে গরুর রোগবালাই থেকে শুরু করে কতটুকু খাবার খাচ্ছে, কী পরিমাণ বিশ্রাম নিচ্ছে সব তথ্য। পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকা হোক না কেন মোবাইল ফোনে মুহূর্তেই সব তথ্য জানা সম্ভব হচ্ছে। এত দিন আমাদের কাছে সব গরুই এক রকম দেখতে মনে হলেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন যন্ত্র ঠিকই গরুর মুখে ক্যামেরা ফেলে আলাদা আলাদাভাবে চিনে নিতে পারছে প্রতিটি গরু। যন্ত্রই বলে দিতে পারছে পুকুরের নিচে কী পরিমাণ মাছ আছে, তাদের আকার-আকৃতিই-বা কী। ফলে তাদের কৃষিবিমার আওতায় নিয়ে আসা খুব কঠিন বিষয় নয়।
নেদারল্যান্ডসে দেখেছি প্রযুক্তির কৃষির নান্দনিক বিকাশ। বিশাল একেকটা গ্রিনহাউস যেন একেকটা কৃষিপণ্যের কারখানা। মানুষের পাশাপাশি কাজ করছে রোবটও। সংখ্যার হিসাবে মানুষের চেয়ে রোবটের সংখ্যাই বেশি। একেকটা গ্রিনহাউসে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ। যেখানে বিমার সুবিধা না থাকলে কেউই হয়তো এত বেশি ঝুঁকি নিতেন না।
উন্নত দেশগুলোর আদলে আমাদের দেশেও প্রযুক্তির কৃষিতে বিনিয়োগ শুরু হয়েছে। একে বিকশিত করতে কয়েকটি বিমা কোম্পানি এগিয়ে এসেছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে একটা সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা জরুরি। এতে কৃষক বা উদ্যোক্তা এবং বিমা কোম্পানি উভয়ই যেন সামঞ্জস্যপূর্ণ স্থানে অবস্থান করতে পারে। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে সরকারের বিমা প্রকল্প দ্রুত সম্প্রসারণ করা জরুরি।
আমার সৌভাগ্য যে স্বাধীন বাংলাদেশের কৃষি, কৃষক ও কৃষিনির্ভর আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তনটা খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি। আমি দেখেছি, এ দেশের কৃষক কতটা ঘাতসহ, কতটা বৈরী অবস্থানে থেকেও খাদ্য উৎপাদনের নেশায় চাষে মগ্ন থেকেছেন।
পাওয়া না-পাওয়ার হিসাব তাঁর কাছে বড় হয়ে ওঠেনি। কৃষক এগিয়েছেন তাঁর নিজস্ব গতিতে। সরকারের বিভিন্ন সহযোগিতা ছিল বটে, তবে কৃষকের অবদান এককভাবে সেখানে আরও অনেক বেশি জায়গাজুড়ে। সেই অন্তর্মুখী কৃষককে এখন দাঁড় করাতে হবে বিশ্ব কৃষকের পাশে।
সময় এখন বিশ্বায়নের। কৃষকের বাজার এখন পৃথিবীব্যাপী। এই সময়ে আমাদের কৃষককে সামনে এগিয়ে নিতে না পারলে পিছিয়ে যাবে আমাদের কৃষি। পিছিয়ে যাব আমরা। আবার চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এই সময়ে আধুনিক প্রযুক্তির কৃষির সঙ্গে তাঁদের যেমন পরিচয় করিয়ে দিতে হবে, আমাদের শিল্পোদ্যোক্তাদের এ খাতে বিনিয়োগের সুযোগও তৈরি করে দিতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন সুপরিকল্পিত কৃষিবিমা নীতিমালা।
লেখক: পরিচালক ও বার্তাপ্রধান, চ্যানেল আই
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৮ দিন আগে‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।
প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে পুড়ছে দেশ। ষড়্ঋতুর বাংলাদেশে ঋতুবৈচিত্র্য ঠিক আগের মতো নেই। ঘোর বর্ষা থাকার সময়ে থাকছে বৃষ্টিহীন। শীতও ঠিক নেই আগের মতো। গ্রীষ্মেও দেখা মেলে কুয়াশার। কয়েক বছর ধরে আবহাওয়া হয়ে উঠেছে অনিশ্চিত। আগে থেকে কিছুই বলা যাচ্ছে না।
০৭ মে ২০২৪‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]
প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে পুড়ছে দেশ। ষড়্ঋতুর বাংলাদেশে ঋতুবৈচিত্র্য ঠিক আগের মতো নেই। ঘোর বর্ষা থাকার সময়ে থাকছে বৃষ্টিহীন। শীতও ঠিক নেই আগের মতো। গ্রীষ্মেও দেখা মেলে কুয়াশার। কয়েক বছর ধরে আবহাওয়া হয়ে উঠেছে অনিশ্চিত। আগে থেকে কিছুই বলা যাচ্ছে না।
০৭ মে ২০২৪গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৮ দিন আগেভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।
প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে পুড়ছে দেশ। ষড়্ঋতুর বাংলাদেশে ঋতুবৈচিত্র্য ঠিক আগের মতো নেই। ঘোর বর্ষা থাকার সময়ে থাকছে বৃষ্টিহীন। শীতও ঠিক নেই আগের মতো। গ্রীষ্মেও দেখা মেলে কুয়াশার। কয়েক বছর ধরে আবহাওয়া হয়ে উঠেছে অনিশ্চিত। আগে থেকে কিছুই বলা যাচ্ছে না।
০৭ মে ২০২৪গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৮ দিন আগে‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।
প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে পুড়ছে দেশ। ষড়্ঋতুর বাংলাদেশে ঋতুবৈচিত্র্য ঠিক আগের মতো নেই। ঘোর বর্ষা থাকার সময়ে থাকছে বৃষ্টিহীন। শীতও ঠিক নেই আগের মতো। গ্রীষ্মেও দেখা মেলে কুয়াশার। কয়েক বছর ধরে আবহাওয়া হয়ে উঠেছে অনিশ্চিত। আগে থেকে কিছুই বলা যাচ্ছে না।
০৭ মে ২০২৪গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৮ দিন আগে‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫