Ajker Patrika

শহরে ছিনতাই বেড়েছে

রাজশাহী প্রতিনিধি
আপডেট : ১৩ মে ২০২২, ১৫: ১৪
Thumbnail image

রাজশাহী নগরজুড়ে আবার দেখা দিয়েছে ছিনতাই-আতঙ্ক। প্রতিদিনই শহরের কোথাও-না কোথাও ছিনতাইয়ের খবর পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে ঈদের পর ছিনতাই বেড়ে গেছে। সব শেষ গত মঙ্গলবার ২৩ লাখ টাকা খুইয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক শিক্ষক। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মনে করছেন, জেলে থাকা কিছু ছিনতাইকারী ঈদের আগে জামিন পেয়েছেন। তাঁরা আবার ছিনতাই শুরু করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শহরে এখন সাধারণত দুভাবে ছিনতাই হচ্ছে। ছিনতাইকারীদের একটা অংশ রাতবিরাতে মহল্লার অলি-গলিতে অবস্থান নিয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ছিনতাই করছেন। ছিনতাইকারীদের আরেকটি অংশ মোটরসাইকেল নিয়ে পথচারী কিংবা রিকশার যাত্রীর হাতে থাকা ব্যাগ টান দিয়ে ছুটে পালাচ্ছেন। এঁদের টার্গেট সাধারণত নারীরা।

পুলিশ বলছে, মাদকের টাকা জোগাড়ের জন্য মাদকসেবীরা এসব ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত। শহরে নতুন ছিনতাইকারী কম। ঘুরেফিরে একই ব্যক্তিরা বারবার ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়েন। এ জন্য তাঁদের ধরে জেলে ঢোকানো হয়। এবার ঈদ নির্বিঘ্ন করতে ঈদের আগেও এ ধরনের অভিযান জোরদার ছিল। তখন বেশকিছু ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। তবে ঈদের আগে আবার কিছু ছিনতাইকারী আদালত থেকে জামিন পেয়ে বের হয়েছেন। তাঁরা এখন ছিনতাই করছেন। তাঁদের খুঁজে গ্রেপ্তারে পুলিশ তৎপরতা চালাচ্ছে।

গত ৮ মে সন্ধ্যার পর নগরীর প্রাণকেন্দ্র সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট এলাকায় এক নারী হেঁটে যাচ্ছিলেন। তখন এক ছিনতাইকারী বাইক নিয়ে এসে জনবহুল ওই স্থানেই সেই নারীর ভ্যানিটি ব্যাগ ধরে টান দেন। এ সময় স্থানীয়রা ধরে তাঁকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেন। পুলিশ তাঁর মোটরসাইকেলটিও জব্দ করেছে।

পুলিশ জানিয়েছে, ওই ছিনতাইকারীর নাম ফায়সাল রহমান (৩৬)। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় তাঁর বাড়ি। বিবিএর ছাত্র ফায়সালের মা একজন স্কুলশিক্ষক। বাবা শিক্ষা কর্মকর্তা। মাদকের টাকা জোগাড়ে ফায়সাল রাজশাহী এসেছিলেন ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে। ধরা পড়ার আগে একই দিনে ফায়সাল আরও তিনটি ছিনতাই করেন। সব মিলিয়ে ৪ হাজার ৩০০ টাকা ও কয়েকটি মোবাইল ফোন পান। জিরোপয়েন্টে ধরা পড়ার সময় এসব তাঁর কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। পরদিন মামলা করে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মজিবর রহমান গত মঙ্গলবার জিপিও থেকে স্থায়ী আমানতের ২৩ লাখ টাকা তোলেন। তারপর টাকার ব্যাগ নিয়ে নগরীর বাটার মোড়ে জুতার শোরুমে ঢুকে জুতা পছন্দ করছিলেন। পাশে ব্যাগটি রেখে মজিবর রহমান ও তাঁর স্ত্রী জুতা দেখছিলেন। তখনই এক ছিনতাইকারী তাঁর ব্যাগ নিয়ে দৌড় দেন। দোকানি তাঁকে ধাওয়া দিয়েও ধরতে পারেননি। পরে এ নিয়ে ওই শিক্ষক থানায় অভিযোগ করেন।

এরপর গত বুধবার এক ছিনতাইকারীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তবে তিনি টাকা নিয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করেননি।

নগরীর বোয়ালিয়া থানার ওসিমাজহারুল ইসলাম বলেন, টাকা তোলার পর থেকে এই ছিনতাইকারী মজিবর রহমানকে অনুসরণ করছিলেন। সিসি ক্যামেরায় এসব ধরা পড়েছে। মাস্ক পরে থাকায় চেহারা স্পষ্ট নয়। তবে যাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তিনি টাকা নিয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করেননি। টাকা উদ্ধার হয়নি। তবে ছিনতাইকারীর সঙ্গে গ্রেপ্তারকারী ব্যক্তির চেহারার মিল আছে। টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। এ জন্য আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলেও জানান তিনি।

রাজশাহী নগর পুলিশের মুখপাত্র রফিকুল আলম বলেন, রাজশাহী শহরে যাঁরা ছিনতাই করেন, তাঁরা চিহ্নিত। বারবার একই ব্যক্তিরা ছিনতাইয়ে জড়ায়। তাঁরা পুলিশের তালিকাভুক্ত। একেক জনের বিরুদ্ধে পাঁচ-ছয়টি করে ছিনতাইয়ের মামলা আছে। এঁদের আইনের আওতায় এনে শহরে ছিনতাই কমানোর চেষ্টা চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত