৬ কিমিজুড়ে যানবাহনের সারি

দেশের দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলের প্রবেশদ্বার দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে যানবাহনের দীর্ঘ সারি সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকেই ঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোয়ালন্দ ফায়ার সার্ভিস স্টেশন পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে আটকে পড়ে ছিল শত শত বাস ও ট্রাক। ফেরি স্বল্পতা, অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ ও পাটুরিয়া ঘাটে ফেরি ডুবির ঘটনায় এই সারি বলে জানিয়েছে ঘাট কর্তৃপক্ষ।

গতকাল সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, আটকে পড়া যানবাহনের মধ্যে পণ্যবাহী ট্রাকের সংখ্যাই বেশি। চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিটা ট্রাককে ১ থেকে ২ দিন ও বাসগুলোকে কমপক্ষে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে ফেরি পেতে।

এদিকে প্রখর রোদ আর গরমে আটকে থাকা গাড়িচালক, সহকারী ও বাসের যাত্রীদের রাতদিন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকামুখী গাড়িগুলো ফেরিঘাটের দিকে এক কিলোমিটার রাস্তা যেতে প্রায় ৪ ঘণ্টার বেশি সময় লাগছে। মহাসড়কের পাশে খাওয়াদাওয়া ও টয়লেটের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন তাঁরা। গাড়ি ছেড়ে বাইরে অন্য কোথাও যেতেও পারছেন না।

রড বোঝাই ট্রাক নিয়ে বেনাপোল থেকে রাজধানীতে যাবেন চালক আমিনুল ইসলাম। তিনি বুধবার দিবাগত রাত ৩টার সময় গোয়ালন্দ মোড়ে এসে সিরিয়ালে আটকা পড়েন। সেখান থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় ঘাটের দিকে এসে সকাল ১০টায় তিনি ঘাট থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে ছিলেন। অর্থাৎ প্রায় ৩২ ঘণ্টা সিরিয়ালে থেকেও ফেরির দেখা পাননি তিনি। এখনো ফেরি পেতে আরও ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা লাগবে বলে জানান আমিনুল।

যশোর থেকে নারায়ণগঞ্জগামী ট্রাকের চালক আলামিন জানান, বৃহস্পতিবার বেলা ২টায় ঘাট এলাকায় আসেন তিনি। প্রায় ২০ ঘণ্টায় তিনি ঘাট এলাকার সড়ক ও জনপথের বাংলো পর্যন্ত পৌঁছেছেন। তিনি বলেন, ‘এটা কোনো ব্যবস্থা হলো! এখন আর কুলাতে পারছি না। ফেরিতে উঠতে আর কয় ঘণ্টা সময় লাগবে সেটাই ভাবছি। আমার পেছনে আরও কয়েক শ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান আটকায় আছে। বাসর সঙ্গে পাশাপাশি কিছু পণ্যবাহী গাড়িও ফেরিতে ওঠার সুযোগ দেওয়া উচিত।’

গোল্ডেন লাইন পরিবহনের দৌলতদিয়া ঘাট তত্ত্বাবধায়ক আবুল কালাম বলেন, প্রতিদিন ১১টার পরে দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চল থেকে দূরপাল্লার যাত্রীবাহী পরিবহন আসতে থাকে। পরিবহনের জন্য আলাদা সিরিয়াল থাকলেও শুক্রবার বাসের সিরিয়ালে কিছু ট্রাকও দেওয়া হয়েছে। যার ফলে বাসগুলোকে ফেরি পেতে অনেক বেশি সময় লাগছে। আবার বিকেলের দিকে কাঁচা সবজির গাড়ির চাপ বাড়তে শুরু করে। এ কারণে সন্ধ্যা থেকে ঘাটে চাপ আরও বাড়তে শুরু করে।

বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক মো. জামাল হোসেন বলেন, ২০টি ফেরির মধ্যে একটি দুর্ঘটনায় পড়েছে। ৩টি ফেরি ডকইয়ার্ডে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে থেকে আবার একটি ফেরি ডুবে যাওয়া যানবাহন তোলার কাজে ব্যবহার হওয়ায় এখন মোট ১৫টি ফেরি চলছে। ফেরি ডুবে যাওয়ার কারণে একটি ঘাট বন্ধ আছে। আবার বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথের যানবাহন দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথ ব্যবহার করায় গাড়ির বাড়তি চাপ পড়ছে।