Ajker Patrika

তালিকায় জনপ্রতিনিধি নেতা, বঞ্চিত জেলেরা

মো. ইব্রাহিম, কমলনগর (লক্ষ্মীপুর)
তালিকায় জনপ্রতিনিধি নেতা, বঞ্চিত জেলেরা

লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে ভিন্ন পেশার মানুষকে জেলে বানানোর অভিযোগ উঠেছে। বংশপরম্পরায় জেলে, মাছ শিকার ছাড়া যাঁদের জীবিকার কোনো উপায় নেই, সেই প্রকৃত জেলেরাই সরকারি তালিকায় নিবন্ধিত হতে পারেননি। নিবন্ধন না থাকায় কোনো খাদ্যসহায়তাও তাঁরা পান না। আবার কার্ডধারী হলেও টাকা না দিতে পারলে তাঁদের নাম তালিকায় থাকে না। জীবনে একবারের জন্যও নদীতে মাছ ধরতে যাননি এমন অনেকেই নিবন্ধিত জেলে। জেলে তালিকায় সবার আগে রয়েছে তাঁদের নাম।

জানা গেছে, জেলে তালিকায় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান, প্রবাসী, ব্যবসায়ী, গ্রাম পুলিশ, নাপিত, কৃষক, শ্রমিক, রিকশাচালক, গাড়িচালক—কারও নাম বাদ নেই। ফলে অসংখ্য প্রকৃত জেলে সরকারের দেওয়া জেলেদের সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

উপজেলার চর ফলকন ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. রুহুল আমিন বলেন, তিনি ৩০ বছর জেলে পেশায় আছেন, কিন্তু তাঁর জেলে কার্ড নেই। তিনি বলেন, ‘আমার মতো অনেক জেলে নদীতে মাছ ধরে, তাঁদের জেলে কার্ড নেই, কিন্তু যাঁরা নদীতে মাছ ধরে না, এ রকম অসংখ্য মানুষের জেলে কার্ড আছে।’

একই অভিযোগ কালকিনির জসিম, সাদ্দাম হেলাল, চর মার্টিনের ইউনিয়নের শাহজাহান, মিরাজ ও আবুল কালাম। জেলেদের দাবি, তালিকায় ভুয়া জেলে রয়েছে কয়েক হাজার, আবার প্রকৃত জেলেও বাদ পড়েছেন কয়েক হাজার।

উপজেলা মৎস্য অফিসের তালিকা অনুযায়ী, পাটারির হাট ইউনিয়নের পাটারির হাট বাজারের পাটোয়ারী রেস্টুরেন্টের মালিক মহিবুল উল্লাহ পাটোয়ারী, একই বাজারের করাতকল ব্যবসায়ী মো. সিরাজ ও ইসলামগঞ্জ বাজারের মুদিদোকানি দুলালের রয়েছে জেলে কার্ড।

জেলে তালিকায় নাম থাকা সাহেবের হাট ইউনিয়নের মাকসুদুর রহমান রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী, আবু সিদ্দিক গ্রাম পুলিশ, নুর নবী দুলাল পল্লিচিকিৎসক, জাহিদুর রহমান প্রবাসী, মরণ শীল সেলুন ব্যবসায়ী, নুর নবী ব্যবসায়ী, মাকসুদুর রহমান মেডিকেল প্রমোশন অফিসার।

কালকিনি ইউনিয়নের মো. রফিকুল ইসলাম কালকিনি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, মো. শাহজাহান ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য, শামিম ব্যবসায়ী, মো. আমজাদ হোসেন ধনী ব্যবসায়ী, মো. মনির হোসেন খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ইউনিয়ন ডিলার, সামিম ব্যবসায়ী ও মো. হান্নান ব্যবসায়ী।

চর মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের মো. সিরাজ ও মো. আনোয়ার কখনো নদীতে মাছ ধরতে যাননি, তাঁদের নামে আছে জেলে কার্ড। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা হানিফ মোল্লা জেলে না হলেও তাঁর নামে রয়েছে জেলে কার্ড। গত বছর জেলেদের সহায়তায় জন্য দেওয়া গরু পেয়েছেন তিনি। একই চিত্র উপজেলার বাকি ইউনিয়নগুলোরও।

কালকিনি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি জেলেদের নেতৃত্ব দেন, তাই তাঁর নামে জেলে কার্ড আছে, তবে তিনি সরকারি কোনো সহায়তা নেন না।
খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার মো. মনির হোসেন বলেন, নদীকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য থাকায় তাঁর নামে জেলে কার্ড আছে, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

চর লরেঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও সচিব জানান, চর লরেঞ্জ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্যাহ হিরন এবং যুবলীগ নেতা কপিল উদ্দিনের নামে রয়েছে জেলে কার্ড, তবে আহসান উল্যাহ হিরন জেলেদের দেওয়া সহায়তা নেন না।

উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘জেলে নয়, জেলে তালিকায় নিবন্ধিত হয়েছে এ রকম এক হাজার জেলে হলেও নিবন্ধন তালিকা থেকে বাদ দেব।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুজ্জামান বলেন, জেলে না হয়ে জেলে তালিকায় নিবন্ধিত থাকার বিষয় সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণসহ প্রমাণিত হলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত