Ajker Patrika

একজন জামালউদ্দিন ও চাপের মুখে ‘বোধোদয়’

সম্পাদকীয়
Thumbnail image

খবরটি শুনে খুশি হওয়া উচিত, কিন্তু সে রকম খুশি হতে পারছি না। একজন ক্যানসার আক্রান্ত কর্মচারীকে তাঁর পাওনা বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছিল না। কারণ আর কিছু নয়, বেতন-ভাতার  ৩ লাখ ১১ হাজার টাকা কি কোনো রকম প্রতিবন্ধকতা ছাড়া হস্তান্তর করা যায়? শুরুতে সেই প্রতিবন্ধকতাই সৃষ্টি করেছিলেন পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জামালউদ্দিন। দিচ্ছিলেন না পাওনা টাকা।

আর একটু খোলাসা করা না হলে ঘটনাটির গুরুত্ব বোঝা যাবে না। গাজীপুরের শ্রীপুরে পরিবার পরিকল্পনা কল্যাণ সহকারী শামসুন নাহার শাহীন ক্যানসারে আক্রান্ত হন। এরপর কয়েক বছর ধরে বকেয়া বেতন-ভাতার জন্য সংগ্রাম করেন। তাঁকে সেই টাকা মানবিক কারণেই শুধু নয়, সাধারণ প্রক্রিয়ায়ই দিয়ে দিতে পারতেন জামালউদ্দিন, কিন্তু তিনি শুধুই ঘোরাচ্ছিলেন তাঁকে। কেন ঘোরাচ্ছিলেন? সেটা খুব পরিষ্কার—এতগুলো টাকার চেক দেবেন, কিন্তু বিনিময়ে কিছুই মিলবে না—সে কী রকম কথা! তাই তিনি বারবার ঘুষের ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। ঘুষ না পেয়ে বেতন-ভাতা আটকে দেন তিনি।

শামসুন নাহারের এই দুর্দশা নিয়ে কদিন আগে একটি সংবাদ ছাপা হয়েছিল আজকের পত্রিকার অনলাইনে। সংবাদটি গাজীপুরের ডিসি ও ইউএনওর নজরে পড়ে। এরপর তো আর জামালউদ্দিনের কিছুই করার ছিল না। তিনি দ্রুত বকেয়া বেতন-ভাতার চেক দিয়ে আসেন শামসুন নাহারের নান্দিয়া সাঙ্গুন গ্রামে গিয়ে। চেক হস্তান্তরের সময় তিনি ক্ষমাও চান।

এখানে এসেই আমাদের সব যুক্তি হেরে যায়। আমরা গভীর বেদনার সঙ্গে বুঝতে শুরু করি, প্রচলিত নিয়ম নয়, ক্ষমতাই মানুষের ব্যবহারের নিয়ামক হয়ে উঠেছে। জামালউদ্দিন সাহেবের হাতে যখন পাওনা টাকা দেওয়ার ক্ষমতা ছিল, তখন তিনি সেই ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। ঘুষ না দিলে টাকা হস্তান্তর করবেন না, সেটা জানিয়ে দিয়েছেন ভুক্তভোগীকে। এরপর যখন তাঁর ঘুষের আবদারের কথা প্রকাশ পেল পত্রিকায়, তা চোখে পড়ল এলাকার ডিসি ও ইউএনওর, তখন ক্ষমতার ভরকেন্দ্রও পরিবর্তিত হয়ে গেল। এবার তাঁদের দুজনের ক্ষমতার চাপেই ‘সৎ মানুষ’ হয়ে গেলেন জামালউদ্দিন। যেভাবেই হোক, ‘নীতি-নৈতিকতা’ সব ফিরে এল তাঁর মধ্যে এবং বিলম্ব না করেই তিনি চলে এলেন দুর্দশাগ্রস্ত নারী শামসুন নাহারের কাছে। চেক হস্তান্তর করলেন তাঁকে।

জামালউদ্দিন ক্ষমা চেয়েছেন নিজের ‘ভুল’-এর জন্য। শামসুন নাহারের কাছে তো বটেই, আজকের পত্রিকার প্রতিবেদকের কাছেও তিনি ক্ষমা চেয়েছেন। আমাদের প্রশ্ন: এই ক্ষমা কি পরবর্তীকালেও তাঁকে সৎ কর্মকর্তা হিসেবে বাঁচিয়ে রাখবে? নাকি এ রকম ‘অস্বস্তিকর সংবাদ’ কিংবা ডিসি-ইউএনওর চাপ ছাড়া এই নীতি-নৈতিকতার বালাই থাকবে না তাঁর জীবনে? আবার তিনি ফিরে যাবেন ঘুষের আবর্তে?

এই জিজ্ঞাসা শুধু তাঁর ব্যাপারেই নয়, প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা সব অসৎ কর্মজীবীর প্রতিই জিজ্ঞাসাটা রাখা যায়। অসততা যখন কোনো ক্ষমতা বা শক্তির মদদ পায়, তখন তা ফুলেফেঁপে ওঠে। জামালউদ্দিন এবং তাঁর মতো কর্মজীবীদের বোধোদয় হোক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত