Ajker Patrika

ফসলি জমি কাটা থামছেই না

অরূপ রায়, সাভার
আপডেট : ০৮ মার্চ ২০২২, ১৭: ৫৮
ফসলি জমি কাটা থামছেই না

ধামরাইয়ের গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নে কয়েক শ একর জমিতে একসময় ধানের আবাদ হতো। কিন্তু এ ফসলি জমির বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে ইটভাটা। এসব ইটভাটায় ইট তৈরিতে ফসলি জমি কেটে মাটি আনা হচ্ছে। এতে ফসলি জমি পরিণত হচ্ছে খাল কিংবা পুকুরে। অন্যদিকে, ভয়াবহ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে পরিবেশ।

এই চিত্র শুধু গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের নয়, ধামরাইয়ের সব ইউনিয়নেরই চিত্র একই। মাটিকাটা বন্ধে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেও তা বন্ধ করা যাচ্ছে না।

ধামরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পাঁচ বছর আগে উপজেলায় আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ছিল ৬৩ হাজার একর। গত পাঁচ বছরে আবাদযোগ্য কৃষিজমির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৬ হাজার একরে। ইটভাটা, কারখানা ও বাড়ি নির্মাণের কারণে ৭ হাজার একর জমি কমে গেছে। তবে আরও বেশি জমি আবাদহীন হয়ে পড়েছে বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের।

ইটভাটার মালিকদের দেওয়া তথ্য আর স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ধামরাইয়ে ১৭১টি ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটার প্রত্যেকটিতে ৮ থেকে ১০ একর আবাদি জমি আটকে আছে। এসব ইটভাটায় সরবরাহের জন্য গত ১৫ বছরে অন্তত ১০ হাজার একর আবাদযোগ্য জমির মাটি কাটা হয়েছে।

উপজেলার জালসা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাথুলি-বউবাজার সড়কের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকার উভয় পাশে অন্তত আটটি ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটার চারপাশসহ পুরো এলাকাজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত আর ডোবা, যা ১৫ বছর আগে ছিল না।

জালসা গ্রামের কৃষক জালাল উদ্দিন বলেন, চারপাশের জমির মালিকেরা মাটি বিক্রি করায় তিনিও কয়েক বছর আগে তাঁদের ৬৬ শতাংশ জমির মাটি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। অথচ ওই জমি থেকে তাঁদের সারা বছরের ধানের চাহিদা পূরণ হতো। এখন পুকুর ইজারা দিয়ে বছরে পান মাত্র ২০ হাজার টাকা, যা দিয়ে ২০ মণ ধানও কেনা যায় না।

সানোরা ও অমরপুর গিয়ে অন্তত তিনটি স্থানে কৃষিজমি থেকে এক্সকাভেটর (ভেকু) দিয়ে মাটি কাটতে দেখা যায়। মধুডাঙ্গা এলাকার মদিনা ব্রিকসের মালিক নুরুজ্জামান মনোয়ারসহ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি ওইসব এলাকা থেকে মাটি কেটে ইটভাটায় সরবরাহ করছেন বলে জানা যায়।

উপজেলা প্রশাসন সম্প্রতি অমরপুরে অভিযান চালিয়ে কৃষিজমি থেকে মাটি কাটার অভিযোগে গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সোলায়মান সরকারের একটি এক্সকাভেটর পুড়িয়ে দেন। এর আগেও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় একাধিকবার অভিযান চালিয়ে মাটি কাটার অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে জরিমানা করা হয়। এর পরেও মাটি কাট থামছে না।

জানতে চাইলে মাটি ব্যবসায়ী মনোয়ার হোসেন বলেন, তাঁরা জমির মালিকের কাছ থেকে মাটি কিনে নিয়ে তা কেটে বিক্রি করছেন। এটা যে অপরাধ, তাঁরা তা জানতেন না।

নান্নার ইউনিয়নের চাউনা গ্রামের বৃদ্ধ গর্জন মিয়া বলেন, তিনি দিন মজুরি করে অনেক কষ্টে টাকা জমিয়ে পাশের ঘোড়াকান্দা এলাকায় ২৫ শতাংশ চাষের জমি কিনেছিলেন। সম্প্রতি সাইফুল নামের এক প্রভাবশালী তাঁর জমির পাশের জমি থেকে এক্সকাভেটর দিয়ে মাটি কেটে নিচ্ছেন। এতে তাঁর জমি হুমকির মধ্যে পড়েছে।

সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘পাশের জমির মালিকের কাছ থেকে মাটি কিনে নিয়ে বিক্রি করছি। জোর করে তো কাটছি না। এতে গর্জন মিয়ার জমি ভেঙে পড়লে আমার কী করার আছে?’

এক্সকাভেটর দিয়ে প্রতিদিন শত শত ট্রাক মাটি কাটা হচ্ছে সুতিপাড়া ইউনিয়নের কেষ্টি নওগাঁও এলাকা থেকে। স্থানীয় হাজী ব্রিকসের মালিক আবু বক্কর সিদ্দিক সেখান থেকে মাটি বিক্রি করছেন বলে ভাটার শ্রমিক সোলায়মান জানান।

ধামরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফুল হাসান বলেন, ইটভাটা ও ইট তৈরির জন্য মাটি কাটার ফলে আবাদি জমি কমে যাচ্ছে। মাটি কাটা বন্ধে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। এর পরেও মাটি কাটা বন্ধ করা যাচ্ছে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মেয়াদের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় চালুর পরিকল্পনা সরকারের

নারীর সঙ্গে এনসিপি নেতা তুষারের কথোপকথন ফাঁস নিয়ে যা বললেন সহযোদ্ধা ইমি

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করা সম্ভব নয়, স্বীকার করল ইসরায়েল

ঐকমত্য কমিশনের মঙ্গলবারের সংলাপ ‘বয়কট’ করল জামায়াত

চোখের সামনে খামেনির অন্তরঙ্গ মহল ফাঁকা করে দিচ্ছে ইসরায়েল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত