Ajker Patrika

সেই পাহাড়ে পুলিশের আবাসন!

সোহেল মারমা, চট্টগ্রাম
আপডেট : ১৫ জুন ২০২২, ১৫: ৩৫
Thumbnail image

চট্টগ্রামে বায়েজিদ লিংক রোডে দুই বছর আগে একরের পর একর পাহাড় কেটে সাবাড় করেছিল ওই সড়কের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স। এ জন্য প্রতিষ্ঠানটি জরিমানা গুনেছিল ৫ কোটি টাকার বেশি। বিতর্কিত সেই জায়গায় এখন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কিছু কর্মকর্তা সমিতি খুলে আবাসন প্রকল্প নির্মাণের পরিকল্পনা করছেন। পরিদর্শক পদমর্যাদা থেকে শুরু করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসব প্লট বরাদ্দ পেতে আবেদন করছেন।

অভিযোগ উঠেছে, ফৌজদার-বায়েজিদের লিংক রোডের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ মিলে তিন একরের বেশি জায়গায় পাহাড় কাটাসহ আবাসন প্রকল্প নির্মাণের পরিকল্পনা এগোচ্ছে।

এ পরিকল্পনা দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রতিজন পুলিশ কর্মকর্তা ৫ কাঠা করে প্লট বরাদ্দ পাবেন। সিএমপি অফিসার্স সমবায় সমিতি (নিবন্ধনবিহীন) নামে সংগঠনটির সদস্যভুক্তদের এ প্লট বরাদ্দ দেওয়া হবে।

জানতে চাইলে সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অর্থ ও প্রশাসন) সানা শামীমুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সেখানে পুলিশের একটি সমিতির নামে আবাসন প্রকল্প তৈরির কথাবার্তা চলছে। কিন্তু এখনো বিষয়টি নিয়ে আমরা ওইভাবে অগ্রসর হইনি।’

বিতর্কিত জায়গার বিষয়ে সানা শামীমুর রহমান বলেন, এটা নিয়ে সামনে মিটিং রয়েছে। মিটিং পরবর্তী সিদ্ধান্ত আসবে। জায়গা কেনার বিষয়েও এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

সিএমপি উপকমিশনার (এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডিং) এস এম মোস্তাইন হোসেন বলেন, ‘এটা সিএমপির দাপ্তরিক কোনো প্রকল্প নয়। কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা মিলে সমিতি খুলে জায়গাটি কেনার চেষ্টা করেছিলেন। এটা ব্যক্তি মালিকানা উদ্যোগের মতো। পরে কী হয়েছে আমি জানি না।’

স্পেকট্রা গ্রুপের স্থানীয় কো-অর্ডিনেটর নাসির উদ্দিন হায়দার বলেন, জায়গাটি বিক্রির জন্য পুলিশের সঙ্গে অনেক আগে থেকে কথাবার্তা চলছে। তাঁরা কিছু কন্ডিশন দিয়েছে। এটা নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আপাতত জায়গাটি বিক্রি করছেন না বলে তিনি দাবি করেন।

২০২০ সালে ১২ ফেব্রুয়ারি পরিবেশ অধিদপ্তর ওই জায়গায় পাহাড় কাটার দায়ে ৫ কোটি ২৩ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করে স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডকে।

পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মফিদুল আলম বলেন, পাহাড় কাটায় স্পেকট্রাকে জরিমানার পাশাপাশি মামলাও করা হয়েছিল। মামলাটি চলমান রয়েছে। তিনি বলেন, পাহাড় কাটার অনুমতি একমাত্র প্রধানমন্ত্রী দিতে পারেন। তাঁদের কিছু জায়গার অনুমোদন ছিল আবার কিছু অংশের ছিল না। যেসব জায়গায় অনুমোদন ছিল না, সেখানে পরিবেশ অধিদপ্তর পাহাড় কাটার দায়ে জরিমানা করেছে।

স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ার্সের বিরুদ্ধে তখন অভিযোগ ছিল, তারা রাস্তার কাজের জন্য পাহাড় কাটার পাশাপাশি জঙ্গল সলিমপুর মৌজার এক নম্বর খাস খতিয়ানের ৩৫৯ নম্বর দাগের সোয়া এক একর পাহাড় অবৈধভাবে কাটে। সবার চোখ ফাঁকি দিতে চারপাশে ১৫ ফুট উচ্চতার ইটের প্রাচীর নির্মাণ করে নেয়। এরপর শুরু করে পাহাড় কাটা ও ছড়া ভরাটের কাজ।

সিডিএ প্রকৌশলী রাজীব দাস বলেন, যে জায়গায় পাহাড় কাটা হয়েছে, সেটা প্রকল্পের অধিগ্রহণের জায়গায় পড়েনি। জায়গাটি স্পেকট্রা সাইট অফিস হিসেবে ব্যবহার করে আসছিল।

সিএমপি সূত্র জানায়, অন্তত ১০০ পুলিশ কর্মকর্তা প্লট বরাদ্দ পেতে পারেন। সমিতির অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে দেখানো হয়েছে নাসিরাবাদ হাউজিংয়ের পুলিশ অফিসার্স মেস।

পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন দীর্ঘ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। পাহাড় কাটা হলেও জায়গাটি এখনো পাহাড়/টিলা শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত। পাহাড়/টিলা শ্রেণিতে কোনো অবকাঠামো নির্মাণ করতে হলে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র প্রয়োজন। কিন্তু তাঁরা পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছ থেকে এখনো ছাড়পত্র নিতে পারেনি। এ ছাড়া ভূমি অফিস থেকে পাহাড়/টিলা শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নিতে হবে। এ সংক্রান্ত একটি মামলাও চলমান।

এর আগে ২০২০ সালে জানুয়ারিতে লিংক রোড প্রকল্পে অতিরিক্ত পাহাড় কাটার দায়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (সিডিএ) ১০ কোটি ৩৮ লাখ ৬৯ হাজার টাকা জরিমানা করে পরিবেশ অধিদপ্তর।

সুশাসনের জন্য নাগরিক চট্টগ্রামের সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী বলেন, একটা সুশৃঙ্খল বাহিনী যদি আইন অমান্য করে, তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত