Ajker Patrika

দেশে ফিরতে চায় রোহিঙ্গা শিশুরা

উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি  
দেশে ফিরতে চায় রোহিঙ্গা শিশুরা

সরকারের সঙ্গে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের যৌথভাবে করা সর্বশেষ জনসংখ্যা বিবরণীর (ফ্যাক্টশিট) তথ্যানুযায়ী, দেশে মোট রোহিঙ্গা বাস করছে ৯ লাখ ২৬ হাজার ৪৮৬ জন। তার মধ্যে ৫২ শতাংশই শিশু। যার মধ্যে শূন্য থেকে ১ বছর বয়সী ১৭ হাজার ১৮৬, ১ থেকে ৪ বছর বয়সী ১ লাখ ২৫ হাজার ৫২৮, ৫ থেকে ১১ বছর বয়সী ২ লাখ ৩ হাজার ৭২৭ এবং ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশু ১ লাখ ৩৪ হাজার ৯৯।

এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২ লাখ ৩৪ হাজার ১৪৪টি মেয়ে ও ২ লাখ ৭৩ হাজার ৩৯৬টি ছেলেসহ মোট ৫ লাখ ৭ হাজার ৫৪০টি রোহিঙ্গা শিশু উদ্বাস্তু হয়ে শৈশব পার করছে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে।

এ বছরের বিশ্ব শরণার্থী দিবসের আগের দিন ১৯ জুন রোহিঙ্গাদের ‘গো হোম’ প্রচারাভিযানের অংশ হিসেবে শিবিরগুলোতে আয়োজিত সমাবেশে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের অংশগ্রহণ ছিল সবচেয়ে বেশি। তারাও বড়দের মতো কণ্ঠে আওয়াজ তুলেছে ‘চল চল, আরাকান চল’। কোমল হাতগুলোতে শোভা পেয়েছে মিয়ানমারের পতাকা। 
উখিয়ার লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা শিবিরের সমাবেশে হাজারো রোহিঙ্গা শিশুর মধ্যমণি হয়ে স্লোগান দিচ্ছিল ১১ বছরের মোহাম্মদ আয়াছ। সে মিয়ানমারের মংডু থেকে মাত্র সাত বছর বয়সে মা ও নানির হাত ধরে ২০১৭ সালে বাংলাদেশে চলে আসে। আয়াছের বাবা নিখোঁজ হয় সহিংসতায়। পাঁচ বছরেও তাঁর সন্ধান মেলেনি।

নিজের হাতে থাকা মিয়ানমারের পতাকা দেখিয়ে আয়াছ বলে, ‘এটি আমার দেশের পতাকা, আমরা আরাকানে ফিরতে চাই। বাবাকে দেখি না অনেক দিন। জানি না তার দেখা আর পাব কি না। দেশে গেলে অন্তত বাবার স্মৃতির নিয়ে বাঁচতে পারব।’

কুতুপালং ১-ইস্ট ক্যাম্পের বাসিন্দা মোহাম্মদ ইয়াসিন (২৮) বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া তাঁর আট মাসের ছেলে ইয়ামিনের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত।

শিক্ষিত এই রোহিঙ্গা তরুণ বলেন, ‘ইয়ামিন এখনো ছোট। আমি জানি না তার ভবিষ্যৎ কী হবে। সে বড় হওয়ার আগেই মর্যাদা নিয়ে নিজের জন্মস্থানে ফিরে যেতে চাই, যেন সে নিজের সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠতে পারে।’

শরণার্থী দিবস উপলক্ষে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনে গিয়ে রোহিঙ্গা শিশুদের সঙ্গে কথা বলেন ইউএনএইচসিআরের শুভেচ্ছাদূত ও দেশের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী তাহসান খান। 
পরিদর্শন শেষে উখিয়ায় এসে তাহসান বলেন, ‘আমি রোহিঙ্গা শিশুদের সঙ্গে কথা বলে তাদের মধ্যে নিজ দেশের জাতীয়তাবোধ উপলব্ধি করেছি। তারা জানে, তাদেরও নিজস্ব জাতীয় সংগীত আছে, ভাষা আছে।’

তাহসান আরও বলেন, তারা দ্রুত দেশে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। কিন্তু তাদের মৌলিক অধিকার এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা পর্যন্ত একই ঘটনা পুনরায় ঘটতে পারে বলে ভয়ও পাচ্ছে।

এদিকে বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে প্রায় চার লাখ স্কুল বয়সী রোহিঙ্গা শিশু রয়েছে বলে সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ইউনিসেফ।

শিশুদের নিয়ে কাজ করা জাতিসংঘের এই সংস্থাটি ইতিমধ্যে রোহিঙ্গা শিশুদের তাদের নিজ দেশের পাঠ্যক্রমের মাধ্যমে পাঠদান দিতে কক্সবাজারের শিবিরগুলোতে শুরু করেছে মিয়ানমার কারিকুলাম পাইলট (এমসিপি) প্রকল্প। ২০২২ সালের মে মাসে ১০ হাজার শিশু প্রাথমিকভাবে এই কার্যক্রমের আওতায় এসেছে।

স্বেচ্ছায়, নিরাপদে এবং মর্যাদার সঙ্গে যদি রোহিঙ্গা শিশুদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি হয়, তবে পরীক্ষামূলক এই কার্যক্রম মিয়ানমারের শিক্ষাব্যবস্থা ও সমাজের সঙ্গে তাদের একীভূত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টিতে সহায়তা করবে বলে প্রত্যাশা ইউনিসেফের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রশিক্ষণ ছাড়াই মাঠে ৪২৬ সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা

গ্রাহকের ২,৬৩৫ কোটি টাকা দিচ্ছে না ৪৬ বিমা কোম্পানি

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

মারধর করে ছাত্রলীগ কর্মীর পিঠে পাড়া দিয়ে অটোরিকশায় শহর ঘোরাল ছাত্রদল, সঙ্গে উচ্চ স্বরে গান

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়: তিন দফা দাবিতে সোমবার মাঠে নামছেন শিক্ষার্থীরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত