Ajker Patrika

বাংলাদেশ নিয়ে রুশ–মার্কিন পাল্টাপাল্টি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০: ১১
বাংলাদেশ নিয়ে রুশ–মার্কিন পাল্টাপাল্টি

বৈশ্বিক, আঞ্চলিক ও দ্বিপক্ষীয় নানা বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার বিরোধ লেগেই আছে। সপ্তাহ কয়েক ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে বিরোধের অন্যতম বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। এখানে জাতীয় নির্বাচন, মানবাধিকার ও শ্রম পরিস্থিতি ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার হুঁশিয়ারি জারি আছে। ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের তৎপরতা এখানকার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের পর্যায়ে পড়ে কি না, সে বিষয়ে প্রশ্ন আছে ঢাকা এবং ওয়াশিংটনে। এ নিয়ে ওয়াশিংটন ও মস্কোয় ক্ষমতার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে চলছে কথার লড়াই।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার এই পাল্টাপাল্টি খুব বিপজ্জনক বলে মনে করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব এবং ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির। এ বিষয়ে তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি খুবই চিন্তিত। এটা খুব বিপজ্জনক।’

জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং শ্রমমান রক্ষার তাগিদ দিয়ে নিষেধাজ্ঞার হুঁশিয়ারিকে আমলে নেওয়া না হলে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি-বেসরকারি উভয় খাতের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হবে, এমন আশঙ্কা আছে বলে মনে করছেন কূটনীতিকেরা।

মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস গতকাল ঢাকায় কটন ইউএসএ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় শ্রমনীতি ও শক্ত শ্রম আইন থাকা এবং তার বাস্তবায়ন স্থিতিশীল দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের জন্য অন্যতম মুখ্য বিষয়। কাজের পরিবেশের দিক থেকেও মার্কিন কোম্পানিগুলো এসব বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে থাকে।

প্রায় একই সময়ে অন্য এক অনুষ্ঠানে ঢাকায় রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার ভি মান্তিৎস্কি বলেন, মার্কিনরা শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থাই নিক, তার পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে স্বাধীনতা সাংবাদিক ফোরামের এক অনুষ্ঠানে তিনি আরও বলেন, ‘আমেরিকা ও পশ্চিমা বিশ্ব যদি নিষেধাজ্ঞাসহ কোনো বেআইনি পদক্ষেপ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নেয়, রাশিয়া তখন এর বিরুদ্ধে সবকিছুই করবে।’

রাশিয়া পশ্চিমাদের একতরফা নিষেধাজ্ঞাকে স্বীকৃতি দেয় না, এমনটি জানিয়ে রাষ্ট্রদূত মান্তিৎস্কি বলেন, তাঁর দেশ শুধু জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের নিষেধাজ্ঞাকে গুরুত্ব দেয়। মার্কিনরা বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিলে রাশিয়া ঠিক কী করবে, জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমরা এখনো জানি না, এখানে কী ঘটতে যাচ্ছে।...তবে সমস্যা দেখা দিলে বাংলাদেশকে কী ধরনের সহায়তা দেওয়া যায়, সে বিষয়ে আলোচনা হবে।’

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভার একটি উক্তি স্মরণ করিয়ে দেন। মারিয়া জাখারোভা গত ২২ নভেম্বর মস্কোয় এক সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে বলেছিলেন, স্বচ্ছতা ও অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে।

এর আগে এক্সে (সাবেক টুইটার) রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক পোস্টে বলা হয়, অক্টোবরের শেষ দিকে পিটার হাস ঢাকায় বিরোধী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে সরকারবিরোধী মিছিল আয়োজনের পরিকল্পনা করেছেন। এসব কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বড় ধরনের হস্তক্ষেপ।

রাষ্ট্রদূত পিটার হাসসহ মার্কিন সরকারের তৎপরতা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল বলে সরকারের অনেকে মনে করেন। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ১ ডিসেম্বর ঢাকায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, পিটার হাস মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে তাঁর আচরণের সীমা মেনে চলবেন বলে আশা করে সরকার। কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে-বিপক্ষে তাঁর অবস্থান নেওয়া উচিত নয়।

অন্যদিকে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের হস্তক্ষেপের যে অভিযোগ রাশিয়া করেছে, তা নির্জলা মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের স্ট্র্যাটেজিক (সুদূরপ্রসারী সার্বিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট) যোগাযোগবিষয়ক সমন্বয়কারী জন কিরবি ওয়াশিংটনে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যাশা পূরণে রাষ্ট্রদূত হাস ও মার্কিন দূতাবাস কাজ করছিল। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করতে ভবিষ্যতেও যা করা দরকার, তা তাঁরা করবেন।

সাবেক রাষ্ট্রদূত ও বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট হুমায়ুন কবির বলেন, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, প্রবাসী আয় ও বৈশ্বিক রাজনৈতিক নানা ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের দরকার হবে। এসব ক্ষেত্রে আমেরিকার সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার ক্ষমতা রাশিয়ার নেই।
তাহলে এ ক্ষেত্রে সরকারের কী করার আছে, জানতে চাইলে হুমায়ুন কবির বলেন, দুই দেশকেই থামতে বলা দরকার; যাতে তারা ঢাকায় বসে এসব না করে।

অবশ্য দুই দেশকেই বলতে হলে নৈতিক দিক থেকে যে শক্ত ভিত্তি থাকা দরকার, তা আছে কি না, সে বিষয়টিও ভাবার আছে বলে অন্য এক বিশেষজ্ঞ মনে করেন। বাংলাদেশে নির্বাচন, মানবাধিকার ও শ্রমমান নিয়ে যা ঘটে চলেছে, তার ওপর আন্তর্জাতিকভাবে সক্রিয় বিভিন্ন প্রভাবশালী দেশ ও সংস্থার নজর আছে বলে তিনি জানান। সাবেক এই কূটনীতিক বলেন, বিপদে পড়ে তাদের সাহায্য চাইতে গেলে তখন তারা এসব বিষয়ে প্রশ্ন তুলবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত