Ajker Patrika

ব্যাকটেরিয়ায় মরছে টমেটো গাছ, দিশেহারা চাষি

সেলিম সুলতান সাগর, চিতলমারী (বাগেরহাট)
আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০২১, ২১: ০১
ব্যাকটেরিয়ায় মরছে টমেটো গাছ, দিশেহারা চাষি

বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলায় জমির ফলন্ত টমেটোগাছ ‘স্ট্রোক’ রোগে মারা যাচ্ছে। কোনো বালাইনাশকেই এ মৃত্যু রোধ হচ্ছে না। ফলে চাষিরা দিশেহারা হয়ে পড়ছেন। কৃষিবিদেরা জানিয়েছেন, এটি মাটিবাহিত ব্যাকটেরিয়া সংক্রান্ত রোগ। এ রোগে গাছের শেকড় একেবারে নষ্ট করে ফেলে। টমেটোর চারা লাগানোর আগে চাষিরা ভালোভাবে মাটি পরিশোধন না করায় খেতে মহামারি আকারে স্ট্রোক রোগ ছড়িয়ে পড়ে।

চিতলমারী উপজেলা কৃষি দপ্তর থেকে জানা গেছে, এ বছর উপজেলায় ১ হাজার ৫০০ একর চক্র, পানপাতা, মিন্টু সুপার, লাভলী, হাইটম, বিউটিসহ বিভিন্ন জাতের টমেটো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। মূলত এ এলাকায় শীতকালীন টমেটোর চাষ হয়ে থাকে। তাই আগাম চাষে ঝুঁকির সম্ভাবনা থেকেই যায়।

উপজেলার খড়মখালী গ্রামের টমেটো চাষি হাফিজুল করিম বলেন, টাকা ধার নিয়ে জমিতে ৪ হাজার ৫০০ টমেটোগাছ লাগিয়েছিলেন। কঠোর পরিশ্রম ও পরিচর্যায় গাছগুলোতে প্রচুর টমেটোও ধরেছিল। আশা ছিল এ বছর টমেটো বিক্রি করে সব ধার-দেনা শোধ করবেন। হঠাৎ ফলবান টমেটোগাছ স্ট্রোক রোগে মারা যাচ্ছে। এখন ঋণের টাকা তো দূরের কথা, পরিবার-পরিজন নিয়ে বাঁচাটা দুরূহ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

একই গ্রামের সবজিচাষি নিতিষ হালদার নিতু চিংড়ি ঘেরের পাড়ে ৩ হাজার টমেটোগাছ লাগিয়েছেন। তাঁর ভাই উত্তম হালদার লাগিয়েছেন ২ হাজার ৫০০ গাছ। তাঁদের দুই ভাইয়েরই গাছগুলো স্ট্রোক রোগে মারা যাওয়া শুরু করেছে। এ রোগ একবার খেতে লাগলে সব গাছ মারা যায়।

খড়মখালী গ্রামের কৃষক লিপন হালদার, অশোক সিংহ, আশিষ হালদার ও বেল্লাল হোসেন বলেন, তাঁরা একেক জনে আলাদাভাবে ৩ থেকে ৪ হাজার করে টমেটোগাছের চাষ করেছেন। তাঁদের ফলন্ত গাছগুলো স্ট্রোক রোগে মারা যাচ্ছে। কোনো বালাইনাশ ব্যবহার করে তা রোধ করতে পারছেন না। এই রোগ এলাকায় মহামারি হিসেবে ছড়িয়ে পড়ছে।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা (খড়মখালী-ডাকাতিয়া ব্লকের দায়িত্বপ্রাপ্ত) অলোক কুমার মণ্ডল বলেন, যে সব খেতে স্ট্রোকে গাছ মারা যাচ্ছে সে খেতগুলোতে তাঁরা কাজ করছেন।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা অসীম কুমার দাস বলেন, গত বছরও এখানে স্ট্রোক রোগ দেখা দিয়েছিল। তখন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও কৃষিবিদেরা এ উপজেলার টমেটোগাছ নিয়ে ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাঁরা জানিয়েছেন, এই স্ট্রোক একটি মাটিবাহিত ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ রোগ। এ রোগ গাছের শেকড় একেবারে নষ্ট করে ফেলে। টমেটোর চারা লাগানোর আগে চাষিরা ভালোভাবে মাটি পরিশোধন না করার কারণেই জমিতে মহামারি আকারে স্ট্রোক রোগ ছড়িয়ে পড়ে।

কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা বলেন, ব্যাকটেরিয়া আক্রান্ত এই জমিতে ৩ থেকে ৪ বছরের মধ্যে টমেটো জাতীয় গাছ লাগানো যাবে না। কিন্তু চাষিরা তাঁদের পরামর্শ মানছেন না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত