Ajker Patrika

সরকারি মিলে উৎপাদন নেই

জহিরুল আলম পিলু, কদমতলী
আপডেট : ১৮ জুন ২০২২, ১১: ৪৭
সরকারি মিলে উৎপাদন নেই

পোস্তগোলায় অবস্থিত দেশের একমাত্র সরকারি আধুনিক ময়দা মিলে তিন মাস উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এর নেপথ্যে খাদ্য অধিদপ্তরের কিছু অসাধু কর্মকর্তার কারসাজি থাকার অভিযোগ রয়েছে। ফলে ওএমএসের ডিলাররা চাহিদা অনুযায়ী আটা সরবরাহ পাচ্ছেন না। ভোক্তারাও কম টাকায় আটা-ময়দা কেনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

মিল কর্তৃপক্ষ জানায়, ঢাকা মহানগরে ভোক্তাদের প্রতিদিন আটা-ময়দার চাহিদা ৬০ টন। আধুনিক এই মিলটিতে প্রতিদিন ২০০ টন গম থেকে প্রায় ১৩০ টন আটা উৎপাদন করা যায়। যা ঢাকা মহানগরের ভোক্তাদের প্রতিদিনের চাহিদার দ্বিগুণের বেশি। অথচ প্রতিষ্ঠার পর থেকে কোনো দিনই ক্ষমতার এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি মিলটি। সরকারি ওই মিলে গম বরাদ্দ দেয় খাদ্য অধিদপ্তর। এদিকে বেসরকারি মিল থেকে আটা পাওনা থাকায় গত ১৬ এপ্রিল থেকে মিলটিতে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।

তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আটার চাহিদা পূরণে জুরাইনে অবস্থিত আঞ্চলিক খাদ্য অধিদপ্তরের প্রধান নিয়ন্ত্রক, ঢাকা রেশনিং (সিসিডিআর) প্রয়োজনীয় আটা ওএমএসের ডিলারদের সরবরাহ করে থাকেন। কিন্তু সিসিডিআর অনেক দিন ধরে ভোক্তাদের চাহিদার অর্ধেক আটা সরবরাহ করছে।

সম্প্রতি নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে। আটার দামও বেড়েছে। বর্তমানে বেসরকারি খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৪৮-৫০ টাকা কেজি দরে। আর প্যাকেট আটার দাম প্রতি ২ কেজি ৯৫-৯৬ টাকা। অথচ সরকারি এ মিলে উৎপাদিত আটা প্রতি কেজি ১৮ টাকা দরে বিক্রি হয়। কিন্তু সরবরাহ ঠিক না থাকায় ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

জুরাইন ও ২৪ ফুট এলাকার আটার ডিলার মানিক ও হানিফ জানান, এখন তাঁরা মিল থেকে চাহিদার অর্ধেক আটা পান। কর্তৃপক্ষ যে পরিমাণ আটা দেয়, সেটাই তাঁরা ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করেন।

দোলাইরপারের একটি ওএমএসের দোকানে আটা নিতে আসা আসমা বলেন, ‘আগে প্রতি সপ্তাহে আটা কিনতাম। কিন্তু এখন ঠিকমতো পাই না। আমাগো এত দাম দিয়া অন্য আটা কিনে খাওয়া সম্ভব না।’

ওএমএসের কয়েকজন আটা বিক্রেতা জানান, প্রায় দেড় মাস ধরে চাহিদা মোতাবেক আটা পান না। সপ্তাহে দুইবার ১ টন চাল ও ৫০০ কেজি করে আটা পান। যা আগের চেয়ে অর্ধেক। ফলে লাভ না হয়ে লোকসান হচ্ছে। কেননা সপ্তাহে মোট ৩ টন মালে কেজিতে দুই টাকা করে ৬ হাজার টাকা লাভ থাকে। সেই সঙ্গে এসব মাল পরিবহন, লেবারসহ অন্যান্য খরচে চলে যায় প্রায় সাড়ে ৫ হাজার টাকা। এরপর দোকান ভাড়া দিতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। কিন্তু আগের মতো মাল দিলে এত ক্ষতি হতো না।

খাদ্য অধিদপ্তর জনগণের চাহিদা পূরণে সম্পূর্ণ আটা সরকারি মিল থেকে সরবরাহ করবে। যদি কোনো কারণে সরকারি মিল থেকে সেই চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়, সে ক্ষেত্রে বেসরকারি কোম্পানি থেকে ঘাটতি আটা নিয়ে পূরণ করতে পারবে। অন্যদিকে সিসিডিআর থেকে আটার চাহিদাপত্র মিল কর্তৃপক্ষ পেলেই, সেই পরিমাণ আটা উৎপাদন করে থাকে মিল কর্তৃপক্ষ।

মিলের চিফ মিলার সাজেদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব আটা উৎপাদন করা। সিসিডিআর যে চাহিদাপত্র দেয়, আমরা সেই পরিমাণ আটা উৎপাদন করি। ডিলারদের ডেলিভারি দেওয়ার দায়িত্ব সিসিডিআরের। তবে আমরা নির্দেশ পেলে যেকোনো সময় মিলে আটা উৎপাদনে প্রস্তুত আছি।’ তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মিল বন্ধ। মেশিন সচল রাখতে মাঝে মাঝে কিছু গম ভাঙানো হয়।

ডিলারদের প্রায়ই সরকারি আটা সরবরাহ না করে বেসরকারি কোম্পানির আটা বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়টি সত্য নয় বলে জানিয়েছেন আঞ্চলিক খাদ্য অধিদপ্তরের প্রধান নিয়ন্ত্রক, ঢাকা রেশনিং (সিসিডিআর) সুরাইয়া খাতুন। তিনি বলেন, পাওনা বেসরকারি আটা সরবরাহ পেলে চলতি মাসেই মিলে আটা উৎপাদন শুরু হবে।

খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাখাওয়াত হোসেন বলেন, মিলের আটায় ভোক্তাদের চাহিদা পূরণ না হলে বেসরকারি মিলে গম দিয়ে আটা উৎপাদন করে ওএমএস ডিলারদের সরবরাহ করা হয়। তাঁর মতে, মিল চালু রয়েছে। এবং সারা বিশ্বে সবকিছুর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আটার দাম বেড়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত