Ajker Patrika

ছেলে ভোলানো কথায় পড়ছেন বড় বিপদে

শিপুল ইসলাম , তারাগঞ্জ
আপডেট : ০৮ জানুয়ারি ২০২২, ১১: ১২
ছেলে ভোলানো কথায় পড়ছেন বড় বিপদে

তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালী ইউনিয়নের ইকরচালী গ্রামের বাসিন্দা মোনা মিয়া। হঠাৎ করেই পায়ে ফোসকার মতো কিছু একটা দেখতে পান। পরে স্থানীয় বাজারে বসা হাতুড়ে কবিরাজের কাছ থেকে মালিশের তেল কেনেন। একপর্যায়ে পুরো পা ফুলে যায়। পচন ধরে। পরে চিকিৎসকের কাছে গেলে জানতে পারেন পায়ের পচন অনেক দূর এগিয়েছে। কেটে ফেলা ছাড়া উপায় নেই। পরে পা কেটে ফেলতে বাধ্য হন। শুধু মোনা মিয়া নয়, তাঁর মতো আরও অনেকেই হাতুড়ে কবিরাজের ছেলে ভোলানো কথায় অপচিকিৎসা নিয়ে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন। প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন গ্রাম-গঞ্জের সহজ-সরল মানুষ।

তারাগঞ্জের হাট-বাজারগুলোতে হাতুড়ে কবিরাজদের দৌরাত্ম্য বেড়ে গেছে। চিকিৎসার নামে তাঁরা চালিয়ে যাচ্ছেন অপচিকিৎসা। তাঁদের মিথ্যা কথার ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে ১৫টি হাট বাজার রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় হাট তারাগঞ্জ, ইকরচালী, ডাংগীরহাট, বালাবাড়ি, চিকলী ও বুড়িরহাট।

গতকাল শুক্রবার তারাগঞ্জ হাটে আসা বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাটে গানের আসর জমিয়ে বিভিন্ন প্রকার রোগ নিরাময়ের শতভাগ গ্যারান্টি দিয়ে হাতুড়ি কবিরাজেরা ওষুধ বিক্রি করে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছেন। আসরে হাতুড়ে কবিরাজ বা হেকিম হাজির হয়ে মিথ্যা চটকদার কথায় নিজের তৈরি সালসার (ওষুধ) গুনগান বলতে শুরু করেন। তাঁরা সালসার বোতল তুলে ধরে পেটের ব্যথা, গ্যাস্ট্রিক, আলসার, বাত, আমাশয়, মেহ, ডায়াবেটিস, সর্দি-কাশি, অ্যাজমা, যৌনরোগসহ বিভিন্ন জটিল ও কঠিন রোগ নিরাময়ের শতভাগ গ্যারান্টি দিয়ে ওষুধ বিক্রি করেন তাঁরা। গ্রাম এলাকার সহজ-সরল মানুষও খুব সহজে তাঁদের কথায় বিশ্বাস করে ওষুধ কিনছেন।

তারাগঞ্জ হাটে কথা হয় চিকলী গ্রামের দিনমজুর দৌলত মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মুই এই কবিরাজের কথা বিশ্বাস করি বিপদে পড়ছিনু। এক মাস আগোত তারাগঞ্জ হাটোত ৩০ টাকা দিয়া কবিরাজেরটে পেটের ব্যথার ১০টা বড়ি কিনছিনু। বড়ি খাওয়ার পর মোর পাতলা পায়খানা ধরছেলো। পরে তারাগঞ্জ হাসপাতালোত ডাক্তার দেখে স্যালাইন ওষুধ খেয়া ভালো হচুন।’

ইকরচালী গ্রামের মোনা মিয়া বলেন, ‘হাতুড়ে কবিরাজের তেল মালিশ করে আমি পঙ্গু হয়েছি। সমস্যা হলে মানুষ যেন সরকারি হাসপাতালে যায়।’

গতকাল শুক্রবার তারাগঞ্জ হাটের মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে গিয়ে দেখা যায়, এক কবিরাজ গানের আসর জমিয়ে বিভিন্ন প্রকার রোগ নিরাময়ের শতভাগ গ্যারান্টি দিয়ে ওষুধ বিক্রি করছেন। তাঁর নাম মফেল উদ্দিন বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, তাঁর ওষুধ খেলে সব ধরনের রোগ ভালো হয়। পরে সাংবাদিক পরিচয় জানার পর তিনি দ্রুত স্থান থেকে সটকে পড়েন।

ওই দিন হাটের দক্ষিণ দিকে রাস্তার পাশে তারাগঞ্জ ও/এ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রবেশদ্বারে গানের ফাঁকে ফাঁকে সর্বরোগের স্বপ্নযোগে পাওয়া গাছ-গাছালির তৈরি ওষুধ বিক্রি করছিলেন এক কবিরাজ। আসর শেষে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ভাই জোর করে তো কারও কাছে ওষুধ বেচি না। আগের যুগের মানুষ তো গাছগাছালির ওষুধের ওপর নির্ভরশীল ছিল। আমার ওষুধে মানুষের উপকার ছাড়া ক্ষতি হয় না।’

তারাগঞ্জ থানার ওসি ফারুক আহম্মেদ বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ইউএনও আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘খুব শিগগিরই হাট বাজারে অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এসব কবিরাজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইউএস-বাংলার বহরে যুক্ত হলো তৃতীয় এয়ারবাস ৩৩০, এয়ারক্র্যাফট দাঁড়াল ২৫টিতে

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ল ১৫ শতাংশ, সঙ্গে শর্ত

আজকের রাশিফল: আপন গোপন তথ্য সামলে রাখুন, প্রচুর ভালোবাসুন

গাজায় যুদ্ধবিরতি ভেঙে এক দিনে ১৫৩ টন বোমা ফেলেছে ইসরায়েল

ঝালকাঠিতে পদ স্থগিত নেতাদের নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতার সভা: দলে ক্ষোভ ও বিভক্তি বাড়ছে

এলাকার খবর
Loading...