Ajker Patrika

দেশ কি একদলীয় শাসনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে

এ কে এম শামসুদ্দিন
আপডেট : ২০ জানুয়ারি ২০২৪, ১০: ৫২
দেশ কি একদলীয় শাসনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে

অনেক জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে শেষ পর্যন্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হলো। এর আগে এই নির্বাচন কীভাবে হবে, তা নিয়ে অনেক কথাই হয়েছে। বিএনপিবিহীন নির্বাচনে জাতীয় পার্টিও যদি অংশ না নেয় তাহলে কী পরিস্থিতি দাঁড়ায়, তা নিয়েও মানুষের ভেতর কৌতূহল ছিল। কারণ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি অংশগ্রহণ করবে কি না, তা নিয়ে শেষ মুহূর্তে কিছুটা নাটকীয়তার সৃষ্টি হয়েছিল। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন দুপুরে জাতীয় পার্টির নীতিনির্ধারকেরা যখন মিটিং করছিলেন, তখন দলীয় কার্যালয়ের বাইরে অনেক নেতা-কর্মীই নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন।

এবারের নির্বাচনে ২৬টি আসন আওয়ামী লীগ ছেড়ে দিলেও জাতীয় পার্টি সন্তুষ্ট ছিল না। ছেড়ে দেওয়া আসনগুলোতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে যাতে সরে দাঁড়ান, এর ব্যবস্থা করার জন্য আওয়ামী লীগের কাছে তাঁরা দাবি করেছিলেন। তা ছাড়া আরও কিছু আসন ছেড়ে দেওয়ার আবদার তো ছিলই। আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টির কোনো দাবি বা আবদার না রাখলেও দলটি নির্বাচনে যে অংশগ্রহণ করবে, সে ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নিশ্চিত ছিল। শেষ পর্যন্ত তা-ই হয়েছে। আওয়ামী লীগ যেভাবে চেয়েছে তা মেনে নিয়েই জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে।

এবারের নির্বাচন কেমন হয়েছে, তা নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার দুটো বক্তব্য সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তিনি বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে কে কী বলছে, তা নিয়ে তিনি মাথা ঘামান না। তিনি বরং জোর দিয়ে বলেছেন, ‘আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি। এ নির্বাচন দেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।’ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বক্তব্য ছিল শেখ হাসিনার বক্তব্যের সম্পূর্ণ উল্টো। তিনি বলেছেন, ‘সরকারের নিয়ন্ত্রণে এ নির্বাচন হয়েছে। সরকার যেখানে নিরপেক্ষ করতে চেয়েছে, সেখানে নিরপেক্ষ হয়েছে। সরকার যেখানে যাকে জেতাতে চেয়েছে, সেটিই করেছে।’ আওয়ামী লীগের শরিক দল জাসদ নেতা হাসানুল হক ইনুও ভোট জালিয়াতির কথা বলেছেন। জনগণের ভোটে নয়, কারচুপির ভোটে তাঁকে পরাজিত করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগও করেন। নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি নিয়ে নৌকার অনেক প্রার্থীরও বিস্তর অভিযোগ আছে।

এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করার জন্য আওয়ামী লীগ যে পরিকল্পনা করেছিল বাস্তবে তা ঘটেনি। তারা চেয়েছিল, ৫০ শতাংশ ভোটারও যদি ভোট দেন, তাহলে নির্বাচনটি অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে প্রচার করা যাবে। এ জন্য ব্যাপক প্রস্তুতিও নিয়েছিল। এমনকি ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনার জন্য ভয়ভীতি দেখানোসহ নানা কৌশল গ্রহণ করেও ফল হয়নি। বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং পর্যবেক্ষকদের হিসাব অনুযায়ী, ২০ শতাংশের নিচে ভোট কাস্ট হলেও নির্বাচন কমিশন দাবি করেছে ৪১ দশমিক ৯৯ শতাংশ। কমিশনের দেওয়া এ তথ্য নিয়েও বিতর্ক আছে। এই বিতর্কের জন্য অবশ্য নির্বাচন কমিশনকেই দায়ী করা চলে। বেলা ৩টায় নির্বাচন কমিশনের প্রশাসনিক বিভাগ থেকে ভোট গ্রহণের যে হিসাব পাওয়া গিয়েছিল তাতে দেখা গেছে, ভোট পড়েছে মাত্র ২৮ শতাংশ।

সেখানে বিকেল ৪টার মধ্যে আরও ১৪ শতাংশ ভোট পড়ল কী করে, সেই হিসাব মিলিয়ে নির্বাচন কমিশন জনগণকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। এমনকি বিদেশি পর্যবেক্ষকেরা পর্যন্ত এ ব্যাপারে বিভ্রান্ত। জানা গেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিশেষজ্ঞসহ যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের প্রতিনিধিরাও নির্বাচন কমিশনের কাছে ভোটের সঠিক হার জানতে চেয়েছেন।

প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন আয়োজনের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি মনোনয়নবঞ্চিতদের নৌকার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার নির্দেশ দিয়ে, দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে উসকে দিয়েছেন বলেও মনে করা হচ্ছে। নির্বাচনের সময় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের যে ঘটনা ঘটেছে তার রেশ এখনো রয়ে গেছে। প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর নেতা-কর্মীদের রেষারেষির খবর পাওয়া যায়। নির্বাচনের পর পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর বিজয়ী প্রার্থীর লোকজনের হামলার অভিযোগ যেমন আছে, তেমনি আছে একে অপরকে দোষারোপের চেষ্টা। এসব কোন্দলকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভাজন দেখা দিয়েছে। নির্বাচনের আগে থেকেই বিভিন্ন এলাকায় ক্ষমতার ভাগাভাগি ও নেতৃত্ব নিয়ে নিজেদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। নির্বাচনে একাধিক প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে গিয়ে কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে সেই দূরত্ব আরও বেড়েছে। এই বিভেদ সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে উঠতে পারে। দলের ভেতর এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব থেকে যেতে পারে। এ নিয়ে দলের অভ্যন্তরে বিরাজ করছে চরম অস্বস্তি। সম্ভবত এ কারণেই আওয়ামী লীগের সভাপতি নৌকা ও স্বতন্ত্র বিভেদ ভুলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি ১৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের যৌথ সভায় নিজেদের মধ্যে একে অপরের দোষ ধরা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেন।

গত সংসদে সংসদ সদস্যদের মধ্যে ব্যবসায়ীদের আধিক্য থাকায় প্রচুর সমালোচনা হয়েছিল। এবার সেই সংখ্যা আরও বেড়েছে। স্বাধীনতার পর জাতীয় সংসদে ব্যবসায়ীদের এই সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। ১৯৭৩ সালে প্রথম সংসদে ব্যবসায়ী যেখানে ছিল মাত্র ১৮ শতাংশ, সেখানে গত সংসদে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬২ শতাংশে। একাদশ জাতীয় সংসদে ৩০০ আসনের মধ্যে ব্যবসায়ীর সংখ্যা ছিল ১৮২। বর্তমান সংসদে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯৯ জন, যা সরাসরি ভোটে নির্বাচিত মোট সংসদ সদস্যের দুই-তৃতীয়াংশ। শতাংশের হিসাবে ৬৭। এবারের নির্বাচনে মোট ১ হাজার ৯৪৫ প্রার্থীর মধ্যে ১ হাজার ১৪২ জনই ছিলেন ব্যবসায়ী। জাতীয় সংসদে ব্যবসায়ীদের সংখ্যা এ হারে বেড়ে যাওয়ায় প্রকৃত রাজনীতিবিদেরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের দেশে ব্যবসায়ীরা রাজনীতিতে যে বিনিয়োগ করেন, তা নিজেদের স্বার্থের জন্য। তাঁরা ধীরে ধীরে রাষ্ট্রীয়ব্যবস্থার নীতিকাঠামো দখল করে নিজেদের অর্থসম্পদ ও ব্যবসা বৃদ্ধি করে নিচ্ছেন। অতীতে দেখা গেছে, ব্যাংকিং, পোশাকশিল্প ও বিদ্যুতের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে ব্যবসায়ীরাই ঠিক করছেন নীতিকাঠামো কী হবে। এমনকি ঋণখেলাপির মতো বিষয়ের নীতিমালাও এই ব্যবসায়ী মহলই ঠিক করে দিচ্ছে।

এবারের নতুন মন্ত্রিসভার ৩৭ সদস্যের মধ্যে ১৬ জনই ব্যবসায়ী। জাতীয় সংসদে প্রকৃত রাজনীতিবিদেরা সংখ্যালঘু হয়ে পড়ায়, অনেক আইন তৈরি করার ক্ষেত্রে তাঁরা ব্যবসায়ীদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন। সংসদে প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা, নিজেদের সুবিধার জন্য ব্যবসায়ীবান্ধব নীতি তৈরি করছেন। ফলে জনগণের কল্যাণের চেয়ে ব্যবসায়ীদের স্বার্থই রক্ষা হয় বেশি। তাঁদের অনেকেই সিন্ডিকেট ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন। সে জন্য সরকারকে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। গত মেয়াদে সরকারকে এই সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী মহলের কাছেই একাধিকবার অসহায় হয়ে পড়তে দেখা গেছে। সংসদে এসব ব্যবসায়ীর সংখ্যা স্বাভাবিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় বেড়েছে বলা ঠিক হবে না। তাঁরা বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ায় অর্থের জোরে রাজনৈতিক শক্তিমত্তা অর্জন করেছেন। তাঁরা ক্ষমতাসীনদের সন্তুষ্ট করেই দলে পদ ও পদবি দখল করে নিয়েছেন। ফলে প্রকৃত রাজনৈতিক নেতারা পিছিয়ে পড়ছেন।

ভোটাধিকার গণতন্ত্রচর্চার অন্যতম স্তম্ভ। এবার নিয়ে গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে সাধারণ মানুষ তাঁদের সেই অধিকার যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে পারেননি। গণতন্ত্রের স্বাভাবিক ধারা এভাবেই বারবার বিঘ্নিত হয়েছে। প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিক ময়দান থেকে বিতাড়িত করে যেভাবে নির্বাচনটি সম্পন্ন করা হলো, তাতে সবার মনে প্রশ্ন জেগেছে, এ দেশে আর কখনো কি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না? নিজ দল থেকে ডামি প্রার্থী দিয়ে, শরিক ও জোটের দল নিয়ে মিলেমিশে যে নির্বাচন করা হয়েছে, তা যেকোনো বিচারে দেশের নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের সঙ্গেই তুলনা চলে। ২০১৪ সালে বিনা ভোটের নির্বাচন, ২০১৮ সালে রাতের ভোটের নির্বাচনের পর এ বছরের এই অভিনব কায়দার নির্বাচন দেশের মানুষকে সত্যিই হতাশ করেছে। এই নির্বাচন সরকারি দলের সমর্থকদের মুখে বিজয়ের হাসি ফোটালেও, প্রকৃত গণতন্ত্রকামীদের হাসি কেড়ে নিয়েছে। এমন বিজয়ে খুশি হওয়া যায়, কিন্তু গর্ব করা যায় না।

এ ধরনের একতরফা এই নির্বাচন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয় বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মত পোষণ করেছেন। এবার যে অভিনব কায়দায় নির্বাচন হলো, তাতে দেশের সাধারণ মানুষ সন্তুষ্ট হতে পারেনি। আন্তর্জাতিক মহলেও এ নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক আছে। আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, ‘বিরোধী দল নির্বাচনে অংশ নেয়নি বলে দেশে গণতন্ত্র নেই, সে কথা ঠিক নয়; বরং জনগণ নির্বাচনে অংশ নিয়েছে সেটিই বড় কথা।’ তাঁর এই বক্তব্য দেশে একদলীয় শাসনের ভীতি বাড়িয়ে তুলেছে। বৃহত্তর বিরোধী দলের প্রায় সব শীর্ষ নেতাসহ শত শত নেতা-কর্মীকে জেলহাজতে আটক রেখে ক্ষমতাসীন দল যে শক্তিমত্তার পরিচয় দিয়েছে, তা দেশের গণতন্ত্রচর্চা এবং ভবিষ্যতে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের জন্য অশনিসংকেত। তা ছাড়া, সংসদে বিরোধী নেতা বা দল কে বা কারা হবে, তা-ও যদি সরকারদলীয় নেতা ঠিক করেন, তাহলে কি বলা যায় যে বাংলাদেশ বহুদলীয় উদার গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার পথে এগিয়ে যাচ্ছে?

লেখক: অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও কলাম লেখক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গ্রেপ্তার হয়ে অবাক ডন, বললেন—‘স্যার আমাকে কীভাবে গ্রেপ্তার করলেন’

সুদানে ‘গণহত্যা’য় আরব আমিরাতের গোপন তৎপরতা ও কলম্বিয়ার ভাড়াটে সেনা

একাত্তরের হত্যাযজ্ঞে সম্পৃক্ততার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন: জামায়াত

অবশেষে নতুন ঠিকানায় ১০০ সাজাপ্রাপ্ত বন্দী

ইসরায়েলকে খুশি করতে সাংবাদিক শিরিন হত্যাকাণ্ডের প্রতিবেদন ‘দুর্বল’ করে বাইডেন প্রশাসন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গ্রেপ্তার হয়ে অবাক ডন, বললেন—‘স্যার আমাকে কীভাবে গ্রেপ্তার করলেন’

সুদানে ‘গণহত্যা’য় আরব আমিরাতের গোপন তৎপরতা ও কলম্বিয়ার ভাড়াটে সেনা

একাত্তরের হত্যাযজ্ঞে সম্পৃক্ততার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন: জামায়াত

অবশেষে নতুন ঠিকানায় ১০০ সাজাপ্রাপ্ত বন্দী

ইসরায়েলকে খুশি করতে সাংবাদিক শিরিন হত্যাকাণ্ডের প্রতিবেদন ‘দুর্বল’ করে বাইডেন প্রশাসন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গ্রেপ্তার হয়ে অবাক ডন, বললেন—‘স্যার আমাকে কীভাবে গ্রেপ্তার করলেন’

সুদানে ‘গণহত্যা’য় আরব আমিরাতের গোপন তৎপরতা ও কলম্বিয়ার ভাড়াটে সেনা

একাত্তরের হত্যাযজ্ঞে সম্পৃক্ততার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন: জামায়াত

অবশেষে নতুন ঠিকানায় ১০০ সাজাপ্রাপ্ত বন্দী

ইসরায়েলকে খুশি করতে সাংবাদিক শিরিন হত্যাকাণ্ডের প্রতিবেদন ‘দুর্বল’ করে বাইডেন প্রশাসন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গ্রেপ্তার হয়ে অবাক ডন, বললেন—‘স্যার আমাকে কীভাবে গ্রেপ্তার করলেন’

সুদানে ‘গণহত্যা’য় আরব আমিরাতের গোপন তৎপরতা ও কলম্বিয়ার ভাড়াটে সেনা

একাত্তরের হত্যাযজ্ঞে সম্পৃক্ততার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন: জামায়াত

অবশেষে নতুন ঠিকানায় ১০০ সাজাপ্রাপ্ত বন্দী

ইসরায়েলকে খুশি করতে সাংবাদিক শিরিন হত্যাকাণ্ডের প্রতিবেদন ‘দুর্বল’ করে বাইডেন প্রশাসন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গ্রেপ্তার হয়ে অবাক ডন, বললেন—‘স্যার আমাকে কীভাবে গ্রেপ্তার করলেন’

সুদানে ‘গণহত্যা’য় আরব আমিরাতের গোপন তৎপরতা ও কলম্বিয়ার ভাড়াটে সেনা

একাত্তরের হত্যাযজ্ঞে সম্পৃক্ততার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন: জামায়াত

অবশেষে নতুন ঠিকানায় ১০০ সাজাপ্রাপ্ত বন্দী

ইসরায়েলকে খুশি করতে সাংবাদিক শিরিন হত্যাকাণ্ডের প্রতিবেদন ‘দুর্বল’ করে বাইডেন প্রশাসন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত