Ajker Patrika

ডেঙ্গু ও ছাদকৃষি: প্রয়োজন সচেতনতা

শাইখ সিরাজ
ডেঙ্গু ও ছাদকৃষি: প্রয়োজন সচেতনতা

রাজধানীতে ডেঙ্গু এক আতঙ্কের নাম। পরিসংখ্যান বলছে, আমাদের দেশে ২০১৯ সালে এক লাখের বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিল। আর এ বছর ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতালে ২৩ হাজারের বেশি রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে, মারা গেছে ৮০ জনের ওপরে। শুধু ঢাকাতেই নয়, দেশের ৫০টি জেলায়ও ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। ডেঙ্গু পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশে মহামারি আকার ধারণ করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের দেশেও ডেঙ্গুর ভয়াবহ প্রকোপ লক্ষ করা যাচ্ছে। যেকোনো দুর্যোগেই প্রথম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আতঙ্কগ্রস্ত মানুষকে সচেতন করা।

আমরা টেলিভিশনে ডেঙ্গু প্রতিরোধে মানুষকে সচেতন করতে ফিলার তৈরি করে প্রচার করছি। ডেঙ্গু নিয়ে টেলিভিশন, পত্রিকায় নানান প্রচার অভিযান চলছে। কিন্তু কে জানে কেন মশার বিস্তারের খড়্গটা এসে পড়ে ছাদকৃষির ওপর। বছর তিনেক আগেও ডেঙ্গুর প্রকোপ যখন চরমে, মিরপুর থেকে এক গৃহিণী আমাকে ই-মেইলে লিখলেন ছাদকৃষিতে এডিস মশার বংশবিস্তার হচ্ছে—এমন অভিযোগে তাঁর ছাদকৃষি নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। শুধু মিরপুর থেকে নয়, যাত্রাবাড়ী থেকে একজন ফোনে জানালেন প্রতিবেশীরা তাঁর ছাদকৃষিকে মশার বংশবিস্তারের জন্য দায়ী করছেন। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ড. শেখ আহমাদ আল নাহিদ ফোন দিয়ে জানালেন, তিনিও তাঁর ছাদকৃষি গবেষণা নিয়ে প্রতিবেশীদের রোষে পড়েছেন।

ছাদকৃষি নিয়ে কাজ করছি সেই আশির দশক থেকে। তখন বলতাম, ‘ছাদবাগান’। কারণ সে সময় এটা যতটা না ছিল প্রয়োজনের, তার চেয়ে বেশি ছিল শখ বা বিলাসের। কিন্তু বর্তমান সময়ে যখন বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়ছে, প্রশ্ন উঠেছে নিরাপদ খাদ্যের বিষয়ে, এমনকি এই সময়ে ঢাকা শহরের বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে—যুক্তরাজ্যের ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের বৈশ্বিক বসবাসযোগ্য প্রতিবেদনে বিশ্বের ১৪০টি শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান ১৩৯। তখন সেটা আর শখ বা বিলাসের পর্যায়ে নেই। সারা বিশ্বই এখন ছাদকৃষি বা নগরকৃষির বিষয়টিতে সচেতন ও সোচ্চার। তাই ছাদকৃষি হয়ে উঠেছে প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ।

চ্যানেল আইয়ে আমি প্রায় ২৫০টির ওপর ছাদকৃষি পর্ব প্রচার করেছি। দেশের বিভিন্ন শহরের ছাদকৃষি দেখেছি। দেখেছি অবসরে চলে যাওয়া সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী কিংবা ব্যবসায়ী-শিল্পপতি নিজেদের অবসর সময়টাকে ফলপ্রসূ করে তুলছেন ছাদে একটুকরো ছাদকৃষির সঙ্গে যুক্ত হয়ে। তাঁরা বলেছেন, ছাদকৃষি দিয়েছে আত্মিক প্রশান্তি। যাঁর নিজস্ব ভবন ও ছাদ রয়েছে, তাঁরা নিজেদের ছাদে একস্তর বা দ্বিস্তরবিশিষ্ট ছাদকৃষি গড়ে তুলছেন। আবার যাঁদের নিজস্ব বাড়ির ছাদ নেই, তাঁরা বাড়ির মালিকের সঙ্গে কথা বলে ছাদের একপাশে বা বারান্দায় গড়ে তুলেছেন নিজস্ব ছাদকৃষি। এই ছাদকৃষি দিয়ে তিনি খাদ্যের চাহিদা পূরণ করছেন, মিটছে পারিবারিক পুষ্টি, পাচ্ছেন মানসিক প্রশান্তি। পাশাপাশি পালন করছেন একটা জাতীয় দায়িত্ব। শহরকে সবুজায়নে ও নগরে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতে সহায়তা করছেন।

একচিলতে ছাদের একদিকে চাষ হচ্ছে ফুল, অন্যদিকে ফল, বাদ যাচ্ছে না প্রয়োজনীয় সবজির আবাদও। সঙ্গে ছাদের এক কোণে নানান ঔষধি গাছ-গাছড়াও লাগাচ্ছেন অনেকে। অনেকেই গাছের পাশাপাশি মাছের চাষও করছেন ছাদে। ছাদকৃষির ভূমিকা অর্থনৈতিকভাবে যতটুকু, তার চেয়েও বেশি সামাজিক মেলবন্ধনে। কৃষির চর্চা মানসিক প্রশান্তি দেয়। কৃষির সান্নিধ্য মনের বর্জ্য দূর করে।

যাহোক, এডিস মশার বিস্তারে ছাদকৃষি বিষয়টিও এখন আলোচনা-সমালোচনায় এসেছে। ছাদকৃষি ও ছাদভিত্তিক মাছ চাষের প্রকল্পে এডিস মশা বংশবিস্তার করতে পারে—এমন আশঙ্কায় জনমনে ছাদকৃষি নিয়ে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে। কিন্তু গবেষণা ও তথ্য-প্রমাণ বলছে ভিন্ন কথা। পরিকল্পিত ও যথাযথ ব্যবস্থাপনা নিয়ে তৈরি ছাদকৃষিতে এমন ঝুঁকির আশঙ্কা নেই বললেই চলে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যাঁরা ছাদকৃষি করেন, তাঁদের ছাদ অপেক্ষা বাগানবিহীন ছাদ বেশি অপরিষ্কার ও অধিক ঝুঁকিসম্পন্ন। কারণ ছাদকৃষি উদ্যোক্তারা নিয়মিত ছাদে যান এবং ছাদে লাগানো গাছপালার যত্ন ও পরিচর্যা করেন। যাঁরা সত্যিকার অর্থে ছাদকৃষির সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের ছাদের টবে কখনোই পানি জমে থাকে না। কারণ তাঁরা জানেন টবে পানি জমলে গাছের ক্ষতি, গাছ মরে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। অন্যদিকে যে ছাদে ছাদকৃষি নেই, সেই ছাদে কেউ তদারকি ও পরিচর্যা করে না, যার ফলে ছাদ থাকে অপরিচ্ছন্ন।

শাইখ সিরাজগত কয়েক বছরে আমি তিন শতাধিক বাড়ির ছাদে গিয়েছি, যাঁরা ছাদকৃষি করেন। ছাদে এমন কোনো টব বা ড্রাম দেখিনি যেখানে পানি জমে আছে। তারপরও যাঁরা ছাদকৃষি করছেন, তাঁদের প্রতি পরামর্শ থাকবে ছাদকৃষির টবের মাটি প্রস্তুতির সময় যদি ৫ শতাংশ মাটি, ৮০ শতাংশ নারকেলের ছোবড়া বা তুষ, ১০ শতাংশ বালু এবং ৫ শতাংশ জৈব সার দিয়ে প্রস্তুত করেন, তাহলে অল্প পানি ব্যবহারেই টব অনেক সময় ধরে ভেজা থাকবে। টবের নিচে ছিদ্র থাকলে পানি কখনোই জমে থাকবে না। ছোট ও লতাজাতীয় গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে তলানি ও পাশে ছিদ্রযুক্ত ঝুলন্ত টব ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ছাড়া টবের পাশাপাশি একদিকে ঢালু অবকাঠামো তৈরি করেও গাছ লাগানো যেতে পারে অথবা টব বসানোর ভিত্তিটি সামান্য একদিকে ঢালু রাখা যেতে পারে। এর ফলে টবে আর পানি জমার সুযোগ থাকবে না। ছাদে লাগানোর জন্য উপযুক্ত গাছ নির্ধারণেও কিছু বিষয় খেয়াল রাখা বাঞ্ছনীয়। যে গাছগুলো কম পানিতে হয়, যেমন ড্রাগন, অ্যালোভেরা, মরিচ, ক্যাপসিকাম ইত্যাদি প্রজাতির গাছ ছাদে বেশি লাগাতে পারেন। অপরদিকে অতিরিক্ত ঝোপ সৃষ্টি করে এমন প্রজাতির গাছ লাগানো থেকে বিরত থাকুন। আপনারা হয়তো জানেন, কিছু প্রজাতির গাছ যেমন লেবুগাছ, গাঁদাফুল, লেমন গ্রাসের গন্ধ মশা সহ্য করতে পারে না। তাই ছাদে অন্যান্য গাছের সারির মাঝে মাঝে মশা তাড়ানোর জন্য এ ধরনের গাছ লাগাতে পারেন।

ছাদে মাছের ট্যাংকে বা চৌবাচ্চায় এডিস মশার ঝুঁকি নিয়ে অনেকেই সন্দিহান। মাছের ট্যাংকের পানিতে মাছ বেশির ভাগ সময়ই চলমান থাকে, যার ফলে পানিতে স্রোত ও ঘূর্ণন তৈরি হয়। আমার বাসার ছাদেও ছোটখাটো একটা ছাদকৃষি আছে। আমার স্ত্রী পারু সারা দিনই তা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। বলা বাহুল্য সতেজ ও নিরাপদ খাদ্যের তাগিদ এবং সবুজের সান্নিধ্যে মানসিক প্রশান্তি লাভের জন্যই এই ছাদকৃষির আয়োজন। অ্যাকুয়াপনিক্স পদ্ধতিতে ছাদকৃষি হওয়ায় ছাদের ট্যাংকে কিছু মাছেরও চাষ করা হচ্ছে। সেখানে আমি লক্ষ করেছি, এডিস মশা যেহেতু বদ্ধ পানিতে ডিম পাড়ে, তাই মাছ চাষের ট্যাংকে এদের ডিম পাড়ার আশঙ্কা নেই। এতেও যদি ঝুঁকি থেকে যায়, তবে ট্যাংকে বা চৌবাচ্চায় অ্যারেটর ব্যবহার করা বা মোটর দিয়ে কৃত্রিম পানির স্রোত বা ঝরনা তৈরি করা যেতে পারে। এতে মশা জন্মানোর ঝুঁকি যেমন কমবে, সঙ্গে সঙ্গে বাড়বে ছাদের সৌন্দর্য।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মশকনিধনে গাপ্পি, মসকুইটো ফিশ ও অন্যান্য লার্ভাভুক মাছ নালা-নর্দমা বা বদ্ধ জলাশয়ে ছাড়ার নজির দেখা যায়। কারণ, মশার ডিম ও লার্ভাএদের অতি প্রিয় খাদ্য। এডিস মশার বিস্তার নিয়ন্ত্রণে ফিলিপাইনের বিভিন্ন ফিশারিজ অর্গানাইজেশন সে দেশে নালা-নর্দমায় গাপ্পি মাছ ছাড়ার ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। গাপ্পি, মসকুইটো ফিশ ছাড়াও আমাদের দেশীয় খলিশা মাছ মশার ডিম ও লার্ভা নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে গাপ্পি মাছ আমদানি করা হয়েছিল মশা নিয়ন্ত্রণ করার জন্যই, যা এখন একটি জনপ্রিয় অ্যাকুরিয়াম মাছ। অবিভক্ত ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফ মশকনিধনে বাংলাদেশের নালা-নর্দমায় গাপ্পি মাছ ছাড়ার উদ্যোগ নেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ২০১৭ সালে একটি গবেষণায় বিভিন্ন ড্রেনের ও নর্দমার প্রচণ্ড নোংরা পানিতে প্রচুর পরিমাণ ‘মশাভুক মাছ’ পাওয়া গিয়েছিল, যার ওপর পরীক্ষার ফলস্বরূপ মশকনিধনে এসব মশাভুক মাছের ব্যবহারের চিন্তা আরও জোরদার হয় আমাদের দেশে। তাই এ ধরনের মাছের প্রজাতি এডিস মশা থেকে বাঁচতে ছাদকৃষিতে লালন করা যেতে পারে। গাছে পানি সরবরাহের জন্য নালা বা চ্যানেল তৈরি করেন অনেকেই। এ ক্ষেত্রে সেসব নালা বা চ্যানেলে গাপ্পি ও অন্যান্য লার্ভাভুক মাছ ছাড়া যেতে পারে।

আমরা অধিকাংশই নাগরিক হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালন করি না। নিজের বাড়ির আঙিনা ও চারপাশ পরিচ্ছন্ন রাখা নাগরিক দায়িত্ব। যেকোনো সমস্যা সমাধানে সবচেয়ে আগে যে বিষয়টি দরকার তা হলো, সবার সচেতনতা ও দায়িত্বশীল আচরণ।

ছাদকৃষি উদ্যোক্তাদের সচেতন থাকতে হবে যেন ছাদের কোথাও টবে বা ড্রামে পানি না জমে থাকে। ছাদকৃষিকে ডেঙ্গুর ঝুঁকিমুক্ত রাখতে প্রয়োজন সচেতনতা ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা। যেখানে এসি, রেফ্রিজারেটরের জমা পানিতে মশা জন্মানোর ঝুঁকি থাকার পরেও তার ব্যবহার নিয়ে মানুষের নেতিবাচক চিন্তা নেই, সেখানে ছাদবাগানের ঝুঁকি চিন্তা করে এতে নিরুৎসাহিত হওয়া অবশ্যই যুক্তিযুক্ত নয়।

সরকার ছাদকৃষি নিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও চলছে নানাবিধ গবেষণা, পৌর-দপ্তরও ছাদকৃষি উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা দিচ্ছে। সর্বোপরি সবার সহযোগিতায় ছাদকৃষি নগর সবুজায়নে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ছাদকৃষি যেমন আমাদের শহরের জন্য প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন ডেঙ্গু প্রতিরোধে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা।

লেখক: পরিচালক ও বার্তা প্রধান, চ্যানেল আই

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত