Ajker Patrika

বড় ব্যবসায়ীরা বড় ঋণখেলাপি

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ০২ এপ্রিল ২০২২, ০৯: ০০
বড় ব্যবসায়ীরা বড় ঋণখেলাপি

ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করায় ২০১৩ সালের মার্চ মাসে নুরজাহান গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান মেসার্স জাসমির ভেজিটেবল অয়েলস লিমিটেডের তিন পরিচালকের বিরুদ্ধে অর্থঋণ আদালতে মামলা করে জনতা ব্যাংক। ২০১৯ সালে ওই মামলায় আদালত রায় দেন। রায়ে বিবাদী পক্ষকে ৬০ দিনের মধ্যে ঋণের টাকা পরিশোধ করার আদেশ দেন আদালত। কিন্তু রায় ঘোষণার পর নির্ধারিত সময়ে ঋণ পরিশোধ করেনি প্রতিষ্ঠানটির তিন পরিচালক। পরে এই ঘটনায় ২০১৯ সালের ৬ আগস্ট তাঁদের বিরুদ্ধে আদালতে জারি মামলা করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এরপর গত ৪ বছরেও এই মামলার কোনো সুরাহা হয়নি।

শুধু জাসমির ভেজিটেবল অয়েলস লিমিটেডের তিন পরিচালক নন, তাঁদের মতো অনেক বড় বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিকই আদালতের রায় ঘোষণার পরও ব্যাংকের দায় পরিশোধ করছেন না। আর তাতে অর্থঋণ আদালতে বাড়ছে জারি মামলা। বর্তমানে আদালতে ২ হাজার ৩৯৫টি জারি মামলা রয়েছে। এসব মামলার ৬০ শতাংশ মামলার বিবাদী বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে অর্থঋণ আদালতের বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম শাহেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আদালতে দায়ের করা জারি মামলাগুলোর প্রায় ৬০ শতাংশ মামলার বিবাদী বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এবং ওই সব প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ পরিশোধ করে না। অর্থঋণের মামলায় আদালত রায় দেওয়ার পরও এসব প্রতিষ্ঠান আদালতের আদেশ প্রতিপালন করে না। এ কারণে অর্থঋণের ৯০ শতাংশ মামলায় পরবর্তীতে জারি মামলা দায়ের করা হয়। আদালতে দায়ের করা ২ হাজার ৩৯৫টি জারি মামলার মধ্যে প্রায় ১ হাজার ৫০০ বেশি মামলা বড় প্রতিষ্ঠানগুলো বিরুদ্ধ দায়ের করা।’

ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করায় সম্প্রতি ইলিয়াস ব্রাদার্সের ৫ পরিচালককে একটি মামলায় ৫ মাসের কারাদণ্ড দেয় আদালত। সাউথ ইস্ট ব্যাংকের দায়ের করা অর্থঋণের মামলায় বিবাদীরা আদালতের রায় অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঋণ পরিশোধ না করায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বর তাঁদের বিরুদ্ধে এই জারি মামলা দায়ের করে। এর আগে গত ৯ ফেব্রুয়ারি আরেকটি মামলায় একই বিবাদীদের ৫ মাসের কারাদণ্ড দেয় আদালত। আদালতের রায়ের পরও ঋণ পরিশোধ না করায় ২০১৫ সালের ৬ এপ্রিল এই জারি মামলাটি দায়ের করে ন্যাশনাল ব্যাংক।

অর্থঋণ আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত আদালতে মোট ৫ হাজার ১৬২টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এর মধ্যে তিন থেকে ছয় মাস ধরে বিচার কার্য চলছে এক হাজার ৫৪৭টি মামলার। ছয় মাস থেকে ১২ মাস ধরে ৬৬৬টি মামলা, এক বছর ধরে ৩৫৩টি মামলা এবং দুই বছর ধরে কার্যক্রম চলছে ৩৭৬টি মামলা। এ ছাড়া অন্যান্যভাবে ঝুলে রয়েছে ২ হাজার ২২০টি মামলা। এসব মামলার অধিকাংশ ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে বিচারাধীন রয়েছে।

নিয়ম অনুযায়ী, অর্থঋণের মামলায় রায় ঘোষণার ৯০ দিন পর থেকে এক বছরের মধ্যে জারি মামলা দায়ের করতে হয়। আদালতের রায় মেনে ঋণ পরিশোধ না করলেই বাদী পক্ষ বিবাদীদের বিরুদ্ধে আদালতে জারি মামলা দায়ের করেন।

আদালতে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ৫ হাজার ১৬২টি মামলার মধ্যে জারি মামলা আছে ২ হাজার ৩৯৫টি। এ ছাড়া অর্থঋণের মামলা আছে ২ হাজার ৫৯১ টি। অর্থঋণের ২ হাজার ৫৯১ মামলার অধিকাংশই ইস্টার্ন ব্যাংক এবং ব্র্যাক ব্যাংকের। এটি দুটি ব্যাংক সিসি লোন দিয়ে দিয়ে থাকে। যে কারণে সিসি লোন সম্পর্কিত প্রায় সব মামলায় এ দুটি ব্যাংকের। অন্যদিকে ২ হাজার ৩৯৫টি জারি মামলার অধিকাংশ বড় বড় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ জারি মামলার বিবাদী বড় প্রতিষ্ঠানগুলো। এসব প্রতিষ্ঠান ঋণ নিয়ে পরিশোধ করেন না। অর্থঋণের মামলায় আদালত রায় দেওয়ার পরও প্রতিষ্ঠানগুলো সেটি প্রতিপালন করেন না। যে কারণে পরবর্তী সময়ে ব্যাংকগুলো এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে জারি মামলা দায়ের করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনালে অবতরণ করল প্রথম ফ্লাইট

৩ আগস্ট বিমানবন্দরে বাধা পান তাপস, হাসিনাকে অনুরোধ করেন অফিসারের সঙ্গে কথা বলতে- অডিও ফাঁস

স্ত্রী রাজি নন, সাবেক সেনাপ্রধান হারুনের মরদেহের ময়নাতদন্ত হবে না: পুলিশ

বাকৃবির ৫৭ শিক্ষকসহ ১৫৪ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা

সাবেক সেনাপ্রধান হারুন ছিলেন চট্টগ্রাম ক্লাবের গেস্ট হাউসে, দরজা ভেঙে বিছানায় মিলল তাঁর লাশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত