Ajker Patrika

‘কৃষক হওয়াটাই বড় অন্যায়’

মো. জাহিদুল ইসলাম, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা)
আপডেট : ১৫ আগস্ট ২০২২, ১২: ৫০
Thumbnail image

‘জমি চাষ করতে হাল লাগে, দাম বেশি। কাজের মানুষ পাওয়া যায় না। পাইলেও টেকা নেয় বেশি। বৃষ্টি নাই, পানি দেই শ্যালো মেশিন দিয়া। তেল ছাড়া মেশিন চলে না। হুমমুত করি তারও দাম বাড়িল। ফির মেশিন আওলাকও টেকা দেওয়া নাগে। সার না হইলে আবাদ হয় না। তারও দাম বেশি হইছে। আমরা যেটাই কিনি সেইটারে দাম বেশি। কিন্তু আবাদ করার পর সেইগল্যা বেইচপ্যার গেইলে আর কেউ আও করে না। কইলেও দাম কম কয়। মনে হচ্ছে, কৃষক হওয়াটাই বড় অন্যায় হয়েছে আমাদের।’

কথাগুলো আক্ষেপ করে বলছিলেন কৃষক আজিজুল হক (৫৫)। তিনি উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের বাসিন্দা। একই কথা বলেন সোনারায় ইউনিয়নের কৃষক মোজাম্মেল হক (৪৫)।

তিনি বলেন, ‘লাভ তো দূরের কথা, ধান উৎপাদনে যে টাকাটা খরচ হয়, সেটাই উঠছে না কয়েক বছর ধরে। গত বোরো মৌসুমে ধানের ফলন ভালো হয়েছিল। এরপরও বিঘাপ্রতি জমিতে ৭৫০ টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে আমাদের। এবারে ধান আবাদ করলে লোকসানের পরিমাণটা আরও বাড়বে। কারণ, এ আবাদ বৃষ্টির পানিতে হওয়ার কথা। কিন্তু সে পরিমাণ বৃষ্টি না হওয়ায় ডিজেলচালিত শ্যালো মেশিনে পানি নিতে হচ্ছে। প্রতি লিটার ডিজেলে দাম বেড়েছে ৩৪ টাকা। সার না হলে আবাদ হয় না, বিশেষ করে ইউরিয়া সার। এ সারেও কেজিপ্রতি বেড়েছে ৬ টাকা।’

কৃষকেরা অভিযোগ করে বলেন, উৎপাদিত ধান দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হয়। উপার্জিত হয় বৈদেশিক মুদ্রা। কিন্তু কৃষকদের বরাবরই লোকসান গুনতে হয়। এই অবস্থার অবসান না ঘটালে কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে বাংলাদেশ হয়তোবা একসময় আর থাকবে না। সে কারণেই কৃষিকাজে ব্যবহৃত সব ধরনের জিনিসপত্রের দাম কমাতে হবে। ন্যায্যমূল্য দিতে হবে কৃষকদের উৎপাদিত সব পণ্যের।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, খরিপ-২/২০২-২৩ মৌসুমে রোপা আমন ধান ২৯ হাজার ১৭৭ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। গত বছরও লক্ষ্যমাত্রা একই ছিল। এবারে ২৫ হেক্টর জমিতে ব্রি ধান-৩৩, ২৪ হেক্টর জমিতে ব্রি ধান-৫৬, ৮৫ হেক্টর জমিতে ব্রি ধান-৭১, ১০৫ হেক্টর জমিতে ব্রি ধান-৭৫, ৬৫ হেক্টর জমিতে ব্রি ধান-৮০, ১৪৪ হেক্টর জমিতে ব্রি ধান-৮৭, ২৫ হেক্টর জমিতে ব্রি ধান-৯০, ৩০ হেক্টর জমিতে ব্রি ধান-৯১, ৬৯ হেক্টর জমিতে ব্রি ধান-৯৩, ৭৭ হেক্টর জমিতে ব্রি ধান-৯৪, ৩৫ হেক্টর জমিতে বিনা-১৭ ও ৩০ হেক্টর জমিতে বিনা-২২ রোপণ করার কথা রয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় ও হাইব্রিড জাতের ধান রোপণ করা হবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রাশিদুল কবির আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তি ব্যবহার করলে ফলন বাড়বে, সেই সঙ্গে উৎপাদন খরচও কমবে। তাই এ বিষয়ে কৃষকদের বিভিন্নভাবে পরামর্শ দিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ।

রাশিদুল কবির আরও বলেন, কৃষকদের ক্ষতিপূরণে সরকারের দেওয়া প্রণোদনা অব্যাহত রয়েছে। এবার উপজেলায় ১ হাজার ২৫০ জন কৃষককে প্রণোদনা দেওয়া হয়। ডিএপি সার ১০ কেজি, এমওপি সার ১০ কেজি ও ৫ কেজি করে ধানের বীজ দেওয়া হয় প্রত্যেক কৃষককে। এ পর্যন্ত ৭০ ভাগ জমিতে ধান রোপণ করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী ১০ দিনের মধ্যে শেষ হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত