Ajker Patrika

আজ ব্র্যাকের সুবর্ণজয়ন্তী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২১ মার্চ ২০২২, ১১: ১৬
আজ ব্র্যাকের সুবর্ণজয়ন্তী

বিশ্বের সবচেয়ে বড় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের সুবর্ণজয়ন্তী আজ ২১ মার্চ। ১৯৭২ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে এর জন্ম। শুরুটা হয়েছিল সুনামগঞ্জের প্রত্যন্ত জনপদ শাল্লায়। প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন স্যার ফজলে হাসান আবেদ। তখন ভারত থেকে দেশে ফেরা শরণার্থীদের ত্রাণ ও পুনর্বাসনের কাজ করত সংগঠনটি। নাম রাখা হয় বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন অ্যাসিসটেন্স কমিটি, সংক্ষেপে ব্র্যাক।

প্রতিষ্ঠাতার মূলমন্ত্র ছিল–যার প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি তার কাছেই কার্যকর সমাধানকে নিয়ে যেতে হবে। এভাবে প্রত্যেক মানুষ পাবে তার সম্ভাবনার পূর্ণ বিকাশের সুযোগ। এই দর্শনকে সঙ্গী করেই পথ চলছে ব্র্যাক। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা হিসেবে ব্র্যাকই প্রথম আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পা রেখেছে। বাংলাদেশসহ এশিয়া ও আফ্রিকার ১০টি দেশের ১০ কোটিরও বেশি মানুষের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে আত্মনির্ভরতা অর্জনে কাজ করে চলেছে ব্র্যাক।

ফিরে আসা শরণার্থীদের জন্য শাল্লায় ১০ হাজার ২০০ বাড়ি নির্মাণের পাশাপাশি জীবিকানির্বাহে সহায়তা, স্বাস্থ্যসেবা এবং ১৫ হাজার শিশু ও নারীকে খাদ্যের জোগান দেওয়া হয়। কিছুদিন পর সমবায়, কৃষি উন্নয়ন, বয়স্ক শিক্ষা, পুষ্টি, কুটিরশিল্পকে কেন্দ্র করে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গৃহীত হয়। তারপর শুরু ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প। ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠা হয় ফ্যাশন ব্র্যান্ড আড়ং। আশির দশকে দেশের প্রতিটি পরিবারে মায়েদের খাওয়ার স্যালাইন তৈরি করতে শেখান ব্র্যাকের মাঠকর্মী বাহিনী। এরপর দেশের প্রায় অর্ধেক অংশে ব্র্যাকের মাধ্যমে টিকা দেওয়া হয়। এই দুই পদক্ষেপে নাটকীয়ভাবে শিশুমৃত্যু হ্রাস পায়।

আশির দশকে ঝরে পড়া শিশুদের জন্য স্কুলের পাইলট প্রকল্প শুরু করে ব্র্যাক। পরবর্তীকালে এর ব্যাপক প্রসার ঘটে। আজ পর্যন্ত ব্র্যাকের স্কুলগুলো থেকে এক কোটি ৪০ লাখ শিশু মানসম্পন্ন প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে পরবর্তী ধাপে এগিয়ে গেছে। নব্বইয়ের দশকে প্রসারিত হয় নারীর সামাজিক ও আইনি ক্ষমতায়নের কাজ। ব্র্যাক ডেইরির জন্ম এই সময়ে। ইন্টারনেট সার্ভিস দিতে ব্র্যাকনেট ও সফটওয়্যার কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে ব্র্যাক।

নতুন শতাব্দীর শুরুতে এমডিজি বাস্তবায়নের জন্য পূর্ণোদ্যমে কাজ শুরু করে ব্র্যাক। সারা দেশে ৬৪ হাজার স্কুল ও ৮ হাজার কিশোরী ক্লাব পরিচালনার পাশাপাশি ২৪৮ উপজেলায় স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন স্থাপন করে সংস্থাটি। ২০০১-এ প্রতিষ্ঠিত হয় ব্র্যাক ব্যাংক ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়। পরের বছরেই জন্ম নেয় ব্র্যাকের বিশ্বখ্যাত আলট্রা পুওর গ্র্যাজুয়েশন প্রোগ্রাম। একই সময় ব্র্যাকের মডেল বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে যাত্রা শুরু করে ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনাল।

বর্তমানে নগর দারিদ্র্য নিরসন এবং যুব জনগোষ্ঠীর দক্ষতা উন্নয়নে বিশেষভাবে কাজ করছে ব্র্যাক। স্মরণকালে দেশের সবচেয়ে বড় সংকট রোহিঙ্গা ও কোভিড-১৯ সংকটে সরকারের বৃহত্তম দেশীয় উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে কাজ করছে এই সংস্থা। সরকারের আর্থসামাজিক নীতি-কৌশল প্রণয়ন প্রক্রিয়াতে আরও বেশি সম্পৃক্ত হয়েছে।

বর্তমানে ব্র্যাক বাংলাদেশ গভর্নিং বডির চেয়ারপারসন ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনাল সুপারভাইজরি বোর্ডের চেয়ার আইরিন খান, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, ব্র্যাক এন্টারপ্রাইজেস-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তামারা হাসান আবেদ ও ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক শামেরান আবেদ।

সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে শুভেচ্ছা বক্তব্যে ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, ব্র্যাকের এই উত্থানে সবচেয়ে বড় অবদান বাংলাদেশের মানুষের। বাংলাদেশ ও ব্র্যাক অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। বাংলাদেশের পথ পেরিয়ে ব্র্যাক এখন পৃথিবীর এক নম্বর এনজিও হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ ড. আকবর আলি খান বলেন, ব্র্যাক বাংলাদেশের স্বাধীনতার যে উদ্দেশ্য ছিল তা বাস্তবায়নে একটি বিশাল ভূমিকা পালন করেছে। মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। সেই লক্ষ্যেই ৫০ বছর ধরে স্যার আবেদের নেতৃত্বে ব্র্যাক নিরলস পরিশ্রম করে গেছে। তারা শিক্ষার ক্ষেত্রে, স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে এবং দারিদ্র্য নিরসনে কাজ করে যাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রশিক্ষণ ছাড়াই মাঠে ৪২৬ সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা

গ্রাহকের ২,৬৩৫ কোটি টাকা দিচ্ছে না ৪৬ বিমা কোম্পানি

১০০ বছর পর জানা গেল ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত