Ajker Patrika

বড় বিস্ময় লাগে!

হাসান মামুন
আপডেট : ১২ আগস্ট ২০২৪, ০৯: ১০
বড় বিস্ময় লাগে!

কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিণতিতেই হাসিনা সরকারের পতন হবে, এটা সম্ভবত কেউই ভাবতে পারেননি। আন্দোলনকারী নেতারাও নন। আর সরকারটি তো ছিল ‘অতি আত্মবিশ্বাসী’। যেনতেনভাবে তিন-তিনটি নির্বাচন সেরে ফেলে ক্ষমতা ধরে রাখার আনন্দে ছিল আত্মহারা। সেটা প্রকাশ পেত রাষ্ট্রক্ষমতার শীর্ষ থেকে সর্বনিম্ন পর্যায় পর্যন্ত নেতাদের কথাবার্তায়; এমনকি সরকার-সমর্থকদের নিত্য আলাপে। তাঁরা সবাই করুণভাবে বিস্মৃত হয়েছিলেন যে, দেশটির মালিক জনগণ। আর এ দেশে ন্যূনতম হলেও একটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ছিল। সেটা ধ্বংস করা আনন্দের বিষয় নয়; গৌরবের তো নয়ই।

এ অবস্থায় যে জনবিচ্ছিন্নতা ঘটে, সে-বিষয়ক উপলব্ধিও তাঁরা হারিয়ে ফেলেছিলেন। ক্ষমতাসীন দলের তৃণমূলে এ বোধ কিছুটা থাকলেও তার কোনো মূল্য ছিল না দেশ পরিচালনাকারী ‘রাজনৈতিক সিন্ডিকেটের’ কাছে। এর কাছে দলটা হয়ে পড়েছিল কেবল ‘জিন্দাবাদ’ দেওয়ার বস্তু। এর দুর্বৃত্ত অংশটাকে অবশ্য মাঝে মাঝেই নামানো হতো এমনকি নিরীহ প্রতিবাদ দমনে। এ ধারায় রাজনৈতিক সমস্যার রাজনৈতিক মোকাবিলা বাদ দিয়ে ‘পিটিয়ে দেওয়ার কৌশল’ প্রয়োগ করতে গিয়েই তো কোটা আন্দোলনকে বিস্তৃত করা হলো ক্যাম্পাসের বাইরে। রংপুরে পুলিশের গুলির সামনে বুক পেতে দিয়ে ইতিহাস হয়ে গেল আবু সাঈদ। একমাত্র সে-ই তার পরিবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত উঠে এসেছিল। অদম্য সাহসী এ তরুণ ছিল ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ একজন সমন্বয়ক।

তার নজিরবিহীন আত্মবলিদানকেও হালকা করে দেখেছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। আশুরার দিনে কালো শাড়ি পরে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে এলেও তিনি সেটা আসলে দিয়েছিলেন নিজ সমর্থকদের উদ্দেশে। কোনো উপলব্ধির প্রকাশ ছিল না তাতে; ছিল না সংকট মোকাবিলার কোনো চেষ্টা। ঘনিয়ে আসা দুর্যোগের বিষয়েও কোনো ধারণা ছিল না। তাঁর উপদেষ্টা হিসেবে পরিচিতদেরও কি ছিল না? তাঁরা হয়তো ছিলেন আরও আত্মবিশ্বাসী! এত আত্মবিশ্বাস এসেছিল কোত্থেকে? সম্ভবত সেটা এসেছিল যেনতেন নির্বাচন করে করে প্রচণ্ড প্রতাপে দেশটা চালিয়ে যেতে পারার অভিজ্ঞতা থেকে। এ ক্ষেত্রে মাঠের বিরোধী দলটির কার্যকর আন্দোলন রচনায় উপর্যুপরি ব্যর্থতাও কম দায়ী নয়। ওয়ান-ইলেভেনের সুবাদে প্রবলভাবে ক্ষমতায় ফিরে আসার পর মাঠে তাদের দাঁড়াতেই দেয়নি হাসিনা সরকার। সেটাকে ‘স্মার্টনেস’ বলে বর্ণনাও করা হচ্ছিল। কার্যত কোনো বিরোধী দল-মতকেই তাঁরা দাঁড়াতে দেননি।

ফেসবুকে বিচ্ছিন্নভাবে বিরূপ স্ট্যাটাস দেওয়ার অপরাধেও ধরে নিয়ে যাওয়া হয় কতজনকে! তাঁদের একজন মোশতাককে মেরেই ফেলা হয় ভয়াবহ নির্যাতন করে। ফুটপাতে দাঁড়িয়ে সরকারবিরোধী লিফলেট বিতরণকারী একজন সাবেক পেশাজীবীকে চড়-থাপ্পড় দিয়ে বসেন তৃণমূলের এক আওয়ামী লীগ নেতা! সরকারবিরোধিতা যেন হয়ে গিয়েছিল রাষ্ট্রদ্রোহিতা। সেটাকে এভাবে বর্ণনাও করা হতো সাজানো টক শোতে। এই সব ঘটনায় জনমনে, বিশেষত তরুণমনে কী প্রতিক্রিয়া পুঞ্জীভূত হচ্ছিল, সেটা বিবেচনা করে দেখার মতো বোধ দ্রুত হারিয়ে গিয়েছিল হাসিনা সরকারের ভেতর থেকে। এই বোধ থাকলে তো কোটা সংস্কারের মতো ইস্যু ঘিরে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না, যা সরকারের পতন পর্যন্ত ঘটিয়ে ফেলতে পারে। এটা কিন্তু ছিল অবিশ্বাস্য। ছড়িয়ে পড়া আন্দোলনে পরে এসে যারা যোগ দিয়েছিল, তাদের কাছেও ছিল অবিশ্বাস্য।

আওয়ামী লীগের কঠোর অনুগামী ছাড়া কে এসে যোগ দেয়নি আন্দোলনে? সরকার, বিশেষত সরকারপ্রধানের কথা ও কাজে দীর্ঘদিন ধরে বিরক্ত আর অপমানিত নিরীহ মানুষটিও নেমে এসেছিল রাজপথে। ঘরে ঘরে স্কুলপড়ুয়াদেরও আটকে রাখা যাচ্ছিল না, যারা কোটা বিষয়ে আদৌ অবহিত নয়। তারা নেমে এসেছিল বন্ধু কিংবা বড় কোনো ভাই পুলিশের গুলিতে হতাহত হয়েছে শুনে। পীরগঞ্জের ছেলে আবু সাঈদের আত্মাহুতির মর্যাদা দিতে নেমে এসেছিল রাজধানীর ফাস্টফুড খাওয়া ছেলেমেয়েরা। একটা সরকার কতটা কাণ্ডজ্ঞানহীন হলে আন্দোলন দমনে হেলিকপ্টার নামায় আর কুক্ষিগত মিডিয়ায় একশ্রেণির পেশাজীবীকে নামিয়ে দেয় কেবল ধ্বংসযজ্ঞের বর্ণনা দিতে! এ অবস্থায় একটা অনির্বাচিত সরকারকে যারা দীর্ঘদিনেও নামাতে পারেনি, তারা স্বভাবতই বসে থাকেনি। এদের ‘তৃতীয় শক্তি’ বলে অব্যাহত প্রচারও হালে পানি পায়নি তখন। অবশেষে সরকারকে যেতেই হলো অগণিত ছাত্র-জনতার রক্তে হাত রাঙিয়ে। 

পদত্যাগ করে নিরাপদে সরে যেতেও অনেক দেরি করছিলেন শেখ হাসিনা। এসব কাহিনি পড়ে এখন বিস্মিত হতে হয়। তোতাপাখির মতো খালি বলা হতো, ‘এ দেশ শ্রীলঙ্কা হবে না’! দেশের অর্থনীতির অবস্থা যে শ্রীলঙ্কার মতোই করে ফেলা হয়েছে, সে বোধও ছিল না তাঁদের। আর রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছিল শ্রীলঙ্কার চেয়ে খারাপ। ওখানে তো আর যা-ই হোক, ছিল একটা নির্বাচিত সরকার। অপরাধের চেয়ে তাঁরা বেশি করেছিলেন ভুল। তারপরও দুর্দশায় নিপতিত জনতা তাঁদের রেহাই দেয়নি। হাসিনা সরকারের পতনের পর গণভবনে যা যা ঘটেছে, তাতে অনুসৃত হয়েছে শ্রীলঙ্কানদের দৃষ্টান্ত। অনেক ঘটনাই অরুচিকর সন্দেহ নেই; কিন্তু গণ-অভ্যুত্থানের শেষদিকে কে এসব রুখবে! কে রুখবে সরকারের দলীয় ক্যাডারে পরিণত হওয়া পুলিশ বাহিনীর প্রতি নজিরবিহীন গণরোষ? দুই লাখেরও বেশি পুলিশ সদস্যের একটা দল কার্যত পলাতক হয়ে গেল সরকারপ্রধান দেশ থেকে পালানোর সঙ্গে সঙ্গে। জানি না, বিশ্বের কোথাও এমন পরিণতি হয়েছে কি না, কোনো রাষ্ট্রীয় বাহিনীর। এ অবস্থায় আবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ গ্রহণে হয়েছে বিলম্ব। তাতেও নৈরাজ্য ছড়িয়ে পড়েছে দেশে। এতে অনেক নিরীহ মানুষও আক্রান্ত হয়েছে বেদনাদায়কভাবে। 

আন্দোলনে ভূমিকা রাখা কোনো কোনো গোষ্ঠী এটাকে নিজেদের বিজয় ভেবে দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্টকারী কর্মকাণ্ডও চালিয়েছে। এসব বেদনাদায়ক ঘটনায় নিন্দা জানানোও এখন কঠিন মনে হচ্ছে! অথচ এটা সহজেই এড়ানো যেত কোটা-প্রশ্নে সহজ বুদ্ধির পরিচয় দিয়ে কোনো উপরচালাকির আশ্রয় না নিলে। আন্দোলনকারীরা সংস্কার চাইলেও বিরক্ত হয়ে বা রাগ করে কোটা একেবারে বাতিল করে দেওয়া; বহুদিন পর তা নিয়ে আবার নতুন খেলায় মেতে ওঠা—এসব কেউ মেনে নেয়নি। অতঃপর গোটা একটা প্রজন্মের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তাদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা এবং ঘোষণা দিয়ে গুণ্ডা নামিয়ে পিটিয়ে দেওয়ার বুদ্ধিটাই আসলে সূত্রপাত করে সরকার পতনের। পতনের পরও অবশ্য ফিরে আসা যায়। কিন্তু কী বলবেন তাঁরা সেই প্রজন্মকে, যারা বিগত সরকারের আমলে ভোটাধিকার প্রয়োগেরই সুযোগ পায়নি? কী বলে ভোট চাইবেন এমনকি তাদের অভিভাবকদের কাছে? একটা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমন করতে গিয়ে হাসিনা সরকার যে আচরণ করল, সেটা বলতে গেলে বিস্ময়কর। এটা বহুদিন গল্পকাহিনির মতো করে ছড়াবে যাদের বোধবুদ্ধি এখনো হয়নি—তাদের মধ্যেও।

পদত্যাগী প্রধানমন্ত্রীর অনুগামী দল আওয়ামী লীগ আজ মহাবিপর্যয়ের মুখোমুখি। রাজনীতিতে ফিরে আসাটা তাঁদের জন্যও কঠিন করে দিয়ে গেলেন শেখ হাসিনা—যাঁরা বড় কোনো অপরাধে না জড়িয়ে এত দিন দলটা করে আসছিলেন। দলটিকে যাঁরা কেবল ‘আদর্শগত কারণে’ সমর্থন করেন, তাঁরাও এখন কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি। সবকিছুর পরও তাঁদের সংখ্যা কি কম? তাঁদের পক্ষেও এখন জাস্টিফাই করা কঠিন যে, কেন দেশে তিন-তিনটি যেনতেন নির্বাচন করা হয়েছিল? গণতন্ত্রের বিনিময়ে উন্নয়ন সামনে এনে অপশাসনকে আড়ালের চেষ্টাও আর হালে পানি পাবে না। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের নেপথ্যে দুর্নীতির বিপুল আয়োজনও এখন সবার সামনে আসবে। এ নিয়ে জোরালোভাবে আলোচনাও কঠিন ছিল হাসিনা সরকারের আমলে। সত্য উচ্চারণের দায়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদেরাও প্রকাশ্যে আক্রান্ত হতেন খোদ শেখ হাসিনা দ্বারা। সে জন্য তিনি অবশ্য পেতেন দল বেঁধে এই সব অনুষ্ঠানে সমবেত চাটুকারদের করতালি।

১৫ আগস্টের ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের পর শেখ হাসিনা যেদিন ফিরে এসেছিলেন বিপর্যস্ত দলটির হাল ধরতে, সেই দিনটির কথা নিশ্চয় অনেকের মনে আছে। বৃষ্টির মধ্যে বহু লোক হাজির হয়েছিল কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে। কী অসাধারণ ছিল তাঁর ফিরে আসা! ১৯৯৬ সালে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে জয়ী হয়ে দীর্ঘ ২১ বছর পর তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় ফিরে আসাটাও কী চমৎকার ছিল! এ দেশের মানুষ আরও একবার তাঁকে ক্ষমতায় এনেছিল বিপুলভাবে জিতিয়ে। তিনি কিংবা তাঁর পরিবার অথবা তাঁর দেশি-বিদেশি উপদেষ্টারা এই মানুষদের ‘অকৃতজ্ঞ’ বলবেন কোন মুখে? অকৃতজ্ঞ তো বরং তিনি; কেননা এ দেশের মানুষের ন্যূনতম গণতান্ত্রিক অধিকারটুকু কেড়ে নিতেও তাঁর বুক কাঁপেনি। মেয়াদের পর মেয়াদ এ পথে চলার পরিণতি নিয়েও ছিল না কোনো উপলব্ধি। ১৭-১৮ কোটি মানুষের একটা দেশ তা কত দিন মেনে নেবে, এটা একবারও ভাবার ফুরসত হলো না!

লেখক: সাংবাদিক, বিশ্লেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হঠাৎ পদত্যাগ করলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার

‘মোন্থা’ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে, আঘাত হানবে কোথায়

দুশ্চিন্তা, হতাশা দূর হবে হাদিসে বর্ণিত এই চার দোয়ায়

গায়ে থুতু পড়া নিয়ে ড্যাফোডিল ও সিটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের রাতভর সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ

নির্বাচনে যেতে চায় জাপার একাংশ, কৌশল তুলে ধরবে জাতির সামনে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হঠাৎ পদত্যাগ করলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার

‘মোন্থা’ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে, আঘাত হানবে কোথায়

দুশ্চিন্তা, হতাশা দূর হবে হাদিসে বর্ণিত এই চার দোয়ায়

গায়ে থুতু পড়া নিয়ে ড্যাফোডিল ও সিটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের রাতভর সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ

নির্বাচনে যেতে চায় জাপার একাংশ, কৌশল তুলে ধরবে জাতির সামনে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হঠাৎ পদত্যাগ করলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার

‘মোন্থা’ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে, আঘাত হানবে কোথায়

দুশ্চিন্তা, হতাশা দূর হবে হাদিসে বর্ণিত এই চার দোয়ায়

গায়ে থুতু পড়া নিয়ে ড্যাফোডিল ও সিটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের রাতভর সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ

নির্বাচনে যেতে চায় জাপার একাংশ, কৌশল তুলে ধরবে জাতির সামনে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হঠাৎ পদত্যাগ করলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার

‘মোন্থা’ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে, আঘাত হানবে কোথায়

দুশ্চিন্তা, হতাশা দূর হবে হাদিসে বর্ণিত এই চার দোয়ায়

গায়ে থুতু পড়া নিয়ে ড্যাফোডিল ও সিটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের রাতভর সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ

নির্বাচনে যেতে চায় জাপার একাংশ, কৌশল তুলে ধরবে জাতির সামনে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হঠাৎ পদত্যাগ করলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার

‘মোন্থা’ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে, আঘাত হানবে কোথায়

দুশ্চিন্তা, হতাশা দূর হবে হাদিসে বর্ণিত এই চার দোয়ায়

গায়ে থুতু পড়া নিয়ে ড্যাফোডিল ও সিটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের রাতভর সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ

নির্বাচনে যেতে চায় জাপার একাংশ, কৌশল তুলে ধরবে জাতির সামনে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত