Ajker Patrika

ফুটপাতে দোকান মেলে টাকায়

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১: ১৬
ফুটপাতে দোকান মেলে টাকায়

বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রামের প্রাণকেন্দ্র আগ্রাবাদে টাকা দিলেই পথের পাশে মেলে দোকান করার জায়গা। অস্থায়ী এসব দোকান থেকে আদায় করা টাকা প্রশাসন ও স্থানীয় রাজনীতিকদের মধ্যে ভাগাভাগি হয় বলে অভিযোগ।

নগরীর একমাত্র ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারটিও অবস্থিত এই আগ্রাবাদে। আছে ব্যাংক-বিমাসহ সরকারি-বেসরকারি নানা সংস্থার প্রধান কার্যালয়। এখান থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয় আমদানি-রপ্তানিসহ কোটি কোটি টাকার ব্যবসা-বাণিজ্য।

এলাকাটি হকারমুক্ত থাকার কথা ছিল, উল্টো পরিণত হয়েছে হকারের নিরাপদ ব্যবসার স্থলে। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সরকারি-বেসরকারি অফিসে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সেবাগ্রহীতারা।

গত শনিবার দুপুরে সরেজমিন দেখা গেছে, আগ্রাবাদ কমার্স কলেজ সড়কের দুই পাশে ভ্যানগাড়িতে শার্ট, প্যান্টসহ নতুন পোশাকের দোকান সাজিয়ে বসেছেন হকাররা। বাদামতল থেকে নৃতাত্ত্বিক জাদুঘর হয়ে আগ্রাবাদ হোটেলগামী সড়কটিরও একই অবস্থা। তার পাশে আখতারুজ্জামান সেন্টারের পেছনের সড়টির দুপাশ বন্ধ করে জুতার দোকান বসানো হয়েছে। ওই এলাকার অন্য সড়কগুলোরও একই অবস্থা।

চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, দুপুর না হতেই হকাররা সড়কের পাশে ভ্যানগাড়ি নিয়ে বসে যান। তাঁরা এমনভাবে দোকান বসান, অফিস থেকে বের হয়ে রাস্তায় ওঠার জায়গা পর্যন্ত থাকে না। তাঁর অভিযোগ, ‘বিষয়টি বেশ কয়েকবার প্রশাসনকে জানিয়েছি, কিন্তু তারা কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’

জানা গেছে, ২০০০ সালের দিকে আক্তারুজ্জামান সেন্টারের ডান পাশে ফুটপাতে কয়েকজন জুতা নিয়ে বসতেন। এখন এলাকার সব কটি সড়কের দুপাশ হকারদের দখলে।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেট্রোপলিটন হকার সমিতির অধীনে ছাতা মার্কেট (২৬ নম্বর ইউনিট) ও জুতা মার্কেট (২৫ নম্বর ইউনিট) দুটি সংগঠন আগ্রাবাদ এলাকার এই ফুটপাতের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে। দোকান বসানোর জন্য এককালীন ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা নেন নেতারা। এরপর প্রতিটি ভ্যানগাড়িকে দিনে ৫০ টাকা দিতে হয় সমিতিকে। আর প্রতিটি বৈদ্যুতিক লাইটের জন্য হকারদের দিতে হয় ৩০ টাকা। যাঁরা দোকান বসিয়ে ব্যবসা করেন, তাঁদের কাছ থেকে নেওয়া হয় ২০০ টাকা করে। এ ছাড়া পুলিশ ও স্থানীয় সরকারদলীয় নেতা-কর্মীদের হাত করার জন্যও হকারদের কাছ থেকে টাকা তোলা হয়।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আগে খুরশীদ নামে এক যুবলীগ নেতার নামে চাঁদা তোলা হতো। ২০১৯ সালে র‍্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে তিনি নিহত হন। এখন তাঁর অনুসারী এবং স্থানীয় কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম বাহাদুরের অনুসারীরা ওই এলাকা থেকে চাঁদা তোলেন।

এ বিষয়ে কোনো হকার বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তাঁরা জানিয়েছেন, তাঁদের কাছ থেকে সমিতির লোকজনই টাকা নেন। তাঁরাই স্থানীয় নেতা-কর্মী ও পুলিশকে ম্যানেজ করেন।

তবে টাকা নেওয়ার বিষয় অস্বীকার করেন সংগঠনটির নেতারা। ছাতা মার্কেটের (মেট্রোপলিটন হকার সমিতির ২৬ নম্বর ইউনিট) সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘কারও কাছ থেকে কোনো চাঁদা নেওয়া হয় না। কল্যাণ ফান্ডের জন্য প্রতি হকার থেকে আমরা ১০ টাকা নিই।’

একই কথা বলেন জুতা মার্কেট (মেট্রোপলিটন হকার সমিতির ২৫ নম্বর ইউনিট) সভাপতি মিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমাদের অধীনে ৮৫টি মতো ভাসমান জুতার দোকান আছে। এসব দোকান থেকে আমরা কোনো টাকাপয়সা নিই না। শুধু লাইটিংয়ের জন্য টাকা নেওয়া হয়। আগে স্থানীয় কিছু সরকারদলীয় নেতা-কর্মী এসে চাঁদা তুলতেন। এক বছর ধরে সেটিও বন্ধ হয়েছে।’ চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে তাঁরা সংঘবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলায় এখন চাঁদা তোলা বন্ধ আছে বলেও দাবি করেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে স্থানীয় কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম বাহাদুর মোবাইল ফোনে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

টাকা নেওয়ার এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ডবলমুরিং থানার ওসি আবুল কাশেম ভুঁইয়া বলেন, ‘আমরা অনেক সময় হকারদের সেখান থেকে তুলে দিই। কিন্তু এরপরও তাঁরা আবার বসে যান। জনবল কম থাকায় সব সময় সেটি নজরদারিতে রাখা সম্ভব নয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

লুটপাটে শেষ ৫ কোটির প্রকল্প: ইউএনও-উপজেলা প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে শুনানি কাল

চীন–রাশিয়া থেকে ভারতকে দূরে রাখতে কয়েক দশকের মার্কিন প্রচেষ্টা ভেস্তে দিচ্ছেন ট্রাম্প: জন বোল্টন

‘হানি ট্র্যাপের’ ঘটনা ভিডিও করায় খুন হন সাংবাদিক তুহিন: পুলিশ

আটজন উপদেষ্টার ‘সীমাহীন’ দুর্নীতির প্রমাণ আছে: সাবেক সচিব

স্ত্রীকে মেরে ফেলেছি, আমাকে নিয়ে যান— ৯৯৯–এ স্বামীর ফোন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত