ড. আর এম দেবনাথ
৭০ বছরের এক বৃদ্ধ। আমার পরিচিতজন। আমাকে দেখে তিনি রিকশা থামালেন। বললেন, ব্যাংকে গিয়েছিলাম। জিজ্ঞেস করলাম, টাকা তুলতে পেরেছেন? না, টাকার জন্য আজকে যাইনি। তবু দেখলাম, লোকজন ‘ক্যাশের’ জন্য ম্যানেজারকে অনুরোধ করছে। ক্যাশের অভাব। চেক কেটেও টাকা পাওয়া যাচ্ছে না প্রয়োজনমতো। তাহলে এই ভরদুপুরে ব্যাংকে কেন? বললেন, সার্টিফিকেটের জন্য। সার্টিফিকেট? বললেন, ইনকাম ট্যাক্সের জন্য প্রতিবছর আয়ের সার্টিফিকেট লাগে। আয় মানে কী? পরিবার সঞ্চয়পত্র আছে। তার ওপরে প্রতি মাসে সুদ জমা হয় অ্যাকাউন্টে। তখন উৎসেই ১০ শতাংশ কর কেটে নেয় ব্যাংক। আয়কর। এই সার্টিফিকেটই রিটার্নের সঙ্গে জমা দিতে হয়। ওটার জন্য গিয়েছিলাম। তিন ঘণ্টা চলে গেল। একমাত্র অফিসার। বহু লোক সার্টিফিকেট প্রার্থী। বেচারা কী আর করবে! উপায় না দেখে বসে বসে সময় কাটালাম। তবে ব্যাংককে ধন্যবাদ, এক কাপ চা খাওয়াইছে। কিন্তু সারা দিন চলে গেল। বাসায় যাব, গোসল করব, খাব, একটু বিশ্রাম নেব। সন্ধ্যা নামবে ততক্ষণে। বলতে বলতে এটাও শোনালেন, অন্য এক ব্যাংকে যেতে হবে। কারণ সেখানে আছে এফডিআর। তার ওপর কত সুদ পেয়েছি, কত কেটেছে ইনকাম ট্যাক্স, তার হিসাবও লাগবে।
এসব বলতে বলতে বৃদ্ধলোকটি ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন। বলছিলেন, তাঁর ইনকাম মাত্র সুদ-ইনকাম। পারিবারিক সঞ্চয়পত্র আর এফডিআরে নিয়ম অনুযায়ী যথারীতি সুদের ওপর অগ্রিম ইনকাম ট্যাক্স কেটে নেওয়া হয়। তাঁর প্রশ্ন, তার পরেও কেন সার্টিফিকেটসহ রিটার্ন জমা দিতে হবে প্রতিবছর? এই বয়সে এখন আর এসব ভালো লাগে না। ছেলেমেয়েরা অফিস করে। তাদের সময় নেই। অতএব, তাঁকেই এসব করতে হয়।
সার্টিফিকেট জোগাড় করা, তারপর ফটোকপি করা। জমা দিতে হবে কর মেলায়। এতে ঝামেলা কম। অতিরিক্ত খরচ নেই। ফাঁকে ফাঁকে প্রশ্ন—সারা জীবন কর দিলাম। সরকারের কাছ থেকে তো কিছু আর পাইনি। যেহেতু সুদ-আয় ছাড়া আমার আর কোনো আয় নেই এবং যেহেতু সুদ-আয়ের ওপর উৎসে কর কেটে নেওয়া হচ্ছে, তাহলে কেন রিটার্ন দেওয়ার এই বাড়তি ঝামেলা? এর থেকে কি সদাশয় সরকার সত্তরোর্ধ্ব বয়স্কদের মাফ করে দিতে পারে না? লা-জওয়াব। আমার কাছে কোনো জবাব নেই। তবে এ কথা জানি, এই বয়সের হাজার হাজার লোককে এভাবেই রিটার্ন জমা দিতে হয়। ভুগতে হয় টেনশনে। এখন অক্টোবর মাস। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে রিটার্ন জমা দিতে হবে। শুধু আয়ের হিসাব নয়, বাৎসরিক খরচের হিসাবও দিতে হবে। তা-ও খাতওয়ারি। কত সম্পদ, কত দায়, কত নিট সম্পদ, তার হিসাবও দিতে হবে। সারা জীবনের কাজ এটা। দায়িত্ব পালন আরকি। প্রশ্ন, সরকার কি পারে না এই ঝামেলা থেকে বৃদ্ধদের মুক্তি দিতে? নিশ্চয় পারে। শুধু দরকার একটু সদয় বিবেচনা। তা-ও বিবেচনাটা থাকতে হবে একজন কর্তাব্যক্তির মধ্যে। এবার একটা সুযোগ। বর্তমান অর্থ উপদেষ্টা, পরিকল্পনা উপদেষ্টার বয়সও সত্তরোর্ধ্ব। নিশ্চয় তাঁদেরও এই ঝামেলা আছে। তাঁদেরও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের রিটার্ন তৈরির কাজ করতে হবে। তাঁরা বিষয়টি নিয়ে একটু ভাবলে হাজার হাজার করদাতা বেঁচে যান।
কথা আরও আছে, বারবার বলা হচ্ছে করহার (ট্যাক্স রেট) কম রাখা দরকার। নাহ, তা হচ্ছে না। বর্তমানে সর্বোচ্চ হার ২৫ শতাংশ। সাড়ে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত বার্ষিক আয়ের ওপর করের হার শূন্য। তারপর পাঁচটি স্ল্যাব আছে। স্ল্যাবগুলো বড় মজার। বর্তমান করহার অনুযায়ী মোটামুটিভাবে দেখা যাবে, ১৮-১৯ লাখ টাকা বার্ষিক আয় হলে কর দিতে হবে প্রায় সোয়া ২ লাখ টাকা। কী দাঁড়াল? কারও আয় মাসিক দেড় লাখ টাকা হলে, মাসিক আয়কর হবে প্রায় ২০ হাজার টাকা। প্রশ্ন, এই বাজারে মাসিক এক-দেড় লাখ টাকা বেসরকারি খাতের অনেকে রোজগার করেন। সেখান থেকে বাড়িভাড়া কত যায়? গাড়ি থাকলে কত খরচ হয়? এক-দুটি বাচ্চা স্কুলপড়ুয়া থাকলে তাদের শিক্ষার খরচ কত? হিসাব করে বলুন তো, এই লোকের কর যদি মাসিক ২০ হাজার টাকা হয়, তাহলে তা কি জুলুম নয়? আর বর্তমান বাজারে তো মহাজুলুমই বটে।
এসব কারণেই বারবার দাবি ওঠে, করের স্ল্যাব এবং করের হার এমন করা হোক, যাতে ‘করভার’ সহ্যসীমার মধ্যে থাকে। না, তা হয় না। হয় বরং উল্টো। প্রায় বছরই করভার বাড়ে। রেয়াদ পাওয়া যায় খুবই কম। এ কারণেই কর ফাঁকির প্রবণতা খুব বেশি। সরকার বুঝতেই চায় না, করহার কম হলে লোকে কর দিতে উৎসাহিত হবে। বর্তমান বাজারে ২ লাখ টাকা মাসিক উপার্জনকারীর মাসিক কর ১০ হাজার টাকা হলেই বেশি। আসলে দরকার হচ্ছে বেশি বেশি করদাতা। বর্তমানে নানা নিয়ম করে টিআইএনধারীর সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। এতে কিন্তু ট্যাক্স আদায় বাড়ছে না। আবার টিআইএন নিচ্ছে অনেকেই প্রয়োজনে, কিন্তু রিটার্ন জমা হচ্ছে না। এতে সরকারের আসল উদ্দেশ্য পূরণ হচ্ছে না।
বর্তমান নিয়মে একটা সহজ ব্যবস্থা করা হয়েছে কম আয়ের লোকজনের জন্য। বার্ষিক আয় যদি ৫ লাখের বেশি না হয় এবং তাঁর পরিসম্পদের পরিমাণ যদি ৫ লাখ টাকার ওপরে না হয়, তাহলে এক পাতার একটি রিটার্ন জমা দিলেই চলে। তবে এর সঙ্গে আরও শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে শেষ পর্যন্ত এক পাতার রিটার্ন জমা দেওয়ার সুযোগ কজন পান, তা আমার জানা নেই। আমার মনে হয়, এতে খুব বেশি লোকের উপকার হয় না। আসলে মনেই হয়, আয়করের নীতিমালা যাঁরা তৈরি করেন, তাঁরা একটা ছকের বাইরে যেতে চান না। তাঁরা আছেন সরকারের নানা চাপের মধ্যে। চাপটা হচ্ছে কর বাড়ানোর। কর বাড়াতে হবে। অতএব, সহজ পথ হচ্ছে, যাঁরা করের জালের মধ্যে আছেন, তাঁদেরই চেপে ধরা। নতুন করদাতার খোঁজে যান না তাঁরা। আর যাবেন কোথায়? কর তো কেউ দিতে চান না। সবাই সরকারের কাছ থেকে সুবিধাপ্রত্যাশী। কেউ কর দিতে চান না। অথচ দেশে করযোগ্য লোকের সংখ্যা প্রচুর। সাড়ে ৩ লাখ টাকা হচ্ছে বার্ষিক আয়। অর্থাৎ, মাসে হয় মোটামুটি ৩০ হাজার, দিনে ১ হাজার টাকা। দিনে ১ হাজার টাকা একজন সবজিবিক্রেতাও রোজগার করেন। কিন্তু তাঁর কাছ থেকে কর আদায় করা যাবে না। কারণ সাধারণভাবে তিনি ‘গরিব’ হিসেবে চিহ্নিত। আসলেই তাই। দৈনিক ১ হাজার টাকা ইনকামে সংসার চলে না। অথচ ২০-৩০ হাজার টাকা উপার্জনকারী লোকের সংখ্যাই বেশি। এখন প্রশ্ন, তাঁদের সবার কাছ থেকে কি আয়কর আদায় করা সম্ভব? নাহ, এটা বাস্তবসম্মত নয়। অথচ আয়করমুক্ত আয় হচ্ছে মাত্র সাড়ে ৩ লাখ টাকা। এই নিয়ম ধরে কাজ করলে দেশে কর ফাঁকিবাজের সংখ্যা লাখ লাখ।
এমতাবস্থায় ভালো হতো, যদি আমরা ধনীদের কাছ থেকে আদায় করতে পারতাম। ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের কাছ থেকে কর আদায় করতে পারতাম। কিন্তু আমাদের দেশে শুধু নয়, পৃথিবীর কোনো দেশেই ধনীরা কর দিতে চান না। তাঁদের কর দিতে বড় কষ্ট হয়। তাঁরা চলে যান এমন দেশে, যেখানে কর নেই। বহু দ্বীপদেশ আছে, যেখানে কর নেই।
সেই সব দেশে দুনিয়ার তাবৎ ধনী টাকা রাখেন। আর একটা ব্যবস্থা হতে পারত। যেমন আমরা প্রতিদিন সিন্ডিকেটকে গালাগালি করি। সরকারও তা করে। সিন্ডিকেট আমরা ভাঙতে পারি না, ঠিক আছে। আমরা কিন্তু তাদের আনুমানিক কর দিতে বাধ্য করতে পারি। চোখের সামনে দেখছি, কয়েকটি বিজনেস হাউস শত শত কোটি টাকা লুটে নিয়েছে। নিয়েছে বাজার অর্থনীতির বদৌলতে। কারা এটা করেছে, সরকারের এজেন্সিগুলো জানে। আয়কর বিভাগও জানে। আমরা কি পারি না, তাদের
ওপর প্রিজামটিভ কর আরোপ করতে? পারা উচিত। এখন তো আরও বেশি। কারণ, বর্তমান সরকারের কোনো পিছুটান নেই, সদিচ্ছার কোনো অভাব নেই। তাহলে কেন ধনীদের বা সিন্ডিকেটকে করের আওতায় আনা যাবে না? এসব ব্যাপারে ভাবা উচিত।
লেখক: ড. আর এম দেবনাথ
সাবেক শিক্ষক, ঢাবি; অর্থনীতি বিশ্লেষক
৭০ বছরের এক বৃদ্ধ। আমার পরিচিতজন। আমাকে দেখে তিনি রিকশা থামালেন। বললেন, ব্যাংকে গিয়েছিলাম। জিজ্ঞেস করলাম, টাকা তুলতে পেরেছেন? না, টাকার জন্য আজকে যাইনি। তবু দেখলাম, লোকজন ‘ক্যাশের’ জন্য ম্যানেজারকে অনুরোধ করছে। ক্যাশের অভাব। চেক কেটেও টাকা পাওয়া যাচ্ছে না প্রয়োজনমতো। তাহলে এই ভরদুপুরে ব্যাংকে কেন? বললেন, সার্টিফিকেটের জন্য। সার্টিফিকেট? বললেন, ইনকাম ট্যাক্সের জন্য প্রতিবছর আয়ের সার্টিফিকেট লাগে। আয় মানে কী? পরিবার সঞ্চয়পত্র আছে। তার ওপরে প্রতি মাসে সুদ জমা হয় অ্যাকাউন্টে। তখন উৎসেই ১০ শতাংশ কর কেটে নেয় ব্যাংক। আয়কর। এই সার্টিফিকেটই রিটার্নের সঙ্গে জমা দিতে হয়। ওটার জন্য গিয়েছিলাম। তিন ঘণ্টা চলে গেল। একমাত্র অফিসার। বহু লোক সার্টিফিকেট প্রার্থী। বেচারা কী আর করবে! উপায় না দেখে বসে বসে সময় কাটালাম। তবে ব্যাংককে ধন্যবাদ, এক কাপ চা খাওয়াইছে। কিন্তু সারা দিন চলে গেল। বাসায় যাব, গোসল করব, খাব, একটু বিশ্রাম নেব। সন্ধ্যা নামবে ততক্ষণে। বলতে বলতে এটাও শোনালেন, অন্য এক ব্যাংকে যেতে হবে। কারণ সেখানে আছে এফডিআর। তার ওপর কত সুদ পেয়েছি, কত কেটেছে ইনকাম ট্যাক্স, তার হিসাবও লাগবে।
এসব বলতে বলতে বৃদ্ধলোকটি ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন। বলছিলেন, তাঁর ইনকাম মাত্র সুদ-ইনকাম। পারিবারিক সঞ্চয়পত্র আর এফডিআরে নিয়ম অনুযায়ী যথারীতি সুদের ওপর অগ্রিম ইনকাম ট্যাক্স কেটে নেওয়া হয়। তাঁর প্রশ্ন, তার পরেও কেন সার্টিফিকেটসহ রিটার্ন জমা দিতে হবে প্রতিবছর? এই বয়সে এখন আর এসব ভালো লাগে না। ছেলেমেয়েরা অফিস করে। তাদের সময় নেই। অতএব, তাঁকেই এসব করতে হয়।
সার্টিফিকেট জোগাড় করা, তারপর ফটোকপি করা। জমা দিতে হবে কর মেলায়। এতে ঝামেলা কম। অতিরিক্ত খরচ নেই। ফাঁকে ফাঁকে প্রশ্ন—সারা জীবন কর দিলাম। সরকারের কাছ থেকে তো কিছু আর পাইনি। যেহেতু সুদ-আয় ছাড়া আমার আর কোনো আয় নেই এবং যেহেতু সুদ-আয়ের ওপর উৎসে কর কেটে নেওয়া হচ্ছে, তাহলে কেন রিটার্ন দেওয়ার এই বাড়তি ঝামেলা? এর থেকে কি সদাশয় সরকার সত্তরোর্ধ্ব বয়স্কদের মাফ করে দিতে পারে না? লা-জওয়াব। আমার কাছে কোনো জবাব নেই। তবে এ কথা জানি, এই বয়সের হাজার হাজার লোককে এভাবেই রিটার্ন জমা দিতে হয়। ভুগতে হয় টেনশনে। এখন অক্টোবর মাস। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে রিটার্ন জমা দিতে হবে। শুধু আয়ের হিসাব নয়, বাৎসরিক খরচের হিসাবও দিতে হবে। তা-ও খাতওয়ারি। কত সম্পদ, কত দায়, কত নিট সম্পদ, তার হিসাবও দিতে হবে। সারা জীবনের কাজ এটা। দায়িত্ব পালন আরকি। প্রশ্ন, সরকার কি পারে না এই ঝামেলা থেকে বৃদ্ধদের মুক্তি দিতে? নিশ্চয় পারে। শুধু দরকার একটু সদয় বিবেচনা। তা-ও বিবেচনাটা থাকতে হবে একজন কর্তাব্যক্তির মধ্যে। এবার একটা সুযোগ। বর্তমান অর্থ উপদেষ্টা, পরিকল্পনা উপদেষ্টার বয়সও সত্তরোর্ধ্ব। নিশ্চয় তাঁদেরও এই ঝামেলা আছে। তাঁদেরও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের রিটার্ন তৈরির কাজ করতে হবে। তাঁরা বিষয়টি নিয়ে একটু ভাবলে হাজার হাজার করদাতা বেঁচে যান।
কথা আরও আছে, বারবার বলা হচ্ছে করহার (ট্যাক্স রেট) কম রাখা দরকার। নাহ, তা হচ্ছে না। বর্তমানে সর্বোচ্চ হার ২৫ শতাংশ। সাড়ে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত বার্ষিক আয়ের ওপর করের হার শূন্য। তারপর পাঁচটি স্ল্যাব আছে। স্ল্যাবগুলো বড় মজার। বর্তমান করহার অনুযায়ী মোটামুটিভাবে দেখা যাবে, ১৮-১৯ লাখ টাকা বার্ষিক আয় হলে কর দিতে হবে প্রায় সোয়া ২ লাখ টাকা। কী দাঁড়াল? কারও আয় মাসিক দেড় লাখ টাকা হলে, মাসিক আয়কর হবে প্রায় ২০ হাজার টাকা। প্রশ্ন, এই বাজারে মাসিক এক-দেড় লাখ টাকা বেসরকারি খাতের অনেকে রোজগার করেন। সেখান থেকে বাড়িভাড়া কত যায়? গাড়ি থাকলে কত খরচ হয়? এক-দুটি বাচ্চা স্কুলপড়ুয়া থাকলে তাদের শিক্ষার খরচ কত? হিসাব করে বলুন তো, এই লোকের কর যদি মাসিক ২০ হাজার টাকা হয়, তাহলে তা কি জুলুম নয়? আর বর্তমান বাজারে তো মহাজুলুমই বটে।
এসব কারণেই বারবার দাবি ওঠে, করের স্ল্যাব এবং করের হার এমন করা হোক, যাতে ‘করভার’ সহ্যসীমার মধ্যে থাকে। না, তা হয় না। হয় বরং উল্টো। প্রায় বছরই করভার বাড়ে। রেয়াদ পাওয়া যায় খুবই কম। এ কারণেই কর ফাঁকির প্রবণতা খুব বেশি। সরকার বুঝতেই চায় না, করহার কম হলে লোকে কর দিতে উৎসাহিত হবে। বর্তমান বাজারে ২ লাখ টাকা মাসিক উপার্জনকারীর মাসিক কর ১০ হাজার টাকা হলেই বেশি। আসলে দরকার হচ্ছে বেশি বেশি করদাতা। বর্তমানে নানা নিয়ম করে টিআইএনধারীর সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। এতে কিন্তু ট্যাক্স আদায় বাড়ছে না। আবার টিআইএন নিচ্ছে অনেকেই প্রয়োজনে, কিন্তু রিটার্ন জমা হচ্ছে না। এতে সরকারের আসল উদ্দেশ্য পূরণ হচ্ছে না।
বর্তমান নিয়মে একটা সহজ ব্যবস্থা করা হয়েছে কম আয়ের লোকজনের জন্য। বার্ষিক আয় যদি ৫ লাখের বেশি না হয় এবং তাঁর পরিসম্পদের পরিমাণ যদি ৫ লাখ টাকার ওপরে না হয়, তাহলে এক পাতার একটি রিটার্ন জমা দিলেই চলে। তবে এর সঙ্গে আরও শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে শেষ পর্যন্ত এক পাতার রিটার্ন জমা দেওয়ার সুযোগ কজন পান, তা আমার জানা নেই। আমার মনে হয়, এতে খুব বেশি লোকের উপকার হয় না। আসলে মনেই হয়, আয়করের নীতিমালা যাঁরা তৈরি করেন, তাঁরা একটা ছকের বাইরে যেতে চান না। তাঁরা আছেন সরকারের নানা চাপের মধ্যে। চাপটা হচ্ছে কর বাড়ানোর। কর বাড়াতে হবে। অতএব, সহজ পথ হচ্ছে, যাঁরা করের জালের মধ্যে আছেন, তাঁদেরই চেপে ধরা। নতুন করদাতার খোঁজে যান না তাঁরা। আর যাবেন কোথায়? কর তো কেউ দিতে চান না। সবাই সরকারের কাছ থেকে সুবিধাপ্রত্যাশী। কেউ কর দিতে চান না। অথচ দেশে করযোগ্য লোকের সংখ্যা প্রচুর। সাড়ে ৩ লাখ টাকা হচ্ছে বার্ষিক আয়। অর্থাৎ, মাসে হয় মোটামুটি ৩০ হাজার, দিনে ১ হাজার টাকা। দিনে ১ হাজার টাকা একজন সবজিবিক্রেতাও রোজগার করেন। কিন্তু তাঁর কাছ থেকে কর আদায় করা যাবে না। কারণ সাধারণভাবে তিনি ‘গরিব’ হিসেবে চিহ্নিত। আসলেই তাই। দৈনিক ১ হাজার টাকা ইনকামে সংসার চলে না। অথচ ২০-৩০ হাজার টাকা উপার্জনকারী লোকের সংখ্যাই বেশি। এখন প্রশ্ন, তাঁদের সবার কাছ থেকে কি আয়কর আদায় করা সম্ভব? নাহ, এটা বাস্তবসম্মত নয়। অথচ আয়করমুক্ত আয় হচ্ছে মাত্র সাড়ে ৩ লাখ টাকা। এই নিয়ম ধরে কাজ করলে দেশে কর ফাঁকিবাজের সংখ্যা লাখ লাখ।
এমতাবস্থায় ভালো হতো, যদি আমরা ধনীদের কাছ থেকে আদায় করতে পারতাম। ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের কাছ থেকে কর আদায় করতে পারতাম। কিন্তু আমাদের দেশে শুধু নয়, পৃথিবীর কোনো দেশেই ধনীরা কর দিতে চান না। তাঁদের কর দিতে বড় কষ্ট হয়। তাঁরা চলে যান এমন দেশে, যেখানে কর নেই। বহু দ্বীপদেশ আছে, যেখানে কর নেই।
সেই সব দেশে দুনিয়ার তাবৎ ধনী টাকা রাখেন। আর একটা ব্যবস্থা হতে পারত। যেমন আমরা প্রতিদিন সিন্ডিকেটকে গালাগালি করি। সরকারও তা করে। সিন্ডিকেট আমরা ভাঙতে পারি না, ঠিক আছে। আমরা কিন্তু তাদের আনুমানিক কর দিতে বাধ্য করতে পারি। চোখের সামনে দেখছি, কয়েকটি বিজনেস হাউস শত শত কোটি টাকা লুটে নিয়েছে। নিয়েছে বাজার অর্থনীতির বদৌলতে। কারা এটা করেছে, সরকারের এজেন্সিগুলো জানে। আয়কর বিভাগও জানে। আমরা কি পারি না, তাদের
ওপর প্রিজামটিভ কর আরোপ করতে? পারা উচিত। এখন তো আরও বেশি। কারণ, বর্তমান সরকারের কোনো পিছুটান নেই, সদিচ্ছার কোনো অভাব নেই। তাহলে কেন ধনীদের বা সিন্ডিকেটকে করের আওতায় আনা যাবে না? এসব ব্যাপারে ভাবা উচিত।
লেখক: ড. আর এম দেবনাথ
সাবেক শিক্ষক, ঢাবি; অর্থনীতি বিশ্লেষক
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৮ দিন আগেআধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫পাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
০৮ মে ২০২৫ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে দুই চিরবৈরী প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনার পারদ ক্রমেই চড়ছিল। তা তুঙ্গে উঠল এবার পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামের ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা দিয়ে। পাশাপাশি সীমান্তেও দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছে...
০৮ মে ২০২৫