Ajker Patrika

মুজিবের পক্ষে ভাসানী

জাহীদ রেজা নূর
আপডেট : ০৯ মার্চ ২০২২, ১০: ১৩
Thumbnail image

‘শেখ মুজিবের নির্দেশিত পঁচিশে মার্চের মধ্যে কোনো কিছু না করা হলে আমি শেখ মুজিবের সাথে মিলে ১৯৫২ সালের মতো তুমুল গণ-আন্দোলন গড়ে তুলব।’ পল্টনের বিশাল জনসমাবেশে ৯ মার্চ ন্যাপ নেতা মওলানা ভাসানী এ কথা বললেন। ‘প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকে বলি, অনেক হয়েছে, আর নয়। লাকুম দ্বীনুকুম ওয়ালিয়া দ্বীন (তোমার ধর্ম তোমার, আমার ধর্ম আমার) নিয়মে পূর্ব বাংলার স্বাধীনতা স্বীকার করে নাও।’ সভায় প্রস্তাব পাঠ করেন ন্যাপ নেতা মশিউর রহমান। সার্জেন্ট জহুরুল হক (ইকবাল) হল ক্যানটিনে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের জরুরি সভা হয় সংগঠনের সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে। সভার রাজনৈতিক প্রস্তাবে ২ মার্চ বটতলায় অনুষ্ঠিত ছাত্রলীগ ও ডাকসুর নেতৃত্বে গঠিত ‘স্বাধীন বাংলা দেশ ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ’-এর সভায় গৃহীত ‘স্বাধীন বাংলা দেশ’ ঘোষণার প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। অপর এক প্রস্তাবে বাঙালির জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বাংলা দেশে জাতীয় সরকার গঠনের জন্য অনুরোধ করা হয়। সাংগঠনিক প্রস্তাবে আগামী কাউন্সিল অধিবেশনের পূর্ব পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের পরিবর্তে শুধু ‘ছাত্রলীগ’ নাম ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

ন্যাপপ্রধান মওলানা ভাসানীর সঙ্গে এই দিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের টেলিফোনে আলাপ হয়। পল্টন ময়দানে সভা করার আগে সন্তোষ থেকে ঢাকায় আসার পরপরই মওলানা ভাসানী আওয়ামী লীগপ্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ করেন।

৭ মার্চে রেসকোর্স ময়দানের গণসমাবেশে বঙ্গবন্ধু যে ভাষণ দেন, তা পুনঃপ্রচারের জন্য বাংলা দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে অসংখ্য টেলিগ্রাম ও টেলিফোন কল পাওয়া যাচ্ছে বলে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রেস সেক্রেটারি জানান। তিনি ভাষণটি পুনরায় প্রচারের জন্য বেতার কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেন। তিনি টেলিভিশন কর্তৃপক্ষের কাছেও একই অনুরোধ করেন।

জাতিসংঘের মহাসচিব উ থান্ট এদিন প্রয়োজন হলে পূর্ব পাকিস্তান থেকে জাতিসংঘের স্টাফ ও তাঁদের পরিবারদের অপসারণের জন্য ঢাকার জাতিসংঘের উপ-আবাসিক প্রতিনিধিকে ক্ষমতা দান করেন।

করাচি থেকে প্রচারিত রেডিও পাকিস্তানের খবরে বিভিন্ন দেশের খবর থাকলেও এই দিন কোনো খবরেই পূর্ব পাকিস্তানে কী ঘটছে, তার ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণ যেন পূর্ব পাকিস্তানে কী ঘটছে তা জানতে না পারে, সে জন্যই এ রকম করা হয়েছে বলে একটি খবর ছেপেছে ইত্তেফাক।

পিআইএর ঢাকার বাঙালি কর্মচারীরা বিমানবন্দর থেকে মিছিল নিয়ে বঙ্গবন্ধুর গণদাবির সমর্থনে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডির বাড়িতে আসেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করবেন বলে তাঁরা বঙ্গবন্ধুকে আশ্বাস দেন।

বিক্ষুব্ধ শিল্পী সমাজের এক বিবৃতিতে বলা হয়, তাদের একটি প্রতিনিধিদল ঢাকায় কেন্দ্রীয় তথ্য ও জাতীয় বিষয়ক দপ্তরের যুগ্ম সচিব জহুরুল হকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। বাংলা দেশের বর্তমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে বেতার ও টেলিভিশন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের প্রশ্নে বিক্ষুব্ধ শিল্পী সমাজ যে শর্ত আরোপ করেছেন, সে সম্পর্কে তাঁরা যুগ্ম সচিবের সঙ্গে খোলাখুলি আলোচনা করেন। যুগ্ম সচিব যত দূর সম্ভব তাঁদের দাবি মেনে নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন। এই দিন গভীর রাতে পিপিআই ও এনা পরিবেশিত খবরে বলা হয়, চিফ মার্শাল ল অ্যাডমিনিস্ট্রেটর সংশ্লিষ্ট সামরিক বিধি পরিবর্তন করে লে জে টিক্কা খানকে ‘খ’ অঞ্চলের মার্শাল ল অ্যাডমিনিস্ট্রেটর নিয়োগ করেছে। এর আগে তাঁকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। বিবিসির খবরে প্রকাশ পায়, আওয়ামী লীগপ্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশ অনুযায়ী ঢাকা হাইকোর্টে হরতালের দরুন কোনো বিচারপতি পূর্ব পাকিস্তানের নবনিযুক্ত সামরিক গভর্নরের শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করতে সম্মত হননি। তাই গভর্নরের কার্যভার গ্রহণ বিলম্বিত হচ্ছে।

সামরিক আইন কর্তৃপক্ষ রাজশাহীতে এই দিন রাত ৯টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত সান্ধ্য আইন বলবৎ করে।

পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ এইচ এম কামারুজ্জামান রাজশাহীতে সান্ধ্য আইন জারির প্রতিবাদ করেন এবং অবিলম্বে তা প্রত্যাহার করার দাবি জানান। কামারুজ্জামান তাঁর বিবৃতিতে বলেন, ‘সেনাবাহিনীকে ছাউনিতে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে যখন শোনা যাচ্ছে, তখন সান্ধ্য আইন জারির কারণ হৃদয়ঙ্গম করা কঠিন। সান্ধ্য আইন জনসাধারণের জন্য উসকানি ছাড়া আর কিছু নয়। সান্ধ্য আইন প্রত্যাহার এবং পুলিশের কাছে সম্পূর্ণভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব ন্যস্ত করার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে পুনর্বার দাবি জানাচ্ছি।’

গ্রন্থনা: জাহীদ রেজা নূর

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত