জাহীদ রেজা নূর, ঢাকা
পাকিস্তান সৃষ্টির ঠিক আগমুহূর্ত এবং সৃষ্টির পরের কয়েকটি ঘটনার উল্লেখ করা প্রয়োজন। ১৯৪৭ সালের ১২ আগস্ট পাকিস্তানের গণপরিষদের অধিবেশন বসল। হ্যাঁ, দেশ সৃষ্টির আগেই সে অধিবেশন বসেছিল। উদ্বোধনী বক্তব্য দেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। তিনি তখন মুসলিমদের মধ্যে জনপ্রিয়তার শিখরে। লর্ড মাউন্টব্যাটেন ১৪ আগস্ট সেই অধিবেশনে উপস্থিত হয়ে জিন্নাহর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। জিন্নাহ হন পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ তাঁর ভাষণে বলেন, এখন থেকে মুসলমান মুসলমান থাকবে না, হিন্দু হিন্দু থাকবে না, সবাই হবে পাকিস্তানি।
অর্থাৎ জিন্নাহ কিন্তু সে সময় যে কথা বলেছিলেন, তাতে সব ধর্মের মানুষের দেশ হিসেবেই পাকিস্তানকে দেখছিলেন। কিন্তু উর্দুর প্রতি কেন্দ্রের ভালোবাসা সজাগ করে তুলেছিল বাঙালিকে। তাই বাংলা ভাষার পক্ষ নিয়ে সে সময় তৈরি হলো তমদ্দুন মজলিস। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক আবুল কাশেমের নেতৃত্বে হলো এই সংগঠনটি। ১৯৪৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর তমদ্দুন মজলিসের জন্ম হয়েছিল। ১৫ সেপ্টেম্বর ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু’ নামে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি। প্রথম রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয় ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বরে। আহ্বায়ক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নূরুল হক ভুইয়া।
এরপরের আলোচনা হবে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের গণপরিষদে দেওয়া বক্তব্য নিয়ে। তিনি পরিষদে ভাষা প্রশ্নটি যখন তুলেছিলেন, তখন পূর্ব বাংলার পরিষদ সদস্যরা কী ভূমিকা রেখেছিলেন, সেটাও তো দেখার বিষয়। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার বিষয়টিকে নিছক খেলো একটি বিষয় হিসেবেই তাঁরা বিবেচনা করেছিলেন। এর পেছনে কী কারণ থাকতে পারে, সেটা হয়তো কোনো দিনই জানা যাবে না। কিন্তু নেতৃত্বের প্রশ্নটি তত দিনে পশ্চিম পাকিস্তানের আধিপত্যের শিকার হয়েছে, সে কথা আমরা ধীরে ধীরে জানতে পেরেছি। কাগজপত্র ঘাঁটলে আমরা দেখতে পাব, সেদিন পরিষদে দাঁড়িয়ে কী বলেছিলেন ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। আমরা দেখতে পাব, তাঁর সমর্থনে যে গুটিকয়েক পরিষদ সদস্য দাঁড়িয়েছিলেন, তাঁদের বেশির ভাগই ছিলেন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। আর মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ ভাষা প্রশ্নটিতে পুরোপুরি উর্দুর পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। ১৯৫২ সালে মুসলিম সমাজ ১৬০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়েছিল, সে কথা বলা হবে পরে।
১৯৪৮ সালে গণপরিষদে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রচেষ্টা বাংলার মাটিতে ভাষা আন্দোলনের বিষয়ে মানুষকে একাত্ম করেছিল। সত্যের খাতিরে বলতে হয়, এ সময় আন্দোলনের যতটুকু তীব্রতা দেখা গেছে, তা মূলত ছিল শিক্ষক, সাংবাদিক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ। কিন্তু পরিষদের এই ভাষণটির মাধ্যমে পশ্চিম পাকিস্তানি ভাবধারা থেকে বাঙালির আত্মপরিচয় খোঁজার যে পথটি তৈরি হয়েছিল, সেটা পরবর্তীকালে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষায় পরিণত করার দিকনির্দেশক হিসেবে পরিণত হয়েছিল।
গণপরিষদের আলোচনার দিকে খানিকটা দৃকপাত করা যাক। ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি করাচিতে গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিন ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত দুটি সংশোধনী প্রস্তাব আনেন: ১. গণপরিষদের অন্তত একটি অধিবেশন ঢাকায় হোক। ২. অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দু ও ইংরেজির সঙ্গে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকেও গণ্য করা হোক। মুসলিম লীগ এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করে। খাজা নাজিমুদ্দিন বলেন, পূর্ব বাংলার অধিকাংশ মানুষই উর্দুর পক্ষে।
ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের প্রস্তাব গণপরিষদে বাতিল হয়ে যায়। দৈনিক আজাদে খাজা নাজিমুদ্দিনের কথার প্রতিবাদ করে বলা হয়, ‘খাওয়াজা সাহেব কবে রাষ্ট্রভাষার ব্যাপারে পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাসীদের গণভোট গ্রহণ করেছিলেন, তাহা আমরা জানি না। আমাদের মতে, তাঁর উপরোক্ত উক্তি মোটেও সত্য নয়।’ ১৯৪৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা গণপরিষদের সিদ্ধান্ত ও মুসলিম লীগ সদস্যদের আচরণের তীব্র নিন্দা করে। ২ মার্চ ঢাবির ফজলুল হক হলে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ, বিভিন্ন ছাত্রাবাস ও তমদ্দুন মজলিসের উদ্যোগে সভা হয় এবং ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়। দেশে তখন রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নটি প্রখর রোদের দেখা পাচ্ছে।
পাকিস্তান সৃষ্টির ঠিক আগমুহূর্ত এবং সৃষ্টির পরের কয়েকটি ঘটনার উল্লেখ করা প্রয়োজন। ১৯৪৭ সালের ১২ আগস্ট পাকিস্তানের গণপরিষদের অধিবেশন বসল। হ্যাঁ, দেশ সৃষ্টির আগেই সে অধিবেশন বসেছিল। উদ্বোধনী বক্তব্য দেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। তিনি তখন মুসলিমদের মধ্যে জনপ্রিয়তার শিখরে। লর্ড মাউন্টব্যাটেন ১৪ আগস্ট সেই অধিবেশনে উপস্থিত হয়ে জিন্নাহর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। জিন্নাহ হন পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ তাঁর ভাষণে বলেন, এখন থেকে মুসলমান মুসলমান থাকবে না, হিন্দু হিন্দু থাকবে না, সবাই হবে পাকিস্তানি।
অর্থাৎ জিন্নাহ কিন্তু সে সময় যে কথা বলেছিলেন, তাতে সব ধর্মের মানুষের দেশ হিসেবেই পাকিস্তানকে দেখছিলেন। কিন্তু উর্দুর প্রতি কেন্দ্রের ভালোবাসা সজাগ করে তুলেছিল বাঙালিকে। তাই বাংলা ভাষার পক্ষ নিয়ে সে সময় তৈরি হলো তমদ্দুন মজলিস। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক আবুল কাশেমের নেতৃত্বে হলো এই সংগঠনটি। ১৯৪৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর তমদ্দুন মজলিসের জন্ম হয়েছিল। ১৫ সেপ্টেম্বর ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু’ নামে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি। প্রথম রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয় ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বরে। আহ্বায়ক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নূরুল হক ভুইয়া।
এরপরের আলোচনা হবে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের গণপরিষদে দেওয়া বক্তব্য নিয়ে। তিনি পরিষদে ভাষা প্রশ্নটি যখন তুলেছিলেন, তখন পূর্ব বাংলার পরিষদ সদস্যরা কী ভূমিকা রেখেছিলেন, সেটাও তো দেখার বিষয়। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার বিষয়টিকে নিছক খেলো একটি বিষয় হিসেবেই তাঁরা বিবেচনা করেছিলেন। এর পেছনে কী কারণ থাকতে পারে, সেটা হয়তো কোনো দিনই জানা যাবে না। কিন্তু নেতৃত্বের প্রশ্নটি তত দিনে পশ্চিম পাকিস্তানের আধিপত্যের শিকার হয়েছে, সে কথা আমরা ধীরে ধীরে জানতে পেরেছি। কাগজপত্র ঘাঁটলে আমরা দেখতে পাব, সেদিন পরিষদে দাঁড়িয়ে কী বলেছিলেন ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। আমরা দেখতে পাব, তাঁর সমর্থনে যে গুটিকয়েক পরিষদ সদস্য দাঁড়িয়েছিলেন, তাঁদের বেশির ভাগই ছিলেন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। আর মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ ভাষা প্রশ্নটিতে পুরোপুরি উর্দুর পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। ১৯৫২ সালে মুসলিম সমাজ ১৬০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়েছিল, সে কথা বলা হবে পরে।
১৯৪৮ সালে গণপরিষদে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রচেষ্টা বাংলার মাটিতে ভাষা আন্দোলনের বিষয়ে মানুষকে একাত্ম করেছিল। সত্যের খাতিরে বলতে হয়, এ সময় আন্দোলনের যতটুকু তীব্রতা দেখা গেছে, তা মূলত ছিল শিক্ষক, সাংবাদিক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ। কিন্তু পরিষদের এই ভাষণটির মাধ্যমে পশ্চিম পাকিস্তানি ভাবধারা থেকে বাঙালির আত্মপরিচয় খোঁজার যে পথটি তৈরি হয়েছিল, সেটা পরবর্তীকালে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষায় পরিণত করার দিকনির্দেশক হিসেবে পরিণত হয়েছিল।
গণপরিষদের আলোচনার দিকে খানিকটা দৃকপাত করা যাক। ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি করাচিতে গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিন ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত দুটি সংশোধনী প্রস্তাব আনেন: ১. গণপরিষদের অন্তত একটি অধিবেশন ঢাকায় হোক। ২. অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দু ও ইংরেজির সঙ্গে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকেও গণ্য করা হোক। মুসলিম লীগ এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করে। খাজা নাজিমুদ্দিন বলেন, পূর্ব বাংলার অধিকাংশ মানুষই উর্দুর পক্ষে।
ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের প্রস্তাব গণপরিষদে বাতিল হয়ে যায়। দৈনিক আজাদে খাজা নাজিমুদ্দিনের কথার প্রতিবাদ করে বলা হয়, ‘খাওয়াজা সাহেব কবে রাষ্ট্রভাষার ব্যাপারে পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাসীদের গণভোট গ্রহণ করেছিলেন, তাহা আমরা জানি না। আমাদের মতে, তাঁর উপরোক্ত উক্তি মোটেও সত্য নয়।’ ১৯৪৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা গণপরিষদের সিদ্ধান্ত ও মুসলিম লীগ সদস্যদের আচরণের তীব্র নিন্দা করে। ২ মার্চ ঢাবির ফজলুল হক হলে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ, বিভিন্ন ছাত্রাবাস ও তমদ্দুন মজলিসের উদ্যোগে সভা হয় এবং ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়। দেশে তখন রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নটি প্রখর রোদের দেখা পাচ্ছে।
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ দিন আগেআধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫পাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
০৮ মে ২০২৫ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে দুই চিরবৈরী প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনার পারদ ক্রমেই চড়ছিল। তা তুঙ্গে উঠল এবার পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামের ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা দিয়ে। পাশাপাশি সীমান্তেও দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছে...
০৮ মে ২০২৫