Ajker Patrika

স্থবিরতা কাটিয়ে নবোদ্যমে ঘিওরের ঢাকঢোলপাড়া

আব্দুর রাজ্জাক, ঘিওর
আপডেট : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৯: ৫৫
স্থবিরতা কাটিয়ে নবোদ্যমে ঘিওরের ঢাকঢোলপাড়া

ঘিওর উপজেলার বালিয়াখোড়া গ্রামের মনিদাশপাড়াকে সবাই ঢাক-ঢোল পাড়া হিসেবেই চেনে। করোনায় দীর্ঘদিনের স্থবিরতা কাটিয়ে নবোদ্যমে জেগে উঠেছে মুনিদাশপাড়া। এসে গেছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গাপূজা। আর দুর্গাপূজা সামনে রেখে ঢাক, ঢোল, ডুগি, তবলা আর কঙ্গ তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগরেরা।

সরেজমিনে বালিয়াখোড়ার মনিদাস পাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠোনে ঢোল তৈরির পর রঙের প্রলেপ দিচ্ছেন কারিগরেরা। পাশেই কাপড় আর সুতা দিয়ে ঢোলের বিড়া বানানোর কাজে ব্যস্ত গৃহবধূরা। আশপাশের বাড়িগুলো থেকেও আসছে টুং টাং শব্দ।

মনিদাশ পাড়ার প্রবীণ কমল চন্দ্র দাস (৬৮) আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পূর্বপুরুষদের এই পেশা ধরে রাখতে চার যুগেরও বেশি সময় ধরে আমি ঢাক-ঢোল তৈরির কাজে জড়িত।’ তিনি জানান, মনিদাশ পাড়ায় প্রায় ৩৫টি পরিবারের শতাধিক ব্যক্তি এই ঢাক-ঢোল বানানোর কাজে জড়িত। কেউ পৈতৃক পেশা, আবার কেউ দিনমজুর হিসেবে এই কাজ করে থাকেন। খরচ বাদে মাসে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা রোজগার হয়।’

অপর প্রবীণ ব্যক্তি গোকূল চন্দ্র দাস (৬৫) বলেন, ‘শ্রীকান্ত বাবু নামের এক অভিজ্ঞ বাজনদার গুরুর কাছ থেকে আমাদের পূর্বপুরুষদের কয়েকজন এই কাজটি শিখেছিল। পরে অনেকেই এই কাজে জড়িত হয়েছে। পাড়ার সবাই এই কাজ করে সংসার চালায়। এখানে পাইকারি এবং খুচরা বাদ্যযন্ত্র বিক্রি করা হয়। ঢাকা, চট্টগ্রামের বড় বড় বাদ্যযন্ত্রের শোরুমে, এমনকি বিদেশ থেকেও অর্ডার আসে এখানে।’

মানিক চন্দ্র দাস ও চিত্ত রঞ্জন দাস আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা প্রায় ২০ বছর ধরে এই কাজের সঙ্গে জড়িত। বাদ্যযন্ত্র তৈরিতে আমরা আম, নিম, শিমুল কাঠ ব্যবহার করে থাকি। এখানে ঢাক, ঢোল, ডুগি, তবলা, কঙ্গ, হাত বাওয়া, নাল, খমগ ও বাচ্চাদের ঢোল তৈরি করে থাকি। বাদ্যযন্ত্রের দাম বিভিন্ন রকমের। তবে একটি ঢাক ৩ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা, তবলা ২ হাজার থেকে ৫ হাজার, হাত বাওয়া ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, একেকটি নাল দেড় থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে। একেকটি যন্ত্র তৈরি করতে প্রায় ৪ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত লেগে যায়। ক্রেতারা যেভাবে অর্ডার দেয়, আমরা সেভাবেই কাজ করে দিই।’

সরকারি দেবেন্দ্রে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী আকাশ চন্দ দাস বলেন, ‘পড়াশোনার পাশাপাশি বাবাকে সাহায্য করি। আমাদের তৈরি বাদ্যযন্ত্র ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন জায়গায় যায়।’

স্থানীয় বালিয়াখোড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল আওয়াল খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বংশপরম্পরায় বালিয়াখোড়া গ্রামের মনিদাস পাড়ার লোকজন বাদ্যযন্ত্র তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। তাঁদের তৈরি বাদ্যযন্ত্রের চাহিদা দেশজুড়ে। এ ছাড়াও এ পাড়ার বাসিন্দারা বাদ্যযন্ত্র তৈরির পাশাপাশি তাঁদের বাদ্য বাজানোর সুনামও রয়েছে।’

ঘিওর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান হাবিব আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বালিয়াখোড়ার মনিদাস সম্প্রদায়ের লোকজনের এই ঢাক-ঢোলেই ঘুরেছে তাঁদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা। তাঁদের শৈল্পিক হাতের কাজ পরিচিতি পেয়েছে দেশজুড়ে। তাঁদের এই শিল্পসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে আন্তরিকতার সঙ্গে সহযোগিতা করা হয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত