Ajker Patrika

কারখানার বর্জ্যে নদীদূষণ

পলাশ (নরসিংদী) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৬ মার্চ ২০২২, ১৮: ৫৪
Thumbnail image

শিল্পকারখানার রাসায়নিক পদার্থ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ময়লা ও গৃহস্থালির আবর্জনাসহ প্রায় সব ধরনের বর্জ্য ফেলায় দূষিত হচ্ছে শীতলক্ষ্যার পানি। তা ছাড়া প্রতিনিয়ত নদী ভরাট করে ঘর-বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে নদীর প্রবাহ। ফলে সামান্য বৃষ্টিতে নরসিংদীর পলাশ উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রশাসনের উদ্যোগের অভাবে প্রতিনিয়ত দখল হচ্ছে নদী এবং দিনদিন নদী দূষণ বাড়ছে। অন্যদিকে জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, প্রতিনিয়ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে নজরদারি করা হয়। যদি কোনো শিল্প কারখানা ইটিপি ব্যবহার না করে ফ্যাক্টরির বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলে পরিবেশ নষ্ট করে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শীতলক্ষ্যার আশপাশে অবৈধভাবে ভূমি দখল করে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন শিল্পকারখানা। নদীর দুপাশেই রয়েছে বহু শিল্প কারখানাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান। এই সব প্রতিষ্ঠান থেকে অপরিশোধিত রাসায়নিক বর্জ্য ও দূষিত আবর্জনা প্রতিনিয়ত ফেলা হচ্ছে নদীতে। এতে শীতলক্ষ্যার দূষিত পানি স্থানীয়দের দৈনন্দিন ঘর-গৃহস্থালি কাজসহ কৃষি কাজেও ব্যবহার অনুযোগী হয়ে পড়ছে। এ কারণে পলাশ উপজেলাসহ গাজীপুরের অনেক এলাকায় বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বর্তমানে এই নদীর পানি এতটাই খারাপ হয়ে গেছে যে, কোনো কাজে ব্যবহারের চিন্তা করা তো দূরের কথা, দেখলেই ভয় হয়। এই পানি শরীরে লাগলে চর্মরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনায়ই বেশি।

নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন সময় ক্ষমতাসীনদের ছত্র ছায়ায় এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি নদী ভরাট, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, বালু বিক্রি, নদী দখল করে স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালিয়ে আসছে। এদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় পরিবেশবিদ, সামাজিক ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো নদী রক্ষায় আন্দোলন করেছে। সংশ্লিষ্টদের কাছে নদী রক্ষার দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সরকারের নীতিনির্ধারকেরা এই ব্যাপারগুলোর প্রতি উদাসীন থেকেছেন। তাই প্রতিনিয়ত দখল-দূষণের মারা যাচ্ছে শীতলক্ষ্যা। পরিবেশ দূষণের মাত্রা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকটও দিনদিন বাড়ছে।

অথচ একসময় উপজেলার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া এই নদী ছিল ব্যবসা-বাণিজ্যের মূল চালিকাশক্তি। নদীপথে যোগাযোগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যসহ জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রেখে ছিল এই নদী। নদীপাড়ের কৃষি জমিগুলো ছিল ফসলে ভরা। নদীতে ছিল নানা প্রজাতির মাছ। চিতল, রুই, কাতল, মৃগেল, পাবদা পাঙাশসহ বিভিন্ন প্রজাতির সুস্বাদু মাছ। দীর্ঘদিন ধরে নদীর পাড়ে অবস্থিত শিল্পকারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে শীতলক্ষ্যা নদীর পানি দূষিত হয়ে কালচে হয়ে গেছে। ফলে বিপন্ন হয়ে পড়েছে জীববৈচিত্র্য। আর বেকার হয়ে পড়েছে জেলে পরিবার। কেননা, একটা সময় ছিল এখানকার জেলেরা শীতলক্ষ্যায় মাছ ধরে তাদের জীবিকা নির্বাহ করতেন। এখন আর নদীটিতে তেমন মাছ পাওয়া যায় না।

ঘোড়াশাল পৌর এলাকার জামালপুর গুদারা ঘাটের নৌকার মাঝি চুন্নু মিয়া বলেন, ‘দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে এই ঘাটে নৌকা চালাই। কিন্তু আগে শীতলক্ষ্যা নদীর পানি এত দূষিত ছিল না। পানির এখন যেই অবস্থা তাতে নৌকা চালাতেও ভয় করে।’

বাঁচাও শীতলক্ষ্যা নদী আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহবুব সৈয়দ বলেন, শীতলক্ষ্যার তীরে গড়ে ওঠা শিল্পকারখানার দূষিত বর্জ্য নদীর পরিবেশ ধ্বংস করা হচ্ছে। শিল্পায়নের নামে নদী দখলের ঘটনা ঘটছে অহরহ। এসব ঘটনার কারণে নদী ধ্বংস হচ্ছে। আজ থেকে ৫০ বছর পরের চাহিদা ও বাস্তবতাকে বিবেচনায় রেখে নদ-নদীর পানি রক্ষা করতে হবে। এ জন্য শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারীসহ সর্বস্তরের নাগরিকদের মধ্যে নদী রক্ষার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি-চেতনা ও দায়বদ্ধতা তৈরি করতে হবে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা নিয়মিত ভিজিট করছি। যদি কোনো কোম্পানি ইটিপি ব্যবহার না করে ফ্যাক্টরির বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলে পরিবেশ নষ্ট করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত