মোনায়েম সরকার
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীকে ‘গাফ্ফার ভাই’ বলেই ডাকতাম। বয়সে অনেক ছোট যারা, তারাও তাঁকে ‘গাফ্ফার ভাই’ বলে সম্বোধন করত। তিনিও এটা আনন্দের সঙ্গে নিতেন। উদারমনা মানুষ ছিলেন তিনি। আমি তাঁর চেয়ে প্রায় ১০ বছরের ছোট। তা সত্ত্বেও তাঁর সঙ্গে গড়ে উঠেছিল বন্ধুত্ব। তিনি আমাকে ‘আপনি’ বলেই সম্বোধন করতেন; কিন্তু তার আড়ালে অনুভব করতাম আমার প্রতি তাঁর গভীর স্নেহ। রাজনৈতিক সম্পর্কের বাইরেও গাফ্ফার ভাইয়ের সঙ্গে একটি আস্থার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল আমার। এটা গড়িয়েছিল পারিবারিক সম্পর্কের মধ্যে। জীবনের শেষ দিকে যখন ঢাকায় আসতেন, আমাদের শান্তিনগরের চামেলীবাগের বাসায় না এসে থাকতে পারতেন না। একেবারে শেষ দিকে গাফ্ফার ভাই ও তাঁর কন্যারা আমার অফিস কাম বাসাতেই এসে থাকতেন।
তিনি কি রাজধানীর কোনো অভিজাত হোটেলে থাকতে পারতেন না? কিংবা অন্য কোথাও চাইলে কি থাকতে পারতেন না? কিন্তু না, অনিবার্যভাবেই যেন তিনি চামেলীবাগে এসে উঠতেন। আর সে কারণে দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও এখানে চলে আসতেন গাফ্ফার ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে। গাফ্ফার ভাই একটা সময়ে প্রায় প্রতিদিনই লিখতেন কোনো না কোনো সংবাদপত্রে। সাধারণত বাংলায় লিখলেও মাঝে মাঝে ইংরেজিতেও লিখতেন। এর জন্য অনেক সম্মানী পেতেন। জীবনের একটা পর্যায়ে এসে লেখালেখিই হয়ে ওঠে তাঁর জীবিকা। এসব লেখার কিছু চেক ও নগদ টাকা আমার সহকারীর কাছে এসে পৌঁছাত। সম্পর্ক এত গভীর হয়ে উঠেছিল যে, এসব ব্যাপারেও তিনি আমার ওপর নির্ভর করতেন। গাফ্ফার ভাইয়ের ৮০ বছর পূর্তিতে বাংলা একাডেমিতে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তাতে স্বভাবতই আমার কিছুটা ভূমিকা ছিল। আমরা তখন সিদ্ধান্ত নিই, তাঁকে ২১ অথবা ৫২ লাখ টাকা জন্মদিনের উপহার হিসেবে প্রদান করা হবে। এ ব্যাপারে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন জেনারেল সেক্রেটারি নূরুল ফজল বুলবুল বিশেষ সহায়তা জুগিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত আমরা তাঁকে প্রায় ৫২ লাখ টাকাই সংগ্রহ করে দিয়েছিলাম বলে মনে পড়ছে। ঘটনাটি উল্লেখ করলাম এ জন্য যে, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে গাফ্ফার চৌধুরীর নাম। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’র মতো গান যিনি ওই বয়সে লিখে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন, তাঁর সেই অবদানকে অবশ্য কোনো আর্থিক মানদণ্ডে বিচার করা যাবে না। সেটা ছিল তাঁর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসারই প্রকাশ।
এই সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের সময়, কলকাতায়। আমরা প্রকাশ করতাম ন্যাপের পার্টি পত্রিকা নতুন বাংলা আর গাফ্ফার ভাই কাজ করতেন জয় বাংলা পত্রিকায়। কাছাকাছি অফিস। আমাদের মাঝে মাঝেই দেখা হতো, আড্ডা হতো। তখন শুধু আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী নয়, সম্পর্ক তৈরি হয় সাংবাদিক সন্তোষ গুপ্ত, লেখক শওকত ওসমান, শিল্পী কামরুল হাসানসহ অনেকের সঙ্গে। তাঁরা সবাই আমার চেয়ে বয়সে বড়। কিন্তু ইতিহাসের একটি বিশেষ সময়ে আমরা হয়ে উঠি পরস্পরের বন্ধু। সবার লক্ষ্য এক—স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জন এবং সেখানে আমাদের স্বপ্নের বাস্তবায়ন। গাফ্ফার ভাই তো তখন থেকেই সক্রিয় কলমযোদ্ধা। তাঁর লেখার হাত দারুণ।
মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে তৈরি হওয়া সেই সম্পর্ক পরে আরও নিবিড় হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক ঘটনার পর। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর আমি স্বেচ্ছানির্বাসনে যাই এবং ভারতে অবস্থান করি প্রায় চার বছর। দেশে-বিদেশে বঙ্গবন্ধুর স্বঘোষিত খুনিদের বিরুদ্ধে প্রচারণা জোরদার করতে আমি কিছু ভূমিকা রাখি। গাফ্ফার ভাই আগে থেকেই লন্ডনে অবস্থান করছিলেন মূলত স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য। ১৫ আগস্টের ঘটনার পর তিনি স্বভাবতই আমাদের কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হন এবং খুনিদের বিরুদ্ধে তুলে নেন তাঁর জোরালো কলম। সেই কঠিন সময়ে, যখন স্বদেশ থেকে একপ্রকার বিতাড়িত, তখন আমরা প্রকাশ করছি বাংলার ডাক, বজ্রকণ্ঠ, সোনার বাংলা (দ্বিভাষিক), সানরাইজ প্রভৃতি পত্রিকা এবং তাতে ক্লান্তিহীনভাবে লিখে চলেছেন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। সেসব লেখা সংবলিত পত্রিকা গোপনীয়তার সঙ্গে পাঠানো হতো দেশে, এমনকি জেলখানায় তা পৌঁছানো হতো। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে গভীরভাবে শোকাহত এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষ সেই সব পত্রিকা পড়ে নতুন আশায় বুক বাঁধত। আজ গাফ্ফার ভাইয়ের চলে যাওয়ার প্রথম বার্ষিকীতে ওই সব দিনের কথা বেশি করে মনে পড়ছে।
মনে পড়ছে প্রায় প্রতিদিন লন্ডন থেকে দিনের শুরুতেই, কখনো কখনো ভোরবেলায় তাঁর ফোন পাওয়ার কথা। দেশের পরিস্থিতি জানতে, বুঝতে তিনি আরও অনেকের সঙ্গেই হয়তো কথা বলতেন। আমার সঙ্গেও বলতেন। একটা সময়ে তিনি এত লিখতেন যে, মাঝে মাঝে লেখার উপযুক্ত বিষয় খুঁজে পেতেন না। তখন অনেক ক্ষেত্রে আমাকে ফোন দিতেন। আমি হয়তো কোনো প্রসঙ্গ তুলে বলতাম, আপনি এ বিষয়ে লিখতে পারেন অথবা মানুষ খুশি হবে এ বিষয়ে আপনি কিছু লিখলে। গোটা জাতির বা পিছিয়ে পড়া কোনো জনগোষ্ঠীর উপকার হবে এমন বিষয়ে গাফ্ফার ভাই আনন্দের সঙ্গে লিখতেন। আমরাও হয়তো কোনো বিষয়ে তদবির করতাম। সেটা যুক্তিপূর্ণ হলে তিনি অবশ্যই কলম ধরতেন। গাফ্ফার ভাইয়ের গদ্য এত সুন্দর ছিল, যে কোনো বিষয়ে তাঁর লেখা হয়ে উঠত আকর্ষণীয়।
অনেকে মনে করেন, কবিতা, গল্প-উপন্যাসের মাধ্যমে তিনি বেশি কাজ করলে সেগুলোও শক্তিশালী সাহিত্যকর্ম হয়ে উঠত। এ কথাও ঠিক, দেশের অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তাঁকে রাজনীতি নিয়ে লেখাতেই বেশি মাতিয়ে তুলেছিল। রাজনৈতিক কর্তব্যবোধ তাড়িত করেছে তাঁকে সারা জীবন। তাঁর লেখায় তথাকথিত নিরপেক্ষতা ছিল না; ছিল স্পষ্ট পক্ষপাত। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ থেকে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি বিচ্যুত হননি একদিনের জন্যও। সে জন্য প্রতিপক্ষের দিক থেকে অনেক গালাগাল ও শত্রুতা তাঁকে সহ্য করতে হয়েছে। লন্ডনে অবস্থান করেও তিনি মাঝে মাঝে ভুগেছেন নিরাপত্তাহীনতায়। কিন্তু সত্য প্রকাশে কখনো কুণ্ঠিত হননি। যখন যে বিষয়ে যা উচিত মনে হয়েছে, তিনি তা লিখে প্রকাশ করেছেন। এই পত্রিকা না ছাপলে তিনি ঠিকই অন্য পত্রিকায় তাঁর মনের কথা লিখে পাঠকের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন। সব সময় যে তাঁর অবস্থান সবার পছন্দ হয়েছে, তা নয়। আমারও মাঝে মাঝে খারাপ লেগেছে তাঁর কোনো কোনো অবস্থান। সেটা নিয়ে আমরা ফোনালাপও করেছি। পরবর্তী লেখায় তার প্রতিফলনও দেখতে পেয়েছি। তখন ভেবেছি, গণতন্ত্রমনা মানুষের এমনটি হওয়াই স্বাভাবিক। মানুষ তার মতামত প্রয়োজনে সংশোধন করবে, এটাই কাম্য। গাফ্ফার ভাইয়ের অবস্থান অনেক সময় আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়েও সমালোচিত হয়েছে। তাতে বিচলিত না হয়ে নিজের মতে তিনি দৃঢ় থেকেছেন। এ ক্ষেত্রে গভীর আদর্শবোধ তাঁকে জুগিয়ে চলেছে শক্তি।
বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে গ্রেনেড হামলায় নিহত সাবেক অর্থমন্ত্রী শামস কিবরিয়ার সঙ্গেও আমার গড়ে উঠেছিল বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। আমরা প্রতিষ্ঠা করেছিলাম বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ (বিএফডিআর)। আমরা প্রকাশ করি সাপ্তাহিক মৃদুভাষণ বলে একটি পত্রিকা। তাতে গাফ্ফার ভাই আনন্দের সঙ্গে লিখতেন। এতে সম্পাদক কিবরিয়া সাহেব এবং আমিও নিয়মিতভাবে লিখতাম। ওই সময়ে আমাদের তিনজনের আলাদা একটি সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিবরিয়া সাহেব খুব পছন্দ করতেন গাফ্ফার ভাইয়ের লেখা। কোনো সংখ্যায় তাঁর লেখা যাবে না, এটা মানতে পারতেন না। লেখার সম্মানী বাবদ যা প্রদান করা হতো, সেটা সময়মতো পৌঁছে দেওয়ার ব্যাপারে তিনি ছিলেন সিরিয়াস। কিবরিয়া ভাইয়ের মতো দেশদরদি মানুষ, গুণী আমলা ও রাজনীতিক এবং বিশিষ্ট ভদ্রলোক গ্রেনেড হামলায় মারা গেলে গাফ্ফার ভাই মুষড়ে পড়েছিলেন। ব্যক্তিগত আলাপে তিনি ওই ঘটনায় গভীর বেদনার কথা বলতেন এবং ঘৃণা প্রকাশ করতেন খুনিদের বিষয়ে। আজ তাঁরা দুজনই প্রয়াত।
গাফ্ফার ভাই অকালে প্রয়াত হয়েছেন, তা বলা যাবে না। বরং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি এত সক্রিয় ছিলেন যে, তাঁকে প্রবীণ মনে হতো না। মনে হতো, তিনি আরও কমপক্ষে ১০ বছর বাঁচবেন। মারা যাওয়ার আগের দিনও, ১৮ মে বিকেলে তাঁর সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা কথা হয়। তিনিই ফোন করেছিলেন। নানান কথার মধ্যে বললেন, ‘বহুবার আপনি আমাকে আত্মজীবনী লিখতে অনুরোধ করেছেন। এবার ভাবছি হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ফিরলে আর কলাম লিখব না, শুধু আত্মজীবনী লিখব।’ সেই সুযোগ আর হয়নি। ২০২২ সালের ১৯ মে তিনি আমাদের সবাইকে কাঁদিয়ে চলে যান অনন্তলোকে।
বঙ্গবন্ধুর সহচর, বরেণ্য সাংবাদিক, কলাম লেখক, সাহিত্যিক ও গীতিকার আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ছিলেন আমাদের বিশিষ্ট অভিভাবক। তাঁর সঙ্গে আমার এত স্মৃতি যে, এমন দু-চারটি লেখায় তা তুলে ধরা যাবে না। আর জাতির জীবনে আলো জ্বালাতেই তিনি ব্যয় করেছেন পুরোটা জীবন। এমন মানুষ সহজে মেলে না। পরিণত বয়সে হারালেও গাফ্ফার ভাইয়ের বিয়োগব্যথা অপরিমেয়।
মোনায়েম সরকার: রাজনীতিক, লেখক; মহাপরিচালক, বিএফডিআর
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীকে ‘গাফ্ফার ভাই’ বলেই ডাকতাম। বয়সে অনেক ছোট যারা, তারাও তাঁকে ‘গাফ্ফার ভাই’ বলে সম্বোধন করত। তিনিও এটা আনন্দের সঙ্গে নিতেন। উদারমনা মানুষ ছিলেন তিনি। আমি তাঁর চেয়ে প্রায় ১০ বছরের ছোট। তা সত্ত্বেও তাঁর সঙ্গে গড়ে উঠেছিল বন্ধুত্ব। তিনি আমাকে ‘আপনি’ বলেই সম্বোধন করতেন; কিন্তু তার আড়ালে অনুভব করতাম আমার প্রতি তাঁর গভীর স্নেহ। রাজনৈতিক সম্পর্কের বাইরেও গাফ্ফার ভাইয়ের সঙ্গে একটি আস্থার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল আমার। এটা গড়িয়েছিল পারিবারিক সম্পর্কের মধ্যে। জীবনের শেষ দিকে যখন ঢাকায় আসতেন, আমাদের শান্তিনগরের চামেলীবাগের বাসায় না এসে থাকতে পারতেন না। একেবারে শেষ দিকে গাফ্ফার ভাই ও তাঁর কন্যারা আমার অফিস কাম বাসাতেই এসে থাকতেন।
তিনি কি রাজধানীর কোনো অভিজাত হোটেলে থাকতে পারতেন না? কিংবা অন্য কোথাও চাইলে কি থাকতে পারতেন না? কিন্তু না, অনিবার্যভাবেই যেন তিনি চামেলীবাগে এসে উঠতেন। আর সে কারণে দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও এখানে চলে আসতেন গাফ্ফার ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে। গাফ্ফার ভাই একটা সময়ে প্রায় প্রতিদিনই লিখতেন কোনো না কোনো সংবাদপত্রে। সাধারণত বাংলায় লিখলেও মাঝে মাঝে ইংরেজিতেও লিখতেন। এর জন্য অনেক সম্মানী পেতেন। জীবনের একটা পর্যায়ে এসে লেখালেখিই হয়ে ওঠে তাঁর জীবিকা। এসব লেখার কিছু চেক ও নগদ টাকা আমার সহকারীর কাছে এসে পৌঁছাত। সম্পর্ক এত গভীর হয়ে উঠেছিল যে, এসব ব্যাপারেও তিনি আমার ওপর নির্ভর করতেন। গাফ্ফার ভাইয়ের ৮০ বছর পূর্তিতে বাংলা একাডেমিতে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তাতে স্বভাবতই আমার কিছুটা ভূমিকা ছিল। আমরা তখন সিদ্ধান্ত নিই, তাঁকে ২১ অথবা ৫২ লাখ টাকা জন্মদিনের উপহার হিসেবে প্রদান করা হবে। এ ব্যাপারে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন জেনারেল সেক্রেটারি নূরুল ফজল বুলবুল বিশেষ সহায়তা জুগিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত আমরা তাঁকে প্রায় ৫২ লাখ টাকাই সংগ্রহ করে দিয়েছিলাম বলে মনে পড়ছে। ঘটনাটি উল্লেখ করলাম এ জন্য যে, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে গাফ্ফার চৌধুরীর নাম। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’র মতো গান যিনি ওই বয়সে লিখে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন, তাঁর সেই অবদানকে অবশ্য কোনো আর্থিক মানদণ্ডে বিচার করা যাবে না। সেটা ছিল তাঁর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসারই প্রকাশ।
এই সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের সময়, কলকাতায়। আমরা প্রকাশ করতাম ন্যাপের পার্টি পত্রিকা নতুন বাংলা আর গাফ্ফার ভাই কাজ করতেন জয় বাংলা পত্রিকায়। কাছাকাছি অফিস। আমাদের মাঝে মাঝেই দেখা হতো, আড্ডা হতো। তখন শুধু আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী নয়, সম্পর্ক তৈরি হয় সাংবাদিক সন্তোষ গুপ্ত, লেখক শওকত ওসমান, শিল্পী কামরুল হাসানসহ অনেকের সঙ্গে। তাঁরা সবাই আমার চেয়ে বয়সে বড়। কিন্তু ইতিহাসের একটি বিশেষ সময়ে আমরা হয়ে উঠি পরস্পরের বন্ধু। সবার লক্ষ্য এক—স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জন এবং সেখানে আমাদের স্বপ্নের বাস্তবায়ন। গাফ্ফার ভাই তো তখন থেকেই সক্রিয় কলমযোদ্ধা। তাঁর লেখার হাত দারুণ।
মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে তৈরি হওয়া সেই সম্পর্ক পরে আরও নিবিড় হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক ঘটনার পর। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর আমি স্বেচ্ছানির্বাসনে যাই এবং ভারতে অবস্থান করি প্রায় চার বছর। দেশে-বিদেশে বঙ্গবন্ধুর স্বঘোষিত খুনিদের বিরুদ্ধে প্রচারণা জোরদার করতে আমি কিছু ভূমিকা রাখি। গাফ্ফার ভাই আগে থেকেই লন্ডনে অবস্থান করছিলেন মূলত স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য। ১৫ আগস্টের ঘটনার পর তিনি স্বভাবতই আমাদের কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হন এবং খুনিদের বিরুদ্ধে তুলে নেন তাঁর জোরালো কলম। সেই কঠিন সময়ে, যখন স্বদেশ থেকে একপ্রকার বিতাড়িত, তখন আমরা প্রকাশ করছি বাংলার ডাক, বজ্রকণ্ঠ, সোনার বাংলা (দ্বিভাষিক), সানরাইজ প্রভৃতি পত্রিকা এবং তাতে ক্লান্তিহীনভাবে লিখে চলেছেন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। সেসব লেখা সংবলিত পত্রিকা গোপনীয়তার সঙ্গে পাঠানো হতো দেশে, এমনকি জেলখানায় তা পৌঁছানো হতো। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে গভীরভাবে শোকাহত এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষ সেই সব পত্রিকা পড়ে নতুন আশায় বুক বাঁধত। আজ গাফ্ফার ভাইয়ের চলে যাওয়ার প্রথম বার্ষিকীতে ওই সব দিনের কথা বেশি করে মনে পড়ছে।
মনে পড়ছে প্রায় প্রতিদিন লন্ডন থেকে দিনের শুরুতেই, কখনো কখনো ভোরবেলায় তাঁর ফোন পাওয়ার কথা। দেশের পরিস্থিতি জানতে, বুঝতে তিনি আরও অনেকের সঙ্গেই হয়তো কথা বলতেন। আমার সঙ্গেও বলতেন। একটা সময়ে তিনি এত লিখতেন যে, মাঝে মাঝে লেখার উপযুক্ত বিষয় খুঁজে পেতেন না। তখন অনেক ক্ষেত্রে আমাকে ফোন দিতেন। আমি হয়তো কোনো প্রসঙ্গ তুলে বলতাম, আপনি এ বিষয়ে লিখতে পারেন অথবা মানুষ খুশি হবে এ বিষয়ে আপনি কিছু লিখলে। গোটা জাতির বা পিছিয়ে পড়া কোনো জনগোষ্ঠীর উপকার হবে এমন বিষয়ে গাফ্ফার ভাই আনন্দের সঙ্গে লিখতেন। আমরাও হয়তো কোনো বিষয়ে তদবির করতাম। সেটা যুক্তিপূর্ণ হলে তিনি অবশ্যই কলম ধরতেন। গাফ্ফার ভাইয়ের গদ্য এত সুন্দর ছিল, যে কোনো বিষয়ে তাঁর লেখা হয়ে উঠত আকর্ষণীয়।
অনেকে মনে করেন, কবিতা, গল্প-উপন্যাসের মাধ্যমে তিনি বেশি কাজ করলে সেগুলোও শক্তিশালী সাহিত্যকর্ম হয়ে উঠত। এ কথাও ঠিক, দেশের অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তাঁকে রাজনীতি নিয়ে লেখাতেই বেশি মাতিয়ে তুলেছিল। রাজনৈতিক কর্তব্যবোধ তাড়িত করেছে তাঁকে সারা জীবন। তাঁর লেখায় তথাকথিত নিরপেক্ষতা ছিল না; ছিল স্পষ্ট পক্ষপাত। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ থেকে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি বিচ্যুত হননি একদিনের জন্যও। সে জন্য প্রতিপক্ষের দিক থেকে অনেক গালাগাল ও শত্রুতা তাঁকে সহ্য করতে হয়েছে। লন্ডনে অবস্থান করেও তিনি মাঝে মাঝে ভুগেছেন নিরাপত্তাহীনতায়। কিন্তু সত্য প্রকাশে কখনো কুণ্ঠিত হননি। যখন যে বিষয়ে যা উচিত মনে হয়েছে, তিনি তা লিখে প্রকাশ করেছেন। এই পত্রিকা না ছাপলে তিনি ঠিকই অন্য পত্রিকায় তাঁর মনের কথা লিখে পাঠকের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন। সব সময় যে তাঁর অবস্থান সবার পছন্দ হয়েছে, তা নয়। আমারও মাঝে মাঝে খারাপ লেগেছে তাঁর কোনো কোনো অবস্থান। সেটা নিয়ে আমরা ফোনালাপও করেছি। পরবর্তী লেখায় তার প্রতিফলনও দেখতে পেয়েছি। তখন ভেবেছি, গণতন্ত্রমনা মানুষের এমনটি হওয়াই স্বাভাবিক। মানুষ তার মতামত প্রয়োজনে সংশোধন করবে, এটাই কাম্য। গাফ্ফার ভাইয়ের অবস্থান অনেক সময় আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়েও সমালোচিত হয়েছে। তাতে বিচলিত না হয়ে নিজের মতে তিনি দৃঢ় থেকেছেন। এ ক্ষেত্রে গভীর আদর্শবোধ তাঁকে জুগিয়ে চলেছে শক্তি।
বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে গ্রেনেড হামলায় নিহত সাবেক অর্থমন্ত্রী শামস কিবরিয়ার সঙ্গেও আমার গড়ে উঠেছিল বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। আমরা প্রতিষ্ঠা করেছিলাম বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ (বিএফডিআর)। আমরা প্রকাশ করি সাপ্তাহিক মৃদুভাষণ বলে একটি পত্রিকা। তাতে গাফ্ফার ভাই আনন্দের সঙ্গে লিখতেন। এতে সম্পাদক কিবরিয়া সাহেব এবং আমিও নিয়মিতভাবে লিখতাম। ওই সময়ে আমাদের তিনজনের আলাদা একটি সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিবরিয়া সাহেব খুব পছন্দ করতেন গাফ্ফার ভাইয়ের লেখা। কোনো সংখ্যায় তাঁর লেখা যাবে না, এটা মানতে পারতেন না। লেখার সম্মানী বাবদ যা প্রদান করা হতো, সেটা সময়মতো পৌঁছে দেওয়ার ব্যাপারে তিনি ছিলেন সিরিয়াস। কিবরিয়া ভাইয়ের মতো দেশদরদি মানুষ, গুণী আমলা ও রাজনীতিক এবং বিশিষ্ট ভদ্রলোক গ্রেনেড হামলায় মারা গেলে গাফ্ফার ভাই মুষড়ে পড়েছিলেন। ব্যক্তিগত আলাপে তিনি ওই ঘটনায় গভীর বেদনার কথা বলতেন এবং ঘৃণা প্রকাশ করতেন খুনিদের বিষয়ে। আজ তাঁরা দুজনই প্রয়াত।
গাফ্ফার ভাই অকালে প্রয়াত হয়েছেন, তা বলা যাবে না। বরং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি এত সক্রিয় ছিলেন যে, তাঁকে প্রবীণ মনে হতো না। মনে হতো, তিনি আরও কমপক্ষে ১০ বছর বাঁচবেন। মারা যাওয়ার আগের দিনও, ১৮ মে বিকেলে তাঁর সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা কথা হয়। তিনিই ফোন করেছিলেন। নানান কথার মধ্যে বললেন, ‘বহুবার আপনি আমাকে আত্মজীবনী লিখতে অনুরোধ করেছেন। এবার ভাবছি হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ফিরলে আর কলাম লিখব না, শুধু আত্মজীবনী লিখব।’ সেই সুযোগ আর হয়নি। ২০২২ সালের ১৯ মে তিনি আমাদের সবাইকে কাঁদিয়ে চলে যান অনন্তলোকে।
বঙ্গবন্ধুর সহচর, বরেণ্য সাংবাদিক, কলাম লেখক, সাহিত্যিক ও গীতিকার আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ছিলেন আমাদের বিশিষ্ট অভিভাবক। তাঁর সঙ্গে আমার এত স্মৃতি যে, এমন দু-চারটি লেখায় তা তুলে ধরা যাবে না। আর জাতির জীবনে আলো জ্বালাতেই তিনি ব্যয় করেছেন পুরোটা জীবন। এমন মানুষ সহজে মেলে না। পরিণত বয়সে হারালেও গাফ্ফার ভাইয়ের বিয়োগব্যথা অপরিমেয়।
মোনায়েম সরকার: রাজনীতিক, লেখক; মহাপরিচালক, বিএফডিআর
মোনায়েম সরকার
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীকে ‘গাফ্ফার ভাই’ বলেই ডাকতাম। বয়সে অনেক ছোট যারা, তারাও তাঁকে ‘গাফ্ফার ভাই’ বলে সম্বোধন করত। তিনিও এটা আনন্দের সঙ্গে নিতেন। উদারমনা মানুষ ছিলেন তিনি। আমি তাঁর চেয়ে প্রায় ১০ বছরের ছোট। তা সত্ত্বেও তাঁর সঙ্গে গড়ে উঠেছিল বন্ধুত্ব। তিনি আমাকে ‘আপনি’ বলেই সম্বোধন করতেন; কিন্তু তার আড়ালে অনুভব করতাম আমার প্রতি তাঁর গভীর স্নেহ। রাজনৈতিক সম্পর্কের বাইরেও গাফ্ফার ভাইয়ের সঙ্গে একটি আস্থার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল আমার। এটা গড়িয়েছিল পারিবারিক সম্পর্কের মধ্যে। জীবনের শেষ দিকে যখন ঢাকায় আসতেন, আমাদের শান্তিনগরের চামেলীবাগের বাসায় না এসে থাকতে পারতেন না। একেবারে শেষ দিকে গাফ্ফার ভাই ও তাঁর কন্যারা আমার অফিস কাম বাসাতেই এসে থাকতেন।
তিনি কি রাজধানীর কোনো অভিজাত হোটেলে থাকতে পারতেন না? কিংবা অন্য কোথাও চাইলে কি থাকতে পারতেন না? কিন্তু না, অনিবার্যভাবেই যেন তিনি চামেলীবাগে এসে উঠতেন। আর সে কারণে দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও এখানে চলে আসতেন গাফ্ফার ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে। গাফ্ফার ভাই একটা সময়ে প্রায় প্রতিদিনই লিখতেন কোনো না কোনো সংবাদপত্রে। সাধারণত বাংলায় লিখলেও মাঝে মাঝে ইংরেজিতেও লিখতেন। এর জন্য অনেক সম্মানী পেতেন। জীবনের একটা পর্যায়ে এসে লেখালেখিই হয়ে ওঠে তাঁর জীবিকা। এসব লেখার কিছু চেক ও নগদ টাকা আমার সহকারীর কাছে এসে পৌঁছাত। সম্পর্ক এত গভীর হয়ে উঠেছিল যে, এসব ব্যাপারেও তিনি আমার ওপর নির্ভর করতেন। গাফ্ফার ভাইয়ের ৮০ বছর পূর্তিতে বাংলা একাডেমিতে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তাতে স্বভাবতই আমার কিছুটা ভূমিকা ছিল। আমরা তখন সিদ্ধান্ত নিই, তাঁকে ২১ অথবা ৫২ লাখ টাকা জন্মদিনের উপহার হিসেবে প্রদান করা হবে। এ ব্যাপারে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন জেনারেল সেক্রেটারি নূরুল ফজল বুলবুল বিশেষ সহায়তা জুগিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত আমরা তাঁকে প্রায় ৫২ লাখ টাকাই সংগ্রহ করে দিয়েছিলাম বলে মনে পড়ছে। ঘটনাটি উল্লেখ করলাম এ জন্য যে, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে গাফ্ফার চৌধুরীর নাম। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’র মতো গান যিনি ওই বয়সে লিখে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন, তাঁর সেই অবদানকে অবশ্য কোনো আর্থিক মানদণ্ডে বিচার করা যাবে না। সেটা ছিল তাঁর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসারই প্রকাশ।
এই সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের সময়, কলকাতায়। আমরা প্রকাশ করতাম ন্যাপের পার্টি পত্রিকা নতুন বাংলা আর গাফ্ফার ভাই কাজ করতেন জয় বাংলা পত্রিকায়। কাছাকাছি অফিস। আমাদের মাঝে মাঝেই দেখা হতো, আড্ডা হতো। তখন শুধু আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী নয়, সম্পর্ক তৈরি হয় সাংবাদিক সন্তোষ গুপ্ত, লেখক শওকত ওসমান, শিল্পী কামরুল হাসানসহ অনেকের সঙ্গে। তাঁরা সবাই আমার চেয়ে বয়সে বড়। কিন্তু ইতিহাসের একটি বিশেষ সময়ে আমরা হয়ে উঠি পরস্পরের বন্ধু। সবার লক্ষ্য এক—স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জন এবং সেখানে আমাদের স্বপ্নের বাস্তবায়ন। গাফ্ফার ভাই তো তখন থেকেই সক্রিয় কলমযোদ্ধা। তাঁর লেখার হাত দারুণ।
মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে তৈরি হওয়া সেই সম্পর্ক পরে আরও নিবিড় হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক ঘটনার পর। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর আমি স্বেচ্ছানির্বাসনে যাই এবং ভারতে অবস্থান করি প্রায় চার বছর। দেশে-বিদেশে বঙ্গবন্ধুর স্বঘোষিত খুনিদের বিরুদ্ধে প্রচারণা জোরদার করতে আমি কিছু ভূমিকা রাখি। গাফ্ফার ভাই আগে থেকেই লন্ডনে অবস্থান করছিলেন মূলত স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য। ১৫ আগস্টের ঘটনার পর তিনি স্বভাবতই আমাদের কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হন এবং খুনিদের বিরুদ্ধে তুলে নেন তাঁর জোরালো কলম। সেই কঠিন সময়ে, যখন স্বদেশ থেকে একপ্রকার বিতাড়িত, তখন আমরা প্রকাশ করছি বাংলার ডাক, বজ্রকণ্ঠ, সোনার বাংলা (দ্বিভাষিক), সানরাইজ প্রভৃতি পত্রিকা এবং তাতে ক্লান্তিহীনভাবে লিখে চলেছেন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। সেসব লেখা সংবলিত পত্রিকা গোপনীয়তার সঙ্গে পাঠানো হতো দেশে, এমনকি জেলখানায় তা পৌঁছানো হতো। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে গভীরভাবে শোকাহত এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষ সেই সব পত্রিকা পড়ে নতুন আশায় বুক বাঁধত। আজ গাফ্ফার ভাইয়ের চলে যাওয়ার প্রথম বার্ষিকীতে ওই সব দিনের কথা বেশি করে মনে পড়ছে।
মনে পড়ছে প্রায় প্রতিদিন লন্ডন থেকে দিনের শুরুতেই, কখনো কখনো ভোরবেলায় তাঁর ফোন পাওয়ার কথা। দেশের পরিস্থিতি জানতে, বুঝতে তিনি আরও অনেকের সঙ্গেই হয়তো কথা বলতেন। আমার সঙ্গেও বলতেন। একটা সময়ে তিনি এত লিখতেন যে, মাঝে মাঝে লেখার উপযুক্ত বিষয় খুঁজে পেতেন না। তখন অনেক ক্ষেত্রে আমাকে ফোন দিতেন। আমি হয়তো কোনো প্রসঙ্গ তুলে বলতাম, আপনি এ বিষয়ে লিখতে পারেন অথবা মানুষ খুশি হবে এ বিষয়ে আপনি কিছু লিখলে। গোটা জাতির বা পিছিয়ে পড়া কোনো জনগোষ্ঠীর উপকার হবে এমন বিষয়ে গাফ্ফার ভাই আনন্দের সঙ্গে লিখতেন। আমরাও হয়তো কোনো বিষয়ে তদবির করতাম। সেটা যুক্তিপূর্ণ হলে তিনি অবশ্যই কলম ধরতেন। গাফ্ফার ভাইয়ের গদ্য এত সুন্দর ছিল, যে কোনো বিষয়ে তাঁর লেখা হয়ে উঠত আকর্ষণীয়।
অনেকে মনে করেন, কবিতা, গল্প-উপন্যাসের মাধ্যমে তিনি বেশি কাজ করলে সেগুলোও শক্তিশালী সাহিত্যকর্ম হয়ে উঠত। এ কথাও ঠিক, দেশের অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তাঁকে রাজনীতি নিয়ে লেখাতেই বেশি মাতিয়ে তুলেছিল। রাজনৈতিক কর্তব্যবোধ তাড়িত করেছে তাঁকে সারা জীবন। তাঁর লেখায় তথাকথিত নিরপেক্ষতা ছিল না; ছিল স্পষ্ট পক্ষপাত। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ থেকে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি বিচ্যুত হননি একদিনের জন্যও। সে জন্য প্রতিপক্ষের দিক থেকে অনেক গালাগাল ও শত্রুতা তাঁকে সহ্য করতে হয়েছে। লন্ডনে অবস্থান করেও তিনি মাঝে মাঝে ভুগেছেন নিরাপত্তাহীনতায়। কিন্তু সত্য প্রকাশে কখনো কুণ্ঠিত হননি। যখন যে বিষয়ে যা উচিত মনে হয়েছে, তিনি তা লিখে প্রকাশ করেছেন। এই পত্রিকা না ছাপলে তিনি ঠিকই অন্য পত্রিকায় তাঁর মনের কথা লিখে পাঠকের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন। সব সময় যে তাঁর অবস্থান সবার পছন্দ হয়েছে, তা নয়। আমারও মাঝে মাঝে খারাপ লেগেছে তাঁর কোনো কোনো অবস্থান। সেটা নিয়ে আমরা ফোনালাপও করেছি। পরবর্তী লেখায় তার প্রতিফলনও দেখতে পেয়েছি। তখন ভেবেছি, গণতন্ত্রমনা মানুষের এমনটি হওয়াই স্বাভাবিক। মানুষ তার মতামত প্রয়োজনে সংশোধন করবে, এটাই কাম্য। গাফ্ফার ভাইয়ের অবস্থান অনেক সময় আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়েও সমালোচিত হয়েছে। তাতে বিচলিত না হয়ে নিজের মতে তিনি দৃঢ় থেকেছেন। এ ক্ষেত্রে গভীর আদর্শবোধ তাঁকে জুগিয়ে চলেছে শক্তি।
বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে গ্রেনেড হামলায় নিহত সাবেক অর্থমন্ত্রী শামস কিবরিয়ার সঙ্গেও আমার গড়ে উঠেছিল বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। আমরা প্রতিষ্ঠা করেছিলাম বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ (বিএফডিআর)। আমরা প্রকাশ করি সাপ্তাহিক মৃদুভাষণ বলে একটি পত্রিকা। তাতে গাফ্ফার ভাই আনন্দের সঙ্গে লিখতেন। এতে সম্পাদক কিবরিয়া সাহেব এবং আমিও নিয়মিতভাবে লিখতাম। ওই সময়ে আমাদের তিনজনের আলাদা একটি সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিবরিয়া সাহেব খুব পছন্দ করতেন গাফ্ফার ভাইয়ের লেখা। কোনো সংখ্যায় তাঁর লেখা যাবে না, এটা মানতে পারতেন না। লেখার সম্মানী বাবদ যা প্রদান করা হতো, সেটা সময়মতো পৌঁছে দেওয়ার ব্যাপারে তিনি ছিলেন সিরিয়াস। কিবরিয়া ভাইয়ের মতো দেশদরদি মানুষ, গুণী আমলা ও রাজনীতিক এবং বিশিষ্ট ভদ্রলোক গ্রেনেড হামলায় মারা গেলে গাফ্ফার ভাই মুষড়ে পড়েছিলেন। ব্যক্তিগত আলাপে তিনি ওই ঘটনায় গভীর বেদনার কথা বলতেন এবং ঘৃণা প্রকাশ করতেন খুনিদের বিষয়ে। আজ তাঁরা দুজনই প্রয়াত।
গাফ্ফার ভাই অকালে প্রয়াত হয়েছেন, তা বলা যাবে না। বরং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি এত সক্রিয় ছিলেন যে, তাঁকে প্রবীণ মনে হতো না। মনে হতো, তিনি আরও কমপক্ষে ১০ বছর বাঁচবেন। মারা যাওয়ার আগের দিনও, ১৮ মে বিকেলে তাঁর সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা কথা হয়। তিনিই ফোন করেছিলেন। নানান কথার মধ্যে বললেন, ‘বহুবার আপনি আমাকে আত্মজীবনী লিখতে অনুরোধ করেছেন। এবার ভাবছি হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ফিরলে আর কলাম লিখব না, শুধু আত্মজীবনী লিখব।’ সেই সুযোগ আর হয়নি। ২০২২ সালের ১৯ মে তিনি আমাদের সবাইকে কাঁদিয়ে চলে যান অনন্তলোকে।
বঙ্গবন্ধুর সহচর, বরেণ্য সাংবাদিক, কলাম লেখক, সাহিত্যিক ও গীতিকার আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ছিলেন আমাদের বিশিষ্ট অভিভাবক। তাঁর সঙ্গে আমার এত স্মৃতি যে, এমন দু-চারটি লেখায় তা তুলে ধরা যাবে না। আর জাতির জীবনে আলো জ্বালাতেই তিনি ব্যয় করেছেন পুরোটা জীবন। এমন মানুষ সহজে মেলে না। পরিণত বয়সে হারালেও গাফ্ফার ভাইয়ের বিয়োগব্যথা অপরিমেয়।
মোনায়েম সরকার: রাজনীতিক, লেখক; মহাপরিচালক, বিএফডিআর
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীকে ‘গাফ্ফার ভাই’ বলেই ডাকতাম। বয়সে অনেক ছোট যারা, তারাও তাঁকে ‘গাফ্ফার ভাই’ বলে সম্বোধন করত। তিনিও এটা আনন্দের সঙ্গে নিতেন। উদারমনা মানুষ ছিলেন তিনি। আমি তাঁর চেয়ে প্রায় ১০ বছরের ছোট। তা সত্ত্বেও তাঁর সঙ্গে গড়ে উঠেছিল বন্ধুত্ব। তিনি আমাকে ‘আপনি’ বলেই সম্বোধন করতেন; কিন্তু তার আড়ালে অনুভব করতাম আমার প্রতি তাঁর গভীর স্নেহ। রাজনৈতিক সম্পর্কের বাইরেও গাফ্ফার ভাইয়ের সঙ্গে একটি আস্থার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল আমার। এটা গড়িয়েছিল পারিবারিক সম্পর্কের মধ্যে। জীবনের শেষ দিকে যখন ঢাকায় আসতেন, আমাদের শান্তিনগরের চামেলীবাগের বাসায় না এসে থাকতে পারতেন না। একেবারে শেষ দিকে গাফ্ফার ভাই ও তাঁর কন্যারা আমার অফিস কাম বাসাতেই এসে থাকতেন।
তিনি কি রাজধানীর কোনো অভিজাত হোটেলে থাকতে পারতেন না? কিংবা অন্য কোথাও চাইলে কি থাকতে পারতেন না? কিন্তু না, অনিবার্যভাবেই যেন তিনি চামেলীবাগে এসে উঠতেন। আর সে কারণে দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও এখানে চলে আসতেন গাফ্ফার ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে। গাফ্ফার ভাই একটা সময়ে প্রায় প্রতিদিনই লিখতেন কোনো না কোনো সংবাদপত্রে। সাধারণত বাংলায় লিখলেও মাঝে মাঝে ইংরেজিতেও লিখতেন। এর জন্য অনেক সম্মানী পেতেন। জীবনের একটা পর্যায়ে এসে লেখালেখিই হয়ে ওঠে তাঁর জীবিকা। এসব লেখার কিছু চেক ও নগদ টাকা আমার সহকারীর কাছে এসে পৌঁছাত। সম্পর্ক এত গভীর হয়ে উঠেছিল যে, এসব ব্যাপারেও তিনি আমার ওপর নির্ভর করতেন। গাফ্ফার ভাইয়ের ৮০ বছর পূর্তিতে বাংলা একাডেমিতে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তাতে স্বভাবতই আমার কিছুটা ভূমিকা ছিল। আমরা তখন সিদ্ধান্ত নিই, তাঁকে ২১ অথবা ৫২ লাখ টাকা জন্মদিনের উপহার হিসেবে প্রদান করা হবে। এ ব্যাপারে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন জেনারেল সেক্রেটারি নূরুল ফজল বুলবুল বিশেষ সহায়তা জুগিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত আমরা তাঁকে প্রায় ৫২ লাখ টাকাই সংগ্রহ করে দিয়েছিলাম বলে মনে পড়ছে। ঘটনাটি উল্লেখ করলাম এ জন্য যে, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে গাফ্ফার চৌধুরীর নাম। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’র মতো গান যিনি ওই বয়সে লিখে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন, তাঁর সেই অবদানকে অবশ্য কোনো আর্থিক মানদণ্ডে বিচার করা যাবে না। সেটা ছিল তাঁর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসারই প্রকাশ।
এই সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের সময়, কলকাতায়। আমরা প্রকাশ করতাম ন্যাপের পার্টি পত্রিকা নতুন বাংলা আর গাফ্ফার ভাই কাজ করতেন জয় বাংলা পত্রিকায়। কাছাকাছি অফিস। আমাদের মাঝে মাঝেই দেখা হতো, আড্ডা হতো। তখন শুধু আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী নয়, সম্পর্ক তৈরি হয় সাংবাদিক সন্তোষ গুপ্ত, লেখক শওকত ওসমান, শিল্পী কামরুল হাসানসহ অনেকের সঙ্গে। তাঁরা সবাই আমার চেয়ে বয়সে বড়। কিন্তু ইতিহাসের একটি বিশেষ সময়ে আমরা হয়ে উঠি পরস্পরের বন্ধু। সবার লক্ষ্য এক—স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জন এবং সেখানে আমাদের স্বপ্নের বাস্তবায়ন। গাফ্ফার ভাই তো তখন থেকেই সক্রিয় কলমযোদ্ধা। তাঁর লেখার হাত দারুণ।
মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে তৈরি হওয়া সেই সম্পর্ক পরে আরও নিবিড় হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক ঘটনার পর। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর আমি স্বেচ্ছানির্বাসনে যাই এবং ভারতে অবস্থান করি প্রায় চার বছর। দেশে-বিদেশে বঙ্গবন্ধুর স্বঘোষিত খুনিদের বিরুদ্ধে প্রচারণা জোরদার করতে আমি কিছু ভূমিকা রাখি। গাফ্ফার ভাই আগে থেকেই লন্ডনে অবস্থান করছিলেন মূলত স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য। ১৫ আগস্টের ঘটনার পর তিনি স্বভাবতই আমাদের কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হন এবং খুনিদের বিরুদ্ধে তুলে নেন তাঁর জোরালো কলম। সেই কঠিন সময়ে, যখন স্বদেশ থেকে একপ্রকার বিতাড়িত, তখন আমরা প্রকাশ করছি বাংলার ডাক, বজ্রকণ্ঠ, সোনার বাংলা (দ্বিভাষিক), সানরাইজ প্রভৃতি পত্রিকা এবং তাতে ক্লান্তিহীনভাবে লিখে চলেছেন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। সেসব লেখা সংবলিত পত্রিকা গোপনীয়তার সঙ্গে পাঠানো হতো দেশে, এমনকি জেলখানায় তা পৌঁছানো হতো। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে গভীরভাবে শোকাহত এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষ সেই সব পত্রিকা পড়ে নতুন আশায় বুক বাঁধত। আজ গাফ্ফার ভাইয়ের চলে যাওয়ার প্রথম বার্ষিকীতে ওই সব দিনের কথা বেশি করে মনে পড়ছে।
মনে পড়ছে প্রায় প্রতিদিন লন্ডন থেকে দিনের শুরুতেই, কখনো কখনো ভোরবেলায় তাঁর ফোন পাওয়ার কথা। দেশের পরিস্থিতি জানতে, বুঝতে তিনি আরও অনেকের সঙ্গেই হয়তো কথা বলতেন। আমার সঙ্গেও বলতেন। একটা সময়ে তিনি এত লিখতেন যে, মাঝে মাঝে লেখার উপযুক্ত বিষয় খুঁজে পেতেন না। তখন অনেক ক্ষেত্রে আমাকে ফোন দিতেন। আমি হয়তো কোনো প্রসঙ্গ তুলে বলতাম, আপনি এ বিষয়ে লিখতে পারেন অথবা মানুষ খুশি হবে এ বিষয়ে আপনি কিছু লিখলে। গোটা জাতির বা পিছিয়ে পড়া কোনো জনগোষ্ঠীর উপকার হবে এমন বিষয়ে গাফ্ফার ভাই আনন্দের সঙ্গে লিখতেন। আমরাও হয়তো কোনো বিষয়ে তদবির করতাম। সেটা যুক্তিপূর্ণ হলে তিনি অবশ্যই কলম ধরতেন। গাফ্ফার ভাইয়ের গদ্য এত সুন্দর ছিল, যে কোনো বিষয়ে তাঁর লেখা হয়ে উঠত আকর্ষণীয়।
অনেকে মনে করেন, কবিতা, গল্প-উপন্যাসের মাধ্যমে তিনি বেশি কাজ করলে সেগুলোও শক্তিশালী সাহিত্যকর্ম হয়ে উঠত। এ কথাও ঠিক, দেশের অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তাঁকে রাজনীতি নিয়ে লেখাতেই বেশি মাতিয়ে তুলেছিল। রাজনৈতিক কর্তব্যবোধ তাড়িত করেছে তাঁকে সারা জীবন। তাঁর লেখায় তথাকথিত নিরপেক্ষতা ছিল না; ছিল স্পষ্ট পক্ষপাত। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ থেকে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি বিচ্যুত হননি একদিনের জন্যও। সে জন্য প্রতিপক্ষের দিক থেকে অনেক গালাগাল ও শত্রুতা তাঁকে সহ্য করতে হয়েছে। লন্ডনে অবস্থান করেও তিনি মাঝে মাঝে ভুগেছেন নিরাপত্তাহীনতায়। কিন্তু সত্য প্রকাশে কখনো কুণ্ঠিত হননি। যখন যে বিষয়ে যা উচিত মনে হয়েছে, তিনি তা লিখে প্রকাশ করেছেন। এই পত্রিকা না ছাপলে তিনি ঠিকই অন্য পত্রিকায় তাঁর মনের কথা লিখে পাঠকের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন। সব সময় যে তাঁর অবস্থান সবার পছন্দ হয়েছে, তা নয়। আমারও মাঝে মাঝে খারাপ লেগেছে তাঁর কোনো কোনো অবস্থান। সেটা নিয়ে আমরা ফোনালাপও করেছি। পরবর্তী লেখায় তার প্রতিফলনও দেখতে পেয়েছি। তখন ভেবেছি, গণতন্ত্রমনা মানুষের এমনটি হওয়াই স্বাভাবিক। মানুষ তার মতামত প্রয়োজনে সংশোধন করবে, এটাই কাম্য। গাফ্ফার ভাইয়ের অবস্থান অনেক সময় আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়েও সমালোচিত হয়েছে। তাতে বিচলিত না হয়ে নিজের মতে তিনি দৃঢ় থেকেছেন। এ ক্ষেত্রে গভীর আদর্শবোধ তাঁকে জুগিয়ে চলেছে শক্তি।
বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে গ্রেনেড হামলায় নিহত সাবেক অর্থমন্ত্রী শামস কিবরিয়ার সঙ্গেও আমার গড়ে উঠেছিল বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। আমরা প্রতিষ্ঠা করেছিলাম বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ (বিএফডিআর)। আমরা প্রকাশ করি সাপ্তাহিক মৃদুভাষণ বলে একটি পত্রিকা। তাতে গাফ্ফার ভাই আনন্দের সঙ্গে লিখতেন। এতে সম্পাদক কিবরিয়া সাহেব এবং আমিও নিয়মিতভাবে লিখতাম। ওই সময়ে আমাদের তিনজনের আলাদা একটি সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিবরিয়া সাহেব খুব পছন্দ করতেন গাফ্ফার ভাইয়ের লেখা। কোনো সংখ্যায় তাঁর লেখা যাবে না, এটা মানতে পারতেন না। লেখার সম্মানী বাবদ যা প্রদান করা হতো, সেটা সময়মতো পৌঁছে দেওয়ার ব্যাপারে তিনি ছিলেন সিরিয়াস। কিবরিয়া ভাইয়ের মতো দেশদরদি মানুষ, গুণী আমলা ও রাজনীতিক এবং বিশিষ্ট ভদ্রলোক গ্রেনেড হামলায় মারা গেলে গাফ্ফার ভাই মুষড়ে পড়েছিলেন। ব্যক্তিগত আলাপে তিনি ওই ঘটনায় গভীর বেদনার কথা বলতেন এবং ঘৃণা প্রকাশ করতেন খুনিদের বিষয়ে। আজ তাঁরা দুজনই প্রয়াত।
গাফ্ফার ভাই অকালে প্রয়াত হয়েছেন, তা বলা যাবে না। বরং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি এত সক্রিয় ছিলেন যে, তাঁকে প্রবীণ মনে হতো না। মনে হতো, তিনি আরও কমপক্ষে ১০ বছর বাঁচবেন। মারা যাওয়ার আগের দিনও, ১৮ মে বিকেলে তাঁর সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা কথা হয়। তিনিই ফোন করেছিলেন। নানান কথার মধ্যে বললেন, ‘বহুবার আপনি আমাকে আত্মজীবনী লিখতে অনুরোধ করেছেন। এবার ভাবছি হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ফিরলে আর কলাম লিখব না, শুধু আত্মজীবনী লিখব।’ সেই সুযোগ আর হয়নি। ২০২২ সালের ১৯ মে তিনি আমাদের সবাইকে কাঁদিয়ে চলে যান অনন্তলোকে।
বঙ্গবন্ধুর সহচর, বরেণ্য সাংবাদিক, কলাম লেখক, সাহিত্যিক ও গীতিকার আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ছিলেন আমাদের বিশিষ্ট অভিভাবক। তাঁর সঙ্গে আমার এত স্মৃতি যে, এমন দু-চারটি লেখায় তা তুলে ধরা যাবে না। আর জাতির জীবনে আলো জ্বালাতেই তিনি ব্যয় করেছেন পুরোটা জীবন। এমন মানুষ সহজে মেলে না। পরিণত বয়সে হারালেও গাফ্ফার ভাইয়ের বিয়োগব্যথা অপরিমেয়।
মোনায়েম সরকার: রাজনীতিক, লেখক; মহাপরিচালক, বিএফডিআর
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৬ দিন আগে‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীকে ‘গাফ্ফার ভাই’ বলেই ডাকতাম। বয়সে অনেক ছোট যারা, তারাও তাঁকে ‘গাফ্ফার ভাই’ বলে সম্বোধন করত। তিনিও এটা আনন্দের সঙ্গে নিতেন। উদারমনা মানুষ ছিলেন তিনি। আমি তাঁর চেয়ে প্রায় ১০ বছরের ছোট। তা সত্ত্বেও তাঁর সঙ্গে গড়ে
১৯ মে ২০২৩‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীকে ‘গাফ্ফার ভাই’ বলেই ডাকতাম। বয়সে অনেক ছোট যারা, তারাও তাঁকে ‘গাফ্ফার ভাই’ বলে সম্বোধন করত। তিনিও এটা আনন্দের সঙ্গে নিতেন। উদারমনা মানুষ ছিলেন তিনি। আমি তাঁর চেয়ে প্রায় ১০ বছরের ছোট। তা সত্ত্বেও তাঁর সঙ্গে গড়ে
১৯ মে ২০২৩গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৬ দিন আগেভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীকে ‘গাফ্ফার ভাই’ বলেই ডাকতাম। বয়সে অনেক ছোট যারা, তারাও তাঁকে ‘গাফ্ফার ভাই’ বলে সম্বোধন করত। তিনিও এটা আনন্দের সঙ্গে নিতেন। উদারমনা মানুষ ছিলেন তিনি। আমি তাঁর চেয়ে প্রায় ১০ বছরের ছোট। তা সত্ত্বেও তাঁর সঙ্গে গড়ে
১৯ মে ২০২৩গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৬ দিন আগে‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীকে ‘গাফ্ফার ভাই’ বলেই ডাকতাম। বয়সে অনেক ছোট যারা, তারাও তাঁকে ‘গাফ্ফার ভাই’ বলে সম্বোধন করত। তিনিও এটা আনন্দের সঙ্গে নিতেন। উদারমনা মানুষ ছিলেন তিনি। আমি তাঁর চেয়ে প্রায় ১০ বছরের ছোট। তা সত্ত্বেও তাঁর সঙ্গে গড়ে
১৯ মে ২০২৩গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৬ দিন আগে‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫