বিরূপাক্ষ পাল

বাংলাদেশের অর্থনীতি কোভিড-পূর্ব সময়ে প্রায় ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছুঁই ছুঁই করছিল। কিন্তু কোভিড-উত্তর অর্থনীতি মূলত ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটির কারণে এক অনভিপ্রেত সংকটের মধ্যে পতিত হয়, যার পেছনে কোভিড বা রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ—এর কোনোটিই দায়ী নয়। বিগত সরকারের নেতা বা কর্মীরা সে রকম যুক্তি খাড়া করার চেষ্টা করলেও অর্থনীতিবিদেরা তা গ্রহণ করেননি। কারণ, কোভিডের আগে থেকেই বাংলাদেশে দুটো সমস্যা দানা বাঁধছিল। এগুলো হলো: এক. ব্যাংকিক খাতের বর্ধমান খেলাপি ঋণের সংস্কৃতি এবং দুই. ত্রুটিপূর্ণ বিনিময় হার বা কৃত্রিমভাবে ডলারের নিম্নমূল্য চালিয়ে রাখা। আন্তর্জাতিক লেনদেনে আজকের ডলার-সংকট ও রিজার্ভ ঘাটতি এবং অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তারল্যসংকট—এই দুই সমস্যারই বীজ বপন করা হয়েছিল কোভিড-পূর্ব সময়ে।
কোভিড সারা বিশ্বে মন্দা নামিয়ে দেয়। মন্দার একটি সুবিধা হচ্ছে, এ সময়ে মূল্যস্ফীতি নিস্তেজ হয়ে আসে। কোভিড কমে যেতে থাকলে ২০২১ সাল থেকে আকস্মিকভাবে দীর্ঘ সময়ে চাপিয়ে রাখা চাহিদা সব দেশেই মাথাচাড়া দেয়। কিন্তু সেভাবে জোগানযন্ত্র প্রস্তুত ছিল না। অনেক ক্ষেত্রে চাহিদার উচ্চ চাপে জোগানের শিকল ছিঁড়ে যায়। একে বিপণনশাস্ত্রের ভাষায় জোগান শিকলের বিভ্রাট বা ‘সাপ্লাই চেইন ডিজরাপশন’ বলে। এ সময় চাহিদার তুলনায় জোগান ক্ষমতার পশ্চাৎপদতায় একধরনের মূল্যস্ফীতির সৃষ্টি হয়। দ্বিতীয়ত, কলকারখানা ও অফিস-আদালত দ্রুত হারে জেগে ওঠে। সৃষ্টি হয় অতিরিক্ত শ্রমচাহিদার, যা মজুরি বাড়িয়ে দিয়ে খরচতাড়িত মূল্যস্ফীতি বা ‘কস্ট-পুশ ইনফ্লেশন’ সৃষ্টি করে।
চলমান এই দুই ধরনের মূল্যস্ফীতি যেকোনো অর্থনৈতিক নবজাগরণের সঙ্গী—যা অর্থনীতির জন্য ততটা অকল্যাণকর নয়। কারণ, এ সময়ে মানুষের কাজের নানা ক্ষেত্র তৈরি হয়, বেকারত্ব কমে, উৎপাদনশীলতা বাড়ে এবং মজুরিও বাড়ে—যা বর্ধিত মূল্যস্ফীতিকে ছাপিয়ে যায়। তা ছাড়া জোগান বিঘ্নিত হওয়ায় যেটুকু মূল্যস্ফীতি জেগে ওঠে, তা আবার জোগান-কর্ম স্বাভাবিক হয়ে এলে ঝিমিয়ে পড়ে। তবে মজুরি বৃদ্ধিজনিত মূল্যস্ফীতি বেশ কিছুদিন বাজারে থেকেই যায়। সেটি স্বাভাবিক।
বিশ্বাঙ্গনে উদীয়মান অর্থনীতির চাকায় হঠাৎ করে কম্বল পেঁচিয়ে দিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি ইউক্রেন আক্রমণ করে বসলেন ২০২২-এর ফেব্রুয়ারিতে। এতে বিশ্বব্যাপী তেলের দাম বেড়ে গেল। রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা দুনিয়ার নিষেধাজ্ঞায় তেল ও পণ্যের জোগানে আরও বিঘ্ন সৃষ্টি হলো। মূল্যস্ফীতি বাড়তে লাগল মূলত জোগান-বিভ্রাট থেকে। এর সঙ্গে ভীতি থেকেও বেড়ে গেল প্রত্যাশাজনিত মূল্যস্ফীতি। সারা বিশ্বের সব কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণ করে সুদহার বাড়াতে থাকে। ঠিক এই সময়ে বাংলাদেশে বড়লোক ঋণগ্রহীতাকে সুবিধা দেওয়ার জন্য ‘বিনিয়োগ বাড়বে’ এমন অছিলায় সুদহারে ৯ শতাংশের টুপি পরিয়ে রাখা হয়। আমানতের ওপর দেওয়া হলো ৬ শতাংশের ছাদ। এই নয়-ছয় সুদহারের কাহিনি কোভিডের সময় শুরু হলেও কোভিড-উত্তর এটিই ছিল সবচেয়ে অসংগত সরকারি নীতি।
২০২২ সালে প্রকৃত মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ শতাংশের ওপরে। এমন সময়ে ৯ শতাংশের সুদহার বজায় রাখা মানে ধনিক গোষ্ঠী শতকরা শূন্য প্রকৃত সুদে ব্যাংক থেকে শতকোটি টাকার ঋণ বের করে নিয়েছে। দৃশ্যমান সুদহার থেকে মূল্যস্ফীতি বিয়োগ করলে প্রকৃত সুদহার পাওয়া যায়। এই ঋণপ্রাপক সম্প্রদায় বাজারে তারল্য বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতির অগ্নিতে ঘৃতাহুতি দিয়েছে। অন্যদিকে অতিরিক্ত উন্নয়ন প্রকল্পে জর্জরিত উচ্চাভিলাষী বাজেটে রাজস্ব সক্ষমতা দুর্বলতর হতে থাকে। ধনিক গোষ্ঠী কর দিতে পছন্দ করে না। এই দুর্বলতা কাটানোর জন্য সরকার উচ্চ ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকিং খাত থেকে প্রচুর অর্থ তুলে নেয়—যা বিশেষত খাদ্য মূল্যস্ফীতিকে আরও অসহনীয় পর্যায়ে নিয়ে ১২ শতাংশে উন্নীত করে। বাংলাদেশের বর্তমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি বাজার অর্থনীতির বাস্তবতাবিমুখ সেই নয়-ছয় সুদটুপির শাস্তিমাত্র। তদপুরি বিগত সরকারের রাজস্ব অক্ষমতা রাজস্ব নীতির সংকোচনমূলক হাতিয়ারকেও নষ্ট করে দিয়েছে। এটি মূল্যস্ফীতিকে আরও চাঙা করেছে। এখানে মূল্যস্ফীতির প্রায় সবটাই সুদনীতির ভুল, ধনিকতুষ্টি ও রাজস্ব অক্ষমতা থেকে উৎসারিত। কোভিড বা পুতিনের ইউক্রেন আক্রমণের মতো অজুহাত শাক দিয়ে মাছ ঢাকার প্রচেষ্টামাত্র।
সুদহার বাড়ানো হয়নি বলে বাংলাদেশে বিনিয়োগের প্রকৃত সুদহার বিদেশিদের কাছে অনাকর্ষণীয় হয়ে পড়ায় এক ধাক্কায় বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১৫ বিলিয়ন বিনিয়োগ লেনদেনের ভারসাম্যের আর্থিক হিসাবকে অনেকটা শূন্য করে বাইরে চলে গেছে। সেই থেকে ২০২২-২৩ কালপর্বে অভূতপূর্ব রিজার্ভ-সংকটে নিমজ্জিত হয়েছে বাংলাদেশ। ২০১০ দশকের মধ্যভাগে এবং এমনকি শেষ ভাগেও উচ্চ রিজার্ভ যেখানে বাংলাদেশের জন্য ছিল এক পরম স্বস্তির আসন, তা অল্প দিনের মধ্যেই এক দুশ্চিন্তার বিষয়ে পরিণত হলো। শক্তির অবয়ব বছর তিনেকের মধ্যেই সংকটের বিষণ্ন বদনে পরিণত হলো—যার সবটাই ছিল নীতিপ্রণেতাদের অদক্ষতা ও অবোধগম্যতার ফসল। নীতিকর্তারা বিশেষ করে এই সময়ের অর্থমন্ত্রী ও গভর্নররা যে সমস্যাগুলো বুঝতেন না, তা নয়। বুঝতেন যে সুদহার বাড়ালে বড় ঋণগ্রহীতা অসন্তুষ্ট হন কিংবা খেলাপি ঋণের জন্য চাপ দিলে ধনিক গোষ্ঠী রাজনৈতিক প্রভাব খাটায়। গলদ সেখানে।
সারা বিশ্বে যখন সুদহার বাড়ছিল, তখন সম্ভবত বিশ্বের একমাত্র রাষ্ট্র বাংলাদেশ অর্থনৈতিক শাস্ত্রসম্মত কোনো নীতিরই তোয়াক্কা করেনি। ভারত, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান সঠিক নীতির পথে হেঁটে তাদের রিজার্ভ-সংকট ও মূল্যস্ফীতি—এ দুয়েরই অনেকটা সমাধান করে ফেলেছে। ভারতে মূল্যস্ফীতি এখন ৫ শতাংশের নিচে। অথচ বাংলাদেশে তা অনেক দিন ধরেই বেপরোয়াভাবে ১০ শতাংশের ওপর। ভারতের রিজার্ভ ৬৪০ বিলিয়নের ওপর। সে তুলনায় জিডিপির বিচারে বাংলাদেশের রিজার্ভ হওয়া উচিত কমপক্ষে ৮০ বিলিয়ন ডলার। অথচ এখানে তা ১৯-২০ বিলিয়নের ঘরে পড়ে আছে। কিংবা ক্রমাগত কমছে। আতঙ্ক বাড়াচ্ছে। এটি হওয়ার কথা ছিল না। অর্থনীতির অর্জনকে এভাবে সংকটাপন্ন করা একধরনের অন্যায়।
এদিকে প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও ডলারের বাজারভিত্তিক দাম কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিশ্চিত করতে পারেনি বলে এই ফারাক কাজে লাগিয়ে হুন্ডি ব্যবসা জমজমাট। বাইরে মুদ্রা পাচারের ক্ষেত্রে হুন্ডির ভূমিকা বেশ জোরালো। ডলারের দাম বাজারমূল্যের চেয়ে সর্বদা কম থাকায় কিছু মানুষ ডলার গোপনে জমিয়ে রেখে পরে তা বিক্রি করে লাভ করতে পারে। কারণ, তারা জানে যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কৃত্রিমভাবে ডলারের দাম কমিয়ে রেখেছে বলে বাজারে ডলারের দাম বাড়তেই থাকবে—অনেকটা স্বর্ণের দামের মতো। ফাইন্যান্সের ভাষায় ‘আরবিট্রাজ’ বা দামভিন্নতা থেকে মুনাফা করার বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংকই এর নীতিজড়তা দিয়ে নিশ্চিত করে দিয়েছে। একবার বাজারের সঙ্গে ডলারের দাম সমন্বয় করে ফেললে এতে প্রাথমিক একটা ধাক্কা আসত। কিন্তু এতে হুন্ডি ব্যবসায়ী বা ডলারের মজুতদারেরা আর ব্যবসা করার সুযোগ ও পরিবেশ পেত না। সে পথে হাঁটা হয়নি ক্ষমতাধর আমদানিকারকদের সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে। এগুলো ছিল নীতির ভুল।
নীতি দিয়েও যে দুর্নীতি দমন করা যায়, তা আমাদের সে সময়ের নীতিনির্ধারকেরা কি জানতেন না? শুধু আনুগত্যের অন্বেষণে সরকার যদি শুধু অবসরপ্রাপ্ত আমলাকে সর্বত্র বসিয়ে রাখে, তাহলে মেধা, উদ্ভাবন বা দুর্যোগ মোকাবিলার প্রজ্ঞা মিলবে না। সে জন্য বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলো বিশেষত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল ও দূষিত হয়েছে। উদ্ভাবন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থা শোচনীয়। জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির সূচকের অবস্থাও তথৈবচ—এমনকি প্রতিবেশীদের তুলনায় অধিকাংশ সময়েই বাংলাদেশ পিছিয়ে। শিক্ষার যথাযথ মর্যাদা বা বিশেষজ্ঞের সম্মান পেছনে পড়ে থাকে। অগ্রাধিকার পায় রাজনৈতিক বিবেচনা ও আমলাদের কাঙ্ক্ষিত ছক। একশ্রেণির আমলা ও উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ব্যবসায়ীর হাতে নীতিনির্ধারণের কাজ, সংসদ নির্বাচন এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা এক বন্দিদশায় নিমজ্জিত হয়ে রয়েছে।
২০১০ দশকের মধ্যভাগে সরকারের উন্নয়নদর্শন মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছিল। সরকার ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন ও জ্বালানি-সংকটের সমাধানে মনোযোগী হয়, যার ফসল জনগণ এখন ভোগ করছে। পদ্মা সেতু বা মেট্রোরেলের মতো প্রকল্প এ দেশের জন্য ছিল স্বপ্নাতীত। কিন্তু সমস্যা বাধিয়ে দিয়েছে ব্যাংকিং খাতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, ব্যবসায়ীপ্রধান সংসদের দ্বারা অনুমোদিত ব্যাংকিং খাতের পারিবারিকীকরণ, খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা পরিবর্তন, ভুল সুদনীতি ও অ-বাজারীয় বিনিময় হার বজায় রাখা, ধনিকতুষ্টির স্বার্থে করকাঠামো ও প্রশাসনকে ব্যবহার, কর ফাঁকিকে শাস্তিযোগ্য না করা, স্বেচ্ছাকৃত খেলাপি ও শেয়ারবাজারের অনাচারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া এবং সর্বোপরি বিচার বিভাগের মন্থরতম গতি। অবকাঠামোতে মান ও অপচয়—এ দুই-ই বেড়েছে; কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল নেতৃত্বে অধঃপতিত হয়েছে। শিক্ষকদের রাজনীতিতে অতি উৎসাহ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মানকেও দাবিয়ে দিয়েছে।
কালোটাকা সাদা করার সরকারি কসরত ব্যবসা ও আয় উপার্জনে নৈতিকতাকে নিরুৎসাহিত করেছে। তাই উন্নয়নের ঘোটক রোগাক্রান্ত। স্বাস্থ্য বাড়া ভালো, কিন্তু তার সঙ্গে কোলেস্টেরল বাড়লে উচ্চ রক্তচাপ হয়। স্বাস্থ্যবানেরও হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ে। বাংলাদেশের অর্থনীতি এ রকম একটি পর্যায়ে পৌঁছেছে।
তাহলে উত্তরণের পথ কী—সেকথা ভাবার আগে সমস্যার স্বীকৃতি দরকার। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু বুঝেছিলেন যে জনসংখ্যার উচ্চ প্রবৃদ্ধি উন্নয়নের সব চেষ্টাকে নস্যাৎ করে দেবে। তাই তিনি জনসংখ্যার অপরিকল্পিত প্রবৃদ্ধিকে এক নম্বর সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন। এটি ছিল বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে দূরদর্শী ও সফল গণনীতি। আজ বাংলাদেশের প্রধান দুই সমস্যা হচ্ছে বেকারত্ব ও মূল্যস্ফীতি। হালে মূল্যস্ফীতি হয়তো কেটে যাবে, কিন্তু নিরন্তর সমস্যা হিসেবে থেকে যাবে বেকারত্ব। কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে মূল দায়িত্ব কাঁধে নেবে ব্যক্তি খাত। এখানে বিনিয়োগ বাড়লেই নিয়োগ বাড়বে। কিন্তু তার জন্য চাই একটি সুস্থ ব্যাংকিং খাত, যা অনেকটা নষ্টনীড়ে পরিণত হয়েছে।
লেখক: বিরূপাক্ষ পাল
অর্থনীতির অধ্যাপক, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্ক অ্যাট কোর্টল্যান্ড

বাংলাদেশের অর্থনীতি কোভিড-পূর্ব সময়ে প্রায় ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছুঁই ছুঁই করছিল। কিন্তু কোভিড-উত্তর অর্থনীতি মূলত ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটির কারণে এক অনভিপ্রেত সংকটের মধ্যে পতিত হয়, যার পেছনে কোভিড বা রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ—এর কোনোটিই দায়ী নয়। বিগত সরকারের নেতা বা কর্মীরা সে রকম যুক্তি খাড়া করার চেষ্টা করলেও অর্থনীতিবিদেরা তা গ্রহণ করেননি। কারণ, কোভিডের আগে থেকেই বাংলাদেশে দুটো সমস্যা দানা বাঁধছিল। এগুলো হলো: এক. ব্যাংকিক খাতের বর্ধমান খেলাপি ঋণের সংস্কৃতি এবং দুই. ত্রুটিপূর্ণ বিনিময় হার বা কৃত্রিমভাবে ডলারের নিম্নমূল্য চালিয়ে রাখা। আন্তর্জাতিক লেনদেনে আজকের ডলার-সংকট ও রিজার্ভ ঘাটতি এবং অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তারল্যসংকট—এই দুই সমস্যারই বীজ বপন করা হয়েছিল কোভিড-পূর্ব সময়ে।
কোভিড সারা বিশ্বে মন্দা নামিয়ে দেয়। মন্দার একটি সুবিধা হচ্ছে, এ সময়ে মূল্যস্ফীতি নিস্তেজ হয়ে আসে। কোভিড কমে যেতে থাকলে ২০২১ সাল থেকে আকস্মিকভাবে দীর্ঘ সময়ে চাপিয়ে রাখা চাহিদা সব দেশেই মাথাচাড়া দেয়। কিন্তু সেভাবে জোগানযন্ত্র প্রস্তুত ছিল না। অনেক ক্ষেত্রে চাহিদার উচ্চ চাপে জোগানের শিকল ছিঁড়ে যায়। একে বিপণনশাস্ত্রের ভাষায় জোগান শিকলের বিভ্রাট বা ‘সাপ্লাই চেইন ডিজরাপশন’ বলে। এ সময় চাহিদার তুলনায় জোগান ক্ষমতার পশ্চাৎপদতায় একধরনের মূল্যস্ফীতির সৃষ্টি হয়। দ্বিতীয়ত, কলকারখানা ও অফিস-আদালত দ্রুত হারে জেগে ওঠে। সৃষ্টি হয় অতিরিক্ত শ্রমচাহিদার, যা মজুরি বাড়িয়ে দিয়ে খরচতাড়িত মূল্যস্ফীতি বা ‘কস্ট-পুশ ইনফ্লেশন’ সৃষ্টি করে।
চলমান এই দুই ধরনের মূল্যস্ফীতি যেকোনো অর্থনৈতিক নবজাগরণের সঙ্গী—যা অর্থনীতির জন্য ততটা অকল্যাণকর নয়। কারণ, এ সময়ে মানুষের কাজের নানা ক্ষেত্র তৈরি হয়, বেকারত্ব কমে, উৎপাদনশীলতা বাড়ে এবং মজুরিও বাড়ে—যা বর্ধিত মূল্যস্ফীতিকে ছাপিয়ে যায়। তা ছাড়া জোগান বিঘ্নিত হওয়ায় যেটুকু মূল্যস্ফীতি জেগে ওঠে, তা আবার জোগান-কর্ম স্বাভাবিক হয়ে এলে ঝিমিয়ে পড়ে। তবে মজুরি বৃদ্ধিজনিত মূল্যস্ফীতি বেশ কিছুদিন বাজারে থেকেই যায়। সেটি স্বাভাবিক।
বিশ্বাঙ্গনে উদীয়মান অর্থনীতির চাকায় হঠাৎ করে কম্বল পেঁচিয়ে দিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি ইউক্রেন আক্রমণ করে বসলেন ২০২২-এর ফেব্রুয়ারিতে। এতে বিশ্বব্যাপী তেলের দাম বেড়ে গেল। রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা দুনিয়ার নিষেধাজ্ঞায় তেল ও পণ্যের জোগানে আরও বিঘ্ন সৃষ্টি হলো। মূল্যস্ফীতি বাড়তে লাগল মূলত জোগান-বিভ্রাট থেকে। এর সঙ্গে ভীতি থেকেও বেড়ে গেল প্রত্যাশাজনিত মূল্যস্ফীতি। সারা বিশ্বের সব কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণ করে সুদহার বাড়াতে থাকে। ঠিক এই সময়ে বাংলাদেশে বড়লোক ঋণগ্রহীতাকে সুবিধা দেওয়ার জন্য ‘বিনিয়োগ বাড়বে’ এমন অছিলায় সুদহারে ৯ শতাংশের টুপি পরিয়ে রাখা হয়। আমানতের ওপর দেওয়া হলো ৬ শতাংশের ছাদ। এই নয়-ছয় সুদহারের কাহিনি কোভিডের সময় শুরু হলেও কোভিড-উত্তর এটিই ছিল সবচেয়ে অসংগত সরকারি নীতি।
২০২২ সালে প্রকৃত মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ শতাংশের ওপরে। এমন সময়ে ৯ শতাংশের সুদহার বজায় রাখা মানে ধনিক গোষ্ঠী শতকরা শূন্য প্রকৃত সুদে ব্যাংক থেকে শতকোটি টাকার ঋণ বের করে নিয়েছে। দৃশ্যমান সুদহার থেকে মূল্যস্ফীতি বিয়োগ করলে প্রকৃত সুদহার পাওয়া যায়। এই ঋণপ্রাপক সম্প্রদায় বাজারে তারল্য বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতির অগ্নিতে ঘৃতাহুতি দিয়েছে। অন্যদিকে অতিরিক্ত উন্নয়ন প্রকল্পে জর্জরিত উচ্চাভিলাষী বাজেটে রাজস্ব সক্ষমতা দুর্বলতর হতে থাকে। ধনিক গোষ্ঠী কর দিতে পছন্দ করে না। এই দুর্বলতা কাটানোর জন্য সরকার উচ্চ ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকিং খাত থেকে প্রচুর অর্থ তুলে নেয়—যা বিশেষত খাদ্য মূল্যস্ফীতিকে আরও অসহনীয় পর্যায়ে নিয়ে ১২ শতাংশে উন্নীত করে। বাংলাদেশের বর্তমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি বাজার অর্থনীতির বাস্তবতাবিমুখ সেই নয়-ছয় সুদটুপির শাস্তিমাত্র। তদপুরি বিগত সরকারের রাজস্ব অক্ষমতা রাজস্ব নীতির সংকোচনমূলক হাতিয়ারকেও নষ্ট করে দিয়েছে। এটি মূল্যস্ফীতিকে আরও চাঙা করেছে। এখানে মূল্যস্ফীতির প্রায় সবটাই সুদনীতির ভুল, ধনিকতুষ্টি ও রাজস্ব অক্ষমতা থেকে উৎসারিত। কোভিড বা পুতিনের ইউক্রেন আক্রমণের মতো অজুহাত শাক দিয়ে মাছ ঢাকার প্রচেষ্টামাত্র।
সুদহার বাড়ানো হয়নি বলে বাংলাদেশে বিনিয়োগের প্রকৃত সুদহার বিদেশিদের কাছে অনাকর্ষণীয় হয়ে পড়ায় এক ধাক্কায় বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১৫ বিলিয়ন বিনিয়োগ লেনদেনের ভারসাম্যের আর্থিক হিসাবকে অনেকটা শূন্য করে বাইরে চলে গেছে। সেই থেকে ২০২২-২৩ কালপর্বে অভূতপূর্ব রিজার্ভ-সংকটে নিমজ্জিত হয়েছে বাংলাদেশ। ২০১০ দশকের মধ্যভাগে এবং এমনকি শেষ ভাগেও উচ্চ রিজার্ভ যেখানে বাংলাদেশের জন্য ছিল এক পরম স্বস্তির আসন, তা অল্প দিনের মধ্যেই এক দুশ্চিন্তার বিষয়ে পরিণত হলো। শক্তির অবয়ব বছর তিনেকের মধ্যেই সংকটের বিষণ্ন বদনে পরিণত হলো—যার সবটাই ছিল নীতিপ্রণেতাদের অদক্ষতা ও অবোধগম্যতার ফসল। নীতিকর্তারা বিশেষ করে এই সময়ের অর্থমন্ত্রী ও গভর্নররা যে সমস্যাগুলো বুঝতেন না, তা নয়। বুঝতেন যে সুদহার বাড়ালে বড় ঋণগ্রহীতা অসন্তুষ্ট হন কিংবা খেলাপি ঋণের জন্য চাপ দিলে ধনিক গোষ্ঠী রাজনৈতিক প্রভাব খাটায়। গলদ সেখানে।
সারা বিশ্বে যখন সুদহার বাড়ছিল, তখন সম্ভবত বিশ্বের একমাত্র রাষ্ট্র বাংলাদেশ অর্থনৈতিক শাস্ত্রসম্মত কোনো নীতিরই তোয়াক্কা করেনি। ভারত, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান সঠিক নীতির পথে হেঁটে তাদের রিজার্ভ-সংকট ও মূল্যস্ফীতি—এ দুয়েরই অনেকটা সমাধান করে ফেলেছে। ভারতে মূল্যস্ফীতি এখন ৫ শতাংশের নিচে। অথচ বাংলাদেশে তা অনেক দিন ধরেই বেপরোয়াভাবে ১০ শতাংশের ওপর। ভারতের রিজার্ভ ৬৪০ বিলিয়নের ওপর। সে তুলনায় জিডিপির বিচারে বাংলাদেশের রিজার্ভ হওয়া উচিত কমপক্ষে ৮০ বিলিয়ন ডলার। অথচ এখানে তা ১৯-২০ বিলিয়নের ঘরে পড়ে আছে। কিংবা ক্রমাগত কমছে। আতঙ্ক বাড়াচ্ছে। এটি হওয়ার কথা ছিল না। অর্থনীতির অর্জনকে এভাবে সংকটাপন্ন করা একধরনের অন্যায়।
এদিকে প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও ডলারের বাজারভিত্তিক দাম কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিশ্চিত করতে পারেনি বলে এই ফারাক কাজে লাগিয়ে হুন্ডি ব্যবসা জমজমাট। বাইরে মুদ্রা পাচারের ক্ষেত্রে হুন্ডির ভূমিকা বেশ জোরালো। ডলারের দাম বাজারমূল্যের চেয়ে সর্বদা কম থাকায় কিছু মানুষ ডলার গোপনে জমিয়ে রেখে পরে তা বিক্রি করে লাভ করতে পারে। কারণ, তারা জানে যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কৃত্রিমভাবে ডলারের দাম কমিয়ে রেখেছে বলে বাজারে ডলারের দাম বাড়তেই থাকবে—অনেকটা স্বর্ণের দামের মতো। ফাইন্যান্সের ভাষায় ‘আরবিট্রাজ’ বা দামভিন্নতা থেকে মুনাফা করার বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংকই এর নীতিজড়তা দিয়ে নিশ্চিত করে দিয়েছে। একবার বাজারের সঙ্গে ডলারের দাম সমন্বয় করে ফেললে এতে প্রাথমিক একটা ধাক্কা আসত। কিন্তু এতে হুন্ডি ব্যবসায়ী বা ডলারের মজুতদারেরা আর ব্যবসা করার সুযোগ ও পরিবেশ পেত না। সে পথে হাঁটা হয়নি ক্ষমতাধর আমদানিকারকদের সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে। এগুলো ছিল নীতির ভুল।
নীতি দিয়েও যে দুর্নীতি দমন করা যায়, তা আমাদের সে সময়ের নীতিনির্ধারকেরা কি জানতেন না? শুধু আনুগত্যের অন্বেষণে সরকার যদি শুধু অবসরপ্রাপ্ত আমলাকে সর্বত্র বসিয়ে রাখে, তাহলে মেধা, উদ্ভাবন বা দুর্যোগ মোকাবিলার প্রজ্ঞা মিলবে না। সে জন্য বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলো বিশেষত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল ও দূষিত হয়েছে। উদ্ভাবন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থা শোচনীয়। জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির সূচকের অবস্থাও তথৈবচ—এমনকি প্রতিবেশীদের তুলনায় অধিকাংশ সময়েই বাংলাদেশ পিছিয়ে। শিক্ষার যথাযথ মর্যাদা বা বিশেষজ্ঞের সম্মান পেছনে পড়ে থাকে। অগ্রাধিকার পায় রাজনৈতিক বিবেচনা ও আমলাদের কাঙ্ক্ষিত ছক। একশ্রেণির আমলা ও উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ব্যবসায়ীর হাতে নীতিনির্ধারণের কাজ, সংসদ নির্বাচন এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা এক বন্দিদশায় নিমজ্জিত হয়ে রয়েছে।
২০১০ দশকের মধ্যভাগে সরকারের উন্নয়নদর্শন মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছিল। সরকার ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন ও জ্বালানি-সংকটের সমাধানে মনোযোগী হয়, যার ফসল জনগণ এখন ভোগ করছে। পদ্মা সেতু বা মেট্রোরেলের মতো প্রকল্প এ দেশের জন্য ছিল স্বপ্নাতীত। কিন্তু সমস্যা বাধিয়ে দিয়েছে ব্যাংকিং খাতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, ব্যবসায়ীপ্রধান সংসদের দ্বারা অনুমোদিত ব্যাংকিং খাতের পারিবারিকীকরণ, খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা পরিবর্তন, ভুল সুদনীতি ও অ-বাজারীয় বিনিময় হার বজায় রাখা, ধনিকতুষ্টির স্বার্থে করকাঠামো ও প্রশাসনকে ব্যবহার, কর ফাঁকিকে শাস্তিযোগ্য না করা, স্বেচ্ছাকৃত খেলাপি ও শেয়ারবাজারের অনাচারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া এবং সর্বোপরি বিচার বিভাগের মন্থরতম গতি। অবকাঠামোতে মান ও অপচয়—এ দুই-ই বেড়েছে; কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল নেতৃত্বে অধঃপতিত হয়েছে। শিক্ষকদের রাজনীতিতে অতি উৎসাহ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মানকেও দাবিয়ে দিয়েছে।
কালোটাকা সাদা করার সরকারি কসরত ব্যবসা ও আয় উপার্জনে নৈতিকতাকে নিরুৎসাহিত করেছে। তাই উন্নয়নের ঘোটক রোগাক্রান্ত। স্বাস্থ্য বাড়া ভালো, কিন্তু তার সঙ্গে কোলেস্টেরল বাড়লে উচ্চ রক্তচাপ হয়। স্বাস্থ্যবানেরও হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ে। বাংলাদেশের অর্থনীতি এ রকম একটি পর্যায়ে পৌঁছেছে।
তাহলে উত্তরণের পথ কী—সেকথা ভাবার আগে সমস্যার স্বীকৃতি দরকার। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু বুঝেছিলেন যে জনসংখ্যার উচ্চ প্রবৃদ্ধি উন্নয়নের সব চেষ্টাকে নস্যাৎ করে দেবে। তাই তিনি জনসংখ্যার অপরিকল্পিত প্রবৃদ্ধিকে এক নম্বর সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন। এটি ছিল বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে দূরদর্শী ও সফল গণনীতি। আজ বাংলাদেশের প্রধান দুই সমস্যা হচ্ছে বেকারত্ব ও মূল্যস্ফীতি। হালে মূল্যস্ফীতি হয়তো কেটে যাবে, কিন্তু নিরন্তর সমস্যা হিসেবে থেকে যাবে বেকারত্ব। কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে মূল দায়িত্ব কাঁধে নেবে ব্যক্তি খাত। এখানে বিনিয়োগ বাড়লেই নিয়োগ বাড়বে। কিন্তু তার জন্য চাই একটি সুস্থ ব্যাংকিং খাত, যা অনেকটা নষ্টনীড়ে পরিণত হয়েছে।
লেখক: বিরূপাক্ষ পাল
অর্থনীতির অধ্যাপক, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্ক অ্যাট কোর্টল্যান্ড
বিরূপাক্ষ পাল

বাংলাদেশের অর্থনীতি কোভিড-পূর্ব সময়ে প্রায় ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছুঁই ছুঁই করছিল। কিন্তু কোভিড-উত্তর অর্থনীতি মূলত ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটির কারণে এক অনভিপ্রেত সংকটের মধ্যে পতিত হয়, যার পেছনে কোভিড বা রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ—এর কোনোটিই দায়ী নয়। বিগত সরকারের নেতা বা কর্মীরা সে রকম যুক্তি খাড়া করার চেষ্টা করলেও অর্থনীতিবিদেরা তা গ্রহণ করেননি। কারণ, কোভিডের আগে থেকেই বাংলাদেশে দুটো সমস্যা দানা বাঁধছিল। এগুলো হলো: এক. ব্যাংকিক খাতের বর্ধমান খেলাপি ঋণের সংস্কৃতি এবং দুই. ত্রুটিপূর্ণ বিনিময় হার বা কৃত্রিমভাবে ডলারের নিম্নমূল্য চালিয়ে রাখা। আন্তর্জাতিক লেনদেনে আজকের ডলার-সংকট ও রিজার্ভ ঘাটতি এবং অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তারল্যসংকট—এই দুই সমস্যারই বীজ বপন করা হয়েছিল কোভিড-পূর্ব সময়ে।
কোভিড সারা বিশ্বে মন্দা নামিয়ে দেয়। মন্দার একটি সুবিধা হচ্ছে, এ সময়ে মূল্যস্ফীতি নিস্তেজ হয়ে আসে। কোভিড কমে যেতে থাকলে ২০২১ সাল থেকে আকস্মিকভাবে দীর্ঘ সময়ে চাপিয়ে রাখা চাহিদা সব দেশেই মাথাচাড়া দেয়। কিন্তু সেভাবে জোগানযন্ত্র প্রস্তুত ছিল না। অনেক ক্ষেত্রে চাহিদার উচ্চ চাপে জোগানের শিকল ছিঁড়ে যায়। একে বিপণনশাস্ত্রের ভাষায় জোগান শিকলের বিভ্রাট বা ‘সাপ্লাই চেইন ডিজরাপশন’ বলে। এ সময় চাহিদার তুলনায় জোগান ক্ষমতার পশ্চাৎপদতায় একধরনের মূল্যস্ফীতির সৃষ্টি হয়। দ্বিতীয়ত, কলকারখানা ও অফিস-আদালত দ্রুত হারে জেগে ওঠে। সৃষ্টি হয় অতিরিক্ত শ্রমচাহিদার, যা মজুরি বাড়িয়ে দিয়ে খরচতাড়িত মূল্যস্ফীতি বা ‘কস্ট-পুশ ইনফ্লেশন’ সৃষ্টি করে।
চলমান এই দুই ধরনের মূল্যস্ফীতি যেকোনো অর্থনৈতিক নবজাগরণের সঙ্গী—যা অর্থনীতির জন্য ততটা অকল্যাণকর নয়। কারণ, এ সময়ে মানুষের কাজের নানা ক্ষেত্র তৈরি হয়, বেকারত্ব কমে, উৎপাদনশীলতা বাড়ে এবং মজুরিও বাড়ে—যা বর্ধিত মূল্যস্ফীতিকে ছাপিয়ে যায়। তা ছাড়া জোগান বিঘ্নিত হওয়ায় যেটুকু মূল্যস্ফীতি জেগে ওঠে, তা আবার জোগান-কর্ম স্বাভাবিক হয়ে এলে ঝিমিয়ে পড়ে। তবে মজুরি বৃদ্ধিজনিত মূল্যস্ফীতি বেশ কিছুদিন বাজারে থেকেই যায়। সেটি স্বাভাবিক।
বিশ্বাঙ্গনে উদীয়মান অর্থনীতির চাকায় হঠাৎ করে কম্বল পেঁচিয়ে দিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি ইউক্রেন আক্রমণ করে বসলেন ২০২২-এর ফেব্রুয়ারিতে। এতে বিশ্বব্যাপী তেলের দাম বেড়ে গেল। রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা দুনিয়ার নিষেধাজ্ঞায় তেল ও পণ্যের জোগানে আরও বিঘ্ন সৃষ্টি হলো। মূল্যস্ফীতি বাড়তে লাগল মূলত জোগান-বিভ্রাট থেকে। এর সঙ্গে ভীতি থেকেও বেড়ে গেল প্রত্যাশাজনিত মূল্যস্ফীতি। সারা বিশ্বের সব কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণ করে সুদহার বাড়াতে থাকে। ঠিক এই সময়ে বাংলাদেশে বড়লোক ঋণগ্রহীতাকে সুবিধা দেওয়ার জন্য ‘বিনিয়োগ বাড়বে’ এমন অছিলায় সুদহারে ৯ শতাংশের টুপি পরিয়ে রাখা হয়। আমানতের ওপর দেওয়া হলো ৬ শতাংশের ছাদ। এই নয়-ছয় সুদহারের কাহিনি কোভিডের সময় শুরু হলেও কোভিড-উত্তর এটিই ছিল সবচেয়ে অসংগত সরকারি নীতি।
২০২২ সালে প্রকৃত মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ শতাংশের ওপরে। এমন সময়ে ৯ শতাংশের সুদহার বজায় রাখা মানে ধনিক গোষ্ঠী শতকরা শূন্য প্রকৃত সুদে ব্যাংক থেকে শতকোটি টাকার ঋণ বের করে নিয়েছে। দৃশ্যমান সুদহার থেকে মূল্যস্ফীতি বিয়োগ করলে প্রকৃত সুদহার পাওয়া যায়। এই ঋণপ্রাপক সম্প্রদায় বাজারে তারল্য বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতির অগ্নিতে ঘৃতাহুতি দিয়েছে। অন্যদিকে অতিরিক্ত উন্নয়ন প্রকল্পে জর্জরিত উচ্চাভিলাষী বাজেটে রাজস্ব সক্ষমতা দুর্বলতর হতে থাকে। ধনিক গোষ্ঠী কর দিতে পছন্দ করে না। এই দুর্বলতা কাটানোর জন্য সরকার উচ্চ ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকিং খাত থেকে প্রচুর অর্থ তুলে নেয়—যা বিশেষত খাদ্য মূল্যস্ফীতিকে আরও অসহনীয় পর্যায়ে নিয়ে ১২ শতাংশে উন্নীত করে। বাংলাদেশের বর্তমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি বাজার অর্থনীতির বাস্তবতাবিমুখ সেই নয়-ছয় সুদটুপির শাস্তিমাত্র। তদপুরি বিগত সরকারের রাজস্ব অক্ষমতা রাজস্ব নীতির সংকোচনমূলক হাতিয়ারকেও নষ্ট করে দিয়েছে। এটি মূল্যস্ফীতিকে আরও চাঙা করেছে। এখানে মূল্যস্ফীতির প্রায় সবটাই সুদনীতির ভুল, ধনিকতুষ্টি ও রাজস্ব অক্ষমতা থেকে উৎসারিত। কোভিড বা পুতিনের ইউক্রেন আক্রমণের মতো অজুহাত শাক দিয়ে মাছ ঢাকার প্রচেষ্টামাত্র।
সুদহার বাড়ানো হয়নি বলে বাংলাদেশে বিনিয়োগের প্রকৃত সুদহার বিদেশিদের কাছে অনাকর্ষণীয় হয়ে পড়ায় এক ধাক্কায় বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১৫ বিলিয়ন বিনিয়োগ লেনদেনের ভারসাম্যের আর্থিক হিসাবকে অনেকটা শূন্য করে বাইরে চলে গেছে। সেই থেকে ২০২২-২৩ কালপর্বে অভূতপূর্ব রিজার্ভ-সংকটে নিমজ্জিত হয়েছে বাংলাদেশ। ২০১০ দশকের মধ্যভাগে এবং এমনকি শেষ ভাগেও উচ্চ রিজার্ভ যেখানে বাংলাদেশের জন্য ছিল এক পরম স্বস্তির আসন, তা অল্প দিনের মধ্যেই এক দুশ্চিন্তার বিষয়ে পরিণত হলো। শক্তির অবয়ব বছর তিনেকের মধ্যেই সংকটের বিষণ্ন বদনে পরিণত হলো—যার সবটাই ছিল নীতিপ্রণেতাদের অদক্ষতা ও অবোধগম্যতার ফসল। নীতিকর্তারা বিশেষ করে এই সময়ের অর্থমন্ত্রী ও গভর্নররা যে সমস্যাগুলো বুঝতেন না, তা নয়। বুঝতেন যে সুদহার বাড়ালে বড় ঋণগ্রহীতা অসন্তুষ্ট হন কিংবা খেলাপি ঋণের জন্য চাপ দিলে ধনিক গোষ্ঠী রাজনৈতিক প্রভাব খাটায়। গলদ সেখানে।
সারা বিশ্বে যখন সুদহার বাড়ছিল, তখন সম্ভবত বিশ্বের একমাত্র রাষ্ট্র বাংলাদেশ অর্থনৈতিক শাস্ত্রসম্মত কোনো নীতিরই তোয়াক্কা করেনি। ভারত, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান সঠিক নীতির পথে হেঁটে তাদের রিজার্ভ-সংকট ও মূল্যস্ফীতি—এ দুয়েরই অনেকটা সমাধান করে ফেলেছে। ভারতে মূল্যস্ফীতি এখন ৫ শতাংশের নিচে। অথচ বাংলাদেশে তা অনেক দিন ধরেই বেপরোয়াভাবে ১০ শতাংশের ওপর। ভারতের রিজার্ভ ৬৪০ বিলিয়নের ওপর। সে তুলনায় জিডিপির বিচারে বাংলাদেশের রিজার্ভ হওয়া উচিত কমপক্ষে ৮০ বিলিয়ন ডলার। অথচ এখানে তা ১৯-২০ বিলিয়নের ঘরে পড়ে আছে। কিংবা ক্রমাগত কমছে। আতঙ্ক বাড়াচ্ছে। এটি হওয়ার কথা ছিল না। অর্থনীতির অর্জনকে এভাবে সংকটাপন্ন করা একধরনের অন্যায়।
এদিকে প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও ডলারের বাজারভিত্তিক দাম কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিশ্চিত করতে পারেনি বলে এই ফারাক কাজে লাগিয়ে হুন্ডি ব্যবসা জমজমাট। বাইরে মুদ্রা পাচারের ক্ষেত্রে হুন্ডির ভূমিকা বেশ জোরালো। ডলারের দাম বাজারমূল্যের চেয়ে সর্বদা কম থাকায় কিছু মানুষ ডলার গোপনে জমিয়ে রেখে পরে তা বিক্রি করে লাভ করতে পারে। কারণ, তারা জানে যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কৃত্রিমভাবে ডলারের দাম কমিয়ে রেখেছে বলে বাজারে ডলারের দাম বাড়তেই থাকবে—অনেকটা স্বর্ণের দামের মতো। ফাইন্যান্সের ভাষায় ‘আরবিট্রাজ’ বা দামভিন্নতা থেকে মুনাফা করার বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংকই এর নীতিজড়তা দিয়ে নিশ্চিত করে দিয়েছে। একবার বাজারের সঙ্গে ডলারের দাম সমন্বয় করে ফেললে এতে প্রাথমিক একটা ধাক্কা আসত। কিন্তু এতে হুন্ডি ব্যবসায়ী বা ডলারের মজুতদারেরা আর ব্যবসা করার সুযোগ ও পরিবেশ পেত না। সে পথে হাঁটা হয়নি ক্ষমতাধর আমদানিকারকদের সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে। এগুলো ছিল নীতির ভুল।
নীতি দিয়েও যে দুর্নীতি দমন করা যায়, তা আমাদের সে সময়ের নীতিনির্ধারকেরা কি জানতেন না? শুধু আনুগত্যের অন্বেষণে সরকার যদি শুধু অবসরপ্রাপ্ত আমলাকে সর্বত্র বসিয়ে রাখে, তাহলে মেধা, উদ্ভাবন বা দুর্যোগ মোকাবিলার প্রজ্ঞা মিলবে না। সে জন্য বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলো বিশেষত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল ও দূষিত হয়েছে। উদ্ভাবন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থা শোচনীয়। জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির সূচকের অবস্থাও তথৈবচ—এমনকি প্রতিবেশীদের তুলনায় অধিকাংশ সময়েই বাংলাদেশ পিছিয়ে। শিক্ষার যথাযথ মর্যাদা বা বিশেষজ্ঞের সম্মান পেছনে পড়ে থাকে। অগ্রাধিকার পায় রাজনৈতিক বিবেচনা ও আমলাদের কাঙ্ক্ষিত ছক। একশ্রেণির আমলা ও উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ব্যবসায়ীর হাতে নীতিনির্ধারণের কাজ, সংসদ নির্বাচন এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা এক বন্দিদশায় নিমজ্জিত হয়ে রয়েছে।
২০১০ দশকের মধ্যভাগে সরকারের উন্নয়নদর্শন মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছিল। সরকার ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন ও জ্বালানি-সংকটের সমাধানে মনোযোগী হয়, যার ফসল জনগণ এখন ভোগ করছে। পদ্মা সেতু বা মেট্রোরেলের মতো প্রকল্প এ দেশের জন্য ছিল স্বপ্নাতীত। কিন্তু সমস্যা বাধিয়ে দিয়েছে ব্যাংকিং খাতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, ব্যবসায়ীপ্রধান সংসদের দ্বারা অনুমোদিত ব্যাংকিং খাতের পারিবারিকীকরণ, খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা পরিবর্তন, ভুল সুদনীতি ও অ-বাজারীয় বিনিময় হার বজায় রাখা, ধনিকতুষ্টির স্বার্থে করকাঠামো ও প্রশাসনকে ব্যবহার, কর ফাঁকিকে শাস্তিযোগ্য না করা, স্বেচ্ছাকৃত খেলাপি ও শেয়ারবাজারের অনাচারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া এবং সর্বোপরি বিচার বিভাগের মন্থরতম গতি। অবকাঠামোতে মান ও অপচয়—এ দুই-ই বেড়েছে; কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল নেতৃত্বে অধঃপতিত হয়েছে। শিক্ষকদের রাজনীতিতে অতি উৎসাহ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মানকেও দাবিয়ে দিয়েছে।
কালোটাকা সাদা করার সরকারি কসরত ব্যবসা ও আয় উপার্জনে নৈতিকতাকে নিরুৎসাহিত করেছে। তাই উন্নয়নের ঘোটক রোগাক্রান্ত। স্বাস্থ্য বাড়া ভালো, কিন্তু তার সঙ্গে কোলেস্টেরল বাড়লে উচ্চ রক্তচাপ হয়। স্বাস্থ্যবানেরও হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ে। বাংলাদেশের অর্থনীতি এ রকম একটি পর্যায়ে পৌঁছেছে।
তাহলে উত্তরণের পথ কী—সেকথা ভাবার আগে সমস্যার স্বীকৃতি দরকার। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু বুঝেছিলেন যে জনসংখ্যার উচ্চ প্রবৃদ্ধি উন্নয়নের সব চেষ্টাকে নস্যাৎ করে দেবে। তাই তিনি জনসংখ্যার অপরিকল্পিত প্রবৃদ্ধিকে এক নম্বর সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন। এটি ছিল বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে দূরদর্শী ও সফল গণনীতি। আজ বাংলাদেশের প্রধান দুই সমস্যা হচ্ছে বেকারত্ব ও মূল্যস্ফীতি। হালে মূল্যস্ফীতি হয়তো কেটে যাবে, কিন্তু নিরন্তর সমস্যা হিসেবে থেকে যাবে বেকারত্ব। কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে মূল দায়িত্ব কাঁধে নেবে ব্যক্তি খাত। এখানে বিনিয়োগ বাড়লেই নিয়োগ বাড়বে। কিন্তু তার জন্য চাই একটি সুস্থ ব্যাংকিং খাত, যা অনেকটা নষ্টনীড়ে পরিণত হয়েছে।
লেখক: বিরূপাক্ষ পাল
অর্থনীতির অধ্যাপক, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্ক অ্যাট কোর্টল্যান্ড

বাংলাদেশের অর্থনীতি কোভিড-পূর্ব সময়ে প্রায় ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছুঁই ছুঁই করছিল। কিন্তু কোভিড-উত্তর অর্থনীতি মূলত ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটির কারণে এক অনভিপ্রেত সংকটের মধ্যে পতিত হয়, যার পেছনে কোভিড বা রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ—এর কোনোটিই দায়ী নয়। বিগত সরকারের নেতা বা কর্মীরা সে রকম যুক্তি খাড়া করার চেষ্টা করলেও অর্থনীতিবিদেরা তা গ্রহণ করেননি। কারণ, কোভিডের আগে থেকেই বাংলাদেশে দুটো সমস্যা দানা বাঁধছিল। এগুলো হলো: এক. ব্যাংকিক খাতের বর্ধমান খেলাপি ঋণের সংস্কৃতি এবং দুই. ত্রুটিপূর্ণ বিনিময় হার বা কৃত্রিমভাবে ডলারের নিম্নমূল্য চালিয়ে রাখা। আন্তর্জাতিক লেনদেনে আজকের ডলার-সংকট ও রিজার্ভ ঘাটতি এবং অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তারল্যসংকট—এই দুই সমস্যারই বীজ বপন করা হয়েছিল কোভিড-পূর্ব সময়ে।
কোভিড সারা বিশ্বে মন্দা নামিয়ে দেয়। মন্দার একটি সুবিধা হচ্ছে, এ সময়ে মূল্যস্ফীতি নিস্তেজ হয়ে আসে। কোভিড কমে যেতে থাকলে ২০২১ সাল থেকে আকস্মিকভাবে দীর্ঘ সময়ে চাপিয়ে রাখা চাহিদা সব দেশেই মাথাচাড়া দেয়। কিন্তু সেভাবে জোগানযন্ত্র প্রস্তুত ছিল না। অনেক ক্ষেত্রে চাহিদার উচ্চ চাপে জোগানের শিকল ছিঁড়ে যায়। একে বিপণনশাস্ত্রের ভাষায় জোগান শিকলের বিভ্রাট বা ‘সাপ্লাই চেইন ডিজরাপশন’ বলে। এ সময় চাহিদার তুলনায় জোগান ক্ষমতার পশ্চাৎপদতায় একধরনের মূল্যস্ফীতির সৃষ্টি হয়। দ্বিতীয়ত, কলকারখানা ও অফিস-আদালত দ্রুত হারে জেগে ওঠে। সৃষ্টি হয় অতিরিক্ত শ্রমচাহিদার, যা মজুরি বাড়িয়ে দিয়ে খরচতাড়িত মূল্যস্ফীতি বা ‘কস্ট-পুশ ইনফ্লেশন’ সৃষ্টি করে।
চলমান এই দুই ধরনের মূল্যস্ফীতি যেকোনো অর্থনৈতিক নবজাগরণের সঙ্গী—যা অর্থনীতির জন্য ততটা অকল্যাণকর নয়। কারণ, এ সময়ে মানুষের কাজের নানা ক্ষেত্র তৈরি হয়, বেকারত্ব কমে, উৎপাদনশীলতা বাড়ে এবং মজুরিও বাড়ে—যা বর্ধিত মূল্যস্ফীতিকে ছাপিয়ে যায়। তা ছাড়া জোগান বিঘ্নিত হওয়ায় যেটুকু মূল্যস্ফীতি জেগে ওঠে, তা আবার জোগান-কর্ম স্বাভাবিক হয়ে এলে ঝিমিয়ে পড়ে। তবে মজুরি বৃদ্ধিজনিত মূল্যস্ফীতি বেশ কিছুদিন বাজারে থেকেই যায়। সেটি স্বাভাবিক।
বিশ্বাঙ্গনে উদীয়মান অর্থনীতির চাকায় হঠাৎ করে কম্বল পেঁচিয়ে দিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি ইউক্রেন আক্রমণ করে বসলেন ২০২২-এর ফেব্রুয়ারিতে। এতে বিশ্বব্যাপী তেলের দাম বেড়ে গেল। রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা দুনিয়ার নিষেধাজ্ঞায় তেল ও পণ্যের জোগানে আরও বিঘ্ন সৃষ্টি হলো। মূল্যস্ফীতি বাড়তে লাগল মূলত জোগান-বিভ্রাট থেকে। এর সঙ্গে ভীতি থেকেও বেড়ে গেল প্রত্যাশাজনিত মূল্যস্ফীতি। সারা বিশ্বের সব কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণ করে সুদহার বাড়াতে থাকে। ঠিক এই সময়ে বাংলাদেশে বড়লোক ঋণগ্রহীতাকে সুবিধা দেওয়ার জন্য ‘বিনিয়োগ বাড়বে’ এমন অছিলায় সুদহারে ৯ শতাংশের টুপি পরিয়ে রাখা হয়। আমানতের ওপর দেওয়া হলো ৬ শতাংশের ছাদ। এই নয়-ছয় সুদহারের কাহিনি কোভিডের সময় শুরু হলেও কোভিড-উত্তর এটিই ছিল সবচেয়ে অসংগত সরকারি নীতি।
২০২২ সালে প্রকৃত মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ শতাংশের ওপরে। এমন সময়ে ৯ শতাংশের সুদহার বজায় রাখা মানে ধনিক গোষ্ঠী শতকরা শূন্য প্রকৃত সুদে ব্যাংক থেকে শতকোটি টাকার ঋণ বের করে নিয়েছে। দৃশ্যমান সুদহার থেকে মূল্যস্ফীতি বিয়োগ করলে প্রকৃত সুদহার পাওয়া যায়। এই ঋণপ্রাপক সম্প্রদায় বাজারে তারল্য বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতির অগ্নিতে ঘৃতাহুতি দিয়েছে। অন্যদিকে অতিরিক্ত উন্নয়ন প্রকল্পে জর্জরিত উচ্চাভিলাষী বাজেটে রাজস্ব সক্ষমতা দুর্বলতর হতে থাকে। ধনিক গোষ্ঠী কর দিতে পছন্দ করে না। এই দুর্বলতা কাটানোর জন্য সরকার উচ্চ ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকিং খাত থেকে প্রচুর অর্থ তুলে নেয়—যা বিশেষত খাদ্য মূল্যস্ফীতিকে আরও অসহনীয় পর্যায়ে নিয়ে ১২ শতাংশে উন্নীত করে। বাংলাদেশের বর্তমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি বাজার অর্থনীতির বাস্তবতাবিমুখ সেই নয়-ছয় সুদটুপির শাস্তিমাত্র। তদপুরি বিগত সরকারের রাজস্ব অক্ষমতা রাজস্ব নীতির সংকোচনমূলক হাতিয়ারকেও নষ্ট করে দিয়েছে। এটি মূল্যস্ফীতিকে আরও চাঙা করেছে। এখানে মূল্যস্ফীতির প্রায় সবটাই সুদনীতির ভুল, ধনিকতুষ্টি ও রাজস্ব অক্ষমতা থেকে উৎসারিত। কোভিড বা পুতিনের ইউক্রেন আক্রমণের মতো অজুহাত শাক দিয়ে মাছ ঢাকার প্রচেষ্টামাত্র।
সুদহার বাড়ানো হয়নি বলে বাংলাদেশে বিনিয়োগের প্রকৃত সুদহার বিদেশিদের কাছে অনাকর্ষণীয় হয়ে পড়ায় এক ধাক্কায় বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১৫ বিলিয়ন বিনিয়োগ লেনদেনের ভারসাম্যের আর্থিক হিসাবকে অনেকটা শূন্য করে বাইরে চলে গেছে। সেই থেকে ২০২২-২৩ কালপর্বে অভূতপূর্ব রিজার্ভ-সংকটে নিমজ্জিত হয়েছে বাংলাদেশ। ২০১০ দশকের মধ্যভাগে এবং এমনকি শেষ ভাগেও উচ্চ রিজার্ভ যেখানে বাংলাদেশের জন্য ছিল এক পরম স্বস্তির আসন, তা অল্প দিনের মধ্যেই এক দুশ্চিন্তার বিষয়ে পরিণত হলো। শক্তির অবয়ব বছর তিনেকের মধ্যেই সংকটের বিষণ্ন বদনে পরিণত হলো—যার সবটাই ছিল নীতিপ্রণেতাদের অদক্ষতা ও অবোধগম্যতার ফসল। নীতিকর্তারা বিশেষ করে এই সময়ের অর্থমন্ত্রী ও গভর্নররা যে সমস্যাগুলো বুঝতেন না, তা নয়। বুঝতেন যে সুদহার বাড়ালে বড় ঋণগ্রহীতা অসন্তুষ্ট হন কিংবা খেলাপি ঋণের জন্য চাপ দিলে ধনিক গোষ্ঠী রাজনৈতিক প্রভাব খাটায়। গলদ সেখানে।
সারা বিশ্বে যখন সুদহার বাড়ছিল, তখন সম্ভবত বিশ্বের একমাত্র রাষ্ট্র বাংলাদেশ অর্থনৈতিক শাস্ত্রসম্মত কোনো নীতিরই তোয়াক্কা করেনি। ভারত, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান সঠিক নীতির পথে হেঁটে তাদের রিজার্ভ-সংকট ও মূল্যস্ফীতি—এ দুয়েরই অনেকটা সমাধান করে ফেলেছে। ভারতে মূল্যস্ফীতি এখন ৫ শতাংশের নিচে। অথচ বাংলাদেশে তা অনেক দিন ধরেই বেপরোয়াভাবে ১০ শতাংশের ওপর। ভারতের রিজার্ভ ৬৪০ বিলিয়নের ওপর। সে তুলনায় জিডিপির বিচারে বাংলাদেশের রিজার্ভ হওয়া উচিত কমপক্ষে ৮০ বিলিয়ন ডলার। অথচ এখানে তা ১৯-২০ বিলিয়নের ঘরে পড়ে আছে। কিংবা ক্রমাগত কমছে। আতঙ্ক বাড়াচ্ছে। এটি হওয়ার কথা ছিল না। অর্থনীতির অর্জনকে এভাবে সংকটাপন্ন করা একধরনের অন্যায়।
এদিকে প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও ডলারের বাজারভিত্তিক দাম কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিশ্চিত করতে পারেনি বলে এই ফারাক কাজে লাগিয়ে হুন্ডি ব্যবসা জমজমাট। বাইরে মুদ্রা পাচারের ক্ষেত্রে হুন্ডির ভূমিকা বেশ জোরালো। ডলারের দাম বাজারমূল্যের চেয়ে সর্বদা কম থাকায় কিছু মানুষ ডলার গোপনে জমিয়ে রেখে পরে তা বিক্রি করে লাভ করতে পারে। কারণ, তারা জানে যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কৃত্রিমভাবে ডলারের দাম কমিয়ে রেখেছে বলে বাজারে ডলারের দাম বাড়তেই থাকবে—অনেকটা স্বর্ণের দামের মতো। ফাইন্যান্সের ভাষায় ‘আরবিট্রাজ’ বা দামভিন্নতা থেকে মুনাফা করার বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংকই এর নীতিজড়তা দিয়ে নিশ্চিত করে দিয়েছে। একবার বাজারের সঙ্গে ডলারের দাম সমন্বয় করে ফেললে এতে প্রাথমিক একটা ধাক্কা আসত। কিন্তু এতে হুন্ডি ব্যবসায়ী বা ডলারের মজুতদারেরা আর ব্যবসা করার সুযোগ ও পরিবেশ পেত না। সে পথে হাঁটা হয়নি ক্ষমতাধর আমদানিকারকদের সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে। এগুলো ছিল নীতির ভুল।
নীতি দিয়েও যে দুর্নীতি দমন করা যায়, তা আমাদের সে সময়ের নীতিনির্ধারকেরা কি জানতেন না? শুধু আনুগত্যের অন্বেষণে সরকার যদি শুধু অবসরপ্রাপ্ত আমলাকে সর্বত্র বসিয়ে রাখে, তাহলে মেধা, উদ্ভাবন বা দুর্যোগ মোকাবিলার প্রজ্ঞা মিলবে না। সে জন্য বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলো বিশেষত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল ও দূষিত হয়েছে। উদ্ভাবন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থা শোচনীয়। জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির সূচকের অবস্থাও তথৈবচ—এমনকি প্রতিবেশীদের তুলনায় অধিকাংশ সময়েই বাংলাদেশ পিছিয়ে। শিক্ষার যথাযথ মর্যাদা বা বিশেষজ্ঞের সম্মান পেছনে পড়ে থাকে। অগ্রাধিকার পায় রাজনৈতিক বিবেচনা ও আমলাদের কাঙ্ক্ষিত ছক। একশ্রেণির আমলা ও উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ব্যবসায়ীর হাতে নীতিনির্ধারণের কাজ, সংসদ নির্বাচন এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা এক বন্দিদশায় নিমজ্জিত হয়ে রয়েছে।
২০১০ দশকের মধ্যভাগে সরকারের উন্নয়নদর্শন মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছিল। সরকার ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন ও জ্বালানি-সংকটের সমাধানে মনোযোগী হয়, যার ফসল জনগণ এখন ভোগ করছে। পদ্মা সেতু বা মেট্রোরেলের মতো প্রকল্প এ দেশের জন্য ছিল স্বপ্নাতীত। কিন্তু সমস্যা বাধিয়ে দিয়েছে ব্যাংকিং খাতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, ব্যবসায়ীপ্রধান সংসদের দ্বারা অনুমোদিত ব্যাংকিং খাতের পারিবারিকীকরণ, খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা পরিবর্তন, ভুল সুদনীতি ও অ-বাজারীয় বিনিময় হার বজায় রাখা, ধনিকতুষ্টির স্বার্থে করকাঠামো ও প্রশাসনকে ব্যবহার, কর ফাঁকিকে শাস্তিযোগ্য না করা, স্বেচ্ছাকৃত খেলাপি ও শেয়ারবাজারের অনাচারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া এবং সর্বোপরি বিচার বিভাগের মন্থরতম গতি। অবকাঠামোতে মান ও অপচয়—এ দুই-ই বেড়েছে; কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল নেতৃত্বে অধঃপতিত হয়েছে। শিক্ষকদের রাজনীতিতে অতি উৎসাহ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মানকেও দাবিয়ে দিয়েছে।
কালোটাকা সাদা করার সরকারি কসরত ব্যবসা ও আয় উপার্জনে নৈতিকতাকে নিরুৎসাহিত করেছে। তাই উন্নয়নের ঘোটক রোগাক্রান্ত। স্বাস্থ্য বাড়া ভালো, কিন্তু তার সঙ্গে কোলেস্টেরল বাড়লে উচ্চ রক্তচাপ হয়। স্বাস্থ্যবানেরও হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ে। বাংলাদেশের অর্থনীতি এ রকম একটি পর্যায়ে পৌঁছেছে।
তাহলে উত্তরণের পথ কী—সেকথা ভাবার আগে সমস্যার স্বীকৃতি দরকার। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু বুঝেছিলেন যে জনসংখ্যার উচ্চ প্রবৃদ্ধি উন্নয়নের সব চেষ্টাকে নস্যাৎ করে দেবে। তাই তিনি জনসংখ্যার অপরিকল্পিত প্রবৃদ্ধিকে এক নম্বর সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন। এটি ছিল বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে দূরদর্শী ও সফল গণনীতি। আজ বাংলাদেশের প্রধান দুই সমস্যা হচ্ছে বেকারত্ব ও মূল্যস্ফীতি। হালে মূল্যস্ফীতি হয়তো কেটে যাবে, কিন্তু নিরন্তর সমস্যা হিসেবে থেকে যাবে বেকারত্ব। কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে মূল দায়িত্ব কাঁধে নেবে ব্যক্তি খাত। এখানে বিনিয়োগ বাড়লেই নিয়োগ বাড়বে। কিন্তু তার জন্য চাই একটি সুস্থ ব্যাংকিং খাত, যা অনেকটা নষ্টনীড়ে পরিণত হয়েছে।
লেখক: বিরূপাক্ষ পাল
অর্থনীতির অধ্যাপক, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্ক অ্যাট কোর্টল্যান্ড

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৯ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

বাংলাদেশের অর্থনীতি কোভিড-পূর্ব সময়ে প্রায় ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছুঁই ছুঁই করছিল। কিন্তু কোভিড-উত্তর অর্থনীতি মূলত ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটির কারণে এক অনভিপ্রেত সংকটের মধ্যে পতিত হয়, যার পেছনে কোভিড বা রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ—এর কোনোটিই দায়ী নয়। বিগত সরকারের নেতা বা কর্মীরা সে
০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

বাংলাদেশের অর্থনীতি কোভিড-পূর্ব সময়ে প্রায় ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছুঁই ছুঁই করছিল। কিন্তু কোভিড-উত্তর অর্থনীতি মূলত ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটির কারণে এক অনভিপ্রেত সংকটের মধ্যে পতিত হয়, যার পেছনে কোভিড বা রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ—এর কোনোটিই দায়ী নয়। বিগত সরকারের নেতা বা কর্মীরা সে
০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৯ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

বাংলাদেশের অর্থনীতি কোভিড-পূর্ব সময়ে প্রায় ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছুঁই ছুঁই করছিল। কিন্তু কোভিড-উত্তর অর্থনীতি মূলত ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটির কারণে এক অনভিপ্রেত সংকটের মধ্যে পতিত হয়, যার পেছনে কোভিড বা রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ—এর কোনোটিই দায়ী নয়। বিগত সরকারের নেতা বা কর্মীরা সে
০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৯ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

বাংলাদেশের অর্থনীতি কোভিড-পূর্ব সময়ে প্রায় ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছুঁই ছুঁই করছিল। কিন্তু কোভিড-উত্তর অর্থনীতি মূলত ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটির কারণে এক অনভিপ্রেত সংকটের মধ্যে পতিত হয়, যার পেছনে কোভিড বা রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ—এর কোনোটিই দায়ী নয়। বিগত সরকারের নেতা বা কর্মীরা সে
০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৯ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫