Ajker Patrika

টানা বৃষ্টিতে ভোগান্তি

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১৫: ৪৯
Thumbnail image

ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে মৌলভীবাজারে সকাল থেকে শুরু হয় টানা বৃষ্টি। ফলে ঘর থেকে বের হওয়া খেটে খাওয়া লোকজন ও অফিসগামীদের পড়তে হয় ভোগান্তিতে। পাশাপাশি শীতের আবহ থাকায় ভোগান্তি বেড়েছে দ্বিগুণ। এর মধ্যে রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যাও প্রতিদিনের তুলনায় ছিল কম।

শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, গতকাল সোমবার মৌলভীবাজারে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

সরেজমিন মৌলভীবাজার শহর ঘুরে দেখা যায়, বৃষ্টির মধ্যে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বের হয়েছেন। কেউ অফিসে, কেউ ব্যবসায় এবং শিক্ষার্থীরা ছুটছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। এর মধ্যে একদিকে বৃষ্টি অন্যদিকে গাড়ির সংকটে দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায় দ্বিগুণ।

মৌলভীবাজার শহরের চৌমোহনা পয়েন্ট থেকে প্রতিদিন মানুষ এসে কাজে নিয়ে যান আব্দুল্লাহ মিয়াকে। কিন্তু বৃষ্টি থাকায় কেউ নিতে আসেননি। তিনি বলেন, ‘কাজের ধরন অনুযায়ী প্রতিদিন ৪০০ থেকে ১ হাজার টাকা রোজগার করি। কিন্তু আজ বৃষ্টির কারণে কাজ পাইনি। ৬ সদস্যের পরিবার কাজ না করলে খাব কী?’

রিকশাচালক সুনু আলী বলেন, ‘সকালে রিকশা নিয়ে বের হয়েছি, রাস্তায় মানুষ কম। দুপুর পর্যন্ত ৮০ টাকা রোজগার করেছি। এই টাকায় পরিবারের একদিনেরও খরচও হবে না। মালিককে কীভাবে টাকা দেব, তা নিয়ে চিন্তায় আছি। এদিকে বৃষ্টিতে ভিজে গেছি। প্রচণ্ড ঠান্ডা লাগায় চালাতে না পেরে বাড়ির পথে যাচ্ছি।’

একইভাবে সমস্যায় পড়েছে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা। এইচএসসি পরীক্ষার্থী তমা আক্তার বলে, ‘শীতের সঙ্গে বৃষ্টি হওয়ায় বেশ ঠান্ডা লাগছে। সকালে বের হয়েছি পরীক্ষা দিতে। কিন্তু বৃষ্টির কারণে গাড়ির জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছে। পরীক্ষা শুরুর কিছুক্ষণ আগে কেন্দ্রে প্রবেশ করেছি।’

এদিকে আমন ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত কৃষকেরা। কিন্তু দুদিন ধরে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির কারণে ধান কাটা, মাড়াই ও শুকানো যাচ্ছে না।

কথা হয় সদর উপজেলার কৃষক জামাল মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে বিপাকে পড়েছি। মাঠে এখনো ধান রয়েছে—সেগুলো কাটা হয়নি। এখনো বেশ কিছু ধান কেটে রাখা আছে মাড়াইয়ের অপেক্ষায়।’

রাজনগরের কৃষক বেবি বেগম বলেন, ‘কড়া রোদ না হলে ধান শুকানো যায় না। অনেক ধান বাড়ির আঙিনা ও বারান্দায় তেরপল দিয়ে ঢেকে রেখেছি। এগুলো দ্রুত না শুকালে পচে যাবে।’

ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন রবিশস্য ফলানো কৃষকেরাও। দুই দিনের একটানা বৃষ্টিতে বিভিন্ন শাকসবজির খেতে পানি জমে গোড়া পচে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা। কিছু সবজি, যেমন টমেটোসহ অনেক সবজির গোড়া নরম ফলে সহজেই পচে যায়। বৃষ্টি আরও বাড়লে এবং তা অব্যাহত থাকলে ফসলে ক্ষতি হবে বলে জানান বোরোচাষি আরিফ মিয়া।

এ ছাড়া মৌলভীবাজার জেলায় রয়েছে ৯২টি চা-বাগান। সব কটি চা-বাগানেই পাতা তোলা বন্ধ রয়েছে বৃষ্টির জন্য। একদিকে বৃষ্টি এবং শীতের প্রভাবে সমস্যায় পড়েছেন চা-শ্রমিকেরা।

চা-জনগোষ্ঠীর সদস্য সংবাদকর্মী মিন্টু দেশোয়ারার বলেন, ‘যদিও এখন অফপিক মৌসুম চলে, তারপর চা-শ্রমিকেরা প্রতিদিন কাজে যান, চা-পাতা তোলেন। কিন্তু বৃষ্টির ফলে চা-শ্রমিকেরা কাজে যেতে পারছেন না। কাজ না করলে তাঁরা পারিশ্রমিকও পাবেন না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত