Ajker Patrika

যমুনার তীররক্ষা বাঁধে ভাঙন

ইসলামপুর (জামালপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৪ জুন ২০২২, ১৪: ১১
Thumbnail image

জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায় যমুনা নদীর বাম তীর সংরক্ষণ বাঁধে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ভাঙন ঠেকাতে জিও ব্যাগ ডাম্পিং কাজ শেষ হওয়ার আগেই আবারও ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত ২০ দিনে যমুনার পানি বেড়ে কয়েক দফা ভাঙনে বাঁধের কুলকান্দী হার্ডপয়েন্টে ধসে গেছে বাঁধের অন্তত ৫০ মিটার এলাকা। ভাঙনের হুমকির মুখে পড়েছে বিভিন্ন স্থাপনা। ভাঙন-আতঙ্কে দিনাতিপাত করছে যমুনাপারের মানুষ।

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, ভাঙন বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

নদীপারের মানুষের অভিযোগ, নিম্নমানের কাজ করায় বারবার ভেঙে যাচ্ছে বাঁধ। এতে আতঙ্কে আছেন তাঁরা। ভাঙন ঠেকানো না গেলে তাঁদের বাড়িঘরসহ ফসলি জমি যমুনায় বিলীন হয়ে যাবে। তাঁদের দাবি, যমুনার ভাঙন রোধে এবং বাঁধ রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

গত বুধবার বাঁধ এলাকা পরিদর্শন করেছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এমপি। এর আগে তিনি ২০২১ সালের ১ নভেম্বর ধসে যাওয়া বাঁধ পরিদর্শন করেছিলেন।

প্রতিমন্ত্রী ভাঙনকবলিত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করা না হলে নদীভাঙন রোধ হবে না। নির্ধারিত বালুমহাল ছাড়া অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন বন্ধ করতে হবে।’

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্রে জানা গেছে, যমুনার ভাঙন প্রতিরোধে জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ফুটানী বাজার থেকে সরিষাবাড়ী উপজেলার পিংনা পর্যন্ত তিনটি পয়েন্টে ৪৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৬ দশমিক ৫৫ কিলোমিটার যমুনার বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্প বাঁধ নির্মাণ করা হয়।

২০১০ সালে শুরু হয়ে ২০১৭ সালে বাঁধ নির্মাণ শেষ হয়। এর মধ্যে ইসলামপুরের কুলকান্দী হার্ড পয়েন্ট থেকে গুঠাইল হার্ড পয়েন্টের আড়াই কিলোমিটারের জন্য ৯০ কোটি টাকার ব্যয়ে যমুনার বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্প নামের একটি তীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণ করা হয়। ২০১৮ সালে বাঁধ নির্মাণকাজ শুরু করে ২০২০ সালের জুন মাসে শেষ করা হয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, যমুনায় পানি বেড়েই চলেছে। এ ছাড়া নদীর গতিপ্রকৃতিও অনেক পরিবর্তন হয়েছে। নতুন একটি চ্যানেলের সৃষ্টি হয়েছে। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কুলকান্দী হার্ড পয়েন্ট থেকে গুঠাইল হার্ড পয়েন্টের মাঝামাঝি কুলকান্দী গ্রামের মিয়াপাড়া পুরাতন পাইলিংঘাট এলাকায় বাঁধের একাধিক পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে বাঁধের অন্তত ৫০ মিটার অংশ যমুনায় ধসে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে কুলকান্দী শামছুন্নাহার উচ্চবিদ্যালয়, কুলকান্দী বাজার, একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, বসতবাড়িসহ কয়েক শ একর ফসলি জমি ও বিভিন্ন স্থাপনা।

বাঁধ এলাকার সুরুজ, মিজান ও সাইফুল বলেন, ‘নিম্নমানের কাজ হওয়ায় নির্মাণের দেড় বছরেই বাঁধ ধসে পড়ছে।

এ ছাড়া একটি শক্তিশালী বালু সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে নদী থেকে বালু উত্তোলন করায় যমুনার বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্পে ধস দেখা দিয়েছে। বাঁধ ভাঙন রোধে অতি দ্রুত টেকসই পদক্ষেপ না নিলে বাঁধসহ যমুনার তীরবর্তী এলাকার ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে।’

কুলকান্দী শামছুন্নাহার উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মনিরা, রোকেয়া, মারুফা, কামালসহ অনেকেই জানায়, যমুনার পানি বৃদ্ধি হতে না হতে বাঁধে ভাঙন ধরেছে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ দ্রুত গ্রহণ করা না হলে বাঁধের বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

কুলকান্দী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ওবায়দুল হক বাবু জানান, ভাঙনে কয়েকটি পয়েন্টে বাঁধের সিসি ব্লক নদীগর্ভে ধসে গেছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মু. তানভীর হাসান রুমান বলেন, যমুনাপারের মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় বাঁধ রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু সাঈদ বলেন, ‘যমুনা নদীতে নতুন চ্যানেল বের হওয়ায় বাঁধে কিছু অংশ ড্যামেজ হয়েছে। ভাঙন পয়েন্ট পরিদর্শন করেছি। বাঁধের ভাঙন রোধে সাময়িকভাবে জিও ব্যাগ ডাম্পিং কাজ চলমান রয়েছে। ভাঙন ঠেকাতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।’

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজপাঠক (বন্যার পানি পরিমাপক) আব্দুল মান্নান বলেন, ‘পানি বাড়লেও যমুনা নদীর পানি বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে এখনো বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত