Ajker Patrika

টাকা দিয়ে খেজুর গুড় কিনে খেতে হয় চিনি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
Thumbnail image

শীতের শুরু থেকেই রাজশাহীর বাজার ভরে গেছে খেজুর গুড়ে। কিন্তু এসব খেজুর গুড় রস থেকে তৈরি নয়। বাজারে পাওয়া বেশির ভাগ গুড়ই তৈরি হচ্ছে চিনি মিশিয়ে। মাঝেমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এর বিরুদ্ধে অভিযান চালায়। তারপরও ভেজাল গুড়ের উৎপাদন বন্ধ হচ্ছে না।

গাছিরা বলছেন, চিনির দাম কম। তাই খেজুর রস জ্বাল দেওয়ার সময় চিনি মেশানো হয়। এতে গুড়ের পরিমাণ বাড়ে। শুধু রস জ্বাল দিয়ে গুড় হয় কম।

 
রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার দিড়িপাড়া গ্রামের এক গাছি বলেন, খাঁটি খেজুর গুড় করলে বাজারে পাইকারিতেই বিক্রি করতে হবে অন্তত ২০০ টাকা কেজি দরে। তা না হলে লাভ হবে না। কিন্তু দূরদূরান্ত থেকে আসা ব্যাপারীরা এত দামে গুড় কিনতে চান না। কম দামে গুড় দিতে হলে চিনি মেশাতে হয়। বেশিরভাগ গাছিই এভাবে গুড় বানান।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় আট লাখেরও বেশি খেজুর গাছ আছে। সবচেয়ে বেশি প্রায় চার লাখ খেজুর গাছ আছে চারঘাট উপজেলায়। পাশের বাঘা উপজেলাতেও গাছের সংখ্যা প্রায় তিন লাখ। বাকি গাছগুলো পুঠিয়াসহ অন্য উপজেলাগুলোয়।

মূলত পুঠিয়া, বাঘা ও চারঘাট উপজেলায় প্রচুর খেজুর গুড় উৎপাদন করা হয়। গাছিরা মালিকের কাছ থেকে গাছ ইজারা নিয়ে রস নামান। সেই রস দিয়ে গুড় করে হাটে বেচেন। এবার ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি দরে পাইকারিতে গুড় বিক্রি করা হচ্ছে। পুরো মৌসুমে অন্তত ২০০ কোটি টাকার খেজুর গুড় বিক্রি হওয়ার আশা করছে কৃষি বিভাগ।

বাঘা উপজেলার মনিগ্রামের গাছি ওসমান আলী বলেন, ‘চিনির দাম কম। তাই খেজুর রস জ্বাল দেওয়ার সময় এতে চিনি মিশিয়ে দেওয়া হয়। এতে গুড়ের উৎপাদন বাড়ে। শুধু রস জ্বাল দিয়ে গুড় হয় কম। এখন আমি যদি খাঁটি খেজুর গুড় বাজারে নিয়ে যাই, তাও দাম বেশি পাব না। চিনি দেওয়া গুড়ের যে দাম, আমার গুড়েরও একই দাম। শুধু এই কারণে অনেক গাছির ইচ্ছা থাকলেও খাঁটি গুড় করতে পারে না।’

চিনি মিশিয়ে খেজুর গুড় তৈরির ব্যাপারে জানতে চাইলে চারঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহরাব হোসেন বলেন, ‘এ ধরনের কথা শুনি।

সুনির্দিষ্টভাবে কারও বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেব। আমি গাছিদের সতর্ক করে বলেছি, খেজুর রস দিয়েই খেজুর গুড় করতে হবে। চিনি মেশালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

চিনি মেশানো গুড়ের কারণে রাজশাহীর সুনাম নষ্ট হচ্ছে কি না, জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজশাহীর উপপরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, ‘আমি সেটা বলতে পারব না। চিনি মেশানো হচ্ছে কি না, সেটা সাংবাদিকেরা খোঁজ নিয়ে বলতে পারেন, আমি পারি না। আমি বলব, চাষি ভাইয়েরা রস নামাচ্ছেন, সেই রস দিয়ে সুন্দরভাবে গুড় করছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত