Ajker Patrika

মৃত্যুর পরও যন্ত্রণা

সম্পাদকীয়
মৃত্যুর পরও যন্ত্রণা

রাজধানীর বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় যাঁরা মারা গেছেন, যাঁরা গুরুতর দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছেন, তাঁদের জন্য দেশবাসীর মনে তৈরি হয়েছে গভীর বেদনাবোধ। শোকগ্রস্ত পরিবারগুলোর প্রতি সহানুভূতি জানাতে কার্পণ্য করছে না কেউ।

জাতীয় দৈনিকগুলোতে ছাপা হচ্ছে মর্মস্পর্শী প্রতিবেদনের সঙ্গে রাজউক, সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতা, দুর্নীতি-অনিয়মের কত সব খবর। খাবারের দোকান বা রেস্টুরেন্টের অনুমোদন না থাকা সত্ত্বেও কীভাবে দিনের পর দিন সবার চোখের সামনে এসব ব্যবসা চলল? আমরা কি তাহলে চোখ থাকতেও অন্ধ? আমরা অকালমৃত্যুকে বরণ করব, স্বজন-প্রিয়জনদের শোকসাগরে ভাসাব, তবু দায়িত্বশীল আচরণ করব না, অনিয়ম-দুর্নীতির পথে হাঁটা বন্ধ করব না?

এই সব জিজ্ঞাসা যখন অনেকের মনে, তখনই আরও একটি বিষয় সামনে এসে বিব্রত করছে অনেককেই। বেইলি রোড ট্র্যাজেডির শিকার একজন নারী সংবাদকর্মী অভিশ্রুতি শাস্ত্রীর ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় তাঁর লাশ হস্তান্তর বিলম্বিত হচ্ছে। তাঁর লাশ হাসপাতালের মর্গে আছে।

আজকের পত্রিকায় রোববার প্রকাশিত খবর থেকে জানা যাচ্ছে, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার শাহ আলম মোহাম্মদ আখতারুল ইসলাম জানিয়েছেন, সাংবাদিক মেয়েটির জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও জন্মনিবন্ধন সনদে বাবার দুই ধরনের নাম এসেছে। তাই বিষয়গুলো পরিপূর্ণভাবে যাচাই না করে লাশ হস্তান্তর করা সম্ভব হবে না।

অভিশ্রুতি শাস্ত্রী অনলাইন পোর্টাল দ্য রিপোর্ট ডটলাইভে রিপোর্টার হিসেবে কাজ করতেন। সম্প্রতি চাকরি ছেড়ে নতুন প্রতিষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য কথাবার্তা চলছিল।

বৃহস্পতিবার আগুনের ঘটনার পর শুক্রবার কুষ্টিয়ার খোকসা থেকে শাবলুল আলম সবুজ নামের এক ব্যক্তি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে এসে অভিশ্রুতিকে বৃষ্টি খাতুন বলে শনাক্ত করেন। তিনি জানান, এই তরুণী তাঁর নিজের মেয়ে। তিনি লাশ নিতে চান।

জাতীয় পরিচয়পত্র ও পড়াশোনার সব সার্টিফিকেটে তাঁর নাম বৃষ্টি খাতুন হওয়ার পরও কর্মক্ষেত্রে তিনি কেন অভিশ্রুতি শাস্ত্রী হলেন, তার একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন রমনা কালীমন্দিরের সভাপতি উৎপল সাহা। তিনি বলেছেন, এই নারী সাংবাদিককে তাঁরা অভিশ্রুতি নামেই চিনতেন। তিনি নয় মাস ধরে মন্দিরে সনাতন ধর্মের অনুসারী হিসেবে পূজা করেছেন। জানিয়েছিলেন, তাঁর বাড়ি ভারতের বেনারসে।

ছোটবেলা তাঁর মা-বাবা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। এরপর দাদুর হাত ধরে কুষ্টিয়ায় আসেন। শাবলুল আলমের পরিবার তাঁকে দত্তক নেয়। মন্দির কর্তৃপক্ষ ডিএনএ পরীক্ষার দাবি জানায়।

পরীক্ষার মাধ্যমে নিহত মেয়েটির পরিচয়-সংকট দূর করে দ্রুত লাশ হস্তান্তর করা দরকার। মেয়েটি কেন ধর্ম পরিচয় নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি করেছেন, তা এখন কে বলবে? তবে তিনি তো কারও ক্ষতি করেননি কিংবা আপত্তিকর কোনো কাজের সঙ্গে জড়িত থাকারও কোনো তথ্য কারও কাছে নেই। জন্ম হোক যথা তথা, কর্ম হোক ভালো—এই নীতিই তো অভিশ্রুতি কিংবা বৃষ্টি অনুসরণ করেছেন। যাতনাময় এক মৃত্যুর পর তাঁকে নিয়ে কোনো নতুন যন্ত্রণার কাহিনি কাম্য নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত