Ajker Patrika

অভিযান কম, বাড়ছে ভেজাল

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১২: ৩৫
অভিযান কম, বাড়ছে ভেজাল

বিএসটিআইয়ের অনুমোদন ছাড়াই চট্টগ্রামে খাদ্য পণ্য প্রস্তুত ও বাজারজাত করে আসছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনার কথা থাকলেও কোনো তদারকি নেই সংস্থাটির। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে চট্টগ্রামে প্রতিনিয়ত বাড়ছে ভেজাল খাদ্যের বেচা-কেনা। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের নামে এখানে চলছে মানহীন পানির অবৈধ বাণিজ্য। খাওয়ানো হচ্ছে দূষিত পানি।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) নেতাদের অভিযোগ, বিএসটিআইয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিয়মিত কারখানা পরিদর্শন করেন না। এ ছাড়া ভেজাল পণ্যের বিরুদ্ধে অভিযান না চালানোয় ভেজাল পণ্যে সয়লাব হয়ে যাচ্ছে বাজার।

শীতকালে বাজারে খেজুর গুড়ের চাহিদা বেড়ে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বর্তমানে বাজারে নকল খেজুর গুড় বিক্রি করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। কিন্তু তাঁদের বিরুদ্ধে এখনো কোনো অভিযান পরিচালনা করেনি বিএসটিআই। তবে সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলছেন, ভেজাল পণ্যের বিরুদ্ধে তাঁরা সব সময় কঠোর অবস্থানে আছেন। নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট না থাকায় নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করতে পারছেন না।

বাজার থেকে খেজুর গুড় কেনা কয়েকজন ভোক্তার অভিযোগ, বাজারে এখন যেসব খেজুর গুড় পাওয়া যাচ্ছে—এর অধিকাংশই নকল। সামান্য খেজুর রসের সঙ্গে চিনি, ময়দা, ভুট্টার গুঁড়া, সোডাসহ বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে এসব গুড় তৈরি করা হচ্ছে। বাসায় নিয়ে পিঠা তৈরি করতে গেলে সেটি টের পাওয়া যায়। দেখতে খেজুর গুড়ের মতো হলেও পিঠা খেতে গেলে খেজুরের রসের স্বাদ-গন্ধ কিছুই মেলে না। অন্যদিকে মিনারেল ওয়াটারের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। বাজারে মিনারেল ওয়াটার উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে বিএসটিআইর ১৯টি অত্যাবশ্যকীয় শর্ত থাকলেও তা মানছে না কেউই। অনুমতি ছাড়াই মানহীন পানি বাজারজাত করছে বহু প্রতিষ্ঠান।

জানতে চাইলে ক্যাব চট্টগ্রামের সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, অভিযান পরিচালনা না করার পেছনে তাঁরা সব সময় ম্যাজিস্ট্রেট না থাকার অজুহাত দেখান। এর আগে তো কারখানা পরিদর্শনে যেতে হয়। বিএসটিআই কর্মকর্তারা কি এই কাজটাও ঠিকমতো করেন? তাঁদের যোগসাজশেই অবৈধ কারখানাগুলো পণ্য উৎপাদন করে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। পাশাপাশি বিএসটিআই কর্মকর্তাদের কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগ করেন। তবে বিএসটিআই কর্ম পরিধি যেহেতু অনেক বেশি, তাই প্রত্যেক বিভাগীয় কার্যালয়ে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেন এস এম নাজের হোসাইন।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বিএসটিআইয়ের সহকারী পরিচালক (সিএম) নুর মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, ‘আমরা সব সময় অবৈধ কারখানার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা পক্ষে। প্রতি মাসে ১০-১৫টি অভিযান পরিচালনা করি। নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট থাকলে এই সংখ্যাটা আরও বেড়ে যেত। তখন প্রতিদিনই অভিযান পরিচালনা করা যেত।’ তাঁদের সদিচ্ছা আছে বলেও মন্তব্য করেন এই কর্মকর্তা।

সংস্থাটির সহকারী পরিচালক (তথ্য অধিকার কর্মকর্তা) প্রকৌশলী শশী কান্ত দাসের কাছে এক বছরে মোট কটি অভিযান চালানো হয়েছে জানতে চাইলে বলেন, এ তথ্য দিতে কয়েক দিন সময় লাগবে। তথ্যগুলো মাসভিত্তিক সাজানো নেই জানিয়ে তথ্য সরবরাহে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।

এ বিষয়ে বিএসটিআইয়ের চট্টগ্রাম অফিস প্রধান উপপরিচালক (সিএম) প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম বলেন, ‘দুটি কারণে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করতে পারছি না। তার একটি হলো, আমাদের এখানে নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট নেই। অভিযানের জন্য আমাদের জেলা প্রশাসনকে শিডিউল জানাতে হয়। এরপর সেখান থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে অ্যাসাইন করার পর অভিযান চালাতে হয়। আরেকটি কারণ হচ্ছে দেশে আমদানি করা পণ্যের ৮০ থেকে ৯০ ভাগ চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে আসে। এসব পণ্যের পরীক্ষা-নিরীক্ষাও বিএসটিআই করে। তাই আমাদের আমদানি করা পণ্যের পেছনে বেশি সময় দিতে হয়। তাই আমরা চাইলেও নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করতে পারি না।’

তাঁদের প্রতিষ্ঠানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দেওয়া হলে প্রতিদিনই অভিযান চালানো যেত বলেও মন্তব্য করেন এই কর্মকর্তা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শাহজালালে তৃতীয় টার্মিনাল চালুতে বাধা, রাজস্ব ভাগাভাগি নিয়ে টানাপোড়েন

বৈপ্লবিক পরিবর্তন করার সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেছে

ব্যাংকের চাকরি যায় জাল সনদে, একই নথি দিয়ে বাগালেন স্কুল সভাপতির পদ

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন নিয়ম ভঙ্গের জন্য ট্রান্স নারী শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কার, জানতে চান ১৬২ নাগরিক

ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ নিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছে এবি ব্যাংক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত