সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

সংবাদপত্রের কাছে পাঠকের প্রত্যাশাটা এমনিতে খুবই সাধারণ। পাঠক সংবাদ চায়। কিন্তু সংবাদ তো নানা ধরনের হয়। কোন সংবাদ চায় সে? পাঠক চায় তার নিজের পক্ষের সংবাদ। সংবাদপত্রের নিরপেক্ষতার কথাটা খুব চালু আছে। নিরপেক্ষতা কিন্তু মোটেই সম্ভব নয়। ন্যায়-অন্যায়ের যুদ্ধটা প্রতিনিয়ত চলছে, সেখানে কেউ যদি বলেন, তিনি কোনো পক্ষে নেই, তিনি নিরপেক্ষ; তাহলে বুঝতে হবে, জ্ঞাতে হোক কি অজ্ঞাতেই হোক, তিনি প্রতারণা করছেন, অপরের সঙ্গে তো অবশ্যই, নিজের সঙ্গেও হয়তো। পাঠক চায়, সংবাদপত্র থাকবে ন্যায়ের পক্ষে; এবং পাঠক মনে করে যে, সে নিজেও ন্যায়ের পক্ষেই রয়েছে।
কিন্তু ন্যায়ের পক্ষে যাওয়াটা তো সহজ নয়। কারণ, অন্যায় অত্যন্ত শক্তিশালী। রাষ্ট্র ও সমাজ কখনো কখনো অন্যায়ের পৃষ্ঠপোষকতা করে। কেবল তা-ই নয়, ওই দুই ব্যবস্থা নিজেরাও অন্যায় করে। আর সংবাদপত্র নিজেও জানে এবং মানে যে, সে এসেছে ব্যবসা করতে। ব্যবসা করতে গেলে সামাজিক শাসন মান্য করাটা ভালো, আর রাষ্ট্রকে চটানো তো কোনো মতেই উচিত নয়। চটানো আসলে সম্ভবও নয়। সংবাদপত্র পাঠকের কাছে যেতে চায়, পাঠকের জন্যই তো তার আত্মপ্রকাশ, কিন্তু সংবাদপত্রকে চোখ রাখতে হয় রাষ্ট্রের দিকে। রাষ্ট্র আবার সমাজেরও রক্ষক। রাষ্ট্র প্রকাশ পায় সরকারের মধ্য দিয়ে, সংবাদপত্র তাই সরকারকে মেনে চলে।
সংবাদপত্র জনপ্রিয় হতে চায়, কিন্তু ভয় পায় সরকারের অপ্রিয় হতে। পাঠকের কাছে যাওয়া প্রসঙ্গে একটা ঘটনা মনে পড়ে। সাহিত্যের ইতিহাসে এটা বেশ আলোচিত। অষ্টাদশ শতাব্দীর ইংরেজি সাহিত্যের একজন প্রধান লেখক হচ্ছেন স্যামুয়েল জনসন। তিনি ঠিক করেছিলেন, ভাষার বিশুদ্ধতা রক্ষার জন্য একটি অভিধান প্রণয়ন করবেন। অত্যন্ত কঠিন পরিশ্রমের কাজ। পরিশ্রমে তাঁর ভয় ছিল না, শঙ্কা ছিল প্রয়োজনীয় অর্থসংগ্রহ নিয়ে। তখন পর্যন্ত লেখকেরা বড় লোকদের পৃষ্ঠপোষকতার ওপর নির্ভর করতে বেশ অভ্যস্ত ছিলেন। সে সময়ে সাহিত্য-সংস্কৃতির ভালো একজন পৃষ্ঠপোষক ছিলেন লর্ড চেস্টারফিল্ড। চেস্টারফিল্ডের কাছে জনসন তাঁর পরিকল্পনাটি পেশ করেন। যে কারণেই হোক, চেস্টারফিল্ড সাড়া দেননি।
জনসনের ছিল অদম্য উৎসাহ; তিনি দমলেন না; বিজ্ঞাপন দিয়ে পাঠকের কাছে অভিধানের জন্য
অগ্রিম গ্রাহক চাঁদা চাইলেন। সাড়া তিনি পেয়েছিলেনও। অভিধানটি প্রকাশিত হবার পর ওটির গুণপনার প্রশংসা করে লর্ড চেস্টারফিল্ড পর পর দুটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন পত্রিকায়। প্রতিক্রিয়ায় জনসন একটি খোলা চিঠি লিখেছিলেন। তাতে চেস্টারফিল্ডকে সম্বোধন করে তিনি বলেন, সমর্থনটা একটু দেরিতে এল। এটা তখন পাইনি যখন একাকী ছিলাম। এখন পাচ্ছি যখন দরকার নেই। এই চিঠিতে ইংরেজি সাহিত্যের জন্য বিত্তবানদের পৃষ্ঠপোষকতা খোঁজার রীতির শেষবিদায়ের ঘণ্টা ধ্বনিত হয়েছিল বলে প্রসিদ্ধি আছে। মুষ্টিমেয়কে ছেড়ে সাহিত্য চলে গেল অজানা-অচেনা পাঠকদের কাছে। তারপর থেকে পাঠকই প্রধান ভরসা। জনসন পাঠক পেয়েছিলেন। সময়টা ছিল পুঁজিবাদের বিকাশের। সামন্তবাদের সীমা পার হয়ে প্রকাশনা চলে যাচ্ছিল মধ্যবিত্ত পাঠকের কাছে, বাজারের ভেতর দিয়ে।
পুঁজিবাদ এখন আর তখনকার অবস্থায় নেই, এখন সে রীতিমতো নৃশংস। বাজার এখন জবরদস্ত। কিন্তু তবু বাজার মোটেই স্থিতিশীল নয়; বিশেষ করে সংবাদপত্র প্রকাশনার ক্ষেত্রে এখন পাঠকের চেয়ে বেশি দরকার বিজ্ঞাপনের। বিজ্ঞাপন বাড়ানোর জন্য পাঠকপ্রিয়তার প্রয়োজন হয় বৈকি; কিন্তু বিজ্ঞাপনই হচ্ছে লক্ষ্য, পাঠক-প্রাপ্তি বিজ্ঞাপন বৃদ্ধির উপায়।
বিজ্ঞাপন যদিও লক্ষ্য, তবু পাঠক না থাকলে বিজ্ঞাপন আসবে না; আর বিজ্ঞাপন না এলে সংবাদপত্রও চলবে না। ব্যবস্থা এটাই। পাঠককে তাই উপেক্ষা করার উপায় নেই। পাঠকের জন্যও ওই উপেক্ষণীয় না হওয়াটাই একমাত্র ভরসা। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সরকার ও ব্যবসায়ীদের হাতে, তবে কিছুটা হলেও পাঠকের হাতেও।
জানা যায়, পাঠক পছন্দ করে অপরাধের খবর। ফৌজদারি অপরাধ হলে পাঠকের রসনা তৃপ্ত হয়; রাজনৈতিক অপরাধও কম সুস্বাদু নয়। এর ভেতরের রহস্যটা অবশ্য এই যে পাঠকের রুচি তৈরিতে সংবাদপত্রের বড় একটা ভূমিকা থাকে। পাঠক আসলে অপরাধের খবর চায় না, তাকে ওই খবর সরবরাহ করে আসক্তি তৈরি করা হয়, যার ফলে সে পছন্দের আর ওই বৃত্তের বাইরে যেতে পারে না। অপরাধের খবরই তার খোরাক হয়ে দাঁড়ায়। খোরাক না পেলে ভেতরে-ভেতরে সে হতাশ হয়।
প্রকৃত খবর হলো, রাষ্ট্র ও সমাজের অসুখের কারণেই নাগরিকেরা অসুস্থ। এই নাগরিকেরাই তো সংবাদপত্রের পাঠক। তারা আশার খবর চায়। আশার খবর মানে কী? সেটা হলো অপরাধীর শাস্তির খবর। হ্যাঁ, তাই। এবং অপরাধ যে নির্মূল হবে, পাঠক চায় এ রকম আশ্বাসও। কিন্তু অপরাধীর শাস্তির খবর তো পাওয়া যায় না। অপরাধের খবর পাওয়া যায়, কিন্তু অপরাধীর কী শাস্তি হলো, সেটা জানা যায় না। নতুন অপরাধের খবর এসে অপরাধের পুরাতন খবরকে ম্লান করে দেয়। আর মূল যে অপরাধী, রাষ্ট্র ও সমাজ—তারা তো চিহ্নিতই হয় না। রাষ্ট্র ও সমাজের শাস্তিটা অন্য কিছু নয়, রাষ্ট্র ও সমাজে পরিবর্তন আনা ভিন্ন। পরিবর্তন আসার চেষ্টা যে চলে না, তা নয়। চলে। ওই চেষ্টাতেই আশা থাকার কথা, এমন আশ্বাস থাকার কথা যে মানুষ লড়ছে ব্যবস্থা বদলানোর জন্য এবং ব্যবস্থা বদলাবে বৈকি। কিন্তু সেসব খবর পত্রিকায় আসে না। ওই বিষয়ে খবরকে উপেক্ষা করা হয়, কখনো কখনো বিকৃতও করা হয়। কারণ কী? কারণ হচ্ছে, সংবাদপত্রের যাঁরা মালিক, তাঁরা ব্যবস্থার পক্ষে থাকেন। ব্যবস্থা তাঁদেরকে সুবিধা দেয়। ব্যবস্থাটা বদলে গেলে তাঁদের ভীষণ অসুবিধা; আম ও ছালা একসঙ্গে লোপাট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা। সেটা তাঁরা চাইবেন কেন? কোন দুঃখে? পরিবর্তন আসুক, এটা তাঁরা মোটেই চান না।
এমনকি সাধারণ যে অপরাধগুলো, যাদের রমরমা বর্ণনা পাঠককে আমোদ-আরাম ইত্যাদি দিতে চায়, সেগুলোর অভ্যন্তরে যে রহস্য রয়েছে, যেসব কার্যকারণে তারা সংঘটিত, তাদেরও উন্মোচন ঘটে না। অন্ধকার অন্ধকারেই রয়ে যায়; অপরাধ বাড়তে থাকে—সংখ্যায় যেমন, মাত্রাতেও তেমনই।
ভেতরে অনুসন্ধানের ব্যাপারে অনাগ্রহটা চমৎকারভাবে প্রকাশ পায় পত্রিকার সম্পাদকীয়তে। সম্পাদকীয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়; সেখানে থাকার কথা পত্রিকাটির অবস্থানের হদিস। গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকাগুলো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে কেবল খবর দেওয়ার দক্ষতার কারণে নয়; সঙ্গে থাকে খবরের ব্যাখ্যাও। সেটা খবরে থাকবে, থাকবে সম্পাদকীয়তে। ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য গভীরে যেতে হয়; প্রয়োজন হয় জ্ঞানের ও গবেষণার; এবং স্থির থাকতে হয় দেখার দৃষ্টিভঙ্গিতে।
বাংলাদেশের সংবাদপত্রের সবচেয়ে কম পঠিত অংশ হলো সম্পাদকীয়; দায়সারাভাবে লেখা হয়, রাখতে হয় তাই যেন রাখা; সত্য উন্মোচন থাকে না, ব্যাখ্যা আসে না ঘটনাবলির, দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ পাওয়া যায় না। বক্তব্য থাকে নিষ্প্রাণ, লেখার ধরন যান্ত্রিক। অনেক কথা বলা হয়, কোনো কথা না বলে। ফলে পড়ার আগেই পাঠক অনুমান করতে পারেন, ভেতরে কী আছে। সেই অনুমান যে ভ্রান্ত প্রমাণিত হয় এমন নয়। উপসম্পাদকীয়ের ব্যাপারেও একই কথা। পাঠক লেখকের নাম দেখে, এবং বুঝে নেয় ভেতরে কী আছে। চোখ বোলায়; পড়তে আগ্রহী হয় না। সম্পাদকীয় পাতাতে জনমতের প্রতিফলন থাকার কথা; চিঠিপত্রের মধ্য দিয়ে। চিঠিপত্রও আসে না, চিঠিপত্রকে যে উৎসাহ দেওয়া হয় এমন নয়।
পাঠকের জন্য সংবাদপত্রের একটা বড় আকর্ষণ হচ্ছে ব্যঙ্গচিত্র। ব্যঙ্গচিত্র সমসাময়িক ঘটনাপ্রবাহের ওপর কৌতুককর মন্তব্য থাকে। সেখানে পত্রিকার দৃষ্টিভঙ্গিও প্রকাশ পায়। ব্যঙ্গচিত্র তখনই সার্থক হয়, যখন ভেতরে থাকে কী ঘটা উচিত ছিল, সে বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকে। যা ঘটছে তাকে মাপা দরকার ওই মানদণ্ডে। ওসব মাপা-টাপা এখন অনুপস্থিত। পত্রিকা থেকে ব্যঙ্গচিত্র উঠেই গেছে। কৌতুক দেওয়ার জন্য নানা রকম ইয়ার্কি-ফাজলামি থাকে, সেগুলো আড্ডাবাজির মতোই অর্থহীন। দাগ কাটে না, কৌতুকের সৃষ্টি করে না। আর আছে রংঢং। মানুষের জীবনে রঙের অভাব, পত্রিকাগুলো আসে রঙিন হয়ে। হ্যাঁ, ফটোজার্নালিজম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দক্ষ ফটোগ্রাফাররা আছেন, তাঁরা ছবি তোলেনও, কিন্তু অনেক ছবিই ছাপা হয় না বলে ধারণা করা যায়, নইলে ছবিগুলো এমন গতানুগতিক হবে কেন?
ওদিকে সংবাদপত্রের পাতায় সংবাদের জন্য বরাদ্দ জায়গা তো কেবলই সংকুচিত হচ্ছে, বিজ্ঞাপনের ধাক্কায়। বিজ্ঞাপন প্রথম পাতাকে পর্যন্ত গ্রাস করে ফেলছে। মনে হচ্ছে, খবর যা দেওয়া হয়, তা হচ্ছে বিজ্ঞাপন প্রচারের অজুহাত। মালিকের চোখ বিজ্ঞাপনের দিকে, সংবাদের দিকে নয়। এখানে রয়েছে পুঁজিবাদের চরম প্রকাশ। বিজ্ঞাপন পাঠকের রুচি তৈরিতেও কাজ করছে।
খবরের কাগজের কাছে পাঠকের এত সব প্রত্যাশার কারণটা কী? কারণ হচ্ছে, রাষ্ট্রের নির্বাহী ক্ষমতার, অর্থাৎ সরকারের ওপর সামাজিক নজরদারির অভাব। নজরদারি দরকার জবাবদিহি তৈরি করার জন্য। কাজটা আইন পরিষদের করার কথা। আইন পরিষদ সেটা করতে পারে না। কারণ, সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকে সরকারি দলের; কাজেই যত সমালোচনা হোক, সরকার তার ইচ্ছা অনুযায়ী এগিয়ে যায়। নজরদারি করতে পারে বিচার বিভাগ। কিন্তু বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে অসমর্থ হয়। এ জন্যই সংবাদপত্রের কাজে প্রত্যাশা থাকে যে তারা খবর দেবে, খবরের পেছনের খবর বের করে আনবে, সরকারের কাজের সমালোচনা করবে, জনমতের প্রতিফলন ঘটাবে, এবং সহায়তা দেবে জনমত সংগঠনে।
বড় প্রত্যাশাটা অবশ্য দাঁড়ায় এই যে সংবাদপত্র পুঁজিবাদী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে। ব্যক্তিমালিকানার জায়গায় সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠার পক্ষে বলবে। নদীতে ঢেউ থাকে, বালুও থাকে। পুঁজিবাদী ব্যবস্থা মানুষকে বালুতে পরিণত করতে চায়, ঢেউকে বাদ দিয়ে। কারণ, বালুকে পণ্য করা যায়, ঢেউকে তা করা যায় না। মানুষের প্রত্যাশা হলো, সংবাদপত্র ঢেউয়ের পক্ষে দাঁড়াবে। প্রত্যাশাটা বিশেষভাবে এই কারণে যে, বালুর দৌরাত্ম্য এখন সর্বপ্লাবী হয়ে উঠছে; ঢেউগুলো কেবলই মার খাচ্ছে, বালুর হাতে, অর্থাৎ বালুর ব্যবসায়ীদের হাতে।
দৈনিক আজকের পত্রিকার প্রথম বর্ষপূর্তিতে পত্রিকাসংশ্লিষ্ট সবাইকে, পাশাপাশি পত্রিকার পাঠকদের জানাই অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। পত্রিকাটি অব্যাহত গতিতে এগিয়ে যাক, এটা কাঙ্ক্ষিতভাবেই প্রত্যাশা করছি।
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সংবাদপত্রের কাছে পাঠকের প্রত্যাশাটা এমনিতে খুবই সাধারণ। পাঠক সংবাদ চায়। কিন্তু সংবাদ তো নানা ধরনের হয়। কোন সংবাদ চায় সে? পাঠক চায় তার নিজের পক্ষের সংবাদ। সংবাদপত্রের নিরপেক্ষতার কথাটা খুব চালু আছে। নিরপেক্ষতা কিন্তু মোটেই সম্ভব নয়। ন্যায়-অন্যায়ের যুদ্ধটা প্রতিনিয়ত চলছে, সেখানে কেউ যদি বলেন, তিনি কোনো পক্ষে নেই, তিনি নিরপেক্ষ; তাহলে বুঝতে হবে, জ্ঞাতে হোক কি অজ্ঞাতেই হোক, তিনি প্রতারণা করছেন, অপরের সঙ্গে তো অবশ্যই, নিজের সঙ্গেও হয়তো। পাঠক চায়, সংবাদপত্র থাকবে ন্যায়ের পক্ষে; এবং পাঠক মনে করে যে, সে নিজেও ন্যায়ের পক্ষেই রয়েছে।
কিন্তু ন্যায়ের পক্ষে যাওয়াটা তো সহজ নয়। কারণ, অন্যায় অত্যন্ত শক্তিশালী। রাষ্ট্র ও সমাজ কখনো কখনো অন্যায়ের পৃষ্ঠপোষকতা করে। কেবল তা-ই নয়, ওই দুই ব্যবস্থা নিজেরাও অন্যায় করে। আর সংবাদপত্র নিজেও জানে এবং মানে যে, সে এসেছে ব্যবসা করতে। ব্যবসা করতে গেলে সামাজিক শাসন মান্য করাটা ভালো, আর রাষ্ট্রকে চটানো তো কোনো মতেই উচিত নয়। চটানো আসলে সম্ভবও নয়। সংবাদপত্র পাঠকের কাছে যেতে চায়, পাঠকের জন্যই তো তার আত্মপ্রকাশ, কিন্তু সংবাদপত্রকে চোখ রাখতে হয় রাষ্ট্রের দিকে। রাষ্ট্র আবার সমাজেরও রক্ষক। রাষ্ট্র প্রকাশ পায় সরকারের মধ্য দিয়ে, সংবাদপত্র তাই সরকারকে মেনে চলে।
সংবাদপত্র জনপ্রিয় হতে চায়, কিন্তু ভয় পায় সরকারের অপ্রিয় হতে। পাঠকের কাছে যাওয়া প্রসঙ্গে একটা ঘটনা মনে পড়ে। সাহিত্যের ইতিহাসে এটা বেশ আলোচিত। অষ্টাদশ শতাব্দীর ইংরেজি সাহিত্যের একজন প্রধান লেখক হচ্ছেন স্যামুয়েল জনসন। তিনি ঠিক করেছিলেন, ভাষার বিশুদ্ধতা রক্ষার জন্য একটি অভিধান প্রণয়ন করবেন। অত্যন্ত কঠিন পরিশ্রমের কাজ। পরিশ্রমে তাঁর ভয় ছিল না, শঙ্কা ছিল প্রয়োজনীয় অর্থসংগ্রহ নিয়ে। তখন পর্যন্ত লেখকেরা বড় লোকদের পৃষ্ঠপোষকতার ওপর নির্ভর করতে বেশ অভ্যস্ত ছিলেন। সে সময়ে সাহিত্য-সংস্কৃতির ভালো একজন পৃষ্ঠপোষক ছিলেন লর্ড চেস্টারফিল্ড। চেস্টারফিল্ডের কাছে জনসন তাঁর পরিকল্পনাটি পেশ করেন। যে কারণেই হোক, চেস্টারফিল্ড সাড়া দেননি।
জনসনের ছিল অদম্য উৎসাহ; তিনি দমলেন না; বিজ্ঞাপন দিয়ে পাঠকের কাছে অভিধানের জন্য
অগ্রিম গ্রাহক চাঁদা চাইলেন। সাড়া তিনি পেয়েছিলেনও। অভিধানটি প্রকাশিত হবার পর ওটির গুণপনার প্রশংসা করে লর্ড চেস্টারফিল্ড পর পর দুটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন পত্রিকায়। প্রতিক্রিয়ায় জনসন একটি খোলা চিঠি লিখেছিলেন। তাতে চেস্টারফিল্ডকে সম্বোধন করে তিনি বলেন, সমর্থনটা একটু দেরিতে এল। এটা তখন পাইনি যখন একাকী ছিলাম। এখন পাচ্ছি যখন দরকার নেই। এই চিঠিতে ইংরেজি সাহিত্যের জন্য বিত্তবানদের পৃষ্ঠপোষকতা খোঁজার রীতির শেষবিদায়ের ঘণ্টা ধ্বনিত হয়েছিল বলে প্রসিদ্ধি আছে। মুষ্টিমেয়কে ছেড়ে সাহিত্য চলে গেল অজানা-অচেনা পাঠকদের কাছে। তারপর থেকে পাঠকই প্রধান ভরসা। জনসন পাঠক পেয়েছিলেন। সময়টা ছিল পুঁজিবাদের বিকাশের। সামন্তবাদের সীমা পার হয়ে প্রকাশনা চলে যাচ্ছিল মধ্যবিত্ত পাঠকের কাছে, বাজারের ভেতর দিয়ে।
পুঁজিবাদ এখন আর তখনকার অবস্থায় নেই, এখন সে রীতিমতো নৃশংস। বাজার এখন জবরদস্ত। কিন্তু তবু বাজার মোটেই স্থিতিশীল নয়; বিশেষ করে সংবাদপত্র প্রকাশনার ক্ষেত্রে এখন পাঠকের চেয়ে বেশি দরকার বিজ্ঞাপনের। বিজ্ঞাপন বাড়ানোর জন্য পাঠকপ্রিয়তার প্রয়োজন হয় বৈকি; কিন্তু বিজ্ঞাপনই হচ্ছে লক্ষ্য, পাঠক-প্রাপ্তি বিজ্ঞাপন বৃদ্ধির উপায়।
বিজ্ঞাপন যদিও লক্ষ্য, তবু পাঠক না থাকলে বিজ্ঞাপন আসবে না; আর বিজ্ঞাপন না এলে সংবাদপত্রও চলবে না। ব্যবস্থা এটাই। পাঠককে তাই উপেক্ষা করার উপায় নেই। পাঠকের জন্যও ওই উপেক্ষণীয় না হওয়াটাই একমাত্র ভরসা। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সরকার ও ব্যবসায়ীদের হাতে, তবে কিছুটা হলেও পাঠকের হাতেও।
জানা যায়, পাঠক পছন্দ করে অপরাধের খবর। ফৌজদারি অপরাধ হলে পাঠকের রসনা তৃপ্ত হয়; রাজনৈতিক অপরাধও কম সুস্বাদু নয়। এর ভেতরের রহস্যটা অবশ্য এই যে পাঠকের রুচি তৈরিতে সংবাদপত্রের বড় একটা ভূমিকা থাকে। পাঠক আসলে অপরাধের খবর চায় না, তাকে ওই খবর সরবরাহ করে আসক্তি তৈরি করা হয়, যার ফলে সে পছন্দের আর ওই বৃত্তের বাইরে যেতে পারে না। অপরাধের খবরই তার খোরাক হয়ে দাঁড়ায়। খোরাক না পেলে ভেতরে-ভেতরে সে হতাশ হয়।
প্রকৃত খবর হলো, রাষ্ট্র ও সমাজের অসুখের কারণেই নাগরিকেরা অসুস্থ। এই নাগরিকেরাই তো সংবাদপত্রের পাঠক। তারা আশার খবর চায়। আশার খবর মানে কী? সেটা হলো অপরাধীর শাস্তির খবর। হ্যাঁ, তাই। এবং অপরাধ যে নির্মূল হবে, পাঠক চায় এ রকম আশ্বাসও। কিন্তু অপরাধীর শাস্তির খবর তো পাওয়া যায় না। অপরাধের খবর পাওয়া যায়, কিন্তু অপরাধীর কী শাস্তি হলো, সেটা জানা যায় না। নতুন অপরাধের খবর এসে অপরাধের পুরাতন খবরকে ম্লান করে দেয়। আর মূল যে অপরাধী, রাষ্ট্র ও সমাজ—তারা তো চিহ্নিতই হয় না। রাষ্ট্র ও সমাজের শাস্তিটা অন্য কিছু নয়, রাষ্ট্র ও সমাজে পরিবর্তন আনা ভিন্ন। পরিবর্তন আসার চেষ্টা যে চলে না, তা নয়। চলে। ওই চেষ্টাতেই আশা থাকার কথা, এমন আশ্বাস থাকার কথা যে মানুষ লড়ছে ব্যবস্থা বদলানোর জন্য এবং ব্যবস্থা বদলাবে বৈকি। কিন্তু সেসব খবর পত্রিকায় আসে না। ওই বিষয়ে খবরকে উপেক্ষা করা হয়, কখনো কখনো বিকৃতও করা হয়। কারণ কী? কারণ হচ্ছে, সংবাদপত্রের যাঁরা মালিক, তাঁরা ব্যবস্থার পক্ষে থাকেন। ব্যবস্থা তাঁদেরকে সুবিধা দেয়। ব্যবস্থাটা বদলে গেলে তাঁদের ভীষণ অসুবিধা; আম ও ছালা একসঙ্গে লোপাট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা। সেটা তাঁরা চাইবেন কেন? কোন দুঃখে? পরিবর্তন আসুক, এটা তাঁরা মোটেই চান না।
এমনকি সাধারণ যে অপরাধগুলো, যাদের রমরমা বর্ণনা পাঠককে আমোদ-আরাম ইত্যাদি দিতে চায়, সেগুলোর অভ্যন্তরে যে রহস্য রয়েছে, যেসব কার্যকারণে তারা সংঘটিত, তাদেরও উন্মোচন ঘটে না। অন্ধকার অন্ধকারেই রয়ে যায়; অপরাধ বাড়তে থাকে—সংখ্যায় যেমন, মাত্রাতেও তেমনই।
ভেতরে অনুসন্ধানের ব্যাপারে অনাগ্রহটা চমৎকারভাবে প্রকাশ পায় পত্রিকার সম্পাদকীয়তে। সম্পাদকীয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়; সেখানে থাকার কথা পত্রিকাটির অবস্থানের হদিস। গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকাগুলো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে কেবল খবর দেওয়ার দক্ষতার কারণে নয়; সঙ্গে থাকে খবরের ব্যাখ্যাও। সেটা খবরে থাকবে, থাকবে সম্পাদকীয়তে। ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য গভীরে যেতে হয়; প্রয়োজন হয় জ্ঞানের ও গবেষণার; এবং স্থির থাকতে হয় দেখার দৃষ্টিভঙ্গিতে।
বাংলাদেশের সংবাদপত্রের সবচেয়ে কম পঠিত অংশ হলো সম্পাদকীয়; দায়সারাভাবে লেখা হয়, রাখতে হয় তাই যেন রাখা; সত্য উন্মোচন থাকে না, ব্যাখ্যা আসে না ঘটনাবলির, দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ পাওয়া যায় না। বক্তব্য থাকে নিষ্প্রাণ, লেখার ধরন যান্ত্রিক। অনেক কথা বলা হয়, কোনো কথা না বলে। ফলে পড়ার আগেই পাঠক অনুমান করতে পারেন, ভেতরে কী আছে। সেই অনুমান যে ভ্রান্ত প্রমাণিত হয় এমন নয়। উপসম্পাদকীয়ের ব্যাপারেও একই কথা। পাঠক লেখকের নাম দেখে, এবং বুঝে নেয় ভেতরে কী আছে। চোখ বোলায়; পড়তে আগ্রহী হয় না। সম্পাদকীয় পাতাতে জনমতের প্রতিফলন থাকার কথা; চিঠিপত্রের মধ্য দিয়ে। চিঠিপত্রও আসে না, চিঠিপত্রকে যে উৎসাহ দেওয়া হয় এমন নয়।
পাঠকের জন্য সংবাদপত্রের একটা বড় আকর্ষণ হচ্ছে ব্যঙ্গচিত্র। ব্যঙ্গচিত্র সমসাময়িক ঘটনাপ্রবাহের ওপর কৌতুককর মন্তব্য থাকে। সেখানে পত্রিকার দৃষ্টিভঙ্গিও প্রকাশ পায়। ব্যঙ্গচিত্র তখনই সার্থক হয়, যখন ভেতরে থাকে কী ঘটা উচিত ছিল, সে বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকে। যা ঘটছে তাকে মাপা দরকার ওই মানদণ্ডে। ওসব মাপা-টাপা এখন অনুপস্থিত। পত্রিকা থেকে ব্যঙ্গচিত্র উঠেই গেছে। কৌতুক দেওয়ার জন্য নানা রকম ইয়ার্কি-ফাজলামি থাকে, সেগুলো আড্ডাবাজির মতোই অর্থহীন। দাগ কাটে না, কৌতুকের সৃষ্টি করে না। আর আছে রংঢং। মানুষের জীবনে রঙের অভাব, পত্রিকাগুলো আসে রঙিন হয়ে। হ্যাঁ, ফটোজার্নালিজম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দক্ষ ফটোগ্রাফাররা আছেন, তাঁরা ছবি তোলেনও, কিন্তু অনেক ছবিই ছাপা হয় না বলে ধারণা করা যায়, নইলে ছবিগুলো এমন গতানুগতিক হবে কেন?
ওদিকে সংবাদপত্রের পাতায় সংবাদের জন্য বরাদ্দ জায়গা তো কেবলই সংকুচিত হচ্ছে, বিজ্ঞাপনের ধাক্কায়। বিজ্ঞাপন প্রথম পাতাকে পর্যন্ত গ্রাস করে ফেলছে। মনে হচ্ছে, খবর যা দেওয়া হয়, তা হচ্ছে বিজ্ঞাপন প্রচারের অজুহাত। মালিকের চোখ বিজ্ঞাপনের দিকে, সংবাদের দিকে নয়। এখানে রয়েছে পুঁজিবাদের চরম প্রকাশ। বিজ্ঞাপন পাঠকের রুচি তৈরিতেও কাজ করছে।
খবরের কাগজের কাছে পাঠকের এত সব প্রত্যাশার কারণটা কী? কারণ হচ্ছে, রাষ্ট্রের নির্বাহী ক্ষমতার, অর্থাৎ সরকারের ওপর সামাজিক নজরদারির অভাব। নজরদারি দরকার জবাবদিহি তৈরি করার জন্য। কাজটা আইন পরিষদের করার কথা। আইন পরিষদ সেটা করতে পারে না। কারণ, সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকে সরকারি দলের; কাজেই যত সমালোচনা হোক, সরকার তার ইচ্ছা অনুযায়ী এগিয়ে যায়। নজরদারি করতে পারে বিচার বিভাগ। কিন্তু বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে অসমর্থ হয়। এ জন্যই সংবাদপত্রের কাজে প্রত্যাশা থাকে যে তারা খবর দেবে, খবরের পেছনের খবর বের করে আনবে, সরকারের কাজের সমালোচনা করবে, জনমতের প্রতিফলন ঘটাবে, এবং সহায়তা দেবে জনমত সংগঠনে।
বড় প্রত্যাশাটা অবশ্য দাঁড়ায় এই যে সংবাদপত্র পুঁজিবাদী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে। ব্যক্তিমালিকানার জায়গায় সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠার পক্ষে বলবে। নদীতে ঢেউ থাকে, বালুও থাকে। পুঁজিবাদী ব্যবস্থা মানুষকে বালুতে পরিণত করতে চায়, ঢেউকে বাদ দিয়ে। কারণ, বালুকে পণ্য করা যায়, ঢেউকে তা করা যায় না। মানুষের প্রত্যাশা হলো, সংবাদপত্র ঢেউয়ের পক্ষে দাঁড়াবে। প্রত্যাশাটা বিশেষভাবে এই কারণে যে, বালুর দৌরাত্ম্য এখন সর্বপ্লাবী হয়ে উঠছে; ঢেউগুলো কেবলই মার খাচ্ছে, বালুর হাতে, অর্থাৎ বালুর ব্যবসায়ীদের হাতে।
দৈনিক আজকের পত্রিকার প্রথম বর্ষপূর্তিতে পত্রিকাসংশ্লিষ্ট সবাইকে, পাশাপাশি পত্রিকার পাঠকদের জানাই অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। পত্রিকাটি অব্যাহত গতিতে এগিয়ে যাক, এটা কাঙ্ক্ষিতভাবেই প্রত্যাশা করছি।
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

সংবাদপত্রের কাছে পাঠকের প্রত্যাশাটা এমনিতে খুবই সাধারণ। পাঠক সংবাদ চায়। কিন্তু সংবাদ তো নানা ধরনের হয়। কোন সংবাদ চায় সে? পাঠক চায় তার নিজের পক্ষের সংবাদ। সংবাদপত্রের নিরপেক্ষতার কথাটা খুব চালু আছে। নিরপেক্ষতা কিন্তু মোটেই সম্ভব নয়। ন্যায়-অন্যায়ের যুদ্ধটা প্রতিনিয়ত চলছে, সেখানে কেউ যদি বলেন, তিনি কোনো পক্ষে নেই, তিনি নিরপেক্ষ; তাহলে বুঝতে হবে, জ্ঞাতে হোক কি অজ্ঞাতেই হোক, তিনি প্রতারণা করছেন, অপরের সঙ্গে তো অবশ্যই, নিজের সঙ্গেও হয়তো। পাঠক চায়, সংবাদপত্র থাকবে ন্যায়ের পক্ষে; এবং পাঠক মনে করে যে, সে নিজেও ন্যায়ের পক্ষেই রয়েছে।
কিন্তু ন্যায়ের পক্ষে যাওয়াটা তো সহজ নয়। কারণ, অন্যায় অত্যন্ত শক্তিশালী। রাষ্ট্র ও সমাজ কখনো কখনো অন্যায়ের পৃষ্ঠপোষকতা করে। কেবল তা-ই নয়, ওই দুই ব্যবস্থা নিজেরাও অন্যায় করে। আর সংবাদপত্র নিজেও জানে এবং মানে যে, সে এসেছে ব্যবসা করতে। ব্যবসা করতে গেলে সামাজিক শাসন মান্য করাটা ভালো, আর রাষ্ট্রকে চটানো তো কোনো মতেই উচিত নয়। চটানো আসলে সম্ভবও নয়। সংবাদপত্র পাঠকের কাছে যেতে চায়, পাঠকের জন্যই তো তার আত্মপ্রকাশ, কিন্তু সংবাদপত্রকে চোখ রাখতে হয় রাষ্ট্রের দিকে। রাষ্ট্র আবার সমাজেরও রক্ষক। রাষ্ট্র প্রকাশ পায় সরকারের মধ্য দিয়ে, সংবাদপত্র তাই সরকারকে মেনে চলে।
সংবাদপত্র জনপ্রিয় হতে চায়, কিন্তু ভয় পায় সরকারের অপ্রিয় হতে। পাঠকের কাছে যাওয়া প্রসঙ্গে একটা ঘটনা মনে পড়ে। সাহিত্যের ইতিহাসে এটা বেশ আলোচিত। অষ্টাদশ শতাব্দীর ইংরেজি সাহিত্যের একজন প্রধান লেখক হচ্ছেন স্যামুয়েল জনসন। তিনি ঠিক করেছিলেন, ভাষার বিশুদ্ধতা রক্ষার জন্য একটি অভিধান প্রণয়ন করবেন। অত্যন্ত কঠিন পরিশ্রমের কাজ। পরিশ্রমে তাঁর ভয় ছিল না, শঙ্কা ছিল প্রয়োজনীয় অর্থসংগ্রহ নিয়ে। তখন পর্যন্ত লেখকেরা বড় লোকদের পৃষ্ঠপোষকতার ওপর নির্ভর করতে বেশ অভ্যস্ত ছিলেন। সে সময়ে সাহিত্য-সংস্কৃতির ভালো একজন পৃষ্ঠপোষক ছিলেন লর্ড চেস্টারফিল্ড। চেস্টারফিল্ডের কাছে জনসন তাঁর পরিকল্পনাটি পেশ করেন। যে কারণেই হোক, চেস্টারফিল্ড সাড়া দেননি।
জনসনের ছিল অদম্য উৎসাহ; তিনি দমলেন না; বিজ্ঞাপন দিয়ে পাঠকের কাছে অভিধানের জন্য
অগ্রিম গ্রাহক চাঁদা চাইলেন। সাড়া তিনি পেয়েছিলেনও। অভিধানটি প্রকাশিত হবার পর ওটির গুণপনার প্রশংসা করে লর্ড চেস্টারফিল্ড পর পর দুটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন পত্রিকায়। প্রতিক্রিয়ায় জনসন একটি খোলা চিঠি লিখেছিলেন। তাতে চেস্টারফিল্ডকে সম্বোধন করে তিনি বলেন, সমর্থনটা একটু দেরিতে এল। এটা তখন পাইনি যখন একাকী ছিলাম। এখন পাচ্ছি যখন দরকার নেই। এই চিঠিতে ইংরেজি সাহিত্যের জন্য বিত্তবানদের পৃষ্ঠপোষকতা খোঁজার রীতির শেষবিদায়ের ঘণ্টা ধ্বনিত হয়েছিল বলে প্রসিদ্ধি আছে। মুষ্টিমেয়কে ছেড়ে সাহিত্য চলে গেল অজানা-অচেনা পাঠকদের কাছে। তারপর থেকে পাঠকই প্রধান ভরসা। জনসন পাঠক পেয়েছিলেন। সময়টা ছিল পুঁজিবাদের বিকাশের। সামন্তবাদের সীমা পার হয়ে প্রকাশনা চলে যাচ্ছিল মধ্যবিত্ত পাঠকের কাছে, বাজারের ভেতর দিয়ে।
পুঁজিবাদ এখন আর তখনকার অবস্থায় নেই, এখন সে রীতিমতো নৃশংস। বাজার এখন জবরদস্ত। কিন্তু তবু বাজার মোটেই স্থিতিশীল নয়; বিশেষ করে সংবাদপত্র প্রকাশনার ক্ষেত্রে এখন পাঠকের চেয়ে বেশি দরকার বিজ্ঞাপনের। বিজ্ঞাপন বাড়ানোর জন্য পাঠকপ্রিয়তার প্রয়োজন হয় বৈকি; কিন্তু বিজ্ঞাপনই হচ্ছে লক্ষ্য, পাঠক-প্রাপ্তি বিজ্ঞাপন বৃদ্ধির উপায়।
বিজ্ঞাপন যদিও লক্ষ্য, তবু পাঠক না থাকলে বিজ্ঞাপন আসবে না; আর বিজ্ঞাপন না এলে সংবাদপত্রও চলবে না। ব্যবস্থা এটাই। পাঠককে তাই উপেক্ষা করার উপায় নেই। পাঠকের জন্যও ওই উপেক্ষণীয় না হওয়াটাই একমাত্র ভরসা। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সরকার ও ব্যবসায়ীদের হাতে, তবে কিছুটা হলেও পাঠকের হাতেও।
জানা যায়, পাঠক পছন্দ করে অপরাধের খবর। ফৌজদারি অপরাধ হলে পাঠকের রসনা তৃপ্ত হয়; রাজনৈতিক অপরাধও কম সুস্বাদু নয়। এর ভেতরের রহস্যটা অবশ্য এই যে পাঠকের রুচি তৈরিতে সংবাদপত্রের বড় একটা ভূমিকা থাকে। পাঠক আসলে অপরাধের খবর চায় না, তাকে ওই খবর সরবরাহ করে আসক্তি তৈরি করা হয়, যার ফলে সে পছন্দের আর ওই বৃত্তের বাইরে যেতে পারে না। অপরাধের খবরই তার খোরাক হয়ে দাঁড়ায়। খোরাক না পেলে ভেতরে-ভেতরে সে হতাশ হয়।
প্রকৃত খবর হলো, রাষ্ট্র ও সমাজের অসুখের কারণেই নাগরিকেরা অসুস্থ। এই নাগরিকেরাই তো সংবাদপত্রের পাঠক। তারা আশার খবর চায়। আশার খবর মানে কী? সেটা হলো অপরাধীর শাস্তির খবর। হ্যাঁ, তাই। এবং অপরাধ যে নির্মূল হবে, পাঠক চায় এ রকম আশ্বাসও। কিন্তু অপরাধীর শাস্তির খবর তো পাওয়া যায় না। অপরাধের খবর পাওয়া যায়, কিন্তু অপরাধীর কী শাস্তি হলো, সেটা জানা যায় না। নতুন অপরাধের খবর এসে অপরাধের পুরাতন খবরকে ম্লান করে দেয়। আর মূল যে অপরাধী, রাষ্ট্র ও সমাজ—তারা তো চিহ্নিতই হয় না। রাষ্ট্র ও সমাজের শাস্তিটা অন্য কিছু নয়, রাষ্ট্র ও সমাজে পরিবর্তন আনা ভিন্ন। পরিবর্তন আসার চেষ্টা যে চলে না, তা নয়। চলে। ওই চেষ্টাতেই আশা থাকার কথা, এমন আশ্বাস থাকার কথা যে মানুষ লড়ছে ব্যবস্থা বদলানোর জন্য এবং ব্যবস্থা বদলাবে বৈকি। কিন্তু সেসব খবর পত্রিকায় আসে না। ওই বিষয়ে খবরকে উপেক্ষা করা হয়, কখনো কখনো বিকৃতও করা হয়। কারণ কী? কারণ হচ্ছে, সংবাদপত্রের যাঁরা মালিক, তাঁরা ব্যবস্থার পক্ষে থাকেন। ব্যবস্থা তাঁদেরকে সুবিধা দেয়। ব্যবস্থাটা বদলে গেলে তাঁদের ভীষণ অসুবিধা; আম ও ছালা একসঙ্গে লোপাট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা। সেটা তাঁরা চাইবেন কেন? কোন দুঃখে? পরিবর্তন আসুক, এটা তাঁরা মোটেই চান না।
এমনকি সাধারণ যে অপরাধগুলো, যাদের রমরমা বর্ণনা পাঠককে আমোদ-আরাম ইত্যাদি দিতে চায়, সেগুলোর অভ্যন্তরে যে রহস্য রয়েছে, যেসব কার্যকারণে তারা সংঘটিত, তাদেরও উন্মোচন ঘটে না। অন্ধকার অন্ধকারেই রয়ে যায়; অপরাধ বাড়তে থাকে—সংখ্যায় যেমন, মাত্রাতেও তেমনই।
ভেতরে অনুসন্ধানের ব্যাপারে অনাগ্রহটা চমৎকারভাবে প্রকাশ পায় পত্রিকার সম্পাদকীয়তে। সম্পাদকীয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়; সেখানে থাকার কথা পত্রিকাটির অবস্থানের হদিস। গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকাগুলো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে কেবল খবর দেওয়ার দক্ষতার কারণে নয়; সঙ্গে থাকে খবরের ব্যাখ্যাও। সেটা খবরে থাকবে, থাকবে সম্পাদকীয়তে। ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য গভীরে যেতে হয়; প্রয়োজন হয় জ্ঞানের ও গবেষণার; এবং স্থির থাকতে হয় দেখার দৃষ্টিভঙ্গিতে।
বাংলাদেশের সংবাদপত্রের সবচেয়ে কম পঠিত অংশ হলো সম্পাদকীয়; দায়সারাভাবে লেখা হয়, রাখতে হয় তাই যেন রাখা; সত্য উন্মোচন থাকে না, ব্যাখ্যা আসে না ঘটনাবলির, দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ পাওয়া যায় না। বক্তব্য থাকে নিষ্প্রাণ, লেখার ধরন যান্ত্রিক। অনেক কথা বলা হয়, কোনো কথা না বলে। ফলে পড়ার আগেই পাঠক অনুমান করতে পারেন, ভেতরে কী আছে। সেই অনুমান যে ভ্রান্ত প্রমাণিত হয় এমন নয়। উপসম্পাদকীয়ের ব্যাপারেও একই কথা। পাঠক লেখকের নাম দেখে, এবং বুঝে নেয় ভেতরে কী আছে। চোখ বোলায়; পড়তে আগ্রহী হয় না। সম্পাদকীয় পাতাতে জনমতের প্রতিফলন থাকার কথা; চিঠিপত্রের মধ্য দিয়ে। চিঠিপত্রও আসে না, চিঠিপত্রকে যে উৎসাহ দেওয়া হয় এমন নয়।
পাঠকের জন্য সংবাদপত্রের একটা বড় আকর্ষণ হচ্ছে ব্যঙ্গচিত্র। ব্যঙ্গচিত্র সমসাময়িক ঘটনাপ্রবাহের ওপর কৌতুককর মন্তব্য থাকে। সেখানে পত্রিকার দৃষ্টিভঙ্গিও প্রকাশ পায়। ব্যঙ্গচিত্র তখনই সার্থক হয়, যখন ভেতরে থাকে কী ঘটা উচিত ছিল, সে বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকে। যা ঘটছে তাকে মাপা দরকার ওই মানদণ্ডে। ওসব মাপা-টাপা এখন অনুপস্থিত। পত্রিকা থেকে ব্যঙ্গচিত্র উঠেই গেছে। কৌতুক দেওয়ার জন্য নানা রকম ইয়ার্কি-ফাজলামি থাকে, সেগুলো আড্ডাবাজির মতোই অর্থহীন। দাগ কাটে না, কৌতুকের সৃষ্টি করে না। আর আছে রংঢং। মানুষের জীবনে রঙের অভাব, পত্রিকাগুলো আসে রঙিন হয়ে। হ্যাঁ, ফটোজার্নালিজম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দক্ষ ফটোগ্রাফাররা আছেন, তাঁরা ছবি তোলেনও, কিন্তু অনেক ছবিই ছাপা হয় না বলে ধারণা করা যায়, নইলে ছবিগুলো এমন গতানুগতিক হবে কেন?
ওদিকে সংবাদপত্রের পাতায় সংবাদের জন্য বরাদ্দ জায়গা তো কেবলই সংকুচিত হচ্ছে, বিজ্ঞাপনের ধাক্কায়। বিজ্ঞাপন প্রথম পাতাকে পর্যন্ত গ্রাস করে ফেলছে। মনে হচ্ছে, খবর যা দেওয়া হয়, তা হচ্ছে বিজ্ঞাপন প্রচারের অজুহাত। মালিকের চোখ বিজ্ঞাপনের দিকে, সংবাদের দিকে নয়। এখানে রয়েছে পুঁজিবাদের চরম প্রকাশ। বিজ্ঞাপন পাঠকের রুচি তৈরিতেও কাজ করছে।
খবরের কাগজের কাছে পাঠকের এত সব প্রত্যাশার কারণটা কী? কারণ হচ্ছে, রাষ্ট্রের নির্বাহী ক্ষমতার, অর্থাৎ সরকারের ওপর সামাজিক নজরদারির অভাব। নজরদারি দরকার জবাবদিহি তৈরি করার জন্য। কাজটা আইন পরিষদের করার কথা। আইন পরিষদ সেটা করতে পারে না। কারণ, সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকে সরকারি দলের; কাজেই যত সমালোচনা হোক, সরকার তার ইচ্ছা অনুযায়ী এগিয়ে যায়। নজরদারি করতে পারে বিচার বিভাগ। কিন্তু বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে অসমর্থ হয়। এ জন্যই সংবাদপত্রের কাজে প্রত্যাশা থাকে যে তারা খবর দেবে, খবরের পেছনের খবর বের করে আনবে, সরকারের কাজের সমালোচনা করবে, জনমতের প্রতিফলন ঘটাবে, এবং সহায়তা দেবে জনমত সংগঠনে।
বড় প্রত্যাশাটা অবশ্য দাঁড়ায় এই যে সংবাদপত্র পুঁজিবাদী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে। ব্যক্তিমালিকানার জায়গায় সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠার পক্ষে বলবে। নদীতে ঢেউ থাকে, বালুও থাকে। পুঁজিবাদী ব্যবস্থা মানুষকে বালুতে পরিণত করতে চায়, ঢেউকে বাদ দিয়ে। কারণ, বালুকে পণ্য করা যায়, ঢেউকে তা করা যায় না। মানুষের প্রত্যাশা হলো, সংবাদপত্র ঢেউয়ের পক্ষে দাঁড়াবে। প্রত্যাশাটা বিশেষভাবে এই কারণে যে, বালুর দৌরাত্ম্য এখন সর্বপ্লাবী হয়ে উঠছে; ঢেউগুলো কেবলই মার খাচ্ছে, বালুর হাতে, অর্থাৎ বালুর ব্যবসায়ীদের হাতে।
দৈনিক আজকের পত্রিকার প্রথম বর্ষপূর্তিতে পত্রিকাসংশ্লিষ্ট সবাইকে, পাশাপাশি পত্রিকার পাঠকদের জানাই অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। পত্রিকাটি অব্যাহত গতিতে এগিয়ে যাক, এটা কাঙ্ক্ষিতভাবেই প্রত্যাশা করছি।
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সংবাদপত্রের কাছে পাঠকের প্রত্যাশাটা এমনিতে খুবই সাধারণ। পাঠক সংবাদ চায়। কিন্তু সংবাদ তো নানা ধরনের হয়। কোন সংবাদ চায় সে? পাঠক চায় তার নিজের পক্ষের সংবাদ। সংবাদপত্রের নিরপেক্ষতার কথাটা খুব চালু আছে। নিরপেক্ষতা কিন্তু মোটেই সম্ভব নয়। ন্যায়-অন্যায়ের যুদ্ধটা প্রতিনিয়ত চলছে, সেখানে কেউ যদি বলেন, তিনি কোনো পক্ষে নেই, তিনি নিরপেক্ষ; তাহলে বুঝতে হবে, জ্ঞাতে হোক কি অজ্ঞাতেই হোক, তিনি প্রতারণা করছেন, অপরের সঙ্গে তো অবশ্যই, নিজের সঙ্গেও হয়তো। পাঠক চায়, সংবাদপত্র থাকবে ন্যায়ের পক্ষে; এবং পাঠক মনে করে যে, সে নিজেও ন্যায়ের পক্ষেই রয়েছে।
কিন্তু ন্যায়ের পক্ষে যাওয়াটা তো সহজ নয়। কারণ, অন্যায় অত্যন্ত শক্তিশালী। রাষ্ট্র ও সমাজ কখনো কখনো অন্যায়ের পৃষ্ঠপোষকতা করে। কেবল তা-ই নয়, ওই দুই ব্যবস্থা নিজেরাও অন্যায় করে। আর সংবাদপত্র নিজেও জানে এবং মানে যে, সে এসেছে ব্যবসা করতে। ব্যবসা করতে গেলে সামাজিক শাসন মান্য করাটা ভালো, আর রাষ্ট্রকে চটানো তো কোনো মতেই উচিত নয়। চটানো আসলে সম্ভবও নয়। সংবাদপত্র পাঠকের কাছে যেতে চায়, পাঠকের জন্যই তো তার আত্মপ্রকাশ, কিন্তু সংবাদপত্রকে চোখ রাখতে হয় রাষ্ট্রের দিকে। রাষ্ট্র আবার সমাজেরও রক্ষক। রাষ্ট্র প্রকাশ পায় সরকারের মধ্য দিয়ে, সংবাদপত্র তাই সরকারকে মেনে চলে।
সংবাদপত্র জনপ্রিয় হতে চায়, কিন্তু ভয় পায় সরকারের অপ্রিয় হতে। পাঠকের কাছে যাওয়া প্রসঙ্গে একটা ঘটনা মনে পড়ে। সাহিত্যের ইতিহাসে এটা বেশ আলোচিত। অষ্টাদশ শতাব্দীর ইংরেজি সাহিত্যের একজন প্রধান লেখক হচ্ছেন স্যামুয়েল জনসন। তিনি ঠিক করেছিলেন, ভাষার বিশুদ্ধতা রক্ষার জন্য একটি অভিধান প্রণয়ন করবেন। অত্যন্ত কঠিন পরিশ্রমের কাজ। পরিশ্রমে তাঁর ভয় ছিল না, শঙ্কা ছিল প্রয়োজনীয় অর্থসংগ্রহ নিয়ে। তখন পর্যন্ত লেখকেরা বড় লোকদের পৃষ্ঠপোষকতার ওপর নির্ভর করতে বেশ অভ্যস্ত ছিলেন। সে সময়ে সাহিত্য-সংস্কৃতির ভালো একজন পৃষ্ঠপোষক ছিলেন লর্ড চেস্টারফিল্ড। চেস্টারফিল্ডের কাছে জনসন তাঁর পরিকল্পনাটি পেশ করেন। যে কারণেই হোক, চেস্টারফিল্ড সাড়া দেননি।
জনসনের ছিল অদম্য উৎসাহ; তিনি দমলেন না; বিজ্ঞাপন দিয়ে পাঠকের কাছে অভিধানের জন্য
অগ্রিম গ্রাহক চাঁদা চাইলেন। সাড়া তিনি পেয়েছিলেনও। অভিধানটি প্রকাশিত হবার পর ওটির গুণপনার প্রশংসা করে লর্ড চেস্টারফিল্ড পর পর দুটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন পত্রিকায়। প্রতিক্রিয়ায় জনসন একটি খোলা চিঠি লিখেছিলেন। তাতে চেস্টারফিল্ডকে সম্বোধন করে তিনি বলেন, সমর্থনটা একটু দেরিতে এল। এটা তখন পাইনি যখন একাকী ছিলাম। এখন পাচ্ছি যখন দরকার নেই। এই চিঠিতে ইংরেজি সাহিত্যের জন্য বিত্তবানদের পৃষ্ঠপোষকতা খোঁজার রীতির শেষবিদায়ের ঘণ্টা ধ্বনিত হয়েছিল বলে প্রসিদ্ধি আছে। মুষ্টিমেয়কে ছেড়ে সাহিত্য চলে গেল অজানা-অচেনা পাঠকদের কাছে। তারপর থেকে পাঠকই প্রধান ভরসা। জনসন পাঠক পেয়েছিলেন। সময়টা ছিল পুঁজিবাদের বিকাশের। সামন্তবাদের সীমা পার হয়ে প্রকাশনা চলে যাচ্ছিল মধ্যবিত্ত পাঠকের কাছে, বাজারের ভেতর দিয়ে।
পুঁজিবাদ এখন আর তখনকার অবস্থায় নেই, এখন সে রীতিমতো নৃশংস। বাজার এখন জবরদস্ত। কিন্তু তবু বাজার মোটেই স্থিতিশীল নয়; বিশেষ করে সংবাদপত্র প্রকাশনার ক্ষেত্রে এখন পাঠকের চেয়ে বেশি দরকার বিজ্ঞাপনের। বিজ্ঞাপন বাড়ানোর জন্য পাঠকপ্রিয়তার প্রয়োজন হয় বৈকি; কিন্তু বিজ্ঞাপনই হচ্ছে লক্ষ্য, পাঠক-প্রাপ্তি বিজ্ঞাপন বৃদ্ধির উপায়।
বিজ্ঞাপন যদিও লক্ষ্য, তবু পাঠক না থাকলে বিজ্ঞাপন আসবে না; আর বিজ্ঞাপন না এলে সংবাদপত্রও চলবে না। ব্যবস্থা এটাই। পাঠককে তাই উপেক্ষা করার উপায় নেই। পাঠকের জন্যও ওই উপেক্ষণীয় না হওয়াটাই একমাত্র ভরসা। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সরকার ও ব্যবসায়ীদের হাতে, তবে কিছুটা হলেও পাঠকের হাতেও।
জানা যায়, পাঠক পছন্দ করে অপরাধের খবর। ফৌজদারি অপরাধ হলে পাঠকের রসনা তৃপ্ত হয়; রাজনৈতিক অপরাধও কম সুস্বাদু নয়। এর ভেতরের রহস্যটা অবশ্য এই যে পাঠকের রুচি তৈরিতে সংবাদপত্রের বড় একটা ভূমিকা থাকে। পাঠক আসলে অপরাধের খবর চায় না, তাকে ওই খবর সরবরাহ করে আসক্তি তৈরি করা হয়, যার ফলে সে পছন্দের আর ওই বৃত্তের বাইরে যেতে পারে না। অপরাধের খবরই তার খোরাক হয়ে দাঁড়ায়। খোরাক না পেলে ভেতরে-ভেতরে সে হতাশ হয়।
প্রকৃত খবর হলো, রাষ্ট্র ও সমাজের অসুখের কারণেই নাগরিকেরা অসুস্থ। এই নাগরিকেরাই তো সংবাদপত্রের পাঠক। তারা আশার খবর চায়। আশার খবর মানে কী? সেটা হলো অপরাধীর শাস্তির খবর। হ্যাঁ, তাই। এবং অপরাধ যে নির্মূল হবে, পাঠক চায় এ রকম আশ্বাসও। কিন্তু অপরাধীর শাস্তির খবর তো পাওয়া যায় না। অপরাধের খবর পাওয়া যায়, কিন্তু অপরাধীর কী শাস্তি হলো, সেটা জানা যায় না। নতুন অপরাধের খবর এসে অপরাধের পুরাতন খবরকে ম্লান করে দেয়। আর মূল যে অপরাধী, রাষ্ট্র ও সমাজ—তারা তো চিহ্নিতই হয় না। রাষ্ট্র ও সমাজের শাস্তিটা অন্য কিছু নয়, রাষ্ট্র ও সমাজে পরিবর্তন আনা ভিন্ন। পরিবর্তন আসার চেষ্টা যে চলে না, তা নয়। চলে। ওই চেষ্টাতেই আশা থাকার কথা, এমন আশ্বাস থাকার কথা যে মানুষ লড়ছে ব্যবস্থা বদলানোর জন্য এবং ব্যবস্থা বদলাবে বৈকি। কিন্তু সেসব খবর পত্রিকায় আসে না। ওই বিষয়ে খবরকে উপেক্ষা করা হয়, কখনো কখনো বিকৃতও করা হয়। কারণ কী? কারণ হচ্ছে, সংবাদপত্রের যাঁরা মালিক, তাঁরা ব্যবস্থার পক্ষে থাকেন। ব্যবস্থা তাঁদেরকে সুবিধা দেয়। ব্যবস্থাটা বদলে গেলে তাঁদের ভীষণ অসুবিধা; আম ও ছালা একসঙ্গে লোপাট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা। সেটা তাঁরা চাইবেন কেন? কোন দুঃখে? পরিবর্তন আসুক, এটা তাঁরা মোটেই চান না।
এমনকি সাধারণ যে অপরাধগুলো, যাদের রমরমা বর্ণনা পাঠককে আমোদ-আরাম ইত্যাদি দিতে চায়, সেগুলোর অভ্যন্তরে যে রহস্য রয়েছে, যেসব কার্যকারণে তারা সংঘটিত, তাদেরও উন্মোচন ঘটে না। অন্ধকার অন্ধকারেই রয়ে যায়; অপরাধ বাড়তে থাকে—সংখ্যায় যেমন, মাত্রাতেও তেমনই।
ভেতরে অনুসন্ধানের ব্যাপারে অনাগ্রহটা চমৎকারভাবে প্রকাশ পায় পত্রিকার সম্পাদকীয়তে। সম্পাদকীয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়; সেখানে থাকার কথা পত্রিকাটির অবস্থানের হদিস। গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকাগুলো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে কেবল খবর দেওয়ার দক্ষতার কারণে নয়; সঙ্গে থাকে খবরের ব্যাখ্যাও। সেটা খবরে থাকবে, থাকবে সম্পাদকীয়তে। ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য গভীরে যেতে হয়; প্রয়োজন হয় জ্ঞানের ও গবেষণার; এবং স্থির থাকতে হয় দেখার দৃষ্টিভঙ্গিতে।
বাংলাদেশের সংবাদপত্রের সবচেয়ে কম পঠিত অংশ হলো সম্পাদকীয়; দায়সারাভাবে লেখা হয়, রাখতে হয় তাই যেন রাখা; সত্য উন্মোচন থাকে না, ব্যাখ্যা আসে না ঘটনাবলির, দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ পাওয়া যায় না। বক্তব্য থাকে নিষ্প্রাণ, লেখার ধরন যান্ত্রিক। অনেক কথা বলা হয়, কোনো কথা না বলে। ফলে পড়ার আগেই পাঠক অনুমান করতে পারেন, ভেতরে কী আছে। সেই অনুমান যে ভ্রান্ত প্রমাণিত হয় এমন নয়। উপসম্পাদকীয়ের ব্যাপারেও একই কথা। পাঠক লেখকের নাম দেখে, এবং বুঝে নেয় ভেতরে কী আছে। চোখ বোলায়; পড়তে আগ্রহী হয় না। সম্পাদকীয় পাতাতে জনমতের প্রতিফলন থাকার কথা; চিঠিপত্রের মধ্য দিয়ে। চিঠিপত্রও আসে না, চিঠিপত্রকে যে উৎসাহ দেওয়া হয় এমন নয়।
পাঠকের জন্য সংবাদপত্রের একটা বড় আকর্ষণ হচ্ছে ব্যঙ্গচিত্র। ব্যঙ্গচিত্র সমসাময়িক ঘটনাপ্রবাহের ওপর কৌতুককর মন্তব্য থাকে। সেখানে পত্রিকার দৃষ্টিভঙ্গিও প্রকাশ পায়। ব্যঙ্গচিত্র তখনই সার্থক হয়, যখন ভেতরে থাকে কী ঘটা উচিত ছিল, সে বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকে। যা ঘটছে তাকে মাপা দরকার ওই মানদণ্ডে। ওসব মাপা-টাপা এখন অনুপস্থিত। পত্রিকা থেকে ব্যঙ্গচিত্র উঠেই গেছে। কৌতুক দেওয়ার জন্য নানা রকম ইয়ার্কি-ফাজলামি থাকে, সেগুলো আড্ডাবাজির মতোই অর্থহীন। দাগ কাটে না, কৌতুকের সৃষ্টি করে না। আর আছে রংঢং। মানুষের জীবনে রঙের অভাব, পত্রিকাগুলো আসে রঙিন হয়ে। হ্যাঁ, ফটোজার্নালিজম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দক্ষ ফটোগ্রাফাররা আছেন, তাঁরা ছবি তোলেনও, কিন্তু অনেক ছবিই ছাপা হয় না বলে ধারণা করা যায়, নইলে ছবিগুলো এমন গতানুগতিক হবে কেন?
ওদিকে সংবাদপত্রের পাতায় সংবাদের জন্য বরাদ্দ জায়গা তো কেবলই সংকুচিত হচ্ছে, বিজ্ঞাপনের ধাক্কায়। বিজ্ঞাপন প্রথম পাতাকে পর্যন্ত গ্রাস করে ফেলছে। মনে হচ্ছে, খবর যা দেওয়া হয়, তা হচ্ছে বিজ্ঞাপন প্রচারের অজুহাত। মালিকের চোখ বিজ্ঞাপনের দিকে, সংবাদের দিকে নয়। এখানে রয়েছে পুঁজিবাদের চরম প্রকাশ। বিজ্ঞাপন পাঠকের রুচি তৈরিতেও কাজ করছে।
খবরের কাগজের কাছে পাঠকের এত সব প্রত্যাশার কারণটা কী? কারণ হচ্ছে, রাষ্ট্রের নির্বাহী ক্ষমতার, অর্থাৎ সরকারের ওপর সামাজিক নজরদারির অভাব। নজরদারি দরকার জবাবদিহি তৈরি করার জন্য। কাজটা আইন পরিষদের করার কথা। আইন পরিষদ সেটা করতে পারে না। কারণ, সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকে সরকারি দলের; কাজেই যত সমালোচনা হোক, সরকার তার ইচ্ছা অনুযায়ী এগিয়ে যায়। নজরদারি করতে পারে বিচার বিভাগ। কিন্তু বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে অসমর্থ হয়। এ জন্যই সংবাদপত্রের কাজে প্রত্যাশা থাকে যে তারা খবর দেবে, খবরের পেছনের খবর বের করে আনবে, সরকারের কাজের সমালোচনা করবে, জনমতের প্রতিফলন ঘটাবে, এবং সহায়তা দেবে জনমত সংগঠনে।
বড় প্রত্যাশাটা অবশ্য দাঁড়ায় এই যে সংবাদপত্র পুঁজিবাদী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে। ব্যক্তিমালিকানার জায়গায় সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠার পক্ষে বলবে। নদীতে ঢেউ থাকে, বালুও থাকে। পুঁজিবাদী ব্যবস্থা মানুষকে বালুতে পরিণত করতে চায়, ঢেউকে বাদ দিয়ে। কারণ, বালুকে পণ্য করা যায়, ঢেউকে তা করা যায় না। মানুষের প্রত্যাশা হলো, সংবাদপত্র ঢেউয়ের পক্ষে দাঁড়াবে। প্রত্যাশাটা বিশেষভাবে এই কারণে যে, বালুর দৌরাত্ম্য এখন সর্বপ্লাবী হয়ে উঠছে; ঢেউগুলো কেবলই মার খাচ্ছে, বালুর হাতে, অর্থাৎ বালুর ব্যবসায়ীদের হাতে।
দৈনিক আজকের পত্রিকার প্রথম বর্ষপূর্তিতে পত্রিকাসংশ্লিষ্ট সবাইকে, পাশাপাশি পত্রিকার পাঠকদের জানাই অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। পত্রিকাটি অব্যাহত গতিতে এগিয়ে যাক, এটা কাঙ্ক্ষিতভাবেই প্রত্যাশা করছি।
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

সংবাদপত্রের কাছে পাঠকের প্রত্যাশাটা এমনিতে খুবই সাধারণ। পাঠক সংবাদ চায়। কিন্তু সংবাদ তো নানা ধরনের হয়। কোন সংবাদ চায় সে? পাঠক চায় তার নিজের পক্ষের সংবাদ। সংবাদপত্রের নিরপেক্ষতার কথাটা খুব চালু আছে। নিরপেক্ষতা কিন্তু মোটেই সম্ভব নয়। ন্যায়-অন্যায়ের যুদ্ধটা প্রতিনিয়ত চলছে, সেখানে কেউ যদি বলেন, তিনি কোন
২৮ জুন ২০২২
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

সংবাদপত্রের কাছে পাঠকের প্রত্যাশাটা এমনিতে খুবই সাধারণ। পাঠক সংবাদ চায়। কিন্তু সংবাদ তো নানা ধরনের হয়। কোন সংবাদ চায় সে? পাঠক চায় তার নিজের পক্ষের সংবাদ। সংবাদপত্রের নিরপেক্ষতার কথাটা খুব চালু আছে। নিরপেক্ষতা কিন্তু মোটেই সম্ভব নয়। ন্যায়-অন্যায়ের যুদ্ধটা প্রতিনিয়ত চলছে, সেখানে কেউ যদি বলেন, তিনি কোন
২৮ জুন ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

সংবাদপত্রের কাছে পাঠকের প্রত্যাশাটা এমনিতে খুবই সাধারণ। পাঠক সংবাদ চায়। কিন্তু সংবাদ তো নানা ধরনের হয়। কোন সংবাদ চায় সে? পাঠক চায় তার নিজের পক্ষের সংবাদ। সংবাদপত্রের নিরপেক্ষতার কথাটা খুব চালু আছে। নিরপেক্ষতা কিন্তু মোটেই সম্ভব নয়। ন্যায়-অন্যায়ের যুদ্ধটা প্রতিনিয়ত চলছে, সেখানে কেউ যদি বলেন, তিনি কোন
২৮ জুন ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

সংবাদপত্রের কাছে পাঠকের প্রত্যাশাটা এমনিতে খুবই সাধারণ। পাঠক সংবাদ চায়। কিন্তু সংবাদ তো নানা ধরনের হয়। কোন সংবাদ চায় সে? পাঠক চায় তার নিজের পক্ষের সংবাদ। সংবাদপত্রের নিরপেক্ষতার কথাটা খুব চালু আছে। নিরপেক্ষতা কিন্তু মোটেই সম্ভব নয়। ন্যায়-অন্যায়ের যুদ্ধটা প্রতিনিয়ত চলছে, সেখানে কেউ যদি বলেন, তিনি কোন
২৮ জুন ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫