Ajker Patrika

খাদ্যে মূল্যস্ফীতি তিন গুণ: সিপিডি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
খাদ্যে মূল্যস্ফীতি তিন গুণ: সিপিডি

সরকারের দাবি বর্তমান খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ হলেও প্রকৃতপক্ষে তা ২৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ বলে দাবি করেছে বেসরকারি গবেষণা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)। মূল্যস্ফীতির কারণে আগের চেয়ে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। এজন্য মানুষ খাদ্যতালিকা থেকে পুষ্টিকর খাবার বাদ দিচ্ছে।

গতকাল সোমবার সংস্থাটির ধানমন্ডির কার্যালয়ে আগামী ২০২৩-২৪ সালের জাতীয় বাজেট নিয়ে আয়োজিত মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সংস্থাটি এ তথ্য জানায়। এতে মূল তথ্য উপস্থাপনা করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ও সিনিয়র রিসার্চ ফেলো মো. তৌফিক ইসলাম খান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে ফাহমিদা খাতুন বলেন, খাদ্য মূল্যস্ফীতি মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। ফেব্রুয়ারি মাসে মাছ-মাংস যোগ দিলে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ২৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ হয়েছে। যদিও পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে, ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, নিম্ন এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের আয় তা দিয়ে খাদ্যপণ্য কিনে টিকে থাকা কঠিন। গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় বর্তমানে চার সদস্যের একটি পরিবারের খাবারের পেছনে মাসে খরচ হয়েছে ২২ হাজার ৬৬৪ টাকা। কমপ্রোমাইজড ডায়েট বা খাদ্যতালিকা থেকে মাছ-মাংসসহ বেশি পুষ্টিকর খাবার বাদ দিলেও ব্যয় দাঁড়ায় ৭ হাজার ১৩১ টাকা। গত বছরে একই মাসে এ খরচ ছিল যথাক্রমে ১৮ হাজার ১১১ এবং ৫ হাজার ৬৮৮ টাকা। মধ্যবিত্ত পরিবারে মোট আয়ের ৬০ শতাংশ খাবারের পেছনে খরচ করতে হয়।

নিত্য খাদ্যপণ্য পাইজাম চাল, খোলা আটা, খোলা সয়াবিন, মোটা মসুর ডালসহ ২৮টি পণ্য নিয়ে সিপিডি এ হিসাব করেছে। কমপ্রোমাইজড খাদ্য তালিকা থেকে মাছ-মাংস, দুধ-কলা বাদ দেওয়া হয়েছে। মূল্যস্ফীতি সামাল দিতে ২৮টি পণ্যের কর কমাতে হবে। এতে কর আদায়ে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলেই মনে করে সংস্থাটি।

ফাহমিদা বলেন, থাইল্যান্ড-ভিয়েতনামের চেয়ে এদেশে চালের দাম অনেক বেশি। সয়াবিনের দামও বিশ্ববাজারের চেয়ে বেশি। বিশ্ববাজার, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের চেয়েও চিনির দাম দেশে বেশি। মংসের দাম বিশ্ববাজারে যেখানে ৫০০ টাকার নিচে, বাংলাদেশে তা ৮০০ টাকা।

বাজারের অব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বাজার প্রক্রিয়া ক্রমেই দুর্বল হচ্ছে। বাজারে কোনো ধরনের মেকানিজম কাজ করছে না। বড়দের প্রভাব-প্রতিপত্তি অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বাড়ছে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বলতাই সামনের বাজেটে সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করে সিপিডি। ফাহমিদা খাতুন বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধকে আর্থিক সংকটের জন্য দায়ী করা হলেও সেটি একমাত্র কারণ নয়। রিজার্ভের গতি নিম্নগামী, রপ্তানির বৈচিত্রায়ণ না থাকা, ব্যাংক খাতের তারল্যসংকট ও রাজস্ব আদায়ে শ্লথগতির কারণে অর্থনীতিতে ঘূর্ণিঝড়ের প্রকটতা কমছে না।

সিপিডি জানায়, বর্তমান অবস্থা অব্যাহত থাকলে চলতি অর্থবছরে রাজস্ব ঘাটতি হবে ৭৫ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরের সম্পদ আহরণে দুর্বলতা রয়েছে। রাজস্ব আহরণের আওতা দিন দিন সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছে। যে কারণে সরকারের ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

পাচারের টাকা দেশে ফিরিয়ে এনে ৭ শতাংশ কর দিয়ে কোনো প্রশ্ন করবে না সরকার, বাজেটে এ সুযোগ বন্ধ করা এবং কালো টাকা সাদা করার সুযোগও বন্ধ করার পক্ষে মত দিয়েছে সিপিডি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত